Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

৭ বছর আগে

মা’কে নিয়ে ভারত ভ্রমণ (২য় পর্ব)

১৭ এপ্রিল দুপুরবেলা । আমরা হাওড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে এসে উপস্থিত হলাম । উদ্দেশ্য রাজধানী এক্সপ্রেসে করে কলকাতা থেকে দিল্লী যাওয়া । প্রতিদিন বিকাল ৪ টার পর দিল্লীর উদ্দেশ্যে হাওড়া ছাড়লেও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়বে ২ টার পর । রাজধানী এক্সপ্রেস দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিখ্যাত । সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও স্লিপার ট্রেন এটি । ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর বেয়ারার টিম সকল যাত্রীর মাঝে নাস্তা বিতরণ করতে লাগলেন । প্রত্যেক যাত্রীকে হরেক রকম নাস্তায় একটি করে ট্রে সাজিয়ে দিলেন । স্যান্ডুইচ, সস, কেক, মটর ভাঁজা, জুস আরও কত কিছু । এর পরপরই চলে এলো চা । এক কাপ চায়ের পরিমাণ ছোট ছোট পাউডার দুধের প্যাক – চিনির প্যাক – টি প্যাক । সবাই যার যার পরিমাণ মত চা বানিয়ে পান করতে পারবেন । আমাদের সামনের স্লিপারগুলোতে পটিয়ার ঐ ফ্যামিলি এবং চল্লিশোর্ধ ইন্ডিয়ান একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় । পাশের স্লিপারগুলোতে রয়েছেন ইন্ডিয়ান একটি ফ্যামিলি । স্বামী-স্ত্রী, ১৬/১৭ বছরের দুটি মেয়ে, ১১/১২ বছরের একটি ছেলে । বাবা-মা, ছেলে-মেয়ের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব ! ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়টিও ভীষণ সদালাপী ও বিনয়ী । ইন্ডিয়ানদের প্রতি আমার যে নেতিবাচক ধারণা ছিল এই মানুষগুলোর সাথে মিশে তা কিছুটা হ্রাস পেলো ।

বেয়ারাগুলো আবার হাজির হল স্ন্যাকস নিয়ে । বাটার ও একজাতীয় স্ট্রিক । এরপর আবার নিয়ে এলো সূপ । কিছুক্ষণ পর এসে লিখে নিয়ে যায় ডিনারে আর ব্রেকফাস্টে কে কি খাবে তার লিস্ট । এরই মধ্যে আমার সিটে এসে উপস্থিত হয়েছে কফি হাউজে পরিচয় হওয়া ঢাকার বন্ধু নূর । আমরা মেতে উঠি আড্ডায় । রাত ন’টার দিকে ডিনার চলে এলো । ট্রেতে সাজানো আছে রাইস প্যাক, চিকেন প্যাক, রুটির প্যাক, ডালের প্যাক ও দই । ডিনার শেষ করে সবাই যখন ঘুমানোর জন্য বিছানা রেডি করছে তখন বেয়ারা নিয়ে এলো আইসক্রিম । সবাই যার যার মত করে শুয়ে পরেছে, নিঃশব্দে ছুটে চলেছে ট্রেন । সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি বেয়ারা বেড টি আর বিস্কুট নিয়ে হাজির । এগুলো সাবাড় করে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখি ব্রেকফাস্ট হাজির । পাউরুটি, জেলি, বাটার, ডিম পোস্ট, সস ও জুস দিয়ে ট্রে সাজানো । এরপর আবার এলো চা । ব্রেকফাস্ট শেষ করে সবাই গোছগাছ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে । অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম দিল্লী ষ্টেশন । রাজধানী একপ্রেসের অসাধারণ সার্ভিসে আমরা মুগ্ধ হলাম ! মাত্র ২২০০ রূপী ভাড়ায় অনেক ভালো সেবা বটে । দিল্লী পৌঁছে প্রথমেই ফরেইনার ব্যুরোতে এসে ১৮ এপ্রিল রাতেই দিল্লী টু আজমীর এবং ২৫ এপ্রিল দিল্লী টু কলকাতার টিকেট বুক করে নিলাম । ফরেইনার ব্যুরোতে পরিচয় হল চট্টগ্রামের চাঁন্দগা থেকে আসা গোলাপ ভাই ও তার পরিবারের সাথে । তারাও আজমীর শরীফ যাবেন । আমরা তিন পরিবার এসে দিল্লী ষ্টেশনের পার্শ্ববর্তী “হোটেল ইউ এন্ড মি” তে উঠলাম । কলকাতার তুলনায় দিল্লীর হোটেলগুলো অনেক উন্নত অথচ ভাড়া অনেক কম ।

 



জনশ্রুতি আছে, যারা প্রথমবার আজমীর শরীফ যাবেন তাদেরকে আগে দিল্লীস্থ খাজা কুতুবউদ্দিন আউলিয়া ও নিজামুদ্দিন আউলিয়ার রওজা জেয়ারত করতে হয় । আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এমন সময় আমার কাজিন রবিউল ভাই হোটেলে এলেন । তিনি আজমীর শরীফ জেয়ারত করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন । রবিউল ভাই আমাদেরকে একটি মাইক্রো ঠিক করে দিয়ে বিদায় নিলেন । আমরা চলেছি খাজা কুতুবউদ্দিন আউলিয়ার রওজার উদ্দেশ্যে । পথিমধ্যেই চোখে পড়ে দিল্লীর বিখ্যাত কুতুব মিনার । হযরত খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ কিরগিন্তানের উশ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর আসল নাম বখতিয়ার এবং পরবর্তীতে কুতুবউদ্দিন নামটা দেয়া হয়। তিনি হোসাইন ইবলে আলীর মাধ্যম হয়ে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর বংশের সাথে মিলিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম সুফি সাধক। তিনি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির  শিষ্য এবং প্রথম খলিফা ছিলেন। তাঁর নামেই দিল্লীর বিখ্যাত কুতুব মিনার উৎসর্গ করা হয়। খাজা কুতুবউদ্দিন আউলিয়ার রওজা জেয়ারত করে আমরা এলাম খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার রওজায় ।খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সূফি সাধক। তাঁর মূল ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকার, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী হয়ে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির সাথে মিলিত হয়। আমার আইকন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদও ১৯৪৭ সালে খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার রওজায় গিয়েছিলেন । রওজার খাদেমের সাথে বঙ্গতাজ পরিবারের রয়েছে আন্তরিক সুসম্পর্ক । বঙ্গতাজ কন্যা প্রিয় শারমিন আপু ইমেইলে বলেছিলেন খাদেম সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য । কিন্তু ভারত ভ্রমণের সময় আমি ইমেইল ওপেন করিনি বলে তা আর হয়নি ।    

 



পুরান দিল্লী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে সকালবেলা আজমীর ষ্টেশনে এসে পৌঁছলাম । সেখান থেকে আজমীর শরীফের গেইটে আসার পর আজমীর শরীফের খাদেম কলিম উল্লাহ্‌ সাহেবের বাড়ির কেয়ারটেকার এসে আমাদের রিসিভ করলেন । মেজু ভাইয়া এবার সহ মোট ৯ বার আজমীর শরীফ এসেছেন । ফলে খাদেম পরিবারের সাথে তার আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে । আমরা তাঁদের বাড়ির মেহমান হলাম । আসরের নামাজের পর খাদেম কলিম উল্লাহ্‌ সাহেব আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে এলেন সেই স্থানে, যে স্থানে উপস্থিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম প্রতিনিয়ত ! আমরা খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী’র রওজা জেয়ারত করলাম । আমি মাজার পূজারী নই । ব্যক্তিগত ভাবে আমি মাজার পূজারীদের ঘৃণা করি । তবে আউলিয়াদের প্রতি আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা সর্বদা বিদ্যমান; আমি এর পক্ষে । একটি বিষয় আমার প্রত্যক্ষণ হল, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী’র রওজায় আসার পর আমার ভিতর ভিন্ন এক অনুভূতি কাজ করছে ! আমার চিত্ত অতি নমনীয় রূপ ধারণ করেছে ! আশ্চর্য হলাম খাজার প্রতি মানুষের ভক্তি দেখে ! বিশ্বের কত স্থান থেকে কত রূপের মানুষ এসেছে তার হিসেব নেই । হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টানসহ আরও কত জাতি ! নেই জাতি, ধর্ম, নারী-পুরুষ কোনো ধরণের ভেদাভেদ ! প্রত্যেকেই যে যার মত খাজার প্রতি ভক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত । এমন পরিবেশে এসে সত্যিই মুগ্ধ হলাম ! তবে একটি বিষয়ে আমি ব্যথিত হয়েছি । আজমীর শরীফ পরিচালনা কমিটিতে যারা আছেন বা মাজারে যারা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন তাদের বেশির ভাগই অর্থ লোভী । তারা বিশ্বখ্যাত আউলিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে ফায়দা লুটতে সর্বদা ওঁত পেতে থাকে ।          

 

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১২৩৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গরীবে নেওয়াজ নামেও পরিচিত । মঈনুদ্দিনমাত্র ১৫ বৎসর বয়সে বাবা – মা উভয়কেই হারান।একদিন নিজ বাগানে কাজ করার সময় সেখানে এসে উপস্হিত হলেন এক অচেনা আগন্তুক। কিশোর মঈনুদ্দিন তাকে বাগানের কিছু আঙ্গুর এনে আপ্যায়ন করলেন। আগন্তুক ছিলেন আল্লাহর এক অলিহযরত ইব্রাহিম কান্দুযী(রঃ)। তিনি খুশী হলেন কিশোরের আপ্যায়নে এবং হাত তুলে দোয়া করলেন।তারপর ঝুলি থেকে বের করলেন এক টুকরো শুকনো রুটি।রুটির একাংশ কিছুক্ষণ চিবুলেন তারপর অন্য অংশটুকু মঈনুদ্দিনকে খেতে দিলেন।আদেশ পালন করলেন মঈনুদ্দিন । একটু পরেই উচ্ছিষ্ট রুটির প্রতিক্রিয়া শুরু হল । তিনি বিস্মিত হলেন ! অদ্ভুত এক জ্যোতির্ময় অনুভব এসে ধীরে ধীরে আলোকিত করছে হৃদয়ের সর্বত্র।দরবেশ চলে গেলেন; অন্তরে জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন আল্লাহর প্রেমের অনন্ত অনল । মঈনুদ্দিন বেরিয়ে পরলেন আল্লাহর পথে । 

 মঈনুদ্দিনবাগদাদে এসে হজরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এরসাক্ষাৎ পেলেন । ৫৭ দিন উনার সাথে অবস্হান করেন । তাঁর জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো । এরপর মঈনুদ্দিন খোরাসান এবং ইরাকের মধ্যবর্তী নিশাপুর অঞ্চলের হারুন নগরে এসে হজরত ওসমান হারুনী(রঃ) এর সাথে সাক্ষাত করেন । উনার কাছ থেকে বিশ বছরের অধিক সময় দীক্ষা গ্রহণ করেন । এবার ইসলামের দাওয়াতি দায়িত্বের ভার এসে পড়ল মঈনুদ্দিনের উপর । মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তাঁর শিষ্য জনাব কুতুবউদ্দিন বখতিকে সাথে নিয়ে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান। খাজার জীবনীতে পাওয়া যায়, হজ্ব করার সময় মঈনুদ্দিন মক্কা থেকে মদিনা শরীফ আসার পর হিন্দুস্থান-আজমীরে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পুনরায় পান রাসূলে পাক (সাঃ) এর কাছ থেকে অলৌকিক ভাবে । সফর শুরু হলো আবার।সঙ্গে সাথী কুতুবউদ্দিন। তারা বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর নির্দেশে লাহোরে এসে হজরত দাতাগন্জ্ঞে বখশ(রঃ) এর সাথে সাক্ষাত করেন । এখানে দুই মাস অবস্থান করে পুনরায় দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন । এখন আর কাফেলা দুইজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।বিভিন্ন স্হানেবিরতির সময় সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু ফকির দরবেশ। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে চল্লিশে। সঙ্গীদের নিয়ে দিল্লী এসে উপস্হিত হলেন হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ)। শুরু হল ইসলামের দাওয়াতি কাজ । পরবর্তীতে দিল্লীতে ইসলামের দাওয়াত অব্যাহত রাখার দায়িত্ব হযরত কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী(রঃ) এর উপর অর্পণ করে খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) চললেন আজমীরের উদ্দেশ্যে ।

 আজমীর শহরের উপকন্ঠে এসে উপস্হিত হলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ও সঙ্গীগণ ।সফর সঙ্গীগণ সবাই পরিশ্রান্ত।চারিদিকে পাহাড়,পাথর মরুভুমি। নিকটেই বৃক্ষ ছায়ার নিচে বিশ্রামের জন্য উপবেশন করলেন দরবেশের কাফেলা । স্হানটি ছিল রাজা পৃথ্বিরাজের উট দলের বিশ্রামস্হল। রাজার লোকেরা কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই সবাইকে স্হান ত্যাগ করতে বলল।বিস্মিত হলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ।উটের দলতো এসে পৌছবে সেই সন্ধ্যাবেলায় ।অথচ লোকগুলি তাদেরকে এখনই তাড়িয়ে দিতে চায়।তিনি বললেন, ”ঠিক আছে আমরা চললাম, তোমাদের উটইএখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক।” পরিশ্রান্ত কাফেলা আবার এগিয়ে চললো সামনের দিকে। অদূরে ‘আনা সাগর’। লোকে বলে আনা সাগর আসলে এটি একটি বিশাল হ্রদ ।আনা সাগরের পাড় ঘেষে অজস্র মন্দির। খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এই হ্রদেরই এক ছোট টিলার উপর বসবাসের স্হান নির্বাচন করলেন। সে রাতেই মুখে মুখে আগন্তুক দরবেশের আগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। সকালে মহারাজ পৃথ্বিরাজও শুনতে পেলেন এক অদ্ভুত সংবাদ। উটশালার কর্মচারীগন এসে জানালো, গতকাল সন্ধায় যে উটগুলি উটশালায় আনাহয়েছিল সবগুলি এখনও শুয়ে আছে।কিছুতেই উঠছে না ।একই সাথে মুসলমান দরবেশদলের ঘটনাটিও বলল  রাজার কাছে। দরবেশদলের নেতা উটশালা ত্যাগের সময় বলেছিলেন , ”তোমাদের উটই এখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক ।”

 
ইতিপুর্বে বিক্ষিপ্তভাবে মুসলমান ফকিরদের সম্পর্কে এরকম অনেক কথা রাজার কর্নগোচর হয়েছিল।চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাজা পৃথ্বিরাজ।মনে পড়ে গেল তার রাজমাতার ভবিষ্যতবানীর কথা।তিনি বলেছিলেন ”এক মুসলমান ফকিরের অভিসম্পাদেই পৃথ্বিরাজের রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।” একি তবে সেই ফকির ? সম্ভবত এই ফকিরের কথাতেই এই অবস্হার সৃষ্টি হয়েছে।কর্মচারীদেরকে ফকিরদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন রাজা । রাজার আদেশ পালন করল তারা । হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) বললেন যাও, এ অবস্হা আর থাকবে না।উটশালায় ফিরে এসে বিস্ময়ের সঙ্গে সবাই লক্ষ্য করল উটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে। এই ঘটনার পর খাজার কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো আজমীরবাসী। কিন্তু বর্নবাদী হিন্দু রাজদরবারে গিয়ে খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। অভিযোগ শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন রাজা পৃথ্বিরাজ।অহংকারের নীচে চাপা পরে গেল মায়ের সদুপদেশবানী।রাজা একদল সৈন্যকে আদেশ দিলেন ফকির দরবেশদলকে এক্ষুনি রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে। তারা রাজার আদেশ পেয়ে ঝাপিয়ে পরলো অভিযানে। হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) নির্বিকার।আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করলেন তিনি।সাথে সাথেই আক্রমনকারীদের কেউ হলেন অন্ধ, কারও শরীর হল নিঃসাড়, কেউ হল ভুতলশায়ী । নিরুপায় হয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো তারা।দয়ার সাগর গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) ক্ষমা করে দিলেন সবাইকে।রাজা পৃথ্বিরাজ ভেবে কুল পান না কি করবেন তিনি।সমরাস্ত্র, সুসজ্জিত সৈন্যদল কোন কিছুই যে আর কাজে আসছে না।এক দুরাগত যবন ফকিরের নিকট পরাজয় বরণ করতে হবে তাকে ?ঐশ্বরিক ক্ষমতাধর এই ফকিরের আনুগত্য স্বীকার করবেন নাকি তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন ? এ কি বিস্ময়কর সংকট ! চুপ করে থাকলেও বিপদ, বিরুদ্ধাচরণ করলেও সমস্যা।এদিকে দলে দলে লোকজন গ্রহণ করছে ফকিরের প্রচারিত একত্ববাদী ধর্মমত !

রাজা ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন ,হিন্দু ধর্মের আধ্যাধিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে।তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত ”রামদেও” কে অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই ফকিরকে বিতাড়িত করতে।রামদেও রাজী হলেন।তার দীর্ঘ সাধনালব্দ্ধ আধ্যাত্মিক শক্তিতে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) কে পরাস্ত করার বাসনায় হাজির হলেন খাজার দরবারে। হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তখন ছিলেন আল্লাহ্‌র এবাদতরত অবস্হায়।কিছুক্ষণ পর চোখ খুললেন খাজা ।রামদেও দৃষ্টিপাত করলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর জ্যোতির্ময় চেহারার দিকে।মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামদেও।তার আধ্যাতিক শক্তি মুহুর্তের মধ্যে নিশ্চিন্ন হয়ে গেল।খাজার কদম মোবারকে লুতিয়ে পড়লেন রামদেও।নির্দ্বধায় স্বীকার করলেন ইসলাম। খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) তার নাম রাখলেন মোহাম্মদ সাদী। এরপর আজমীরবাসী খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর কাছে এসে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া শুরু করে । (চলবে...)

Email: shafiq_shohag@yahoo.com

১ Likes ০ Comments ০ Share ৭০২ Views

Comments (0)

  • - শাহআজিজ

    উত্তম উদ্যোগ । সবাই আসুন বিশেষ করে তরুন লেখকরা ।।

    - আমির ইশতিয়াক

     প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা আছে।

    - আলমগীর সরকার লিটন

    আবারো সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য

    অশেষ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গাপান জানাই-

    আর দোয়া করি সাফল্য কামনা হোক----

    Load more comments...