Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

৭ বছর আগে

মা’কে নিয়ে ভারত ভ্রমণ (৪র্থ পর্ব)

সন্ধ্যাবেলা আমি একাই বের হলাম আজমীর এলাকার মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করার জন্য । সেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে কাপড়ের পাইকারি দোকান । ভালো মানের প্যান্ট পীচ, শার্ট পীচের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেকের চেয়েও কম ! আমি বেশ কিছু প্যান্ট পীচ, শার্ট পীচ নিয়ে নিলাম । আমার বয়সী দোকানদার ছেলেটি মূলত একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, ব্যাংকে জব করেন । বাবার বিজনেসে মাঝে মধ্যে সময় দেন । যেমন স্মার্ট তেমন জেন্টল । ইংরেজিতে আমার চেয়েও ভালো কথা বলতে পারেন । ফলে তার সাথে কথা বলে কেনাকাটা করা আমার জন্য সহজ হয় ।

 

২১ এপ্রিল আমাদের ভ্রমণের স্থান ছিল জয়পুর । সকালবেলা আমি আর মেজু ভাইয়া জয়পুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । মা হাঁটতে পারবেন না, তাই খাদেমের বাড়িতেই ছিলেন । আজমীর থেকে সকাল সাড়ে ৭ টায় রওনা হয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর আমরা জয়পুর এসে পৌঁছি । গাড়ি থেকে নামার পরই গাইড এসে হাজির । তিনি জানালেন, তার কাছে এসি কার আছে; তিনি আমাদের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখাতে ইচ্ছুক । আমরা হাওয়া মহল, জন্তর-মন্তর, জল মহল এবং ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ হাসপাতালের জন্য কারটি ভাড়া করলাম ।   

 
                                                                            হাওয়া মহল 

আনুমানিক ২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম হাওয়া মহল সম্মুখে । আমরা টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করি । জয়পুর শহরের সবচেয়ে সম্ভ্রম উদ্রেককারী স্থান হল হাওয়া মহল । হাওয়া মহলে পাথর খোদিত ৯৫৩ টি জানালা রয়েছে। মহলকে শীতল রাখতে জানালাগুলো হাওয়া-চলাচলের উপযুক্ত । ফলে এটি “প্যালেস অফ উইন্ডস” নামেও পরিচিত । মহারাজা সওয়াই প্রতাপ সিং ১৭৯৯ সালে হাওয়া মহলটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি প্রাসাদ । এর উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার । গোলাপী ও লাল বর্ণের পাথর দ্বারাপ্রাসাদটি নির্মিত।প্রাসাদের সম্মুখভাগ অর্ধ-অষ্টকোণী কুলুঙ্গি, কলস এবং গম্বুজ ও বেলেপাথরে তৈরি বিস্তারিতভাবে উৎকীর্ণ ঝাঁঝরির সঙ্গে সুশোভিত রয়েছে। তৎকালে রাজপরিবারের মেয়েদের সর্বজনের সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল না । রাজ পরিবারের মেয়েরা যেন নিকটবর্তী অঞ্চল ও সরণীগুলির দৈনন্দিন কার্যকলাপ দর্শন করতে পারে কিন্তু অন্যরা যেন তাদের দেখতে না পায়, সেই উদ্দেশ্যে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরের উৎকীর্ণ পর্দা, ছোট কাঁচ লাগানো পাল্লা এবং খিলানাকার ছাদ হল এই প্রাসাদটির কিছু বৈশিষ্ট্য। 



                                                                            হাওয়া মহল  

হাওয়া মহল থেকে আমরা এবার এলাম জন্তর-মন্তর । এটা হাওয়া মহলের নিকটেই । টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে চারদিক তাকিয়ে দেখি প্রাচীন আমলে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে সাজানো হয়েছে জন্তর-মন্তর। তখনকার দিনের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম নিদর্শন এটি ।সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়ন দেখার জন্য এখানে রয়েছে নাড়ীবলয় । রয়েছে ‘বৃহৎ সম্রাট যন্ত্র’ নামে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সূর্যঘড়ি । প্রত্যেক রাশির জন্য এখানে আলাদা আলাদা করে মার্বেল পাথরের স্তম্ভ করা আছে । এছাড়াও আছে বিশাল দুটি ঘণ্টা এবং সে সময়কার সেনাপতিদের ব্যবহারের গোলাবারুদ, কামানসহ নানা যন্ত্রপাতি।

 

                                                                             জন্তর মন্তর 



                                                                             জন্তর মন্তর 

সময় স্বল্পতার কারণে জলমহলে আর গেলাম না । ড্রাইভারকে বললাম ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে যেতে । এই হাসপাতালটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিখ্যাত বিকলাঙ্গ হাসপাতাল । এই হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানুষের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় । আমরা এখানে এসে মেজু ভাইয়ার ডান হাতের মাপ দিয়ে গেলাম । কৃত্রিম হাতটি প্রদান করবে দু’দিন পর । আমরা হাসপাতাল থেকেই খাদেমের বাড়িতে ফিরে আসি ।

 

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) এর রওজা সংলগ্ন মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে আমরা এ যাত্রায় শেষ বারের মত খাজার রওজা জেয়ারত করতে গেলাম । বিদায় বেলায় মনের মধ্যে হাহাকার করছিল । সেই সাথে এ স্থানে বারবার আসার বাসনা । খাজার রওজায় দায়িত্বরত খাদেম আমাকে রওজার উপর থেকে এক শিশি আঁতর ও এক প্যাকেট আগরবাতি উপহার দিলেন । জেয়ারত শেষ করে আমরা পুনরায় খাদেমের বাড়িতে আসি । রাতের খাবার খেয়ে সবকিছু গোছগাছ করে নেই । খাদেম কলিম উল্লাহ্‌ সাহেব আমাদের মাথায় পাগড়ী পড়িয়ে দিয়ে আমাদেরকে বিদায় জানালেন । আমরা স্লিপার বাসে করে দিল্লীর পথে চললাম । (চলবে.....)

 

Email: shafiq_shohag@yahoo.com
০ Likes ৬ Comments ০ Share ৪৪৮ Views