১৭ জুলাই, ১৯৭৬।
'রাষ্ট্র বনাম মেজর জলিল গং' মামলায় 'সরকার উত্খাত' ও 'সশস্ত্র বাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা' চালানোর দায়ে বাংলাদেশ ফৌজদারি দন্ডবিধি ১২১ (ক) ধারা এবং ১৯৭৫ সালের ১ নং রেগুলেশনের ১৩ নং সামরিক আইন বিধি বলে কর্ণেল আবু তাহেরকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মামলার দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। রায় ঘোষণার মাত্র পাঁচ ঘন্টার মধ্যে তাড়াহুড়া করে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান মামলার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান বঙ্গভবনে।
কেমন ছিল সেই 'বিশেষ সামরিক আইন ট্রাইব্যুনাল'?
এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য করা হয় দুজন সামরিক অফিসার এবং দুজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে। প্রচলিত রীতিতে মার্শাল ল কোর্টে বিচার বিভাগ থেকে সেশন জজ, অতিরিক্ত সেশন জজ প্রমুখদের বিচারক হিসেবে নেওয়া হলেও এই ট্রাইব্যুনালে সেরকম কিছুর চিহ্নমাত্র ছিল না। সেই সাথে জারি করা হয় আশ্চর্য এক অধ্যাদেশ যাতে বলা হয় এই ট্রাইব্যুনাল যে রায় দেবে তার বিরুদ্ধে কোন রকম আপিল করা চলবে না! বিচার চলবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে এবং বিচার প্রক্রিয়া সর্ম্পকে তথ্য প্রকাশ হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ! বিচারকাজ শুরুর আগে আইনজীবীদের শপথ করানো হয় সাত বছর সময়ের মধ্যে এ বিচারের চূড়ান্ত গোপনীয়তা মানতে হবে এবং এ শপথ ভঙ্গ করলে হবে কঠিন শাস্তি। জেনারেল 'খুনী' জিয়া কৃত স্বচ্ছ(!), নিরপেক্ষ(!) আর আর্ন্তজাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল! ২০ জুলাই রাত ৪ টা ১ মিনিটে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ৩ দিনেই মামলা খতম!
যখন ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তখন রায় দিয়েই খালাস। আপিল, আপিল নিস্পত্তিকরণ, ৩০ দিন, ৬০ দিন, 'নির্দেশনামূলক' কত ফ্যাকড়া! এইটা আসলেই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ আর আর্ন্তজাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল না! জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যখন প্রহসনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, মুক্তিযুদ্ধে যখন গোটা 'বাংলাদেশকে' নির্বিচারে হত্যা করা হয় তখন আইনের (অপ)শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকে, সুশীলদের চুলকানি শুরু হয় না। আর যখন সেই যুদ্ধাপরাধী কুত্তারবাচ্চাদের রায়ের মান নিয়ে আলোচনা চলে তখন বলতে ইচ্ছা করে, 'জন্মই তোমার আজন্ম পাপ, বাংলাদেশ'॥
Comments (1)
ইসলাম নারীকে অনেক সম্মান দিয়েছেন এবং শিক্ষা দানে বলেছেন