Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

nushrika mahdeen

১০ বছর আগে

রক্তকরবীর যুবরাজ চলে গেছেন না ফেরার দেশে

আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন খালেদ খান যুবরাজ যিনি নাট্যপ্রেমীদের কাছে আমাদের কাছে যুবরাজ নামেই পরিচিত ছিলেন। ছোটরা তাকে যুবদা বলেই ডাকত। ১৯৭৫ সালে আমার মাধ্যমেই সে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেয়। যুবরাজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একাধারে পিতার, বন্ধুর ও ছোটভাইয়ের মতো। এই তিন সম্পর্কেই আমি ওর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। আমরা দিনে অন্তত দু-তিনবার ফোনে কথা বলতাম।

তার মনোবল দেখে আমি বিস্মিত হই। যখন অনেক ডাক্তার দেখানোর পর বোঝা গেল যে ওকে এই রোগ নিয়েই থাকতে হবে। তখনও ও হতাশ হয়নি। খালেদ খান সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল তার হাত ধরে, নাটকের ক্লাসও শুরু করেছিল। হুইল চেয়ারে বসে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। অর্থাৎ জীবনে হার কাকে বলে জানত না যুবরাজ।

আমি আরও বিস্মিত হলাম তার প্রয়াণের পরে-- যখন দেখলাম দীর্ঘদিন নাটকে ছিল না, তারপরও এত লোক তাকে দেখতে এসেছেন! মৃত্যু হয়তো এত শীঘ্র আসত না, যদি সে যানজটে আটকে না পড়ত।

ব্যক্তিজীবনে ও দারুণ রসিক ছিল। আমাদের গ্রিনরুম সবসময় মাতিয়ে রাখত। যুবরাজ ছিল জীবনের প্রতি নির্মোহ, লোভহীন। তার দেশপ্রেম ছিল অগাধ। ওর নিজস্ব একটা দার্শনিক চিন্তা ছিল। রবীন্দ্রনাথ, টলস্টয়, শেক্সপিয়র পড়ত।

বাচনভঙ্গি ছিল অপূর্ব। যেটা নিয়ে বড় বড় অভিনেতারা নিরন্তর সাধনা করে গেছেন। উচ্চারণ ছিল অসাধারণ। শম্ভু মিত্র, স্যার লরেন্স যেটা করতেন। সেই চেষ্টাটাই সে করত। কলকাতায় অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল।

বাংলাভাষার প্রতি তার প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসা ছিল। মঞ্চে গান যে সংলাপ হয়ে যায়, সেটা করতে পারত খালেদ খান। তাকেই একমাত্র দেখেছি, যে কিনা মঞ্চের গানকে সংলাপে পরিণত করতে পারত। গান দিয়েও যে কথা বলা যায়, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছে যুবরাজ।

তার অভিনয় ছিল দর্শনীয়। টিভিতেও তার অভিনয় প্রশংসার যোগ্য। রক্তকরবীতে আমি ওর পাশে অভিনয় করতে গিয়ে প্রায়শই নিজের সংলাপ ভুলে যেতাম। যখন আমি নির্দেশনা দিতাম, অনেককেই যুবরাজের কাছে শিখে নিতে বলতাম। আমার চেয়েও ও ভালো বলতে পারত, অনেককেই আমি ওর কাছে পাঠিয়েছি কথা বলা শেখার জন্য।

মাসদেড়েক আগেও রক্তকরবী করার সময় গ্রিনরুমে এসেছিল। তার কথা শুনে ছেলেমেয়েরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যেত। ও পাঁচ-ছয় বছর নাটক থেকে বিযুক্ত ছিল। তবুও তাকে কেউ ভোলেনি। আমরা তাকে ভুলতে পারব না। আমি ওকে কোনোদিন ভুলতে পারব না। ওর সঙ্গে কথা বলাটাই আমার জন্য লোভনীয় ছিল।

যুবরাজ এমন একজন মানুষ, যে নাকি আরও দশবছর হুইল চেয়ারে থাকলেও হাত দুটি মানুষের জন্য ভরে রাখত। ওর স্ত্রী মিতা হক নিজের নামেই খ্যাত আর ওর মেয়ে জয়িতার গান আমি শুনেছি। ও ভালো গায়। বাবার গুণ পেয়েছে। শোক সামলে নিতে ওদের সময় লাগবে। ওদের জন্য আমার শুভ কামনা সবসময় থাকবে।

আমরা ২৫ ডিসেম্বর যুবরাজকে উৎসর্গ করে রক্তকরবী মঞ্চস্থ করব। তাকে আরও বেশি করে পাওয়ার জন্যই আমরা রক্তকরবী করব। তাকে ছাড়া আমার জীবনে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমি শুধু এটিই বলব, আমার ব্যথার আড়ালে ও জেগে থাক। 


আতাউর রহমান
অনুলিখন: মলয় গাঙ্গুলী

১ Likes ৭ Comments ০ Share ৪১১ Views

Comments (7)

  • - তাহমিদুর রহমান

    আপনার লেখা আমার ভাল লেগেছে। 

    • - সুলতানা সাদিয়া

      অশেষ ধন্যবাদ।

    - রোদের ছায়া

    আমার ভুল না হয়ে তুমিই গ ক এর সাদিয়া তো??

    চমৎকার  শিশুতোষ গল্প লিখেছ , ঝগড়া ও তর্কের পার্থক্য  আমরাও শিখলাম ।ভালো লাগা রইলো।

    • - সুলতানা সাদিয়া

      আমিই সেই সাদিয়া। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

    - ঘাস ফুল

    শিশুতোষ গল্পে মা বাবার ঝগড়া বিবাদ বা তর্কের কথা বলা উচিৎ না। এমনকি কোন ধরণের ঝগড়া বিবাদের কথাই বলা উচিৎ না। এটা করলে শিশুদের মনে নেতিবাচক একটা প্রভাব পড়ে, যা কখনো কাম্য হতে পারে না। শিশুতোষ গল্পে সব সময় ইতিবাচক দিক দেখানো উচিৎ। মুনতাহা পঞ্চমশ্রেণীতে ভর্তি হতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে ১২ বছর বয়সটা মনে হয় একটু বেশী হয়ে গেলো। চতুর্থশ্রেণীতে পড়া একটা বাচ্চার বুঝার কথা না কোনটা ঝগড়া আর আর কোনটা তর্ক, যখন তা উচ্চ গলায় হয়। যদিও গল্পের শেষে সমাধানটা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বয়সের একটা বাচ্চার মাথায় এটা খেলা করার কথা না। ব্যাপারটা তাই আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আর শিশুতোষ গল্পগুলো ৫০০-৭০০ শব্দের মধ্যে হলেই ভালো হয়। আপনার গল্পটা ৯৬০ শব্দের। গল্পের ধারা বর্ণনাও অনেকটা বড়দের মতোই হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমি এটাকে শিশুতোষ গল্প বলবো না। ধন্যবাদ সাদিয়া। আশা করছি আপনি আমার মন্তব্যটাকে পজিটিভলি নিবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকুন সতত। 

    • - সুলতানা সাদিয়া

      খুব ভাল লাগল আপনার পজিটিভ মন্তব্য। এই জন্যই তো এই প্লাটফরমে আসা। বাচ্চাদের জন্য লেখা খুবই কঠিন। কিছুতেই বাচ্চা হতে পারি না! তবু আমার ভাগনি আর মেয়েকে চোখের সামনে দেখে এই গল্পটা লেখা। আমার প্লে পড়ুয়া মেয়ে আমাকে বলে, কি লিখ তুমি এত? আমার জন্য তো লিখই না! হাহাহা ওকে কথা দিয়েছি, লিখব। তাই শিখছি আর পড়ছি। এখন বাচ্চারা প্লে, নার্সারী, কেজি ওয়ান, ওয়ান থেকে ফাইভে পড়ে। যেতে যেতে বয়সটা এমনই হয়ে যায় যা আমার চারপাশে দেখেছি। আর বাচ্চাদের আমরা যেই লেভেল এ ভাবি এদের চিন্তা ভাবনা আরও বেশি পাকা। হাহাহা। আর ঝগড়া! আমিই একটা পচা মা বাচ্চাদের সামনে এই ধরনের ঝগড়া করে ফেলি!!! আসলেই ওদের সামনে ঝগড়া আনা ঠিক না। আপনার মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা। গল্পের সংখ্যার বিষয়, বাক্য রচনা সব ব্যাপারে আরও সচেতন হব।  সচেতন পাঠক এবং লেখক পাঠক অন্যের লেখা সমৃদ্ধ করে। শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা।

    Load more comments...