Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তুহিন সরকার

১০ বছর আগে

যৌন জিহাদ!

“জিহাদ” শব্দটি সঙ্গে আমরা বহুলভাবে পরিচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জিহাদ নামক শব্দ জীবনের আঁশটে-পিষ্টে জড়িয়ে আছে, জিহাদী সংগঠনগুলোর বিস্ময়কর উত্থানের ফলে। অনেকে, অনেক প্রকার জিহাদের নাম শুনেছেন/শুনেছি কিন্তু “যৌন জিহাদ”-এর নাম ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এই প্রধম শুনছেন, অনেকটা প্রবন্ধকার কামাল গাবালা মত, হয়ত তিনি আক্ষেপ করে তাঁর “আরব জাগরণ ও ‘যৌন জিহাদ’” প্রবন্ধে বলেছেন, আমার এই ৬০ বছরের জীবনে “যৌন জিহাদ” কথাটা আগে কখনো শুনিনি। আর আমি আমার যৌবনে “যৌন জিহাদ”-এর নাম শুনিনি, আনেক জিহাদের নাম শুনেছি জীবনে কিন্তু যৌবনে! ধর্মান্ধরা আর কত ভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে হীন এই রাজনীতি করবে আর কত ভাবে মানবতা, মানব সমাজকে কলুষিত করবে? পবিত্র ধর্মের নামে মানুষ আর কত নিচে নামবে! আর কত ভাবে নারীকে উৎস্বর্গ করা হবে ভোগের পণ্য হিসেবে জিহাদ নামক মোড়কে নিজের সতীত্বকে বলি দিয়ে। ধিক্কার জানাই এই সমাজ, সমাজ ব্যবস্থাকে, যেখানে জিহাদের অপব্যখ্যার নামে নারীর সতীত্ব চরমভাবে ভুলণ্ঠিত হচ্ছে। ধিক সেই নরপশু,নরাধম ধর্মান্ধদের ধিক শত সহস্র। যারা ধর্মের নামে নারী এবং নারীর দেহ নিয়ে উন্মত্তায় মেতেছে। আধুনিক যুগে আমরা প্রাগঐতিহাসিক জীবন যাত্রায় মেতেছে। তথা কথিত পূরুষ শাসিত সভ্য সমাজে সতীত্বের পরীক্ষা দিচ্ছি/নিচ্ছি আমাদের অবক্ষয়ের শেষ কোথায়? যাহাহোক যে কারণে এত অবতারণা। বিস্তারিত নিচে,

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কামাল গাবালা; মিসরের আল-আহরাম পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক-এর লেখাঃ-

আরব জাগরণ ও ‘যৌন জিহাদ’

আমার এই ৬০ বছরের জীবনে ‘যৌন জিহাদ’ কথাটা আগে কখনো শুনিনি। এ অঞ্চলে আড়াই বছর আগে আরব জাগরণ শুরুর আগে এ ব্যাপারে কোথাও পড়িনি বা কারও মুখে এ সম্পর্কে কোনো আলাপও শুনিনি। কথাটা এখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে, তিউনিসিয়া ও মিসরের তথাকথিত ইসলামপন্থী সরকারের শাসনামলে এবং সিরিয়ায় সহিংস গৃহযুদ্ধ চলাকালে। সেখানে কট্টরপন্থীরা ফতোয়ার মাধ্যমে বৈধতা নিয়ে এ ধরনের আচরণে (যৌন জিহাদ) জড়িত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ফতোয়াটি আরোপ করেছিলেন সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতা শেখ মোহাম্মদ আল-আরিফি। পরবর্তীতে তিনি অবশ্য এ ব্যাপারে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিউনিসিয়ার তৎকালীন মুফতি শেখ উসমান বাতিখ গত ১৯ এপ্রিল বলেন, দেশটির ১৬ জন নারীকে প্রতারিত করে ‘যৌন জিহাদে’ অংশ নিতে সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। বাতিখ আরও বলেন, এ ধরনের কাজকে অনৈতিক এবং শিষ্টাচারপূর্ণ ও ভালো পরিবেশে লালিত তিউনিসীয় নারীদের রীতিবিরোধী উল্লেখ করে নিন্দা জানানোর অল্প সময় পরেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়।

ইতিমধ্যে তিউনিসিয়ার সংবাদপত্রগুলো খবর প্রকাশ করে, শত শত নারী তিউনিসিয়া থেকে সিরিয়ায় গিয়ে যৌন জিহাদে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁদের অনেকেই যোদ্ধাদের (মিলিশিয়া) দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ফিরে আসেন। মিসরেও একই ধরনের কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের আন্দোলনের পাশাপাশি। ওই আন্দোলন গত আগস্টে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

এ ধরনের ন্যক্কারজনক বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমি হয়তো কখনোই সাহস করতাম না, যদি বিষয়টি একাধিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও আঞ্চলিক খবরের শিরোনাম হয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ না করত। খোদ তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট মনসেফ মারজুকি এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। সিরিয়া থেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ফিরে আসা তিউনিসীয় নারীদের প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চাইলে মারজুকি বলেন, অত্যন্ত ‘যন্ত্রণাদায়ক’ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত থাকতে পারলেই তিনি স্বস্তি পেতেন, কারণ ন্যক্কারজনক এ বিষয়টি ধর্ম এবং পতিতাবৃত্তির মধ্যে যারা সংমিশ্রণ করে, তাদের নৈতিক ঘাটতিই শুধু প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টিতে তাঁর ব্যক্তিগত সম্মানও আহত হয়েছে। প্রত্যাবর্তনকারী নারীদের অবশ্যই নিপীড়িত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সঠিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভুল পথে চালিত করা হয়েছে।

তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লতফি বিন জিদ্দোও স্বীকার করেন, ওই নারীরা সিরিয়ায় গিয়েছিলেন এবং দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তিদের সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত পার্লামেন্ট অধিবেশনে জিদ্দো বলেন, তিউনিসীয় নারীরা যখন সিরিয়ায় যান, তখন তাঁদের আটকাতে ব্যর্থ সরকার হাত গুটিয়ে বসে ছিল। মন্ত্রী আরও বলেন, সরকার ছয় হাজার তিউনিসীয়কে সিরিয়ায় যেতে বাধা দেয়, যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এ ছাড়া ৮৬ জনকে আটক করা হয়, যারা ‘জিহাদের’ উদ্দেশে সিরীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও সাবেক মুফতির এই বিবৃতিগুলো তিউনিসিয়া এবং দেশটির সুশীল সমাজে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

‘যৌন জিহাদ’ নামে পরিচিত লজ্জাজনক কাজের বৈধতাদানকারী ‘শেখদের’ রক্ষার অভিযোগে তিউনিসিয়ার ধর্মবিষয়কমন্ত্রী নুর আল-দিন আল-খাদেমির বিচারের দাবি জানিয়েছে দেশটির ইমাম সমিতি। তাঁরা দেশের সব মসজিদে ‘ওহাবি মতবাদকে না বলুন’ শীর্ষক একটি প্রচারাভিযান শুরুর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন।

মিসরের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোও এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে এসব প্রতিবেদনে রাবা আন্দোলনের (মুরসির সমর্থকদের) দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। ঔপন্যাসিক হামদি রিজক এ ব্যাপারে তাঁর কলামে একটি ভয়ংকর কাহিনি শুনিয়েছেন। আল-মাসরি আল-ইউম পত্রিকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কলামে রিজক লিখেছেন, মিসরের একটি গ্রামে (নাম উল্লেখ করা হয়নি) তিনি সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। সেখানে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে (সাংস্কৃতিকভাবে) বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে: একজন ব্যক্তিকে কলঙ্ক থেকে রক্ষা করতে এবং শিশুসন্তানদের জীবনের ঝুঁকি এড়ানোর স্বার্থে আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তে তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে বলা হয়েছে। তিনি নিজের স্ত্রীর দেহ যৌন জিহাদের অজুহাতে উৎসর্গ করেছিলেন।

লেখকের মতে, এক দম্পতি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন এবং মুরসি সমর্থকদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরই কেবল তাঁরা ফিরে আসেন এবং অদ্ভুত সেই গল্পটি শোনায়। কিন্তু বিচারের জন্য তাঁরা আদালতের পরিবর্তে স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে যান। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর সেই নারী স্বামীর বাড়িতে না গিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে গিয়ে বলেন, তাঁকে তাঁর স্বামীর পূর্ণ সম্মতিক্রমে কীভাবে ইসলামপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছিল।

রাবা আল-আদাওয়েয়া বিক্ষোভ চলাকালে যৌন জিহাদের অজুহাতে এভাবেই নারীদের উৎসর্গ করা হয়। স্বামী অবশ্য শেখদের ‘ফতোয়া’ উদ্ধৃত করে নিজের কৃতকর্মের পক্ষে যুক্তি দেখান। ওই শেখরা বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এলাকা ও মসজিদসহ সবখানে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়ে ফতোয়া ছড়িয়ে দেন, ‘আরব জাগরণ’ শুরু হওয়ার পর পরই যা ইসলামপন্থীরা ছিনিয়ে নিয়েছে।

যখন সেই নারী তাঁর ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের কাহিনি মা-বাবার পরিবারকে বলেন, তাঁরা ক্ষোভে-ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন; প্রতিশোধ গ্রহণ এবং পারিবারিক সম্মান রক্ষার জন্য সেই স্বামীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে লোকটি স্থানীয় বিচারকদের (এঁরা আইনের সনদধারী কোনো বিচারক নন, বরং স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সালিস পরিচালনা করেন। অশিক্ষিত লোকজন বিভিন্ন ব্যাপারে এ ধরনের অবৈধ বিচারকদের কাছে যায়) শরণাপন্ন হন। ওই সালিস ‘আদালতের’ তিনটি বৈঠক চলাকালে স্বামীটি তাঁর কৃতকর্মের বৈধতা সম্পর্কে যুক্তি উপস্থাপন করেন এবং বলেন, তাঁর স্ত্রী যা করেছেন তাতে আল্লাহর অনুমোদন রয়েছে। যৌন জিহাদের ফতোয়ার উল্লেখ করে তিনি নিজ দাবির প্রতি জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন এবং স্ত্রীকে তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানান।

লেখকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তিনি ওই বিচারপ্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখেছেন। সেই অবৈধ সালিস বৈঠক তিন দিন স্থায়ী হয়। কিন্তু তিনি বাদী ও বিবাদীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি। তিনি কাহিনি শেষ করেন এই বলে, এটা ছিল রাবা বিক্ষোভ চলাকালে শোনা সবচেয়ে ভয়ানক গল্পগুলোর একটি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিক্ষোভকারীরা যে বৈধতার নামে তাদের সম্মান উৎসর্গ করে এবং বিবাহবহির্ভূত যৌনতাকে স্বীকৃতি দেয়, ইসলামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

কামাল গাবালা: মিসরের আল-আহরাম পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।

kgaballa@ahram.org.eg

 

তথ্য সূত্রঃ-

আরব জাগরণ ও ‘যৌন জিহাদ’- প্রথম আলো।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৭১৫ Views