Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুসলিম বাংলা সাহিত্যের প্রধান অগ্রদূত সাহিত্য সম্রাট মীর মশারফ হোসেনের ১০১তম মৃত্যুৃবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


মুসলিম রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সমন্বয়ধর্মী ধারার প্রবর্তক বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক মীর মশাররফ হোসেন। সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন মুসলিম বাংলা সাহিত্যের অগ্রপথিক। তাঁর পূর্বে কোনো মুসলমান সাহিত্যিকই এত বিপুলভাবে সাহিত্যক্ষেত্রে অগ্রসর হননি। তিনি সাহিত্যের সকল শাখায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। এদিক থেকে তিনি মুসলিম জাগরণের পথিকৃৎ। বাংলা গদ্য সাহিত্যের এই কালজয়ী লেখক ও বিশিষ্ট মনীষী মীর মোশাররফ ১৯১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকাল পরলোকগমন করেন। আজ তাঁর ১০১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক মীর মশাররফ হোসেন এর ১০১তম মুত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের সম্ভান্ত ও ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মীর মোয়াজ্জম হোনেন। মীর মোয়াজ্জম হোনেন ছিলেন বিপুল ভূ-সম্পত্তির অধীকারী। মীর মশাররফ হোসেনের শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্বগৃহে মুন্সির কাছে। মুন্সির কাছে তিনি আরবী-ফারসি এবং পাঠশালায় পণ্ডিতের কাছে বাংলা। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। কৃষ্ণনগরের কলেজিয়েট স্কুলে তিনি পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। এর পরে তিনি তাঁর পিতৃবন্ধু আলীপুর আদালতের আমীন নাদির হোসেনের আশ্রয়ে কলকাতায় কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু লেখাপড়ায় বেশীদূর অগ্রসর হতে পারিননি। তিনি তাই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে নাহিনীপাড়ায় এসে পিতৃসম্পত্তি দেখাশুনা করতে থাকেন।

মাত্র আঠার বছরে বয়সে (১৯ মে' ১৮৬৫) তাঁর পিতৃবন্ধু আলীপুর আদালতের আমিন নাদির হোসেনের সুন্দরী কন্যা লতিফুননেসার সাথে মীর মশারফ হোসেনের বিবাহ স্থির হয়। কিন্তু বিবাহ-অনুষ্ঠানে নাদির হোসেন প্রবঞ্চনাপূর্বক তার তার কুরূপা ও বুদ্ধিহীনা কন্যা আজিজুননেসাকে মীর মোশাররফ হোসেনের সাথে বিবাহ প্রদান করা হয়। এই বিবাহে মীর মোশাররফ হোসেন সুখী হতে পারেননি। তাই বিবি কুলসুম তার দ্বিতীয় স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার হয়ে তিনি টাঙ্গাইলে আসেন। কিন্তু জমিদার পরিবারের সাথে মনোমালিন্য এবং স্থানীয় লোক ও কর্মচারীদের সাথে বিবাদের কারণে টাঙ্গাইল ছেড়ে লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। এর পরে ভাগ্যান্বেষণে বগুড়া, কলকাতা এবং শেষে পদমীতে যাতায়াত করেন। বাংলা সাহিত্যের বাঙালি মুসলমানদের অগ্রপুরুষ মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। কাঙ্গাল হরিনাথ ছিলেন তাঁর সাহিত্য গুরু। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান।

রত্নবতী, গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু ,বসন্তকুমারী নাটক, জমীদার দর্পণ নাটক,
এর উপায় কি?
প্রহসন, বিষাদ সিন্ধু মহরম পর্ব উপন্যাস, বিষাদ সিন্ধু উদ্ধার পর্ব উপন্যাস,বিষাদ সিন্ধু এজিদ-বধ পর্ব উপন্যাস, ঙ্গীত লহরী, ১ম খন্ড গান, গো-জীবন প্রবন্ধ,বেহুলা গীতাভিনয় নাটক গদ্যে পদ্যে রচিত, উদাসীন পথিকের মনের কথা উপন্যাস,তহমিনা উপন্যাস, টালা অভিনয় প্রহসন 'হাফেজ' পত্রিকার মার্চ-এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয় নিয়তি কি অবনতি নাটক, গাজী মিয়াঁর বস্তানী নক্সা , ভাই ভাই এইত চাই প্রহসন, ফাস কাগজ প্রহসন ,এ কি? প্রহসন, পঞ্চনারী পদ্য কবিতা, প্রেম পারিজাত গদ্য রচনা,রাজিয়া খাতুন গদ্য রচনা, বাঁধা খাতা প্রহসন, মৌলুদ শরীফ ধর্ম বিষয়ক গদ্যে-পদ্যে রচিত ধর্ম্মোপদেশ, মুসলমানের বাংলা শিক্ষা, ১ম ভাগ স্কুল পাঠ্য, বিবি খোদেজার বিবাহ কাব্য,  হজরত ওমরের ধর্ম্মজীবন লাভ কাব্য, হজরত বেলালের বেলালের জীবনী কাব্য, হজরত আমীর হামজার ধর্ম্মজীবন লাভ কাব্য, মদিনার গৌরব কাব্য, মোসলেম বীরত্ব কাব্য, এসলামের জয় গদ্য রচনা, সলমানের বাংলা শিক্ষা, ২য় ভাগ স্কুল পাঠ্য, বাজীমাৎ নক্সা কবিতায় রচিত নক্সা, আমার জীবনী, ১ম খন্ড আত্মজীবনী, হজরত ইউসোফ গল্প, আমার জীবনীর প্রথম খন্ডে যন্ত্রস্থ বলে বিজ্ঞাপিত হয়েছে। খোতবা গদ্য রচনা, কুলসুম-জীবনী, আত্মজীবনী ইত্যাদ্যি তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টি।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মীর মশাররফ হোসেনের অবদান অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা। বাংলার মুসলমান সমাজের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর জড়তা দূর করে আধুনিক ধারায় ও রীতিতে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত ঘটে তাঁর শিল্পকমের মাধ্যমে। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’। মহররমের বিষাদময় ঐতিহাসিক কাহিনী অবলম্বনে তাঁর রচিত মহাকাব্যধর্মী উপন্যাস "বিষাদ-সিন্ধু" আমাদের ইতিহাস ও সাহিত্যের এক স্থায়ী ও অমূল্য সম্পদ।

বাংলা গদ্য সাহিত্যের এই কালজয়ী লেখক ও বিশিষ্ট মনীষী মীর মোশাররফ ১৯১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকাল পরলোকগমন করেন। মুসলিম রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সমন্বয়ধর্মী ধারার প্রবর্তক বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক মীর মশাররফ হোসেন এর মুত্যুৃবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১ Likes ২ Comments ০ Share ৭১২ Views

Comments (2)

  • - বাবুল হোসেইন

    মরাল সিনোপ্সিস।

    • - মামুন ম. আজিজ

      মোর‌্যাল এর চেয়ে মরাল টাই বোধহয় ভালো....

      ধন্যবাদ

    - তাহমিদুর রহমান

    ছোট লেখা তবু ভাবনা স্পষ্ট। 

    - লুব্ধক রয়

    আমরা বাংগালীরা তিলে তিলে এমন এক জাতিতে পরিণত হয়ে পড়েছি -আমরা নিজেদেরকেই চিনি না অথচ আশেপাশের সব মানুষকে চিনে ফেলি মুহূর্তে।

     

    ধন্যবাদ দাদা।

    Load more comments...