প্রিয় কমরেড,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে চলছে শিকলবন্দী নষ্ট রাজনীতির মৃত্যু উল্লাস l পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রাপ্ত আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শুরু করল সারাদেশে গণহত্যা। আমরা বাঙালি বীরের জাতি, কাপুরুষের দল নই l বায়ান্নর আন্দোলন - সালাম, বরকত, আসাদ আমাদের পথ দেখাবে চিরদিন l গত সপ্তাহে রাতে কিশোরগঞ্জে অপারেশন চালানোর সময় মিজান, মতিউর সহ আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পরেছি l আমাদের দলের অনেকেই শহীদ হয়েছে পাকিস্তানী বর্বরদের হাতে l এখানে ক্যাম্পে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উতকণ্ঠা বিরাজ করছে l মৃত্যুকে পরোয়া না করেই বেঁচে আছি স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য দেখব বলে । চারিদিকে অন্ধকারেই হাহাকার, আত্মচিৎকার আর আহাজারিl পাশের কামরায় আহত বন্দির আর্তনাদ, গুলির শব্দ। পায়ের ক্ষতস্থান হতে রক্ত বের হচ্ছে। এই যন্ত্রণার চেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে সবাইকে হারিয়ে।
দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রায় একমাস। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ নিজের চোখে দেখেছি। পাক বাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে যখন আক্রমন শুরু হয়, তখন অসহায়ের মতো পালিয়ে এসেছে সবাই। মা বাবা ডাকছিল আমাদের নাম ধরেl ছোট বোন রেহানা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মা, মা বলে ডাকছে আর কাঁদছে। গ্রামে সব বাড়িতে আগুন দেয় হিংস্র হায়েনারা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দেয়ায় গ্রামে অনেক পরিবার জ্বলে পুড়ে মারা গেছে। অন্ধকারে ছেলে-বুড়ো, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর, গর্ভবতী নারী যে যেভাবে পারছে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। বাঁচতে হলে এখন অন্ধকার ছিঁড়ে-ফুঁড়ে পালাতে হবে। বাবাও দৌড়চ্ছিল। মা সবার ভিড়ে দৌড়চ্ছিল রেহানার হাত ধরে। তারপরই পিছনদিকে খুব কাছে গুলির শব্দ, এগিয়ে আসছে মৃত্যুদূত । লোকজনের ধাক্কায় সামনের দিকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। আমাকে মাড়িয়ে গেল মানুষ। দুহাতে হাতরে টের পেলাম অনেক মানুষ পড়ে আছে, সবার শরীর... continue reading
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে চলছে শিকলবন্দী নষ্ট রাজনীতির মৃত্যু উল্লাস l পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রাপ্ত আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শুরু করল সারাদেশে গণহত্যা। আমরা বাঙালি বীরের জাতি, কাপুরুষের দল নই l বায়ান্নর আন্দোলন - সালাম, বরকত, আসাদ আমাদের পথ দেখাবে চিরদিন l গত সপ্তাহে রাতে কিশোরগঞ্জে অপারেশন চালানোর সময় মিজান, মতিউর সহ আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পরেছি l আমাদের দলের অনেকেই শহীদ হয়েছে পাকিস্তানী বর্বরদের হাতে l এখানে ক্যাম্পে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উতকণ্ঠা বিরাজ করছে l মৃত্যুকে পরোয়া না করেই বেঁচে আছি স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য দেখব বলে । চারিদিকে অন্ধকারেই হাহাকার, আত্মচিৎকার আর আহাজারিl পাশের কামরায় আহত বন্দির আর্তনাদ, গুলির শব্দ। পায়ের ক্ষতস্থান হতে রক্ত বের হচ্ছে। এই যন্ত্রণার চেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে সবাইকে হারিয়ে।
দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রায় একমাস। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ নিজের চোখে দেখেছি। পাক বাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করেছে। রাতের অন্ধকারে যখন আক্রমন শুরু হয়, তখন অসহায়ের মতো পালিয়ে এসেছে সবাই। মা বাবা ডাকছিল আমাদের নাম ধরেl ছোট বোন রেহানা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মা, মা বলে ডাকছে আর কাঁদছে। গ্রামে সব বাড়িতে আগুন দেয় হিংস্র হায়েনারা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দেয়ায় গ্রামে অনেক পরিবার জ্বলে পুড়ে মারা গেছে। অন্ধকারে ছেলে-বুড়ো, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর, গর্ভবতী নারী যে যেভাবে পারছে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে। বাঁচতে হলে এখন অন্ধকার ছিঁড়ে-ফুঁড়ে পালাতে হবে। বাবাও দৌড়চ্ছিল। মা সবার ভিড়ে দৌড়চ্ছিল রেহানার হাত ধরে। তারপরই পিছনদিকে খুব কাছে গুলির শব্দ, এগিয়ে আসছে মৃত্যুদূত । লোকজনের ধাক্কায় সামনের দিকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। আমাকে মাড়িয়ে গেল মানুষ। দুহাতে হাতরে টের পেলাম অনেক মানুষ পড়ে আছে, সবার শরীর... continue reading
Comments (7)
লেখাটা চমতকার।
আবৃত্তিটাও দুর্দান্ত হয়েছে
অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা, পাশা ভাই...
অসাধারণ লিখা। খুব ভাল লেগেছে। শুভাশিস রইলো।
অশেষ শুভকামনা...
আবৃত্তিটা শুনলাম। সত্যিই তুলনা নেই।
শুভেচ্ছা অফুরান...