Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুসলিম মিল্লাতের অমর কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের ১৩৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা


বিংশ শতাব্দীর মুসলিম জাগরণের অন্যতম নকীব, মানবতাবাদী অমর কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল। ইকবাল ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক এবং ইসলামি চিন্তাবিদ। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে কবি ও দার্শনিক হিসেবে ইকবালের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। তার ক্ষুরধার লেখনী ও জাদুমন্ত্রবত্ বর্ণনায় ইসলামি শিক্ষা সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য যেভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠে তা সত্যিকার অর্থেই একজন সচেতন পাঠককে রীতিমতো পুলকিত ও চমকিত করে। তার ফার্সী ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সী ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফার্সি সৃজনশীলতার জন্য ইরানে তিনি ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত। ইকবাল তার ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলো। মানবতাবাদী কবি আল্লামা ইকবাল ১৮৭৭ সালের আজকের দিনে পা্ঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী। মুসলিম মিল্লাতের অমর কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা। তাঁর কবিতাগুলি মুসলিম মিল্লাতের জন্য সবসময় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

(আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল এর পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ)
মুসলিম রেনেসার কবি আল্লামা ইকবাল ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মুহাম্মদ ইকবাল। তবে তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ। তার পিতা শেখ নুর মুহাম্মদ ছিলেন একজন সুফিভাব ও চিন্তাধারাসম্পন্ন পরহেজগার ব্যক্তি। তার মা ইমাম বিবিও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা। ইকবালের পূর্ব পুরুষ ছিলো কাশ্মীরের অধিবাসী এবং সুপ্রাচীন এক কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ পরিবারের বংশধর। এই বংশের পারিবারিক উপাধি ছিল সপরূ। মাত্র তিন পুরুষ আগে অষ্টাদশ শতকে সপরূ পরিবারের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি জনৈক মুসলিম সাধকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইকবাল ছিলেন অসাধারণ মেধা শক্তির অধিকারী। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। মায়ের তত্বাবধানে লেখাপড়া শুরু করে প্রথমে স্থানিয় মক্তবে ভাষা ও কুরআন শরিফ শিক্ষা লাভ করেন। পরে স্কচমিশন স্কুল এ ভর্তি হন।এখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিক ও আইএ পরিক্ষায় উত্তির্ন হয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য লাহোরের সরকারী কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে বিএ এবং ১৮৯৯ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম,এ পাশ করেন। ১৯০৫ সালে ইউরোপ যান ইকবাল। তিনি ইংল্যন্ড এর কেম্ব্রিজ এবং জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়াশুনা ও গবেষনা করেন। পরবর্তিতে ১৯০৭ সালে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানি হতে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে তিনি আবার বিলাতে আসেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার এট্-ল পাস করেন। এ সময়ে কিছুকাল তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ফার্সির অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। ১৯০৮ সালে ইকবাল এক সম্পুর্ন নতুন কাব্য ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। দেশে ফিরে কিছুকাল তিনি আইন ব্যবসায়ে মন দিয়ে ছিলেন। কিন্তু আইন ব্যবসা তার ভাল লাগল না। তিনি কবিতা লেখায় মন দিলেন। তিনি যেমন বিরাট পণ্ডিত ছিলেন তেমনিই পৃথিবীর একজন বিখ্যাত কবিও ছিলেন। তার কবিতার ভাবধারা বড় উঁচুস্তরের। প্রথম দিকে তিনি যে সমস্ত রচনায় হাত দেন তার ভিতরে তার না-ই-হিন্দ বিখ্যাত কবিতা। ইকবালের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থসমূহের মধ্যে বাং-ইদারা বাল-ই-জিব্রিল এ তালিম, শিকোয়াহ ও জবাব-ই-শিকোয়াহ উল্লেখযোগ্য।

আল্লামা ইকবাল শুধু মাত্র কবি ছিলেন না তিনি ছিলন একজন ভবিষ্যত্ দ্রষ্টাও। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন ছিলো ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। তার এই চিন্তাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিলো। ইকবাল ছিলেন ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। কাজে ও চিন্তা, সাধনায় ও লক্ষ্যে ইসলামের মূলনীতির উপর ইকবালের ছিল প্রগাঢ় বিশ্বাস, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আরাধনা, জীবন-মরণ সবই সর্বশক্তিমানের নিকট সমর্পিত। শরিয়ত, তরিকত ও মারেফতের ক্রিয়াকলাপের সাহায্যে মানুষ কামিল ইনসান বা পরিপূর্ণ মানুষ পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে, এ ছিল তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এ সবের মূল উৎস কোরআনের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য তার ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে আল্লাহই তাদের সাহায্য করবেন। সময় ক্ষেত্রে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি মুসলমানদের ইসলামি আদর্শের রূপায়ণে উৎসাহিত করে বলেন, ইসলাম একমাত্র আল্লাহর ধর্ম। কোরআনের শিক্ষা ব্যতীত জাতির মুক্তি নেই। তার দ্বীনদারি ও ইসলামপ্রিয়তা তাদের ইসলামের পথযাত্রী বানিয়ে দেয়। তার নবীপ্রেম তাদের মধ্যে ইসলামি জীবনব্যবস্থার প্রতি অদম্য প্রেরণা সৃষ্টি করে।

আল্লামা ইকবাল মিল্লাতে মুসলিমার বড়ো অমূল্য সম্পদ ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের মুসলমানদের তার কবিতার জাদুর কাঠি দিয়ে জাগ্রত করেন, তার চিন্তাধারা তাদের সিরাতে মুস্তাকিম প্রদর্শন করে। শেষ জিবনের অসুস্থ শয্যায় শুয়ে তিনি বুঝতে পারেন শ্রিঘ্রই জাতিয়তাবাদের নামে বিশ্বব্যাপি এক রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ দেখাদেবে। তার "ইবলিশ কি মজলিশ ই শুরা" কাব্যে দ্বিতিয় মহাযুদ্ধের ইংগিত দেন তিনি। ১৯৩৫ সালে তার "বাল-ই-জিব্রিল" গ্রন্থে তিনি সাম্যবাদি ও মানবতা বাদি সেই বিপ্লবি কবিতাটি প্রকাশ করেন। কবি যাকে বলেছেন এটা হলো ফিরিশতাদের জন্য আল্লাহর আদেশ জাতে মানুষ পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। মিল্লাতে মুসলিমের অমূল্য সম্পদ, আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল্লামা ইকবাল ১৯৩৮ সালেল ২১ এপ্রিল পরলোকগমন করেন। কিন্তু তার আগেই পুথিবীর সকল মুসলিমকে শুনিয়ে যান নতুন করে জেগে উঠার বানি। আজ আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী। মুসলিম রেনেসার অমর কবি আল্লামা ইকবালের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

পাদটিকাঃ এই মহান বিপ্লবি দার্শনিক কবিকে অনেকে জেনে বা না জেনে অযথাই পাকিস্তানি কবি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধিনতা বিরোধি বলে অভিযুক্ত করেন। যদিও ইকবালের ইন্তেকাল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এমন কি পাকিস্তান প্রস্তাবের ও আগে ১৯৩৮ সালে। ইকবাল পাকিস্তানের কবি এই অদ্ভুদ (প্রধানত তথাকথিত বামপন্থিদের চেষ্টায়) আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে স্বাধিনতার পর আমাদের দেশ থেকে ইকবালের নাম মুছে ফেলার এক প্রবনতা সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ ১৯৭২-৭৩ সালে ভারতের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়এ ইকবালের নামে চেয়ার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আসলে বামপন্থিরা ইকবালকে ঢেকে রাখতে চান কারন তার আদর্শ ছিল ইসলাম। ১৯০৮ সাল থেকে ১৯৩৮ সালে তার মৃত্য পর্যন্ত ইকবাল বিশ্ব মানবতার জন্য ইসলামকেই একমাত্র সঠিক আদর্শ হিসেবে চিন্তা ও প্রচার করে গেছেন। নতুন যে মানবতার বানি তিনি পৃথিবীর সামনে তুলে ধরলেন তা কোন স্থান,কাল,পাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সে মানবতা সর্বকালের প্রকৃত সত্যের প্রকাশ। যে কবি একদিন লিখে ছিলেন "সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা" আজ তিনি বললেন "সব দেবতার সেরা সে দেবতা যাহারে কহিছ স্বদেশ ফের,বসন তাহার বনেছে কাফন আবরি বদন ইসলামের"। মানবতাই ইসলামের মৌল আদর্শ। আর সেই জন্যই ইসলাম ছিল তার কাব্য ও জিবনের আদর্শ ও দর্শন। তিনি শুধু নিজ জাতি তথা মুসলমানের কল্যাণ নিয়েই ভাবেন নি। গোটা মানব জাতির মুক্তি ছিল তার অন্তরের আকুতি। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র আদর্শ তথা ইসলাম যে গোটা মানব জাতির জন্য মুক্তির একমাত্র পথ সেটা তুলে ধরতে গিয়েই তিনি ইসলামী আদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা তুলে ধরেছেন। খোদাপ্রেম থেকে উদ্ভুত গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান, ন্যায়বিচার, ঈমান, ঐক্য ও মানব-প্রেমই যে মুসলমানের বড় পরিচয় সে কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলেন যে কবি তিনি কি করে পাকিস্তানি কবি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধিনতা বিরোধি বলে অভিযুক্ত হতে পারেন !!!

০ Likes ০ Comments ০ Share ১৬৯৯ Views

Comments (0)

  • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    যতগুলো নিয়মা কানুন লিখে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৬০ % নিজের কমন সেন্স থেকেই বুঝতে পারা উচিত। তার পরেও কিছু মানুষ গতানুগতিকভাবে লেখাটা পাঠায়। বিজ্ঞপ্তিতে লিখে দেয়া সমস্ত কিছু কেন কার জন্য লিখলাম তাহলে? তখন শুধু একটা কথাই মনে আসে-"ছাগল দিয়া কি আর হাল চাষ হয়?"

    কথাটা হয়তো কারো কারো আঁতে ঘা লাগাবে। কিন্তু- এইসব কারণেই সবাই লেখক হতে পারে না। এইসব কারণেই পত্রপত্রিকায় আমাদের লেখা কেন আসেনা বুঝা যায়। 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      আমি তো নিয়ম মেনেই লেখা পাঠিয়েছি। প্রাপ্তি স্বীকার মেইল পাইনি

    • Load more relies...
    - নুসরাত জাহান আজমী

    লেখা পাঠাইসি। emoticons
    যেভাবে বলা হইসে সেভাবেই। প্রাপ্তি স্বীকার মেইল পেলে বুঝব, ঠিক আছে কি নেই।

     

    - মামুন

    গতরাতে আমিও নির্ধারিত ফন্টে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে পাঠিয়েছি। মনে তো হয় ঠিকমতই পাঠিয়েছি। ফিরতি মেইল এলেই বোঝা যাবে ভুল করেছি কিনা।

    ধন্যবাদ আপনার পোষ্টটির জন্য।emoticons

    Load more comments...