বিভিন্ন ঝামেলার কারণে দুপুরের লাল চা চক্র কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল এই ক'দিন। অফিসে এসেই আমাদের সারাক্ষণ অস্থির ও সতর্ক থাকতে হয়, কখন ফ্যাক্টরী ছুটি দিয়ে বের হতে হয়। এই দুদিন যে কোনো কারণেই হোক অফিস চলেছে-গন্ডগোল ছাড়াই।
আজ হারুন সাহেবের সাথে চা-চক্রে বসে আছি। এমন সময় আমার কাছে একটা অভিযোগ পত্র নিয়ে আসা হয়। সাইন করে ফরোয়ার্ড করার জন্য। আমি পিওন ছেলেটাকে বিদায় করে দেবার পরেই হারূন সাহেবকে বললাম-
: কিছু লেবেল হারিয়ে ফেলেছে। শিপমেন্টের একদিন বাকী। এখন খুজে পাচ্ছে না।
: কি লেবেল? এলসির না লোকাল?
: লোকাল। Made in Bangladesh লেবেল। টেক্সম্যান এর জন্য।
তবে 'মেড ইন বাংলাদেশ' শব্দটা আমার মাথার ভিতরে ঘুরপাক খেতে থাকে। এক্সেসরিজ থেকে শব্দটা কেন জানি মানুষের দিকে ডাইভার্ট হয়ে যায়। এরপরে মানুষ থেকে দেশ- দেশ থেকে রাজনীতি।
আমাদের দেশে রাজনীতির যে সমীকরণ তাতে যে কেউ হতবাক হয়ে যাবে। এক শিবিরে ১৪ দল তো অন্য শিবিরে ১৮ দল। একুনে মোট ৩২ দল। আর বাংলাদেশ সুবিধাবাদী দল (বাসুদ)। এই সর্বমোট ৩৩ দল।
নামে মাত্র এতো দল- কিন্তু দল আসলে দু'টি। যাদেরকে কেন্দ্র করে এই বাকী দলগুলি পাক খাচ্ছে।
এখন জাতীসত্তাকে নিয়ে এদের ভিতরে আবার বিভেদ। সেগুলো জানে নেয়া যাক-
১. Made in Bangladesh
ক. বাংগালী জাতীয়তাবাদ
খ. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ (এটাই বর্তমানে স্বীকৃত)
২. Made in Pakisthan
৩. Made in India
চরম ডানপহ্নীরা হল মেড ইন পাকিস্থান। এখনো অনেককে আফসোস করতে শোনা যায়, পাকিস্থান আমলে এই ছিল, ঐ ছিল। আবার একদল আছে, যারা ইন্ডিয়া ছাড়া কিছু বোঝে না। বন্ধু রাস্ট্র বন্ধু রাস্ট্র বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলছে। কিন্তু একজন বন্ধুর কি কি করনীয়- এক বন্ধু অপর বন্ধুর কাছ থেকে কেবলি নেবার তালে থাকে, এসব ব্যাপারে এই ইন্ডিয়া পহ্নীদের কোনো বিকার নাই।
আমার খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের মত একটি "একত্রিতো হবার বিষয়' নিয়ে ও দেশীয় নস্ট রাজনীতির ছোবলে এখন মুক্তিযোদ্ধারাও বিভক্ত। একদল বাঙালি জাতীয়তাবাদের বানারে, অপর দল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ব্যানারে।
ব্যক্তিসার্থ কতটা নিম্ন পর্যায়ের হলে একদল মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে একদল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে আতাত করতে পারে?
আমি সাধারণত এই বিভেদ নিয়ে লিখতে চাই না। তবে আমার এই লেখায় কেউ আঘাত পাক তা ও চাই না। সবাই আমরা বন্ধু... একজন বন্ধু হয়ে অন্য বন্ধুর মনে কস্ট লাগুক এটা ও চাই না।
কিন্তু এই দেশে বসে আমাদের উদারতার সুজোগকে কেউ দুর্বলতা ভেবে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠুক, সেটাও চাই না।
কঠিন ভাবে প্রতিরোধ করব।
সময় এলে...
আমরা প্রজন্ম '৭১!