খাঁচার ভেতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়?
ফকির লালন শাঁহের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সহজবোধ্য, বহুলশ্রুত একটি গান। সহজ কথার রুপক এই গানটি দেশের আনাচে কানাচে বাজে। এই গানটি শোনেননি বাংলাদেশে এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার। দেহতত্বের এই গানটি শোনার পরই আমাদের মনে ভাবনার শুরু হয়। সত্যিতো!! আমাদের প্রাণপাখী কেমন করে এসেছে আবার কেমন করেই বা কোন অচিন দেশে চলে যায়? তাকেতো আমরা কেউ ধরতে পারিনা। আহা যদি ধরা যেতো। বেড়ী পরিয়ে তাকে রাখা যেত।
আমরা মগ্নতায় ডুবি। কত কি একসঙ্গে মনে এসে ভীড় জমায়। লালন শাঁহর সব গানের কথাতেই এমন নিগুঢ় তত্বের কথা আছে। মানব জীবনের নানা দিক নিয়ে নানা চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটেছে তার প্রতিটি গানে। তার গানে ভাবের কথা আছে। দর্শনের কথা আছে। যা আমাদের ভাবায় এই জগত সংসার সম্পর্কে। মানুষ সম্পর্কে। জাত ভেদ ধর্ম সম্পর্কে। মানুষ, একমাত্র শুধু মানুষই লালন শাঁহের সব ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। এই সত্য আমরা পাই তার সব সৃষ্টিতে। তাই তিনি বলেছেন, সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার, ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার।
সত্য বল সুপথে চল
ওরে আমার মন
বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক তরুন প্রজন্মের একটা অংশ লালনগীতি শুনছে। শুনছেন সব বয়সের অনেকেই। এটা নিঃসন্দেহে আশার কথা। আনন্দের কথা। অথচ খুব বেশী দিন আগের কথা নয় উনার কিছু অনুসারী এবং মারফতী তরিকার কিছু মানুষ ছাড়া এই গান কেউ শুনতো না। বরং যারা শুনতো তাদের প্রতিও একটা অবজ্ঞার ভাব চোখে পড়তো। অন্ততঃ আমার চোখে পড়েনি ৮০র দশকে অথবা তার আগে পরে ঢাকায় কেউ লালন গীতি শুনছে আজ যা অহরহ দেখা যায়। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। লালন শাঁহ এবং তার গান এখন প্রায় ক্রেজ। আমরা অনেকেই তার গান শুনি। আবেগে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু সেই গানের বানী আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রতিফলনের চেষ্টা করি না কেউ।
আমরা কজন সত্য বলি? কজন সুপথে চলার চেষ্টা করি?
লালন শাঁহ এখন আর গেঁয়ো ফকির নয়। বিরাট ভাবের মানুষ। তার মাজারে দেশী বিদেশী ভক্তের ঢল নামে। ৩ দিন থেকে বাড়িয়ে এখন তার স্মরণে মিলন মেলা বসে ৭ দিন ব্যাপী-মাসব্যাপী। তার গান ভাবনা দর্শন চর্চা এখন বিরাট পর্যায়ের আতঁলামী। কিন্তু এই শোনা পর্যন্তই আমাদের কাজ। তারপর সব শেষ। ভাব আর ভাব থাকে না। ভাবের ব্যাপক অভাব দেখা দেয়।
তার চিন্তা চেতনা ভাবনা দর্শনের কতটুকু আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি?
আদৌ কি কেউ করি?
পাখী কখন জানি উড়ে যায়
একটা বদ হাওয়া লেগেছে পাখীর গায়
পাখী কখন জানি উড়ে যায়
এই একুশ শতকে আমরা সবাই খুব ব্যাস্ত থাকি। কাজে কর্মে জীবন যাপনে এতো ব্যাস্ততা আমাদের; আমরা যে একদিন মরে যাবো। এই পৃথিবীতে যে আমরা কেউ চিরদিনের জন্য আসিনি এই সত্য কথাটাও আমাদের মনে আসে না কোন দিন। দিনে একবার মৃত্যুর কথাটাও যদি মনে হত তাহলে মনে হয় এতো পাপাচার অনাচার হত না। কিছু হলেও কম হতো। অথচ সে সব নিয়ে ভাবনার সময়ই নেই আমাদের। লালন শাঁহের এমনি কত ভাবের কত মুল্যবান কথার কত গান আমরা প্রতিদিন শুনি। কেউ সেসব গানের কথাকে নিয়ে ভাবিনা। দুঃখজনক।
কিছু মানুষ আবার অতি বিদ্বান। মাথায় গামছা, আউলা ঝাঊলা চুল দাড়ি গোঁফ নিয়ে বিরাট পন্ডিত সেজে তার গানের কথা-সুরকে বিকৃত করে গাইছে। সেসব গানকে বলা হচ্ছে ফোক - লালন ফিউশন। আমি মনে করি এতে তার গানের স্বাতন্ত্রতা হারাচ্ছে। স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে তার গান গাওয়াতে আমি কোন দোষ দেখিনা। সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেটা হতেই পারে। কিন্তু তার চিরাচরিত সুরকে বিকৃত করে গাওয়া, কোন প্রকার ভক্তি ছাড়াই হেড়ে গলায় তার গান গাওয়াকে আমি তীব্রভাষায় নিন্দা জানাই। আশা করি সেসব কার্যক্রম হতে তারা বিরত থাকবেন।
সবাই ভালো থাকুন এই কামনা করি। লালন শাহের গান, তার ভাবনা চিন্তা চেতনার কথা, তার দর্শনের কথা আমরা আমাদের জীবনেও প্রতিফলের - প্রয়োগের চেষ্টা করবো সবাই এই প্রত্যাশা করছি।
মঙ্গলময় হোক সবার জীবন।
শুভ ব্লগিং।
Comments (31)
নাট্যকার স্যামুয়েল বার্কলে বেকেটের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
শুভেচ্ছা নুরু ভাই।পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদ নীল'দা। অসংখ্য ধন্যবাদ আমার প্রায় প্রতিটি লেখায় আপনার মন্তব্য ও উৎসাহ প্রদানের জন্য। তবে দুঃখ প্রকাশ করছি এই কারনে যে আপনাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ইচ্ছা থাকা সত্বেও কেবলমাত্র সময়ের অভাবে সৌজন্য উত্তর প্রদানে অপারগ হই। আমার এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য মার্জনা কামনা করছি। ঘাস ফুল ভাইসহ সবাইকে এখানে পেয়ে দারুন ভাবে খুশি। আশা করি ভবিষ্যতে দেখা হবে। ভালো থাকবেন। শীতে উষ্ঞ শুভেচ্ছা আপনাদের সবার জন্য
২৪তম মৃত্যুদিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা।
নাট্যকার স্যামুয়েল বার্কলে বেকেটের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি