Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

৮ বছর আগে

যৌন হয়রানি বিস্তার রোধ করার উপায় কি?

নিত্যাকার রুটিন মাফিক আজও দুপুর নাগাদ গ্রান্থাগার থেকে বাসায় ফিরছিলাম । গত কয়েকদিনের প্রথা ভেঙ্গে এ শহরের আকাশে আজ সূর্য্য নামক গ্রহটি ব্যাপক দ্যুতি ছড়িয়ে পরিবেশকে বেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে । হাঁটতে হাঁটতে মাঝারি মানের তাপের তীব্রতায় বেশ তৃষ্ণার্ত অনূভব করছিলাম । ভাবছিলাম, কোন হোটেল থেকে গ্লাস খানেক পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করবো । কিন্তু যে পথ দিয়ে হাঁটছিলাম সে পথের হোটেলগুলোর পরিবেশ এবং সেখানে অবস্থানরত ধূমপায়ী নির্গত ধোঁয়া লালিত রুচিবোধ মূলেই নষ্ট করে দিয়েছে । অবশেষে রাস্তার পাশের একটি আইসক্রিমের দোকানে প্রবেশ করে নিম্ন মানের একখানা আইসক্রিম দিয়েই তৃষ্ণা নিবারণে সচেষ্ট হলাম । এই প্রথমবারের মত আবিষ্কার করলাম, আইসক্রিম পানির তৃষ্ণা না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয় !

 

 

আমি যে চেয়ারে বসে আইসক্রিম লেহ্য করছিলাম তার কয়েক ফুট দূরের আসনে আমার থেকে সামান্য কিছু বেশি বয়সী তিনটি জাইগান্টিক ফিগারের নাদুস-নুদুস যুবক বসে বসে বেশ হাসি-তামাশ করছিলাম । গাছখন্ড দিয়ে আইসক্রিম তুলে মুখে দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ওদের হো-হো টাইপের হাসির ফাঁক দিয়ে ওদের কথোপকথন বোঝার চেষ্টা করছিলাম । ওদের আলাপ শুনে মনে হয়েছে ওরা দুজন বাসের হেল্পার এবং একজন সুপারভাইজার । উল্লেখ্য যে, আমি যে দোকানটিতে বসেছিলাম সেটা বিভাগীয় শহরের প্রধান বাস স্টপেজ থেকে সামান্য দূরে । তাই ওরা যে বাসের হেল্পার ও সুপারভাইজার তা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি । একটি আইসক্রিম ভদ্রভাবে খেতে যেখানে মাত্র পাঁচ মিনিট লাগে সেখানে আমি মহাভদ্র সেজে প্রায় ২৫ মিনিট সময় নিয়ে আইসক্রিমটি শেষ করলাম । আমার উপস্থিতি ওদের আলাপে মোটেই বিঘ্ন ঘটায় নি ! ওরা যা আলাপ করছিলো তার সর্বাংশ উল্লেখযোগ্য নয় তবে সারমর্মে গিয়ে বলা যায়, ওরা তিনজন রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছিলো কিভাবে বাসে তোলার সময় মহিলাদেরকে যৌন হয়রানি করে, কোথায় কোথায় হাতের স্পর্শ দিতে চেষ্টা করে । প্রথমে হেলপার এবং পরবর্তীতে সুপারভাইজার কৌশলে মহিলাদেরকে নানাভাবে যৌন হয়রানির করার যে ফিরিস্তি প্রকাশ করছিলো তা শুনে ইচ্ছা করছিলো ওদের ইচ্ছা মত পিটাই কিন্তু সে শক্তি থেকে স্রষ্টা আমাকে ভয়াবহ রকমে বঞ্চিত করেছে এবং দেশের প্রচলিত আইনও সে সুযোগ রাখেনি । এমনকি অবস্থা ও পরিবেশ বিবেচনায় ওদের আলাপের বিরুদ্ধে মুখে প্রতিবাদ করার মত সাহসও দেখাতে পারিনি । প্রতিবাদ হয়ত করতে পারতাম কিন্তু সে প্রতিবাদ থেকে কি ফল আসতো ?

 

 

বাসের অশিক্ষিত হেল্পার কিংবা আঁকা-বাঁকাভাবে নাম লিখতে পারার যোগ্যতা সম্পন্ন সুপারভাইজারের মুখ থেকে যা শুনেছি তা আমার অনেক খারাপ লাগার কারণ হতে পারত কিন্তু এসব ঘটনা শুনে মোটেই খারাপ লাগেনি যখন মনে পড়েছে শিক্ষিত সমাজের একাংশের কর্মকান্ড । কিছু শিক্ষিত, সভ্য-ভদ্র মুখোশধারীসহ অনেকেই সুযোগমত তাদের হাত ও চোখের লালসা মিটিয়ে নিচ্ছে । গতকাল ফেসবুকে কোন এক মেয়ের স্ট্যাটাসে পড়ছিলাম, বাসে এক পিতা তার ছোট্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে হাতের স্পর্শ দিতে চেষ্টা করেছে । মেয়েটি লিখেছে, সে অপরাধীর হাত ধরে ফেলেছিলো কিন্তু চড়-থাম্পর দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে যখন পুরুষটির দিকে তাকালো তখন কোলের শিশুটির কথা ভেবে সে কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি । সন্তানের সামনে যদি বাবাকে চড় দিতো তবে, সন্তানের মনে বাবার প্রতি সে ক্ষোভ চিরদিন থেকে যেত । সমাজের পরিমল কিংবা এ জাতীয় চরিত্রহীন জ্ঞানপাপীদের নামগুলো যখন স্মৃতির কোঠায় ভেসে উঠে তখন বাসের হেল্পার কিংবা সুপারভাইজারগুলো অপরাধকে অপরাধ বলেই মনে হয়না (যদিও সবারটাই অপরাধ তবে তুলনামূলক বিবেচনায়) । হবে কিভাবে ? যারা সমাজে পরিবর্তনের দায়িত্ব নিয়ে আছে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যখন ধর্ষকের ভূমিকায় কিংবা ধর্ষকদের মদদদাতা-আশ্রয়দাতা, রক্ষার দায়িত্ব পালন করে তখন ফুটপাতের কিংবা বস্তির ঐ ছিন্নমূল মানুষগুলোর অপরাধকে কোন বিবেচনায় অপরাধ হিসেবে মূল্যায়িত করি ?

 

 

এতদিন সাবালিকাদের ধর্ষণ করার সংবাদ শুনলেও দেশ এখন সরব হয়েছে নাবালিকাদের ধর্ষণের সংবাদে । একটি বাচ্চা মেয়েকে যারা জোড়পূর্বক যৌন হেনস্থা করতে পারে তাদের সম্পর্কে লিখতে বিবেক সায় দিচ্ছে না । কি লিখবো সে সকল কুকুরদেরকে যারা বাচ্চা মেয়েদের বলৎকার করে । যে সকল কুৎসিত ভাষায় ঐ শ্রেণীর পশুদেরকে সম্মোধন করা উচিত তা আমার জানা নাই । ধর্ষকদের সমাজে বাস করতে চাই না । এ অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই । এমন একটি সমাজ চাই যেখানে নারীর নিরাপত্তা থাকবে । পুরুষ হবে নারীর সতীত্বের পাহাদার । আদৌ এ কামনা বাস্তবে রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি ? বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে তাতে বোধহয় নৈতিকতার আশ্রয় এখন এ সমাজ থেকে উদ্বাস্তু । ক্ষয়ে যাওয়া সমাজটাকে কোন মলম দিয়ে আবার সংগঠিত করা যাবে তা কি কারো জানা আছে ? আমি আপাতত তেমন কোন তত্ত্বের সন্ধান পাচ্ছি না যা সমাজটাকে কলুষমূক্ত করতে পারবে এবং যা সভ্যদের আদর্শ বাসস্থান হবে ।  

 

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

facebook.com/raju69mathbaria/   

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৫১ Views