(পূর্ব হতে)
অথচ বাবা মিশুকের ভীষণ বন্ধু। বাবা মিশুকের সাথে কখনোই জোরে কথা বলে না। সব সময় ডাকবে, আমার আব্বুনি। মাও নাকি ওকে ডাকতো আব্বুনি। মায়ের কথা মনে পড়তেই এ্যালবামটার কথা মনে পড়ে। আর সেই সময় একবার এ্যালবামটা দেখা চাই’ই ওর।
মিশুক টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর হাতড়ে অবাক হয়ে যায়। কোথায় গেল এ্যালবামটা? মায়ের ছবির এ্যালবাম। মিশুকের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। রোজ একবার না দেখলে মায়ের ছবি, মিশুক ছটফট করে। মিশুক যখন তিন বছরের তখন মা অনেক দূরে চলে গেছে। দাদী বলতো, মা আকাশের তারা হয়ে গেছে। এখন মিশুক আর ছোটটি নয়। সে রীতিমত ফাইভে পড়ুয়া ছেলে। ছোটবেলায় দাদীর কোলে তারা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেত। যেন মাকে দেখছে। এখন ও জানে এই ছবিগুলোর মাঝেই মা আছে।
এই এ্যালবামটা ওর সেভেনথ বার্থ ডে তে বাবা গিফট করেছিল। আর্চিস গ্যালারি’র দারুণ এক এ্যালবাম। বাবা বেছে প্রিয় প্রিয় ছবিগুলো রেখেছে এতে। এই এ্যালবামে মা আর মিশুকের ছবিগুলো আছে। মা মিশুককে গোসল করাচ্ছে, খাওয়াচ্ছে। হাসপাতালের বেডে শোয়া ছোট্ট একদিনের মিশুক থেকে তিন বছরের মিশুক। মায়ের সাথে। ছবিগুলো দেখে মিশুর কান্না পায় না। অথচ এ্যালবাম না পেয়ে মিশুকের কান্না পাচ্ছে। এখানেই তো ছিল! কোথায় গেল? ফুপি নিয়েছে নিশ্চয়ই! মিশুক দৌড়ে পাশের ঘরে চলে যায়। ফুপি টিভিতে মশগুল। ফুপির কাছে জানতে চাওয়ার আগেই বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা এ্যালবামটা চোখে পড়ে ওর।
-কী চাই? মিশুক কিছু লাগবে?
ফুপি টিভি বন্ধ করে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
-উহু...এ্যালবামটা তুমি এনেছো?
-হ্যাঁ, কতদিন দেখি না তো ছবিগুলো। তোর ড্রয়ারে হাত দিয়েছি, রাগ করেছিস?
-নাহ্, রাগ করবো কেন? মাকে তো তুমিও ভালোবাস! আমি ভেবেছি হারিয়ে গেছে!
-আরে বোকা হারাবে কেন? তোর এত প্রিয় জিনিস আমরা কেউ হারাতে দিবই না।
দৌড়ে গিয়ে এ্যালবামটা বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মিশুক। হারিয়ে যাওয়া গল্পের বই বা ক্রিকেট বলের প্রাপ্তিতেও এই আনন্দ নেই যেন। নিঃশব্দে মিশুক ওর পড়ার ঘরে চলে আসে। এ্যালবামের গন্ধ নেয়। নাকে মায়ের গায়ের গন্ধ লাগে যেন। মিশুক এ্যালবামটা বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে রাখে। মা না থাকার কষ্টের ভাগ কাছের মানুষগুলো নিয়ে নেয়। কিন্তু এই এ্যালবামের ভাগ ও কখনোই কাউকে দিবে না।
(সময়কাল: ১২ জানুয়ারি, ২০১৪ খ্রিঃ)