Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নাজমুল হুদা

১০ বছর আগে

মৌ

মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি
একবার দাঁড়াওনা ভাই,
ঐ ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।

এত যে ব্যাস্ততা তা শুধু অসময়ে জীবন ধারণের চিন্তায়। শীত নামার আগেই পর্যাপ্ত খাদ্য যোগাড় করতেই হবে। ফুলে ফুলে ঘুরে মধুর কাঁচামাল ‘নেকটার’ সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। আর শুধু সংগ্রহ করলেই তো হয় না, জমা করে রাখার আগে তা আবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রীতিমত শোধন করে নিতে হয়। আমাদের রান্না করে খাবার প্রস্তুত করার চেয়ে সে কাজ কোন অংশেই কম ঝক্কির নয়। সংগৃহীত নেক্টারে পানির পরিমান থাকে কম-বেশী ৬০% ভাগ। কিন্তু সঞ্চিত মধুতে কোনক্রমেই ২০% ভাগের বেশি পানি থাকা চলবে না, তা যদি থাকে তবে মধু যাবে নষ্ট হয়ে। কিন্তু মৌমাছিদের তো চুলায় ফুটিয়ে পানি কমানোর মত কোন কায়দা জানা নেই। কাজেই তাদের নিজস্ব পন্থাতেই এই ‘ফুটানো’র কাজ সেরে নিতে হয়।

এক মৌসুমে কোন একটা মৌচাকে ১৫০-২৫০ কিলোগ্রাম মধু সঞ্চয় করা হয়। অর্থাৎ সংগৃহীত নেকটার থেকে ১৮০-৩৫০ লিটার পানি নিষ্কাশন করার কাজটি করতে হয় মৌচাকের মৌমাছিদেরকেই। গরম আবহাওয়ায় মৌমাছিদের জন্য এ কাজ খুব বেশী কষ্টের নয়, প্রায় দৈনন্দিন কাজের মতই। কিন্তু শীতল আবহাওয়ায় বেশ কষ্ট করতে হয়, তখন মৌচাকের সকল মৌমাছি গা ঘেষাঘেষি করে অবস্থান করে মোচাকের ও নিজেদের শরীরের তাপ সংরক্ষণ করে থাকে।

সঞ্চিত করে রাখার উপযুক্ত যথেষ্ট পরিমান মধু প্রক্রিয়াজাত করার পরে তা বিশেষভাবে তৈরী প্রকোষ্ঠে জমা করা হয় এবং মোম দিয়ে সে কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মৌমাছিদের প্রয়োজন না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকোষ্ঠেই মধু সঞ্চিত থাকে। এই মধু কখনও নষ্ট হয় না, গেঁজিয়ে যায় না, তলানী পড়ে না বা দানাও বাঁধে না।

আমাদের খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণের জন্য অতি সাধারণ পদ্ধতি, উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বালানো বা ফুটানো এবং ঠাণ্ডা করে বায়ুরোধী পাত্রে ভালো ভাবে বন্ধ করে রাখা। এ ভাবে রাখার ফলে কোন অনুজীব বা জীবানু (ব্যাক্টেরিয়া) দ্বারা ঐ খাদ্য আক্রান্ত হতে পারে না, ফলে তা আর নষ্ট হয় না বা পচন ধরে না। আমরা আগেই জেনেছি, মধু সঞ্চিত করে রাখার আগে মৌমাছিরা তা ফুটাবার কোন সুবিধা পায়নি, তার পরেও মধু কোন মন্ত্রবলে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে, নষ্ট হয় না – তা কম বিস্ময়কর নয়! ধারনা করা হয়, পচনের জন্য দায়ী জীবানু বা ব্যক্টেরিয়া প্রতিহত করার ক্ষমতা মধুর মাঝেই থাকে। মধুর এই গুণটির কথা প্রাচীনকালের মানুষদেরও অজানা ছিল না – তারা যে কোন শারীরিক আঘাত, কাটা-ছেড়ার সংক্রমন প্রতিহত করতে মধু ব্যবহার করতো বলা জানা যায়।

মৌচোর বা মৌলুন্ঠকদল মৌমাছিদের খুব বড় শত্রু। এদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য মোমাছিদের সদাসতর্ক থাকতে হয়। মৌচাকে থাকে সার্বক্ষণিক পাহারাদার, যাদের সজাগ দৃষ্টি এড়ানো একেবারেই অসম্ভব। এরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কখনও গাফিলতি করে না, নিজের জীবন দিয়ে হলেও এরা মৌচাকের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেয় না। সামান্যতম বিপদের আশঙ্কার আভাস পেলেই পাহারাদার দলের সদস্যদের একটা দল সেদিকে ছুটে যায়, আক্রমনকারীর দেহে দেয় হুল ফুটিয়ে। দেহ থেকে এই হুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং হুলবিহীন মোমাছির জীবনাবসান হয়। বিচ্ছিন্ন এই হুল থেকে আক্রমনকারী প্রাণী যন্ত্রণা ভোগ করে, আবার এই হুল থেকে বের হয় এক ধরণের বিশেষ গন্ধ, যা মৌচাকের অন্যান্য মোমাছিদের কাছে বিপদ সঙ্কেত পৌঁছে দেয়। অন্য ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে, বিচ্ছিন্ন হুলের গন্ধই হচ্ছে যুদ্ধের সঙ্কেত, যুদ্ধ ঘোষণা। এর পরই প্রয়োজনবোধে মৌচাকের সমস্ত মৌমাছি একত্রে আক্রমণ করে শত্রুকে। শত্রু পরাভূত না হওয়া পর্যন্ত এরা নিবৃত হয় না। আমৃত্যু চলে সে যুদ্ধ।

 

০ Likes ১ Comments ০ Share ৫৪৬ Views

Comments (1)

  • - নীল সাধু

    আপনি সিরিজটি নিয়মিত লিখুন ভাইজান।

    এতে করে সেই সমযকার একটি চিত্র পাওয়া যাবে। আমরা বুজখতে পারব আপনার মানসিক অবস্থা স্বপ্ন সাধ ভাবনার নানা গতি প্রকৃতি সকল। এই উপলক্ষে ঘুরে আসা যাবে অতীত থেকে।

     

     

    সকল শুভকামনা।

    ভালো থাকবেন।

    • - নাসির আহমেদ কাবুল

      আমি কথা দিয়েছি পোস্টের মধ্যেই। সুস্থ্য আর বেঁচে থাকলে লেখাটি ধারাবাহিক চলবে অনেক দিন। তোমার এখানে লোগো দিতে পারিনি। জলছবিতে লক্ষ্য করে দেখো। এটার লোগো দিয়েছি ‘পুরনো সেই দিনের কথা’। এই নামে ধারাবাহিক এই সিরিজটি নিয়ে একটি প্রকাশনা করতে চাই। শংকর দা (শংকর সাওজাল) অনেকদিন আমাকে এইধরনের একটি লেখা লিখতে তাগিদ দিয়ে আসছেন। আমি তোমার কাছ থেকে গঠনমূলক মন্তব্য চাই।

      শুভ সন্ধ্যা।