কলাই ডাল আমার খুব পরিচিত। ছোটবেলায় দেখেছি উচু ভিটায় কিংবা ক্ষেতের আইলে শীত কালে কলাই ডাল চাষ করা হত। দেড়/দুই হাতের মত লম্বা গাছে ফুল/ফল আসত এবং ফল শুঁকিয়ে গেলে ভিতরে কাল বিচি পাওয়া যেত, তার খোসা ফেলে যা পাওয়া যেত তাই হচ্ছে কলাই ডাল বা মাস কলাই। ছোটবেলায় শুধু কলাই ডাল শুনেছি, এখন ঢাকা শহরে এসে শুনছি, মাস কলাই। মাস কেন যোগ করা হয়েছে তা আমার জানা নেই!
আসলে মাস কলাই ডাল রান্না হয় বড় মাছের মাথা ভেঙ্গে। আগে গ্রামে বাড়িতে প্রতি বছর যে জেহাফত হত তাতে মাস কলাই ডালের রান্না থাকতই। আমি আমার আম্মাকে বাসায় অনেক বার মাস কলাই ডাল রান্না করতে দেখেছি, তিনি অনেকভাবে এই কলাই ডাল রান্না করতেন। তার একটা রান্না ছিল মাছ না দিয়ে ডিম দিয়ে। আমি আমার মায়ের মত রান্না করার চেষ্টা করেছি। তবে রংটা আর একটু ধরাতে পারলে ভাল হত, সেটা পারি নাই। স্বাদে এই ডাল এমনিতেই অতুলনীয়, ঘ্রানে প্রান ভরে যায়।
চলুন দেখে ফেলি। দুই পর্বের রান্না! প্রথমে ডাল প্রিপারেশন এবং পরে মুল রান্না।
উপকরন ও পরিমানঃ - ২৫০ গ্রাম মাস কলাই ডাল - দুইটা/তিনটে মাঝারি পেঁয়াজ কুঁচি (দুই দফায় লাগবে) - কয়েকটা কাঁচা মরিচ (দুই দফায়) - রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ (ইন্ডিয়ান রসুন হলে আর একটু বেশী লাগবে) - হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া - হাফ চা চামচ বা তার কম লাল মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে - লবন, পরিমান মত, শুরুতে কম দিয়েই রান্না শুরু করা উচিত, লাগলে পরে দিতে পারবেন - পানি, পরিমান মত - তেল, পরিমান মত (আমি কমেই রান্না করেছি) - ধনিয়া পাতার কুঁচি
- ডিম, একটা (হাঁসের ডিম হলেও চলবে, আমি মুরগীর ডিম না পেয়ে হাঁস দিয়েই কাজ চালিয়েছি!)
প্রনালীঃ * ডালের পেষ্ট প্রিপারেশন প্রথমে ডাল ভেঁজে নিন। ঘ্রান বের হলেই থেমে যেতে হবে। বেশী ভাঁজলে পুড়ে যাবে। সুতারাং খেয়াল করে।
ডাল ভাঁজার পর ভাল করে ধুয়ে নিন এবং ডালের পাত্রে আরো দুইকাপ পানি দিয়ে সিদ্ব করতে থাকুন।
এবার কিছু লবন, হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া, কয়েকটা কাঁচা মরিচ এবং কয়েকটা পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে ভাল করে সিদ্ধ করুন। ডাল নরম হয়ে এলে ডাল গুলো আলাদা করে পাটা পুতায় বেঁটে নিতে পারেন কিংবা পুরা সব কিছু গ্রাইন্ড করে নিতে পারে। ব্যস হয়ে গেল, কলাই ডালের পেষ্ট। (এখানে একটা ছবি মিস করেছি, একা গ্রাইন্ড করার ছবিটা তুলতে পারছিলাম না)
* এবার মুল রান্নাঃ এবার অন্য একটা পাত্রে কিছু তেল নিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে এক টেবিল চামচ রসুন বাটা দিন এবং সাথে আরো কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন।
হাফ চামচ বা কম লাল মরিচ গুড়াও দিতে পারেন। (আমি ঝাল কম পছন্দ করি বলে কম দিয়েছি এবং সেজন্য ডালের রং কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে) ভাল করে ভেঁজে তেল উঠিয়ে নিন।
এবার প্রথম ধাপে করে রাখা কলাই ডালের পেষ্ট দিয়ে দিন।
এবার প্রয়োজনীয় পানি দিন। কলাই ডাল না পাতলা, না খুব গাঢ় হয়, তাই পানি দিতে লক্ষ রাখা দরকার। এভাবে মিনিট ২০ ভাল করে জ্বাল দিয়ে নিন।
এমন অবস্থায় এসে যাবে। এবার একটা ডিম ভেঙ্গে একটা বাটিতে গুলিয়ে নিন এবং ডিমের কাই দিতে দিতে নাড়াতে থাকুন। (আমি এই কাজটা একা করাতে ছবি তুলতে পারি নাই, এভাবেই দেখিয়ে দিলাম)
ভাল করে নাড়িয়ে নিন। ঠিক এমন দেখাবে। আগুনের আঁচ মাধ্যম থাকবে।
এবার ধনিয়া পাতার কুঁচি দিন।
ভাল করে মিশিয়ে নিন এবং ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলুন।
ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
মাস কলাই ডাল রান্না ডিম দিয়ে।
দুইটি বিষয় না বললেই নয়ঃ ১) রং টা আর একটু পাকা করতে লাল মরিচের গুড়া আরো একটু বেশি দেয়া দরকার ছিল। ২) ডালটা সিদ্ধ মানে ডালের পেষ্ট যাকে বলছি, সেখানে ডালটা পাটাপুতায় বেঁটে নিলে ভাল হত। গ্রাইন্ড করাতে ডালটা বেশী মিহীন হয়ে গেছে। ফলে ফরেন কোন সুপের মত লাগছে! হা হা হা…
সবাইকে ধন্যবাদ। পাতলা বা ঘন ডালতো প্রতিদিন পাতে নিন, আজ একবার মাস কলাই ডাল খেয়ে দেখুন। মজাই মজা! একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছা হবে। আমি নিশ্চিত।
Comments (3)
আপনি ছোটবেলাতেই বড় কবি হয়ে গিয়েছিলেন দেখি। ধন্যবাদ। কবিতা ভাল লেগেছে।
খুশি হব নাকি লজ্জা পাবো বুঝে উঠতে পারছিনা। :|
ধন্যবাদ
মুক্তি চাইলেই কি পাওয়া যায়? স্বাধীনতা অর্জন করা খুব কঠিন। তবে মুক্তিকামী মানুষের সাথেই আছি।
যা পাওয়া যায়না তা চাওয়াটার তীব্রতাই তো বরাবর বেশী তাই না দাদা?