Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রুশ সাহিত্যের জনক, রাশিয়ার প্রধান জাতীয় কবি আলেক্সান্দর পুশকিনের ১৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকীেত শ্রদ্ধাঞ্জলি


আধুনিক রুশ সাহিত্যের স্থপতি কবি আলেকজান্ডার পুশকিন। পুরো নাম আলেক্সজান্ডার সের্গেয়েভিচ পুশকিন।
যিনি রাশিয়ার সেক্সপিয়ার নামে খ্যাত। অকালে মারা গেলেও পুশকিন আজো আধুনিক রুশসাহিত্যের জনক বলে স্বীকৃত। ভাষার উপর আশ্চর্য দক্ষতা, প্রাঞ্জলতা ও গভীরতা ছিলো তাঁর সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্য। পুশকিন রাশিয়ান রোমান্টিজম এর প্রদর্শক হিসাবে স্বীকৃত এবং প্রেম বিষয়ক কবি হিসাবে জগদ্বিখ্যাত। সমসাময়িককালে তিনি শুধু রাশিয়ান হিসাবেই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীতে অত্যন্ত শক্তিমান কবি হিসাবে স্বীকৃত। মূলতঃ কবি হলেও তিনি নাটক, গল্প, মহাকাব্য, উপন্যাসও লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের নাম ‘ইয়েভেজেনি ওনেজিন’। পুশকিনের ‘ম্যাসেজ অব ইউরোপ’,‘রুসলাম অ্যান্ড লুদমান’ উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। আলেকজান্ডার পুশকিনের বড় বৈশিষ্ট্য ছিলো বিশ্বসাহিত্যের উপর তাঁর প্রচন্ড দখল। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে পুশকিনের মৃত্যুকে রুশ সাহিত্রের বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়। ১৮৩৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরন করেন কবি আলেকজান্ডার পুশকিন। আজ তাঁর ১৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

(শিশু আলেক্সজান্ডার সের্গেয়েভিচ পুশকিন)
কবি আলেকজান্ডার পুশকিন ১৭৯৯ সালের ৬ জুন জারশাসিত রাশিয়ার মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর লেখা রচনার প্রায় সবই ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়া ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, পোলিশসহ আরো অনেক ভাষায় তাঁর লেখা ভাষান্তরিত, অনূদিত হয়েছে। অনুবাদ করা শক্ত হলেও পুশকিনের রচনা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতেই থাকবে। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের নাম ‘ইয়েভেজেনি ওনেজিন’। উপন্যাসটি রুশ সাহিত্যের একটি মাইল স্টোন হিসেবে চিহ্নিত। এই উপন্যাসে তিনি সর্বপ্রথম বাস্তব কাহিনী-ভিত্তিক উপন্যাস রচনার দিক নির্দেশনা প্রদর্শন করেন। এ কারণে পুশকিনকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের স্থপতি তথা প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘ম্যাসেঞ্জার অব ইউরোপ’ নামে কবিতার বই। তাঁর আরো একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘রাশিয়ান অ্যান্ড লুইডম্যান’। আলেকজান্ডার পুশকিনের বড় বৈশিষ্ট্য ছিলো বিশ্বসাহিত্যের উপর তাঁর প্রচন্ড দখল। পুশকিন এর সময়কে রাশিয়ান কবিতার স্বর্ণসময় বলা হয়। ১৮২৯ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে রুশ সাহিত্যে তাঁর অনেকগুলো রচনার কারণে নবদিগন্তের উন্মেষ ঘটে। রাশিয়ার তখন ছিলো রাজতন্ত্র। পুশকিন ছিলেন রাজতন্ত্র বিরোধী। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পুশকিনকে সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে বন্দী করে নির্বাসনে পাঠানো হয় দক্ষিণ রাশিয়ার একটি দুর্গম অঞ্চলে তবু তার লেখনী থেমে থাকেনি।তিনি রাশিয়ান কবিতা বিশ্ব দরবারে যথার্থরূপে হাজির করেছেন। রাশান নাট্যকার হিসাবে অ্যান্তন চেখভ সর্বসেরা হলেও পুশকিন এর নাটকগুলোও সমাদৃত। তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন এবং তার সাংবাদিকতার বিষয় ছিল সাহিত্য। রুশ ভাষায় যে সংবাদপত্র তিনি সম্পাদনা করতেন তার বাংলা নাম হতে পারে সমসাময়িক সাহিত্য।

পুশকিনের অসংখ্য কবিতা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাশিয়ান রোমান্টিজম এর প্রদর্শক হিসাবে স্বীকৃত পুশকিন এর “আমি তোমাকে ভালবাসতাম, সম্ভবত এখনও ভালবাসিI loved you, and I probably still do কবিতাটি একটি শক্তিশালী ভালবাসার কবিতা হিসাবে সমাদৃত।

I LOVED YOU AND I PROBABLY STILL DO
Alexander Sergeyevich Pushkin
ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Genia Gurarie

I loved you, and I probably still do,
And for a while the feeling may remain…
But let my love no longer trouble you,
I do not wish to cause you any pain.

I loved you; and the hopelessness I knew,
The jealousy, the shyness – though in vain -
Made up a love so tender and so true
As may God grant you to be loved again.
ভালবাসতাম কবিতাটির বঙ্গানুবাদঃ
ভালবাসতামঃ আলেকজান্ডার পুশকিন

তোমাকে ভালবাসতাম, বোধকরি এখনো বাসি,
সে দীপশিখাটি নিভেনি আজো, অবশ্য
এটা আমার ভেতর এখন এতো শান্তভাবে জ্বলছে যে
তোমার বিব্রত বোধ করার কোনো কারণ নেই।
নীরবে প্রতিদানহীনভাবে তোমাকে চেয়েছিলাম,
খুব ঈর্ষা হতো কখনো, কখনো শরমিন্দা
ঈশ্বর যেন তোমাকে এমন একজন মিলিয়ে দেন,
যে তোমাকে ভালবাসবে ঠিক আমারই মতো
সন্তর্পণে ও বিশ্বস্ততায়।
এ কবিতায় একজন প্রেমিকাকে ভালবাসার কথা বলেছেন। যাকে প্রেমিক ভালবাসতেন, দূরে সরে যাবার পরও ভালবাসেন। কখনও কখনও তিনি প্রেমিকার ভালবাসার আবেগনাভুতি স্মরণ করেন। কিন্তু তিনি একইসঙ্গে উল্লেখ করেন যে তার ভালবাসা প্রেমিকার জন্য বিড়ম্বনা বয়ে আনবে না। কবি তার প্রেমিকার জন্য কোন দুঃখ/যন্ত্রণার কারণ হতে চান না। কবি কোন আশা ছাড়াই তার প্রেমিকাকে ভালবাসতেন। এতে ঈর্ষা ছিল, সঙ্কোচ ছিল, কিন্তু আশা ছিল না। এ ভালবাসা ছিল অত্যন্ত শক্ত ও সত্য। যদি ঈশ্বর দয়া করেন তবে আবারও ভালবাসা হতে পারে।

প্রখর আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন পুশকিন ২৯টি দ্বন্দ্বযুদ্ধে লড়েছিলেন। ১৮৩৭ সালে ধোপা খানার খালের ধারে বারো নম্বর বাড়ীর উঠোনে ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিক জর্জ চার্লস ডি হিপোরেনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে লি খেয়ে মারাত্মক আহত হন তিনি। উল্লেখ্য, হিপোরেন কবিপত্নী নাতালিয়া পুশকিনাকে বলাত্কার করতে চেয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৩৭ সালের ০৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে রাশিয়ার সবচেয়ে খ্যাতনামা কবি আলেকজান্ডার সের্গেয়েভিচ পুশকিন তার সেন্ট-পিটার্সবার্গের মইকা সড়কের নিজ বাস ভবনে পরলোক গমন করেন। আলেক্সান্দার পুশকিনের স্মরণে সেই থেকে আজকের এই দিনটি পুরো রাশিয়া জুড়ে পালিত হয়। বিশেষ করে কবি যেখানে বাস করেছেন,সাহিত্য রচনা করেছেন। তার নিজ শহর মস্কোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিকে স্মরণ করা হয়। আলেকজান্ডার সের্গেয়েভিচ পুশকিন অকালে মারা গেলেও আজো তিনি আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক বলে স্বীকৃত। শুধু রাশিয়ায় নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আলেক্সান্দর পুশকিনের প্রায় ২০০ স্মৃতিমূর্তি আছে।

রুশসাহিত্যের জনক ও রাশিয়ায় প্রধান জাতীয় কবি আলেক্সান্দর পুশকিনের আজ ১৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৬১৩ Views