Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

"মুক্তির মুক্তি" (প্রতিযোগিতার জন্য)

১৯৭১ সাল । শহরের কাছাকাছি একটি গ্রাম, নাম মুক্তগ্রাম । এই গ্রামেই বাস করে মুক্তি ও তার পরিবার । সতেরো পেরিয়ে কেবলই আঠারোতে পা রাখা মুক্তির বিয়ে নিয়ে তার পরিবারের তোড়জোড় বেশ ভালোই ভাবাচ্ছিল মুক্তিকে । শ্যামবর্ণের হলেও দেখতে বেশ সুন্দর আর ছিপছিপে গড়নের মুক্তি পড়ালেখায়ও বেশ ভাল । মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও তার যুগের মেয়ে হিসেবে মুক্তি ছিল যথেষ্ট আধুনিক, পাশাপাশি চঞ্চলও বটে ! সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল আরো কিছুদিন । অন্তত উচ্চ মাধ্যমিকটা শেষ করে তবেই বিয়ে করতে চেয়েছিল সে । কিন্তু গ্রাম এলাকায় এই বয়সের মেয়েকে কিছুতেই বাবা-মা বিয়ে দেয়া ছাড়া ঘরে রেখে স্বস্তিতে থাকতে পারে না । অনেক পীড়াপীড়িতে অবশেষে মুক্তি বিয়েতে রাজি হল, তবে শর্তসাপেক্ষে ! এমন পরিবারে বিয়ে দিতে হবে যারা তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বাঁধা হবে না । অবশেষে মুক্তির বাবা-মা অনেক দেখে-শুনে এমন একটি পরিবারেই মুক্তির বিয়ে ঠিক করলো ।

বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়ে গেল । ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারীর ২৬ তারিখ, শুক্রবার । বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ের বিয়ে বেশ ধুমধাম করেই দিল মুক্তির বাবা-মা । শিশির, মুক্তির স্বামী একটি বেসরকারি কলেজের প্রফেসর । শান্তিপুর গ্রামের অধিবাসী সে । শিশিরের প্রথম রাতের কথায়ই মুক্তি বুঝতে পেরেছে কতটা ভালো মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে সে । শশুর-শাশুড়িও বেশ বড় মনের মানুষ । শশুর-শাশুড়ি ছাড়া এক ননদ নিয়ে ছোট্ট পরিবারে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছিল মুক্তি । স্বামী, সংসার আর নিজের পড়ালেখা নিয়ে কয়েকটা দিন বেশ ভালোই কেটে গেল মুক্তির । বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না । দিনে দিনে যেন পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হতে লাগলো ।

৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কেঁপে উঠলো গোটা দেশ । গর্জে উঠলো সমগ্র বাঙালী জাতি । এমন উত্তপ্ত পরিবেশেই কেটে গেল আরো কিছুদিন । ২৫ শে মার্চ । সন্ধ্যার পরেই ঘুমন্ত শ্রমিক, শিশু-নারী, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল সাধারণ বাঙালী মানুষের উপর অতর্কিত হামলা চালাল পাক-হানাদার বাহিনী । নিমিষেই ঝরে গেল অনেক তাজা প্রাণ, লোলুপ পশুর অশুভ দৃষ্টির আক্রমণে অনেক মা-বোন হারাল তাদের সম্ভ্রম । মুক্তির বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে শিশিরের ফুফুর বাসায় বেড়াতে যাবার কারণে সেদিন শান্তিপুরে কিংবা মুক্তগ্রামে ছিল না শিশির ও মুক্তি । পাক-হানাদারদের আক্রমণে সেদিন লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল মুক্তগ্রাম । আগুন লাগা টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে মুক্তির বাবা কোনরকমে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মুক্তির মা সেদিন ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে পৃথিবীর মায়া । মুক্তির বাবা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে সেই রাতেই । পরদিন শিশির আর মুক্তি ফিরে এসে মুক্তির বাবা-মা কাউকেই খুঁজে পায় নি । কোনরকমে মুক্তিকে নিয়ে তার নিজগ্রামে চলে যায় শিশির ।

স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর থেকে একত্রিত হতে থাকে সব বাঙালীরা । বাবা-মায়ের নিষেধ না মেনে শিশিরও যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে । নিজের কষ্ট বুকে চেপে মুক্তি হাসিমুখেই বিদায় দেয় শিশিরকে । এর কিছুদিন পরেই রাজাকারদের সহায়তায় শিশিরদের বাড়িতে হানা দেয় পাক বাহিনী । শিশিরের বাবা-মাকে হত্যা করে মুক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় হানাদার ক্যাম্পে । সেখানে একের পর এক অসহ্য দিন আর অমানবিক জীবন অতিবাহিত করতে থাকে সে । নরপিশাচের অত্যাচারে একেকটা মুহূর্ত যেন একেকটা বছর হয়ে আসছিল মুক্তির কাছে । মুক্তিবাহিনী থেকে এক রাতে লুকিয়ে গ্রামে আসে শিশির । পাশের প্রতিবেশিদের কাছে সব শুনে বিমর্ষ হয়ে যায় সে । যে করেই হোক, মুক্তিকে উদ্ধার করতে হবে বলেই বেরিয়ে যায় সে । গোপন সূত্রে শিশির জানতে পারে মুক্তি কোন ক্যাম্পে আছে । মুক্তিবাহিনী নিয়ে শিশির সেই ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় । মুক্তিবাহিনী সেই ক্যাম্প থেকে মুক্তিসহ আরো কয়েকজন কিশোরী-যুবতী মেয়েদের উদ্ধার করলেও গুলিতে নিহত হয় বেশ কিছু মুক্তিবাহিনীর সদস্য । তাদের মধ্যে একজন শিশির ।

সব হারিয়ে নিঃস্ব মুক্তি আর বাড়ি ফেরেনি । ওখানেই মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় মুক্তি । এরপর নিজেই হাতে তুলে নেয় অস্ত্র । একের পর এক অপারেশনে মুক্তিবাহিনীর সাথে থেকে লড়ে যায় সে । একসময় দেশ স্বাধীন হয় । মুক্তগ্রামে ফিরে আসে মুক্তি । আশ্রয় নেয় মুক্তগ্রামেই । দেশের মুক্তি অর্জন করলেও দারিদ্রতা থেকে আর মুক্তি পাওয়া হয়নি মুক্তির । যুদ্ধের পর থেকেই একটা কুঁড়েঘরে থেকে আর অন্যের বাড়ি কাজ করে কোনরকমে বেঁচে ছিল সে । নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে অবশেষে একটা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পায় সে । শুনেছি... কষ্ট পেয়ে পেয়ে এই সেদিন নাকি পৃথিবী থেকেই চিরমুক্তি নিয়েছে মুক্তি !

(এটা একটা কাল্পনিক গল্প)

১ Likes ০ Comments ০ Share ৩৮৬ Views

Comments (0)

  • - Sadat Chowdhury

    পাওয়া যাচ্ছে একুশে বই মেলা ২০১৫ তে। স্টল নং ২১৮ ও ২১৯। 

    - মউদো মুনির

    আপনি দেখছি নিজের বই এর বিজ্ঞাপন পোষ্ট করেছেন!!! ভেবেছিলাম কিছু পড়তে পারব। নিরাশ করলেন মিয়া ভাই।

    • - Sadat Chowdhury

      kothay thaken মউদো ভাই , আমি কাকরাইলে, কাছে হলে পউছে দিতাম