সময়ের তালে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে উন্নতির ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে । শিক্ষায় বিশেষ করে নারী শিক্ষায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলেছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট বাংলাদেশটি । কয়েক দশক আগে যে দেশটির নারীদেরকে ঘরের বাহিরে বের হতে নানা বাধার সম্মূখীন হতে হত সেই দেশটির নারীরা আজ শুধু উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ক্ষান্ত নয় তারা বেশ সম্মানের চাকরিও করছে । কর্মস্থলে বাংলাদেশী নারীদের পদচারণা কেবল দেশের পরিমন্ডলেই সীমাবদ্ধ নেই তারা বিশ্বের বহুদেশে দেশের হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে । নারীর এ উন্নতির পেছনে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতদের মত মহীয়সী নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য । দেশের মানুষদের পূর্ব সংস্কার ভেঙ্গে সকলেই বুঝতে শিখেছে একজন শিক্ষিত মা একটা শিক্ষিত জাতি দিতে পারে । নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাওয়ার কারনে দেশে শিক্ষিতের হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে । বাংলাদেশের মত একটি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে সরকারের আন্তরিকতায় পুরুষদের চেয়ে নারী শিক্ষার হার কয়েক শতাংশ বেশি । নারীদের ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষা অর্জনে সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার তাদের শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করেছে । সরকার প্রদত্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত অভিভাবকরা তাদের কন্যা সন্তানদেরকে উচ্চশিক্ষা প্রদানের সাহস পাচ্ছে । নারী শিক্ষা উন্নয়নের কারনে দেশের অনেক সমস্যাও বিলুুপ্তির পথে । যার মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ, বিবাহে যৌতুক ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা এবং দেশের জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হার ক্রমশই কমে আসছে ।
কোন বস্তুর সূফলের অন্তরালে তার একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে । অর্জন বা প্রাপ্তির তুলনায় সে পার্শ¦ প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কম হয় না। বাংলাদেশে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানুষের দোড় গোঁড়ায় পৌঁছে দিতে পারলেও উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে ছুটতে হয় শহর পানে । নিজের পরিচিত শহর ছেড়ে একটি অপরিচিত শহরের ভিন্ন পরিবেশে একজন পুরুষ শিক্ষার্থীর জন্য অনুকূলের হলেও নারী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় অনেক ঝক্কি-ঝামেলা । সকল সমস্যার মোকাবেলা করে একজন শিক্ষার্থী খুব দ্রুতই নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তার আসল উদ্দেশ্য সাধনে । চলার পথে জীবনের অভিজ্ঞতায় যোগ হয় অনেক কিছু । বন্ধুত্ব হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শিক্ষার্থী কিংবা অন্যান্য মানুষের সাথে । কেউবা ছেলে বন্ধু আবার কেউবা মেয়ে । বন্ধুত্ব গড়িয়ে আস্তে আস্তে রূপ নেয় প্রেমে । শিক্ষার্থীরা একেবারে অভিভাবক শূন্য অবস্থায় থাকার কারনে কেউ তাদেরকে ভাল মন্দের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়ার থাকে না । যে অভিভাবকদের কঠোর নির্দেশনায় জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের অনুশাসনের বাইরে এসে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতার চুড়ান্ত স্বাদ ভোগ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে জড়িয়ে পড়ে অনৈতিক সম্পর্কে । আবেগকে প্রশমন করতে না পেরে বয়সের গতি অনেককেই এমন মোহে মোহিত করে যা থেকে ফিরে আসা অনেকটাই অসম্ভব । বন্ধুত্বের উচ্ছ্বাস এবং বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রভাবে বাংলাদেশের ছেলেমেয়ার জড়িয়ে পরে বিবাহপূর্ব অনৈতিক শারীরীক সম্পর্কে । এ সম্পর্ককে ধারাবাহিক করার জন্য ছেলে মেয়েরা জড়িয়ে পরে লিভটুগেদারে । যা একদিকে যেমন মানসিক বিকারের বহিঃপ্রকাশ তেমনি পারিবারিক ব্যবস্থায় ভাঙন সৃষ্টির একটি অন্যতম কারন । বাবা-মা সন্তানের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে, তাদেরকে নিজেদের কাছ থেকে দূরে রেখে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা রোজগার করে নিজেরা ঠিক মত না খেয়ে সন্তানের লেখা-পড়ার নিশ্চিত করার জন্য টাকা পাঠায়, যাতে সন্তানের কোন কষ্ট না হয় । অভিভাবকের দেয়া সে টাকা আসল উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে যখন কোন অনৈতিক সম্পর্ক ধারাবাহিক করার কাজে ব্যয় করা হয় তখন সেটা জাতির ভবিষ্যত কর্ণধারদের জন্য কতটা নীতির এবং বাবা-মায়ের ঋণের দায় শোধ করার জন্য কতটা সহায়ক তা কোন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ভাবার অবকাশ থাকে না । বাবা-মা যখন তার সন্তানের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কোন প্রতিবেশীর সাথে গর্ব ভরে গল্প করেন তখন তার সন্তান যৌবনকে উপভোগ করার জন্য কোন এক ফ্লাটে কিংবা পার্কের নির্জনে কাটায় । এর পরিনতি কোন কালেই ভাল হবে না হবার নয় । অতি সম্প্রতি এমনি এক লিভটুগেদারের কারনে বলি হতে হয়েছে একজন মেডিকেল ছাত্রীকে । বাবা-মা স্বপ্ন বুনেছিল তার মেয়ে ডাক্তার হয়ে যেমনি তাদের পরিবারকে স্বচ্ছল করবে তেমনি গরীব দুস্থদের সেবা করে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেবে না । অন্যদিকে তাদের মেয়ে তখন তার ছেলে বন্ধুকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাড়া বাসায় দৈহিক কামনা নেভানোয় ব্যস্ত । কথিত স্বামীর সাথে ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায় খুন হল মেয়েটি । কিছু কিছু মৃত্যু আছে যা তেমনি দহন করে না কিন্তু মেডিকেল ছাত্রীটির এ মৃত্যু তার বাবা-মায়ের কপালেও কলঙ্কের তিল অঙ্কন করে দিয়ে গেল ।
মানুষের জন্য শ্রেষ্ট ও পূর্ণ জীবনব্যবস্থা ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মেই বিবাহের প্রতি গুরুত্বারোপ করেই কেবল ক্ষান্ত হয় নি বরং বিবাহ পূর্ববর্তী শারীরীক সম্পর্কের প্রতি দিয়েছে কঠোর নিষেধ । বিবাহ কেবল একটি মেয়ে আর একটি ছেলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন নয় । বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় । বিয়ের উদ্দেশ্য কেবল মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণও নয় বিবাহের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন হয় সর্বোাপরি মায়ার বন্ধন সৃষ্টি হয় । বিবাহ সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধ করে সমাজে শান্তির ফল্গুধারা বর্ষিত করে । ধীরে ধীরে সমাজ ব্যবস্থাকে ঘুনে ধরতে শুরু করছে । বিদেশী পচনশীল সংস্কৃতি আমাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করেছে । দেশে চালু হয়েছে বিবাহোত্তর শারীরীক সম্পর্ক স্থাপন ক্রিয়া । যা শুধু অনৈতিকই নয় বরং সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক । দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় এমনকি মফস্বল শহরেও চালু হয়েছে লিভটুগেদার । হাজার হাজার তরুন তরুনী কোথাও স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আবার কোথাও অন্য কোন সম্পর্কের পরিচয় মেতে উঠেছে যৌবনের লীলা-খেলায় । এরকম চলতে থাকলে অচিরেই দেশের সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে । পশ্চিমা বিশ্বের মত অশান্তির দাবানলে প্রতিমূহুর্তে ছাড়খাড় হবে ছোট্ট শান্তির দেশটি । বিবাহপূর্ববর্তী লিভটুগেদার এবং শারীরীর সম্পর্ক বন্ধে সকলকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে । এর কুফল সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে । সরকারকে কঠোর নীতিমালা প্রণয়েন মাধ্যমে এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে । কোন অবস্থাতে যদি এ অনৈতিক কর্মকান্ড বিজয়ী হয় তবে দেশের চরম পরিনতি কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না । কাজেই শিক্ষিতরা যদি শিক্ষিতের মত কাজ না করে তবে দেশের আগামী জাহেলি যুগের চেয়েও বর্বর হবে । নারীদের অবস্থা আবারও ২০০০ বছরের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে । নারীরা ভোগ্য পণ্য ব্যতিরেকে আর কোনভাবেই মূল্যায়িত হবে না । সুতরাং দেশের সকলের স্বার্থে সবাইকে এ কু-কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময় । কোন অপশক্তি যদি মূলে বিনাশ না করা যায় তবে পরে সেটা ধ্বংস করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় । এটা যত দ্রুত বুঝতে পারা যাবে জাতির জন্য ততোটা মঙ্গলের হবে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
Comments (5)
স্বপ্নরা বেঁচে থাকে চিরকাল।
স্বপ্নই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে...
শুভ কামনা। ভাল লাগলো
ধন্যবাদ প্রিয়।ভাল থাকবেন।
রব্বানী দা
কবিতা বেশ লাগল
অভিনন্দন---------
ধন্যবাদ প্রিয়।ভাল থাকবেন।
স্বপ্ন আগামী। স্বপ্নের কোনো শেষ নেই।
স্বপ্নরা বেঁচে থাকে চিরকাল।
আমার মনটা আলোকিত হল কবিতায়।চমৎকার।ভাল থাকবেন।