Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

৭ বছর আগে

মা’কে নিয়ে ভারত ভ্রমণ (৬ষ্ঠ/শেষ পর্ব)

তাজমহল ভ্রমণ শেষে দিল্লীর হোটেলে ফিরতে অনেক রাত হল । মেজু ভাইয়াও জয়পুর থেকে ফিরেছেন । রাতে তেমন ভালো ঘুম হয় নি । তাই ২৪ এপ্রিল সকালের সময়টি হোটেলেই রেস্ট নিয়ে কাটিয়ে দিলাম । পটিয়ার ঐ পরিবার কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হল । বিকেলবেলা মেজু ভাইয়া মা’কে নিয়ে গেলেন ঐতিহাসিক দিল্লী জামা মসজিদে আর আমি বের হলাম “ইন্ডিয়া গেইট” দেখার জন্য । ইন্ডিয়া গেইট হল প্রথম বিশ্বযু্দ্ধে জীবন বলিদান করা সত্তর হাজার ভারতীয় সৈন্যদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি যুদ্ধ স্মারক । পার্কের মত বিশাল এলাকার মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে স্মারকটি । এর পূর্বকালীন নাম ছিল অল ইন্ডিয়া ওয়্যার মেমোরিয়াল বা সর্ব ভারতীয় যুদ্ধ স্মারক।বিখ্যাত ইংরেজ স্থপতি স্যার এডউ্যইন লিউটিয়েন্স দ্বারা এই স্মারকটির পরিকল্পনা করা হয় । ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ এখানেই অনুষ্ঠিত হয় । এছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে পর্যটকদের সমাগমে ইন্ডিয়া গেইট এলাকা থাকে লোকারণ্য ।    

 

                                      ইন্ডিয়া গেইট 

ইন্ডিয়া গেইট থেকে যাবো স্যার গঙ্গারাম হসপিটালে । মায়ের চেকআপ রিপোর্টগুলো নেওয়ার জন্য । মেজু ভাইয়া বলেছিলেন মেট্রো রেলে (মাটির নিচে চলাচল করা ট্রেনে) যেতে । এতে দ্রুত সময়ে যাওয়া যায় । দারুণ এক অভিজ্ঞতা হলো মেট্রো রেলে চড়ে ! মাটির নিচে চকচকে ঝকঝকে প্লাটফর্ম ! রয়েছে এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) ! কিছুক্ষণ পর পর একের পর এক ট্রেন দ্রুত বেগে আসছে আর যাচ্ছে । অটোমেটিক দরজা খুলে যাচ্ছে, ১০ সেকেন্ডের মধ্যে যাত্রী নামছে আর উঠছে, আবার দ্রুত বেগে ছুটে চলেছে ট্রেন ! এক স্ট্রেশন থেকে আরেক স্ট্রেশন যেতে মিনিট খানেক সময়ও লাগছে না ! প্রতি স্ট্রেশনে ট্রেনটি সময় দিচ্ছে মাত্র ১০ সেকেন্ড ! এই দশ সেকেন্ডের মধ্যেই যাত্রী নামছেন আর উঠছেন । নেই কোনো ধাক্কাধাক্কি ! মাটির নিচ থেকে কখনো কখনো উড়ে চলেছে ফ্লাইওভার দিয়ে ।  

 

                                                               মেট্রোরেল প্লাটফর্ম 

২৫ এপ্রিল সকালে কিছু কেনাকাটা সেরে গোছগাছ শুরু করে দেই । বিকাল ৪ টায় নয়া দিল্লী রেল স্ট্রেশন থেকে রাজধানী ট্রেনে রওনা হলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে । আবারও শুরু হল রাজধানী ট্রেনের স্পেশাল আপ্যায়ন । পরদিন নির্ধারিত সময় ঠিক সকাল ১০ টায় আমরা কলকাতায় পৌঁছে যাই । বাংলাদেশীদের এলাকা খ্যাত মারকিউ স্ট্রিটে একটি হোটেলে উঠলাম । পরের দিনই বাংলাদেশে ফিরবো, তাই শুরু করলাম বাংলাদেশ ফেরার বন্দোবস্তকরণ ।

 

প্রিয় পাঠকদের সুবিধার্থে একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না । ঘটনাটি উল্লেখ করতে চাই নি, কিন্তু যেসকল পাঠক প্রথম বার ইন্ডিয়া বা বিদেশ ভ্রমণে যাবেন তাদের সুবিধার্থে উল্লেখ করছি । বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় পটিয়ার এক পরিবার আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন । মনে আছে নিশ্চয়ই ? আজমীর থেকে দিল্লী ফেরার পথে তারা তাদের সাথে থাকা ডলার ও রূপিগুলো হারিয়ে ফেলেন । এমন পরিস্থিতিতে আমরা তাদের হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া ও খাওয়ার খরচ বহন করতে থাকি । দিল্লীতে তারা বাংলাদেশ থেকে টাকা নেওয়ার অনেক চেষ্টা করে নাকি ব্যর্থ হয়েছে তাই আমরা আমাদের সাথে থাকা কিছু ডলার তাদেরকে দিয়েছি । দিল্লী থেকে তারা কলকাতা রওনা দেয় আমাদের একদিন আগে । কথা ছিল কলকাতা পৌঁছেই তারা বাংলাদেশ থেকে টাকা আনবে এবং আমাদের জন্য বিমানের টিকেট করে যাবে । তা না হলে আমাদের দেশে ফেরা দুরূহ হয়ে উঠবে । আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কলকাতা পৌঁছে তারা নিজ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে কিনা । কিন্তু না, যোগাযোগ করলেন না । অবশেষে আমরাই ফোন দিলাম । বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ ব্যবস্থা করছি” । কিন্তু করলেন না । বিমানে বাংলাদেশ চলে আসার সময়ও ফোন দেয় নি, বাংলাদেশ পৌঁছেও ফোন দেয় নি । 

 

আমি ওদেরকে দেওয়া অর্থের জন্য মোটেও চিন্তিত নই । কারণ ওদের পাসপোর্টের কপি আমার কাছে আছে । পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানার ঐ এলাকা আমার চেনা । অর্থ আমি ঠিকই আদায় করতে পারবো । কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে ঐ অর্থ ভিনদেশে মহামূল্যবান । পরবর্তীতে দেশে ফিরেও তাদের ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম । কিন্তু ফোন করেনি । তারপর নিজ থেকেই বহুবার ফোন করে বহু ভোগান্তির পর অর্থ উদ্ধার হল, তাও পরিমাণে কম । বিপদে মানুষকে সহযোগিতা করার এটাই কি প্রতিদান ! প্রিয় পাঠক, ঘটনাটি উল্লেখ করার কয়েকটি কারণ হল- প্রথমত আপনাদের সতর্ক করা যেন বিদেশ ভ্রমণের সময় অর্থ সম্পদের ক্ষতি না হয় বা হারিয়ে না যায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে । কারণ ভিনদেশে সময়ে এক টাকাও মহামূল্যবান হয়ে যায় । দ্বিতীয়ত, কোনো মানুষ বিপদে পরলে আমাদের অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । এটুকু মানবিকতা না থাকলে আমরা নিজেদেরকে মানুষ পরিচয় দিবো কি করে ? তৃতীয়ত, মানবিকতারও একটি সীমাবদ্ধতা রাখা উচিত যেন আমাদের মত বিপদে পরতে না হয় ।

 

যাই হোক, মা’কে হোটেলে রেখে আমি আর মেজু ভাইয়া ব্যস্ত হয়ে পরেছি বাংলাদেশে ফেরার বন্দোবস্তকরণ নিয়ে । বিষয়টি সেজু ভাইয়াকে জানালাম । সেজু ভাইয়া তখন চট্টগ্রামে ছিলেন । তিনি তাৎক্ষণিক মারকিউ স্ট্রিটের এক মানি এক্সচেঞ্জ এজেন্টের মাধ্যমে আমাদের জন্য টাকা পাঠালেন এবং বিমানের টিকেট করে দিলেন । আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলো । বিকেলবেলা আমি, মা আর মেজু ভাইয়া কলকাতা নিউ মার্কেটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম । রাতে হোটেলে ফেরার পথে মারকিউ স্ট্রিটে দেখা হয় আমাদের চট্টগ্রামের এলাকার মোমিন ভাই ও এরশাদ ভাইয়ের সাথে । তারা চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া এসেছেন ।

 

                                             চট্টগ্রাম শাহ্‌ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছার পর 

২৭ এপ্রিল রিজেন্ট এয়ারের সকালের ফ্লাইটে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছি । ইন্ডিয়া ভ্রমণের পুরো সময়টি ছিল আনন্দদায়ক, বিস্ময়কর ও চির স্মরণীয় ! (সমাপ্ত)

 

Email: shafiq_shohag@yahoo.com

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৭৫ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    নিশ্বেস আধার শেষে ধূলির ধোঁয়া

    উড়ছে মেঘ ঝরছে জল সমুদ্র---

    সুন্দর দাদা

    - এই মেঘ এই রোদ্দুর

    সুন্দর আর ভোট

    - দীপঙ্কর বেরা

    দারুণ । ভোট