Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

লুকোচুরি

শফিক সাহেব রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় বসেন। বারান্দায় বসার কারণ তার ঘরে বসে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। নিষেধ করেছেন তার স্ত্রী। সিগারেটের গন্ধে তার নাড়িভুঁড়ি নাকি উল্টে আসে। তার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে কথা। তার স্ত্রী কড়া কড়া কথা শোনান। তার কড়া কথা শুনতে ভালো লাগে না। তার বারান্দায় বসে সিগারেট টানতে ভালো লাগে। তবে আজ ভালো লাগছে না। সমস্যা হয়েছে। সমস্যা মানেই টেনশন। শফিক সাহেব টেনশনে আছেন। টেনশনের কারণ হচ্ছে অর্পা। অর্পা তার মেয়ে। একমাত্র মেয়ে। একমাত্র মেয়েকে যেমন আদর দিয়ে ঘিরে রাখা হয় তিনি তা করেননি। আরও এক ডিগ্রি বেশি করেছেন। তিনি আদর দিয়ে মেয়েকে বাক্সবন্দী করে রেখেছেন। বেশি আদর পেলে সন্তানেরা মাথায় উঠে যায়। অর্পা মাথায় ওঠে নি। মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। এ কারণে টেনশন আরও বেশি হচ্ছে।

টেনশনের বিষয় হচ্ছে একটা শব্দ। শব্দটা হচ্ছে “জান”। জান এর ইংরেজি হল লাইফ। জান সব প্রাণীরই থাকে। এটা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে অর্পার মোবাইলে জান নামের একজন কল করে। মানুষের নাম জান হয় না। পানির বোতলের নাম হয়। তাও জান না। জীবন। তবে যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। জান আর জীবন একই কথা।

শফিক সাহেব প্রতিরাতে মেয়ের পড়াশোনার খোঁজ খবর করেন। আজও মেয়ের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। মেয়ে ছিল বাথরুমে। তখনই মেয়ের মোবাইলে মেসেজ আসল। তিনি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন জান মেসেজ করেছে। মেসেজে লেখা “জান, ফোন ধরো প্লিজ” এরপরেই একটা ইমো দেওয়া। ইমোতে ঠোঁট কুঁচকানো একটা ছোট হলুদ চেহারা। এক চোখ বন্ধ আর এক চোখ খোলা। ঠোঁট লাল।

তিনি ফোন রেখে বেরিয়ে এসেছেন। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। তিনি বারান্দায় এসে বসলেন। সাথে নিয়ে এসেছেন এক বোতল ঠাণ্ডা পানি।

-বাবা!
-কিছু বলবি?
-তুমি আমার মোবাইল ধরেছ?
-ধরেছিলাম। তবে জান তোকে ফোন ধরতে বলেছে।
-ওর নাম জীবন।
-ও আচ্ছা। কিন্তু তোর নাম তো অর্পা। তোকে বড়জোর আপা বলা যায়। জান বলল কেন?
-ও অনেক ভালো ছেলে বাবা। কাল তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। বাসায় আসতে বলেছি।
-করে কি?
-ভ্যাগাবন্ড।
-ও আচ্ছা।
-ও আচ্ছা না বাবা। ও অনেক ভালো কবিতা লেখে। পত্র পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে কয়েকটা। ওর সব কবিতা আমার মুখস্থ। দাড়াও তোমাকে একটা শোনাচ্ছি…

অর্পা হেঁটে হেঁটে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকে। অর্পার আবৃত্তির গলা বেশ ভালো। সাধারণ কবিতাও তার আবৃত্তির কারণে অসাধারণ শোনায়।

তবে কবিতাটি আসলেই অসাধারণ। শফিক সাহেব মুগ্ধ হয়ে শোনেন। এত চমৎকার কবিতা অনেক দিন তিনি শোনেননি। কবিতা শুনতে শুনতেই তিনি অতীতে ফিরে গেলেন। রুমানার জন্যে তিনিও কবিতা লিখতেন। তারপর পার্কে বসে শোনাতেন। রুমানা মুগ্ধ হয়ে শুনত। এখন রুমানা কবিতা শোনে না। টেলিভিশন দেখে। চ্যানেলের নাম সনি আর স্টার প্লাস।

অনেকদিন রুমানাকে নিয়ে কবিতা লেখা হয় না। আজ লিখবেন। রুমানাকে শোনাবেন। রুমানা মুখ বিকৃত করে বলবে… বুড়ো বয়সে এসব কি হচ্ছে? তবে তার চোখে মাখানো থাকবে ভালোবাসা। সে ভালোবাসায় তিনি ডুবে থাকবেন।

অর্পা তার নিজের রুমে চলে গেছে। তবে শফিক সাহেব এখনো বারান্দায় বসে আছেন। ছন্দ মিলাবার চেষ্টা করছেন। ছন্দ মিলছে না। তিনি বিরক্ত। তবে হাল ছাড়ছেন না।

জীবন আনন্দময়। কেউ তাকে ছুতে পারে। কেউ পারে না। শফিক সাহেব ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন। এই পারছেন তো এই পারছেন না। লুকোচুরির মত খেলা। লুকোচুরি খেলাও আনন্দময়।

১ Likes ২৭ Comments ০ Share ৪৪৫ Views

Comments (27)

  • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    পোষ্ট-এর জন্য ধন্যবাদ

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    শুভ কামনা রইল