Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ফেরদৌসী বেগম

১০ বছর আগে

যে মেয়েটিও ছিল বিজয় দিনের উল্লাসে

       

 

 

 

 সকালের নামায শেষে বাচ্চাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে এসেই আবার একটু হালকা ঘুম দিয়ে উঠল শ্যামলী। ঘুম থেকে উঠেই চোখ কচলাতে কচলাতে রান্না ঘরে গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে নিল। সাথে একটা ডোনাট সহ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে টিভির সামনে এসে বসল। টিভিটা অন করতেই তার চোখে পড়ল ডিসেম্বর মাসের অনুষ্ঠান সূচী। তখনই শ্যামলী আনমনে বলে উঠল, "এটা ডিসেম্বর মাস! আশ্চর্য্য, আমার খবরই নেই। কিভাবে যে সময়টা চলে যায় টেরই পাই না।" কারণ প্রতিবারই ডিসেম্বর আসলেই তার অতীতের কিছু কথা আছে, যা তখন মনে পড়ে যায় এবং গর্ববোধও হয়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শ্যামলী ডুবে যায় সেই অতীতের দিনগুলিতে--

 

 

  এই তো সেইদিনের কথা, অথচ দেখতে দেখতে কতগুলো বছর পার হয়ে গেলো। যখন থেকে শ্যামলী বুঝতে শিখেছিল ঠিক তখন থেকেই, যতবার সে দেশে বেড়াতে যেতো ততবারই শ্যামলী তার নানা ভাইয়ার কাছ থেকে সেই গল্পটি বহুবার শুনে এসেছিল। যেটা নাকি তার নানা ভাইয়া খুবই গর্ব করে বলতেন। নানা ভাইয়া বলতেন---

 

"জানিস শিলি, তুই তখন খুবই ছোট, একটা দুটু করে শব্দ বলা মাত্র শিখেছিস। যুদ্ধের থমথমে ভাবটাও মাত্র কমে এসেছিল, ঠিক তখনই হঠাত্‍ তোর আব্বু টেলিগ্রাম পাঠাল অসুস্থ বলে। টেলিগ্রাম পেয়ে তোর আম্মু ঢাকায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেল। এই অবস্থায় তোদেরকে কি ভাবেইবা পাঠাই, কারণ তুই তো ছিলি একেবারেই ছোট। বাধ্য হয়ে তাই আমি নিজেই, তোর আম্মু আর তুকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। তখন ট্রেন লাইন বন্ধ থাকায় লঞ্চে যাচ্ছিলাম। লঞ্চে উঠার পর পরই হঠাত্‍ দেখি এক ঝাক মুক্তি বাহিনী এসে লঞ্চটা ভরে গেল এবং আরো দলবেঁধে আসছে। আমি তখন কিছুটা ভয়ও পাচ্ছিলাম, আর তুর মাও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল তখন। তার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয়ে গেল ওদের জয় উল্লাস "জয় বাংলা, জয় বাংলা" বলে। সমস্ত লঞ্চটাকে কাঁপিয়ে তুলছিল। তুকে আমি কোলে নিয়ে রেখেছিলাম, ওদের আনন্দ দেখে হঠাত্‍ তোর ছোট ছোট হাত-পা নাচিয়ে তুইও তখন ওদের সাথে "জয় মাঙ্গা, জয় মাঙ্গা" বলছিলি। আর সেটা দেখে ওরা সবাই আরো উল্লসিত হয়ে গেল এবং বলছিল "দেখ দেখ এই ছোট্ট মেয়েটিও 'জয় বাংলা' বলছে"। তারপর ওরা সবাই তুকে আমার কোল থেকে এক প্রকার কেড়েই নিয়ে গেলো এবং সবাই মিলে লুফালুফি করছিল আর উপরের দিকে ছুড়ছিল 'জয় বাংলা' বলে। কোলের বাচ্চা হয়েও তুই একটুও ভয় পাচ্ছিলি না তখন বরং তুই খিল খিল করে হাসছিলি আর 'জয় মাঙ্গা' বলছিলি ওদের সাথে। আমিও তখন গর্বে আনন্দে উল্লোসিত হয়ে সবার সাথেই বলছিলাম "জয় বাংলা,জয় বাংলা।"

 

   কথাগুলো শ্যামলী শুনেছিল তার নানা ভাইয়ার কাছ থেকে অনেকবার। আজো যেন সেই গল্পের মত কথাগুলো শ্যামলীর কানে বাজে। সময় তো থেমে থাকে না বরং সময় তার মতই চলে যায়, কিন্তু সময়ের ফ্রেমে বাঁধা স্মৃতিগুলো ঠিকই থেকে যায়। নানা ভাইয়া আজ আর নেই, যে নাকি এত গর্ব করে বলতো। সেই ছোট্ট মেয়েটিও আজ আর সেই ছোট্টটি নেই, সে এখন অনেক অ-নে-ক বড় হয়ে গিয়েছে। তবে এই ডিসেম্বর মাস আসলেই শ্যামলীর মনে পড়ে সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা, আর মনে পড়ে তার নানা ভাইয়ার বলা সেই গল্পটিও। তাই সে আজও আনমনে বলে উঠে "জয় মাঙ্গা, জয় মাঙ্গা"। নানা ভাইয়ার বলা সেই গল্পটি মনে পড়লে শ্যামলীর এখনো ভালই লাগে, একটু গর্ববোধও হয়। আর মনে মনে ভাবে,  ছোট্ট মেয়েটিও যে ছিল সেই বিজয় দিনের উল্লাসে।

১ Likes ১৪ Comments ০ Share ৫৯৬ Views

Comments (14)

  • - মাঈনউদ্দিন মইনুল

    সুন্দর ভাবনা....

    ওদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে উদাসীন থাকার কারণেই দেশের এ অবস্থা....

    শুভেচ্ছা রইলো কবির জন্য :)

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য। ভাল থাকবেন সতত

    - ঘাস ফুল

    আপনি যাদের কথা বলেছেন, তারাই দেশ গড়ার কারিগর। অথচ ওরাই অবহেলিত পদে পদে। ওদের নিয়ে সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্নের কথা আমরা শুধু খাতা কলমে আর সভা সেমিনারে বলে বেড়াই কিন্ত বাস্তবে ঘর বাঁধি ওদের দূরে ঠেলে দিয়ে। ভালো লাগলো আপনার চেতনা জাগানিয়া কবিতা ঝড়। 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      আপনার মন্তব্যর জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই

    - মাসুম বাদল

    ওরাই প্রকৃত মানুষ - মানবিক চাষে ও  বিকাশে। সাধুবাদ জানাই আপনার বোধকে 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ ভাই বরাবরের মতোই পাশে থেকে প্রেরণা দেয়ার জন্য

    Load more comments...