Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

১০ বছর আগে

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -৩

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অসংখ্য মানুষ দারুন সব লেখা লিখেছেন।আমি ও সখে সখে লিখলাম।আমি জানি আমার লেখার হাত ভালো না।তারপরও আমি অনেক খুশি।কারন অনেক মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে আমাকে ফোন করে,মেইল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।তাদের সবাইকে এক আকাশ ধন্যবাদ।

"সখি ভাবনা কাহারে বলে সখি যাতনা কাহারে বলে তোমরা যে বল দিবস-রজনী, ভালোবাসা,ভালোবাসা...."
দেবেন্দ্রনাথের চৌদ্দটি সন্তানের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কনিষ্ঠ পুত্র।রবীন্দ্রনাথের পরে 'বুধ' নামে আর একটি পুত্র ছিল,কিন্তু সে অকালমৃত।তারা দ্বারকানাথ ঠাকুরের বংশ।এই ঠাকুর বাড়ি থেকে ভারতী নামে একটা মাসিক কাগজ বের হতো।এই কাগজে প্রত্যেক সংখ্যায় রবি ঠাকুরের একাধিক লেখা থাকত।কিন্তু তার নাম ছাপা হতো না।কিশোর বয়স থেকেই তার বেশ কলমের জোর ছিল।মাত্র বিশ-একুশ বছরেই একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।অবশ্য তখন নিজেরাই পয়সা খরচ করে ছাপাত।

রবীন্দ্রনাথ সবসময়'ই মাতৃভাষার ওপর খুব গুরুত্ব দিয়েছেন।একারনে যে,সৃজনশীলতা মাতৃভাষার সাথেই ওতপ্রোত।তো সেই মাতৃভাষা থেকে যদি আমরা দূরে সরে যাই তাহলে দক্ষতা দিয়ে হয়তো জব মার্কেটে একটা জায়গা করে নেওয়া যাবে।কিন্তু তা মূল শিক্ষা আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে। রবীন্দ্রনাথের সমস্ত সাহিত্য এবং সঙ্গীতের মূল যে একটি ভাবনা কাজ করত তা হলো মুক্তি।এর বিপরীতটাও আছে -পরাধীনতা বা বন্ধন।যেহেতু রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতে সাহিত্যচর্চা করে গেছেন সেজন্য পরাধীনতার বিষয়টি একটু গুরুত্বপূর্ন।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের মতোই মানুষ।পার্থক্যটা হলো তিনি শিল্পী।আমরা শিল্পী নই।শিল্পী সত্তাটি ভেতরগত বিষয়।যেমন রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলায় দেখা গেল- তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন লেখালেখি ছাড়া আর কিছু করবেন না।এটা কখনও এভাবে প্রকাশ করা যাবে না যে কেন একজন মানুষ শিল্পচর্চা করে,অন্যজন করে না।এই প্রেরনাটা ভেতর থেকে আসা।রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার একটি বড় বিস্ময়- তিনি কিভাবে সেই ছেলেবেলাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কেবল লেখালেখি'ই করবেন!ব্যাপারটা আমার কাছে বড় অদ্ভুত,বিচিত্র এবং প্রায় ব্যাখ্যাহীন মনে হয়।ঠাকুর বাড়ির যে ঐতিহ্য,তার দিকে তিনি গেলেন না।তিনি ঠিক করলেন লিখবেন এবং তা বাংলাতেই লিখবেন।

রবীন্দ্রনাথ যখন গীতাঞ্জলির অনুবাদ করলেন তখন কিন্তু তা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।তাঁকে বলা হয়েছিল ইংরেজী তর্জমাটি কাউকে দিয়ে আপনি একবার দেখিয়ে নিন।পরে বলা হলোছিল,তর্জমাটি একটু পরীক্ষা করে ঠিকঠাক করে দেওয়া যেতে পারে।আইরিশ কবি ডব্লিউ বি,ইয়েটস গীতাঞ্জলির ভূমিকায় লিখেছিলেন,কিছু কিছু গান পড়ে তার কান্না আসে।গান গুলির একটা আলাদা মরমী আবেদন আছে।পরবর্তী সময় অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে,ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে পরিমার্জনা করার কিছু নেই।এটি একটি মরমী বিষয়...। ১৯১২-র ১২ নভেম্বর গ্লোব পত্রিকায় একটি রিভিউ বের হয়।তাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়,মিসটিক্যাল রাইটিংয়ের মধ্যে ভুল থাকাতেই তার গৌরব।কারণ,একজন মিসটিক পয়েটের ক্ষেত্রে যদি তার গ্রামার সম্পর্কে,সেনটেন্স মেকিং নিয়ে কষাকষি লাগে তাহলে সে মিস্টিক পয়েট হতে পারে না।(মিসটিক হলেই কি তার ভাষার শৃংখলা রাখতে হবে না!)গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদটি ইংরেজদের কাছে মাঝে মাঝে খটমট লাগে।হয়তো সেটা কেই তারা বলেছেন মিসটেক।কিন্তু এটা কোনভাবেই বলা যাবে না যে ভুল হয়েছে।ব্যাকরনগত ভুল খুবই কম পাওয়া গেছে। আসলে রবীন্দ্রনাথকে অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করতে হয়েছিল দেড়শ অথবা একশ বছর আগে বলেই।এখন যদি তিনি ইংরেজিতে লিখতেন তাহলে কোনো চিন্তাভাবনার দরকার হতো না।

"আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে পরপারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে- দিবস ফুরাবে যবে সে দেশে যাইতে হবে এ পারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশী...."
ষোল বছর বয়সে দু'দুবার রবীন্দ্রনাথকে বিলেত পাঠানো হয়েছিল ব্যারিস্টার কিংবা আই এ এস হয়ে আসার জন্য।দু'বার'ই সে ব্যর্থ হয়েছে।প্রায় দু'বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে অনেক অর্থ ব্যয় করেও কোন ডিগ্রী না নিয়ে রবি ফিরে আসেন।রবি'র মেজবৌদি জ্ঞানদানন্দিনী সেই সময় দুই ছেলেমেয়ে বিবি আর সুরেনকে নিয়ে ইংল্যান্ডে থাকতেন।রবীন্দ্রনাথের দুই দাদা পাগল,অন্যরাও খামখেয়ালি কিন্তু কৈশোরেই রবি'র বুদ্ধির প্রাখর্য প্রকাশ পায়।

কাদম্বরী রবি'র চেয়ে মাত্র দেড় বছরের বড়।কাদম্বরী এক অসংসারী নারী,তার শরীর ও মন জুড়ে রয়েছে শিল্পের সুষমা।এই লাজুক দেবরটিকে প্রীতি ও বন্ধুত্ব দিয়ে তিনি সব সময় আপন করে রাখতেন।আর রবি'ও তার মন সম্পূর্ন উন্মুক্ত করে দিতে পারে শুধু এই নতুন বঊঠানের(কাদম্বরী) কাছেই।
"আলাইয়া ঝাঁপতালে,তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, এ সমুদ্রে আর কভু হবো না পথহারা।"
রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমের উপর টেক্কা দিতে গিয়ে উপন্যাস লিখেন।'বউঠাকুরানীর হাট'।কবিতার মতন,এই গদ্য রচনার সময়ও নতুন বঊঠানের(কাদম্বরী) ছায়া তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
(চলবে...)

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩১৯ Views

Comments (2)

  • - সুমন আহমেদ

    চমৎকার একটি ঝরঝরে অনুবাদ পাঠ করলাম। পুরো অনুবাদই কাব্যময়তায় পূর্ণ। তবে শেষ স্তবক বেশি কাব্যময় মনে হয়েছে। সেই সাথে কবিতার পেছনের কথাও জানলাম। আপনার সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি প্রিয় রাকিব। আশা করি প্রকৃত সৃজনশীলতার অর্থ জানা থাকলে আপনার লেখা সমাদৃত হবে সকলের কাছে।

    অবশ্য আমি সব সময় পাঠক হতে চেষ্টা করি লেখকের লেখা দেখে, মুখ দেখে নয়। আপনার লেখা সব সময়ই আমাকে শিখতে সহযোগিতা করে। ধন্যবাদ রইল। অনেক অনেক শুভ কামনা।

    • - কে এম রাকিব

      ধন্যবাদ সুমন আহমেদ।

      শুভেচ্ছা নিরন্তর।

    - গোলাম মোস্তফা

     

    • - কে এম রাকিব

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    খুব ভালো হয়েছে।

    • - কে এম রাকিব

      ধন্যবাদ সরোয়ার জাহান।

    Load more comments...