একটি শিশু, তার চারপাশের অবস্থা কিভাবে দেখে ? তার মধ্যে বাস্তবতা না থাকলেও বাস্তবের যে চিত্রগুলো রয়েছে তার প্রতিচ্ছবি ঠিকই অনুধাবন করতে করতেই বড় হয় । এই বড় হওয়ার মধ্যেই তার সব চিন্তাগুলোর বিস্তার ঘটতে থাকে । কিন্তু শিশুর এই বাস্তবিকতার বিকাশ কখনই একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মত করে হয় না । আমাদের চাওয়ায় বা দৃষ্টিতে আমরা যেভাবে একটি জিনিস দেখি সেভাবে একটি শিশুকে দেখাতে চাইলে বা বোঝাতে চাইলে তা নিত্তান্তই চাপিয়ে দেওয়া বোঝার মতই হবে ।
মানুষের জীবনে সময় বড়ই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস । যে সময় চলে যায় তা ফিরে আসে না আমরা প্রায়ই এ কথাটি বলি । কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা বাবা মারা একটু বেশীই খেয়ালি হয়ে শিশুর শিশু সুলভ আচরন কেড়ে নিয়ে বাস্তবতার বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই ।চার থেকে নয় বছরের মধ্যেই একটি শিশুর মস্তিস্ক (ব্রেন) বৃদ্ধি ঘটে । এসময় একটি জিনিসকে দেখা, তার স্পর্শ, গন্ধ এবং অনুভূতি শিশুর ব্রেনের মধ্যে এক প্রকার তরঙ্গ সৃষ্টি করে । যা তার সারা জীবনের অর্জন । দেখুনতো ভেবে সেই কত ছোটবেলায় হয়ত কোন বকুল ফুলের গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় গন্ধে বুক ভরে উঠে জিজ্ঞেস করেছিলেন এটা কি ফুল গো বাবা !সেই যে শেখা আজও গাছের নাম মনে হতে কষ্ট হলেও গন্ধই আমাকে মনে করিয়ে দেয় সেই ছোট বেলার মায়া জড়ানো দিনগুলো । এখান থেকেই শেখা একটি ফুল গাছের নাম, গন্ধ আর কবে সেই ফুলগুলো ফুটে তার সম্পূর্ন বিশ্লেষন ।
এখন যে বিষয়টি শিক্ষা বিষয়ে আধুনিক সমাজে বেশী আলোচিত হচ্ছে তা হলো শিশুদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা । যে শিশুটি তার শৈশবের আচরন প্রকাশ করতে গিয়ে তোতলামো করতে চায় সেই শিশুটিকে এক ব্যাগ বই দিয়ে স্কুলে পাঠানোর নামে কেড়ে নেওয়া হয় শিশুসুলভ কোমলতা ।
যে শিক্ষাটা আনন্দের হয় তা কোন দিনও ভোলার নয় । বাবা মাকে এটা বোঝানোই যাচ্ছে না ।শিশু শ্রেনী থেকেই প্রতিযোগীতা চলে ক্লাসে প্রথম হওয়ার । আর এই প্রথম হওয়া জন্য স্কুল টাইম হয় প্রায় দশ থেকে বার ঘন্টা । যেখানে শিশুদের বৃদ্ধির জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যায় বলা হয় আট থেকে দশ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন । সেখানে দশ ঘন্টা স্কুলে থাকলে কিভাবে শিশুটি তার মানুষিক বৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে । খেলা শেখার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে । ক্নিতু খেলার জন্য যেমন জায়গা কমছে তেমনি খেলায় চলে আসছে প্রযুক্তির ব্যবহার । যেখানে প্রাচীন কালে খেলাধুলায় প্রচুর আত্ন শক্তি অর্জনের বড় মাধ্যম ছিলো বর্তমানে প্রযুক্তিগত খেলায় তেমনি ক্ষতি হচ্ছে একই সাথে চোখ, মস্তিস্ক, চলাফেরার সক্ষমতা এবং সবর্পরি মনোযোগীতা ।
প্রচুর পরিমানে কম্পিউটার বা ভিডিও গেমস জনিত খেলার সামগ্রী ব্যবহারের ফলে শহরাঞ্চলের অনেক শিশুর মধ্যে মুটিয়ে যাওয়া লক্ষনীয় বিষয় হয়ে দাড়াচ্ছে । এর ফলে অল্প বয়সেই রক্তচাপ, অবশাদগ্রস্থতা বা মানুষের সাথে সহজ ব্যবহার না করা লক্ষনীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত । কিন্তু এত বলাবলি বা শিশুদের নিয়ে কাজের পরও নীতিগত পরিবর্তন খুব কমই দেখা যাচ্ছে । বড়দের প্রতিযোগীতা শিশুদের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছেই । কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সমাজে বিভিন্ন স্তরের শিশুদের মধ্যে একটি পার্থক্য তৈরী হয়ে যাবে । যে পার্থক্য শুধু আচরন গতই নয় সামাজিক কাঠামোগত পরির্তনও করে দিতে পারে ।কারন একধরনের শিশু ছোটবেলা থেকেই একধরনের বদ্ধ শিক্ষার সাথে পরিচিত হবে আর অন্যধরনের শিশু পরিচিত হবে স্বাভাবিক শিক্ষার সাথে । যখন এরাই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এক সাথে কাজ করবে তখন এদের দুই ধরনের আচরন প্রভাব ফেলবে কাজের উপর যা কাজের গতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে ।
পড়াশোনা হতে হবে আনন্দ দায়ক যা শিশুকে আনন্দ দেবে । আপনি একটি মুরগীগে দেখিয়ে বলুন “ম”তে মুরগী । একটি জলরাশির সামনে গিয়ে শেখান এটা একটি পুকুর বা নদী । মানবতা শেখাতে শিশুর সামনে ভালো আচরন করুন পরিবারের সবার সাথে । পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখুন । খেলাধুলার জন্য নিয়ে যান খোলা আকাশযুক্ত ছোট হলেও কোন মাঠে ।সময় দিন শিশুকে । সবুজ মানুষের চোখকে, চোখের দৃষ্টিকে সুন্দর করে, আকাশ মানুষের মনকে বড় করে আর মাটি মানুষের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে । তাই শিশুদের শিক্ষায় প্রকৃতি, মানুষের আচরন আর ধর্ম অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে । তবে যে যাই তার শিশুকে বানাতে চান ছোট বেলা থেকেই ঐ বিষয়ে স্বপ্ন বপন কের দিন ।প্রয়োজনে বিষয়টা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন । তাকে বোঝান কেন এই পেশা বা শিক্ষাটা জীবনে জরুরী । এভাবে বুঝিয়ে বা আনন্দের মাধ্যমেই গড়ে তুলুন আপনার শিশুকে সমাজের একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে ।
চাপিয়ে দিয়ে যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে প্রসারিত করার চেষ্টা চলছে তা প্রতিরোধ করতেই হবে ।আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রকৃতির মত আলোকিত দেখতে চাই । আর এজন্যই শিশুদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে তাদের ঘুমন্ত মেধাকে, যা হবে প্রকৃতির মতই আনন্দ দায়ক ।
Comments (9)
কবিতায় দ্রোহের সুর স্পষ্ট। ভালো লাগলো বৈশাখী ঝড়। ধন্যবাদ।
কবিতা ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভাল থাকবেন
খুব সুন্দর হইছে
ধন্যবাদ
ভাল লাগলো।
খুশি হলাম