Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Afruj Jahan Mazumder

১০ বছর আগে

মুক্তিযুদ্ধের চিঠিঃ হৃদয়ে স্বদেশ (প্রতিযোগিতা)

 প্রিয় কমরেড,

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে চলছে শিকলবন্দী নষ্ট রাজনীতির মৃত্যু উল্লাস l পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রাপ্ত আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শুরু করল সারাদেশে গণহত্যা। আমরা বাঙালি বীরের জাতি, কাপুরুষের দল নই l বায়ান্নর আন্দোলন - সালাম, বরকত, আসাদ আমাদের পথ দেখাবে চিরদিন l গত সপ্তাহে রাতে কিশোরগঞ্জে অপারেশন চালানোর সময় মিজান, মতিউর সহ আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পরেছি l আমাদের দলের অনেকেই শহীদ হয়েছে পাকিস্তানী বর্বরদের হাতে l এখানে ক্যাম্পে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উতকণ্ঠা বিরাজ করছে l  মৃত্যুকে পরোয়া না করেই বেঁচে আছি স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য দেখব বলে । চারিদিকে অন্ধকারেই হাহাকার, আত্মচিৎকার আর আহাজারিl পাশের কামরায় আহত বন্দির আর্তনাদ, গুলির শব্দ। পায়ের ক্ষতস্থান হতে রক্ত বের হচ্ছে। এই যন্ত্রণার চেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে সবাইকে হারিয়ে।

দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রায় একমাস। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ নিজের চোখে দেখেছি। পাক বাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে যখন আক্রমন শুরু হয়, তখন অসহায়ের মতো পালিয়ে এসেছে সবাই। মা বাবা ডাকছিল আমাদের নাম ধরেl ছোট বোন রেহানা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মা, মা বলে ডাকছে আর কাঁদছে। গ্রামে সব বাড়িতে আগুন দেয় হিংস্র হায়েনারা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দেয়ায় গ্রামে অনেক পরিবার জ্বলে পুড়ে মারা গেছে। অন্ধকারে ছেলে-বুড়ো, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর, গর্ভবতী নারী যে যেভাবে পারছে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। বাঁচতে হলে এখন অন্ধকার ছিঁড়ে-ফুঁড়ে পালাতে হবে। বাবাও দৌড়চ্ছিল। মা সবার ভিড়ে দৌড়চ্ছিল রেহানার হাত ধরে। তারপরই পিছনদিকে খুব কাছে গুলির শব্দ, এগিয়ে আসছে মৃত্যুদূত । লোকজনের ধাক্কায় সামনের দিকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। আমাকে মাড়িয়ে গেল মানুষ। দুহাতে হাতরে টের পেলাম অনেক মানুষ পড়ে আছে, সবার শরীর ভীষণ ঠান্ডা। লাশের ভেতর লাশ হয়ে পড়ে থাকলাম। এভাবে অনেকক্ষণ লাশের ভিড়ে পড়ে থাকার পর লাশগুলির ভেতর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নিজেকে আলাদা করে উঠে দাঁড়ালামl কোথায় যাব, কি করব, বুঝতে পারলাম না। রাতটুকু পার হলে সকালে সবার লাশ খুঁজব?

অন্ধকারেই সামনের দিকে লক্ষ্য করে পা টিপে টিপে হাঁটলামl  পিছনে মা, বাবা, ছোট বোন রেহানার লাশ পড়ে রইলl নদীর পাড় গিয়ে দেখি একদল রাজাকার সহ পাক বাহিনীরা মেয়েদেরকে টেনে হিঁচড়ে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের আর্তনাদ আকাশ বাতাস ছেয়ে আছে। মেয়েদের ইজ্জত বাঁচানোর আকুলতা, কান্না বা অনুনয় কিছুই তারা শুনেনি। সেদিন খালি হাতে কিছুই করতে পারিনি। ভয়ে আড়াল থেকে শুধু দেখে গেছি । সেদিন শুধু অসহায় মেয়েদের করুণ চাহনি আর বাঁচার আর্তি শুনেছি রাতভর। হিংস্র হায়েনাদের হাত থেকে তাদের কেউ বাঁচাতে পারেনি সেদিন। পরদিন সকালে নদীতে দেখেছি মেয়েদের লাশ পাওয়া যায়। রুদ্র বুকের ভেতরে জ্বলে অগ্নি - বলে রুখে দাঁড়া, প্রতিবাদ কর। অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ করবি নাl ঠিক করেছি দেশের জন্য যুদ্ধ করব l তখন চারপাশের সবকিছুই মনে হয় সাদা কালো, বিবর্ণ সবl স্বপ্নরা পাখিটির মতই উড়ে উড়ে দুর দুর বহুদুরে চলে যায়l তারপর সেদিন হঠাৎ দেখি তুমি কমরেড, নির্ভরতার স্পর্শ রেখে কাঁধে এভাবেই পরম মমতায় সাহস দিলেl ঠিক করলাম সবাই নদী পার হয়ে ভারতে যেয়ে ট্রেনিং নিয়ে হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবl শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামl

আমাদের মুখ থেকে ওরা কিছু বের করতে পারবে না। মুক্তি অর্জনের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না l আমাদের স্লোগান "শুধু তোমার জন্য যুদ্ধে যাব হে প্রিয় স্বদেশ, তুমি সাড়া দিলে এনে দিব স্বাধীনতার পতাকা" ।  

 

গভীর শ্রদ্ধায়,

তোমারি এক সহযোদ্ধা

১ Likes ৭ Comments ০ Share ৫৪৩ Views

Comments (7)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    লেখাটা চমতকার।

    আবৃত্তিটাও দুর্দান্ত হয়েছে

    • - মাসুম বাদল

      অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা, পাশা ভাই...

    - গাজী নিষাদ

    অসাধারণ লিখা। খুব ভাল লেগেছে। শুভাশিস রইলো।

    • - মাসুম বাদল

      অশেষ শুভকামনা...

    - গাজী নিষাদ

    আবৃত্তিটা শুনলাম। সত্যিই তুলনা নেই।

    • - মাসুম বাদল

      শুভেচ্ছা অফুরান...

    Load more comments...