Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ম্যাজেলানীয় মেঘের রহস্য উন্মোচন

আমাদের গ্যালাক্সির নাম আকাশগঙ্গা। এর ব্যাস যেকোন সাধারণ সর্পিল গ্যালাক্সির মতোই, প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ, আর এতে তারার সংখ্যা ২০ থেকে ৪০ হাজার কোটি। আমাদের স্থানীয় গ্যালাক্সি জগতের অন্য সব গ্যালাক্সিই কোন না কোনভাবে আকাশগঙ্গার মহাকর্ষের টান অনুভব করে। আনুমানিক দুই ডজন ছোটখাটো গ্যালাক্সির ওপর আমাদের টান এতোই বেশি যে তাদেরকে আমাদের গ্যালাক্সির স্যাটেলাইট বলা হয়। স্যাটেলাইটের বাংলা উপগ্রহ, কিন্তু শব্দটি গ্রহের সাথে এতো বেশি সংযুক্ত যে স্যাটেলাইট গ্যালাক্সির ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা বেশ ঝামেলার, তাই ‘স্যাটেলাইট’ নামটিই এখানে প্রনিধানযোগ্য।

আকাশগঙ্গার স্যাটেলাইট গ্যালাক্সিগুলোকে মোটামোটি চারভাগে ভাগ করা যায়: ম্যাজেলানীয় মেঘ, উপবৃত্তাকার স্যাজিটারিয়াস, বামন গ্যালাক্সি এবং অন্যান্য। নামেই পরিচয়, যেমন ম্যাজেলানীয় মেঘ পৃথিবীর আকাশে দেখতে অনেকটা কোন সুদূর মেঘের মতো, স্যাজিটারিয়াস তারামণ্ডলে অবস্থিত গ্যালাক্সিগুলো প্রায় উপবৃত্তাকার আর অপেক্ষাকৃত ছোটগুলো বামন। এদের মধ্যে একটি বিশেষ কারণে ম্যাজেলানীয় মেঘ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ম্যাজেলানীয় মেঘ মূলত দুইটি গ্যালাক্সির সমন্বয়ে গঠিত, বৃহৎ ও ক্ষুদ্র এবং তাদেরকে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে দেখা যায়। এরা আকর্ষণীয় কারণ, আকাশগঙ্গার মহাকর্ষীয় টানে একমাত্র এই স্যাটেলাইটগুলো ছাড়া অন্য সবাই তাদের সব গ্যাস হারিয়ে ফেলেছে। গ্যাসহীন গ্যালাক্সিতে নতুন তারার জন্ম অসম্ভব, কারণ গ্যাস ঘনীভূত হয়েই তারা তৈরি করে। তাই একমাত্র ম্যাজেলানীয় মেঘেই নতুন, অতি-উজ্জ্বল তারার দেখা মেলে।

প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য সবাগুলোর মত ম্যাজেলানীয় মেঘ থেকেও কেন আকাশগঙ্গা সব গ্যাস বের করে আনতে পারল না? এর উত্তর জানার মত ক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে অতি সাম্প্রতিক সময়ে। অনুমান করা হয়েছিল, ম্যাজেলানীয় মেঘ আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি দূরত্বে থেকে আকাশগঙ্গাকে আবর্তন করে। অতীতে আমাদের ধারণা ছিল এই মেঘদ্বয়ের কক্ষপথ আমাদের থেকে ১০০-২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। কিন্তু ২০০৬ সালে হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর বিজ্ঞানী নিটিয়া কালিভায়ালিলের (Nitya Kallivayalil) নেতৃত্বে একটি গবেষক দল প্রস্তাব করেন, এই কক্ষপথ অন্তত ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটা সত্যি হলে ম্যাজেলানীয় মেঘের রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত হতো। কারণ কক্ষপথ দূরে হলে তার ওপর আমাদের মহাকর্ষীয় টান কম হবে এবং তথাপি তার গ্যাস হারানোর সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে।

নিটিয়া প্রস্তাবটি করেছিলেন হাবল মহাকাশ দুরবিন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাবলের নতুন তথ্য আরও ভালভাবে বিশ্লেষণ করে নিটিয়া তার পূর্ব অনুমানকেই সত্য প্রমাণ করেন। ম্যাজেলানীয় মেঘ যে আমাদেরকে অন্তত ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থেকে আবর্তন করে তা নিয়ে এখন কোন সন্দেহ নেই বললেই চলে। তার বদলে এখন তৈরি হওয়া নতুন সন্দেহটি হচ্ছে, এই গ্যালাক্সি দুটি আসলেই আমাদেরকে আবর্তন করছে কিনা। আবর্তন করলেও তাদের কক্ষপথ যে ভয়ানক উপবৃত্তীয় তা নিশ্চিত। অর্থাৎ কোন সময় ম্যাজেলানীয় মেঘ আমাদের থেকে অনেক দূরে সরে যায়, আবার কখনও বা খুব কাছে চলে আসে। মহাবিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত মাত্র একবারই এরা আমাদের কাছে আসার সুযোগ পেয়েছে, এবং সেই সময়টা এখন। এ কারণেই তাদের তারাগুলোকে পৃথিবী থেকে এতো উজ্জ্বল দেখায়।

কক্ষপথ এতো উপবৃত্তীয় এবং দূরত্ব এতো বেশি হওয়ার কারণেই ম্যাজেলানীয় মেঘ গ্যাস হারায়নি এবং এখনও উজ্জ্বল নবীন তারা তৈরি করতে পারছে। তবে ক্ষুদ্র মেঘটির অবস্থা এতো ভাল নয়, বেশ করুণই বলতে হবে। আকাশগঙ্গার চেয়ে তার উপর বৃহৎ ম্যাজেলানীয় মেঘের আকর্ষণ অনেক বেশি, সেই আকর্ষণে সে বেশ দ্রুত গ্যাস হারাচ্ছে এবং অচিরেই হয়তো সব গ্যাস হারিয়ে একটি ভুতুড়ে বামন উপগোলকীয় (spheroidal) গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। বামন উপগোলকীয় গ্যালাক্সিতে গ্যাস এবং তথাপি কোন নবীন তারা থাকে না, যে কারণে তাদেরকে ভুতুড়ে দেখায় বললে ভুল হবে না।

 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩৪৬ Views

Comments (2)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বেশ ভাল লাগল কবিতা