Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ঘাস ফুল

১০ বছর আগে

শিশুতোষ গল্প

প্রতি বৃহস্পতিবার কাউন্সিলের ময়লার গাড়ি এসে সবার বাসার সামনে রাখা ময়লা ভরা পলিথিন ব্যাগগুলো তুলে নিয়ে যায়। যত্রতত্র ময়লা ফেললে জরিমানা গুণতে হয়। তাই এই ব্যাপারে সবাই বেশ সতর্ক এবং আন্তরিক। সপ্তাহ জুড়ে অনেক গৃহস্থালি ময়লা আবর্জনা জমা হয়। তাই দেখা যায় কয়েকটা কালো পলিথিন ব্যাগ দরকার হয়। বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত শফিক এগুলোকে বাসার ব্যাক গার্ডেনে রেখে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবত একটা উটকো ঝামেলায় ময়লা নিয়ে তাকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কে বা কারা জানি ময়লা ভরা ব্যাগগুলো ছিঁড়ে ভিতর থেকে ময়লা বের করে গার্ডেনের বারোটা বাজিয়ে দেয়।  পুনরায় ময়লাগুলোকে ব্যাগে ভরতে হয়। অনেক ভেবে চিন্তেও এর কোন রহস্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হল শফিক। তার ছেলে দীপ্তকে দায়িত্ব দিয়েছিল স্কুল থেকে ফিরে মাঝে মাঝে একটু খেয়াল রাখার জন্য। সেও কিছুই আবিষ্কার করতে পারে নাই। কিন্তু সকাল হলেই দেখা যায় ময়লার ব্যাগগুলো ছেঁড়া আর ময়লাগুলো বিশ্রীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গার্ডেনে। তবে একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত হল যে, কাজটা রাতের আঁধারেই ঘটে থাকে। দীপ্তও তার বাবার এই কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। বাপ ছেলে মিলে ঠিক করলো সামনের শুক্রবার রাতে দু’জন মিলে লুকিয়ে দেখবে আসলে কে করছে এই কাজটা। শনি এবং রবিবার দীপ্ত’র স্কুল বন্ধ। তাই শুক্রবারটা বেছে নেয়া হয়েছে, যাতে একটু রাত জাগলেও তার কোন অসুবিধা না হয়।   

পরিকল্পনা মতো শুক্রবারে একটা ময়লা ভর্তি ব্যাগ ব্যাক গার্ডেনে রাখা হল। বাপ ছেলে সন্ধ্যার পর থেকেই ঘাপটি মেরে  একটু  আড়ালে অন্ধকারে বসে আছে। আত্ম রক্ষার্থে শফিকের হাতে একটা লাঠিও ছিল। বলা তো যায় না, যদি ভয়ংকর কিছু হয়। ঘণ্টা খানেক পার হয়ে গেলো। কিন্তু কোন কিছুই তারা দেখতে পেলো না। রাত তখন ন'টা বাজে। এমন সময় গার্ডেনের শেষ প্রান্তে, যেখানে বেশ খানিকটা অন্ধকার, মনে হল ওই অন্ধকারের ভিতর দু’টো ছোট্ট টর্চ লাইট জ্বল জ্বল করছে। দু’জনেই কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু জ্বল জ্বল লাইট দু’টো গার্ডেনের বাতির আলোতে আসতেই তাদের ভয়টা কেটে গেল। সাদা কালো রঙের একটা বিড়াল ধীরে ধীরে ময়লার ব্যাগের কাছে আসলো। তারপর পায়ের নখ দিয়ে আঁচড় বসিয়ে ব্যাগটা ছেঁড়ার চেষ্টা করতে লাগলো। তাই দেখে শফিকের মেজাজ হয়ে গেলো গরম। মনে মনে বলছে,

- ব্যাটা, তোর জন্যই এতো দিন ময়লা নিয়ে আমাদের বাড়তি ভোগান্তির অন্ত ছিল না।

রাগে ফুঁসতে থাকা শফিক আড়াল থেকে উঠে বিড়ালটাকে একটা বাড়ি মারার জন্য পা বাড়াতেই দীপ্ত চিৎকার করে উঠলো। চিৎকার শুনে বিড়ালটা ভোঁ দৌড়ে পালাল। মুহূর্তে শফিকও নিজেকে সামলে নিল। ভাবলো ছেলের বুঝি কিছু হয়েছে। দীপ্ত'র দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঠিক আছে। তার মাথা কিছুটা ঠাণ্ডা হল।

যেকোনো পশু পাখি মারা আইনত দণ্ডনীয়। ব্যাপারটা শফিক রাগের মাথায় বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ভাগ্যিস ছেলে চিৎকার করে উঠেছিল। না হলে একটা বিচ্ছিরী কাণ্ড হয়ে যেত। ভবতে ভাবতে শফিক একটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন। 

- বাবা, বিড়ালটাকে তুমি মারতে যাচ্ছিলে কেন? ওর কী দোষ ছিল?

হঠাৎ দীপ্ত'র এই কথায় শফিক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। যদিও ইতিমধ্যেই শফিকের রাগ পশু পাখি হত্যার আইনের কথা মনে পড়াতে কমে গেছে, তারপরও কিছুটা বীরত্ব দেখানোর জন্যই বোধ হয় রাগত স্বরে ছেলেকে বললো,

- যদি ওকে ইচ্ছামত একটা বারী দিতে পাড়তাম, তাহলে ওই ব্যাটা আর কোন দিন আমাদের ময়লার ব্যাগ ছিঁড়তো না। কিন্ত তোর জন্য পাড়া গেলো না।

- ও সম্ভবত কোন খাবার খুঁজে পায় না, তাই প্রতিদিন এই কাজ করে।

ছেলের এই কথা শুনে শফিকের ঠাণ্ডা মেজাজটা একেবারে পানি হয়ে গেলো।  

ব্যর্থ অভিযান শেষে দু’জনেই ঘরে ফিরে এলো। কিন্তু সমস্যার কোন সমাধান হল না বলে শফিকের মেজাজটা আবার একটু একটু গরম হতে শুরু করলো। এর মধ্যে হঠাৎ দীপ্ত লাফিয়ে উঠলো।

- বাবা, একটা সুন্দর বুদ্ধি পেয়েছি। দেখবে বিড়ালটা আর আমাদের ময়লার ব্যাগ ছিঁড়বে না।

শফিক নিজেকে কিছুটা সংযত করার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো,

- কি তোর বুদ্ধি? খুলে বল।

- চল, আমরা কিছু খাবার ব্যাগটার কাছে রেখে দেই। তখন দেখবে বিড়ালটা ব্যাগ ছেঁড়ার ঝামেলায় না যেয়ে, রেখে দেয়া খাবার খেয়ে চলে যাবে।

ছেলের বুদ্ধিটা শফিকের বেশ পছন্দ হল। উঠতে শুরু করা রাগটা আবার নেমে গেলো। ছেলের দিকে কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে রইলো। একটা নিরীহ ক্ষুধার্ত প্রাণীর প্রতি ছেলের ভালোবাসা দেখে চোখের কোনটা ভিজে গেলো। রাতেই বাবা আর ছেলে মিলে কিছু খাবার ব্যাগটার কাছে রেখে এলো। 

বিড়ালটার কথা ভেবেই হয়তো রাতে দীপ্ত'র খুব একটা ভালো ঘুম হল না। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ আরও আগে ঘুম থেকে উঠে গেলো। ছেলেকে স্কুলে নেয়ার ঝামেলা নেই বলে শফিক তখনো নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার কানে দীপ্তর বাবা ডাক ভেসে এলো। বাবাকে ডাকতে ডাকতে সে রুমে ঢুকে মোটামুটি টেনে হিঁচড়ে শফিককে গার্ডেনে নিয়ে গেলো। গার্ডেনে যেয়ে শফিকের মুখ হা হয়ে গেলো। চোখ দু'টো হয়ে গেলো বড় বড়। রেখে দেয়া খাবারগুলো বিড়ালটা খেয়ে চলে গিয়েছে।  কিন্তু ময়লার ব্যাগগুলো অক্ষতই রয়ে গেছে। এই ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতি রাতেই বিড়ালটার জন্য দীপ্ত খাবার রেখে আসতো। একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিড়ালটা দিনের বেলায় ব্যাক গার্ডেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মিউ মিউ করতে লাগলো। সাথে সাথে দীপ্ত দরজা খুলে তাকে ঘরে ডেকে আনলো। তাকে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করলো। এভাবেই দিনে দিনে বিড়ালটা ওই পরিবারের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেলো। ফলে তারা ময়লা নিয়ে বিড়ম্বনা থেকেও বেঁচে গেলো।  

~০~

 (লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত। আংশিক সম্পাদন করে এখানে প্রকাশ করা হল)

১ Likes ৫১ Comments ০ Share ৭৫০ Views