Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shahidul Islam Pramanik

১০ বছর আগে

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত-০৪ (গল্প)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত -০৩

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় -2

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায়
(চতুর্থ পর্ব)

একথা শুনে মহিলা তাড়াতাড়ি উঠার চেষ্টা করে উঠতে পারল না। আমি দুই হাত দিয়ে তার ঘাড়ের পিছনে হাত দিয়ে টেনে উঠালাম। শড়ীর আঁচল দিয়ে ঝাপটা বাড়ি মেরে পিঠ, মাথা, কাধের বালু মুছে দিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি আপনি গায়ের কাপড় ঠিক করে মাথায় আঁচল দিয়ে বসেন। মহিলা আমার কথামত তাই করল। আমি ব্যাগ দু’টা হাতের কাছে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ভয়ে আমার গাঁ কাঁপা শুরু হয়েছে। এরকম রাতে এই মহিলাকে নিয়ে না জানি কোন বিপদে পরি। ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম। শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়তে লাগল। এমতোবস্থায় লোকগুলো আমাদের কাছে এসে বলল, তোমরা কারা গো?
আগন্তুকদের কথা শুনে বয়স্ক মনে হলো। কাঁপতে কাঁপতে বললাম, চাচা আমরা ট্রেনের যাত্রী।
-- কই যাইবা?
-- স্টীমার ধরবো।
-- কোন গ্রাম থিকা আইলা?
-- না চাচা আমরা কোনো গ্রাম থেকে আসি নাই। আমরা ট্রেনের যাত্রী।
-- ট্রেনের যাত্রী হইলে সব যাত্রী ঘাটে গেছে তোমরা অর্ধেক রাস্তায় বইসা আছো ক্যা? মতলব টা কি?
লোকটার কথায় খারাপ কথার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, চাচা আমরা ভাই বোন। আমার বোনটা পায়ে ব্যাথা পেয়েছে, হাঁটতে পারছে না, এই জন্য যেতে দেরি হচ্ছে।
-- কেমনে পায়ে ব্যাথা পাইছে?
-- ওই খানে গর্তের মধ্যে পা ঢুকে উল্টে পরে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।
-- সে কি খাড়া হইবার পারে না?
-- খাড়া হতে পারে কিন্তু হাঁটতে পারে না।
-- হাঁটতে না পারলে তোমরা যাইবা কেমনে? আশেপাশে তো কোন বাড়ি ঘরও নাই যে হেই হানে যায়া রাইত কাটাইবা। মেয়া মানুষ নিয়া ফাঁকা বালুচরে বইয়া থাকলে যদি গুন্ডা পান্ডার হাতে পরো তো সর্বনাশ কইরা ছাইড়া দিব। যেমনেই পারো তাড়াতাড়ি ঘাটে যাওয়ার চেষ্টা করো। বলেই লোকটি মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই বেটি উইঠা খাড়া হও দেখি।
লোকটির কথা শুনে উঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারল না। গুন গুন করে কাঁদতে লাগল।
লোকটি তখন মহিলার অবস্থা দেখে বলল, মেয়াডা ভালো চোট পাইছে দেহি। বলেই সাথের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই জালু, তুই না ভাঙা মচকার ঝাড়া জানোস। মেয়াডার পাওডা একটু ঝাইড়া দেছে দেহি। তাতে কিছুডা উপকার পায় যদি।
একথা শুনে সাথের লোকটি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই বেটা তোমার বুইনেরে ধইরা খাড়া করাও।
আমি বললাম, চেষ্টা করেছি উঠতে পারে না।
লোকটি ধমক দিয়ে বলল, আরে মিয়া পাঁজা কোলা কইরা ধইরা টাইনা উঠাও। বলেই বলল, তোমার বুইনের পাছের মুড়া যাও। দুই হাতের তল দিয়া দুই হাত দিয়া পোলাপানের মত টাইনা উঠাও।
তাদের কথা মত আমি মহিলার পিছনে গিয়ে নিচু হয়ে তার দুই হাতের বগল তলে হাত দিলে মহিলা আগের মতই তার দুই হাত দিয়ে উল্টা দিকে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। আমি শক্তি দিয়ে তাকে টেনে উঠানোর চেষ্টা করতেই সে আমার গলা ধরে অতি সহজেই উঠে আমার গলা ধরেই দাঁড়িয়ে রইল।
তার দাঁড়ানো দেখে লোকটি জিজ্ঞেস করল, এ বেটি তোমার কোন পায়ে ব্যাথা?
মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ডান পায়ে।
লোকটি বাম পায়ে ভর করে দাঁড়াতে বলে ডান পা নরম করতে বলল। আমাকে উদ্ধেশ্য করে বলল, বেটা তুমি কিন্তু তোমার বুইনেরে শক্ত কইরা ধইরা থাকো। আমি কিন্তু পাও ধইরা টান দিমু। আবার দুইজনে হুড়মুড় কইরা পইরা যাইও না। বলেই সে দুই হাতে পায়ের গোড়ালি ধরে এদিক ওদিক দুই তিনবার মোচড়া মুচড়ি করে ফট্ করে নিচের দিকে টান দিতেই মহিলা ওরে বাবারে করে চিৎকার দিয়ে উঠে। লোকটি ধমক দিয়ে বলল, এই বেটি চিক্কুর দেও ক্যা। কোমরের কোটি নইড়া গেছে। কোটি ঠিক মত বইসা গেলেই পায়ের বেদনা কুইমা যাইবো। এই বলেই বলল, হাটু ভাজ কইরা পাও উপর দিকে তোল। আমি টাইনা টাইনা দুইডা ঝাড়া দিলেই ঠিক হইয়া যাইবো।
তার কথা মতো মহিলা হাঁটু ভাঁজ করে পা উপর দিকে তুললে লোকটি নিচের দিকে পা টেনে টেনে তিনবার মন্ত্র পরে ঝাড়া দিল। ঝাড়া দেয়া শেষ করে বলল, এবার ডান পাও মাটিতে ফালায়া ভর করো দেহি। মহিলা পা মাটিতে ফেলে বলল, হ এখন ব্যাথা কম কম লাগে।
লোকটি খুশিতে বলল, এই তো বেটি, পাও ঠিক হয়া গ্যাছে। বলেই আমাকে উদেশ্য করে বলল, এই বেটা, তুমি তোমার বুইনেরে ধইরা ধইরা হাটাও। আমি হাঁটানোর চেষ্টা করতেই সে আমাকে ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এক পা দু’পা করে হাঁটতে লাগল। এবার প্রথম লোকটি খুশিতে বলল, এই তো পাও ঠিক হয়া গেছে। এবার হাঁটতে হাঁটতে ঘাটে চইলা যাও।
একথা শুনে মহিলা বলল, আমি তো একা একা হাঁটতে পারবো না। ধরে ধরে হাঁটতে হবে।
আমি বললাম, আমাকে ধরে হাঁটলে ব্যাগ নিবে কে?
মহিলা বলল, উনাদের একটু রিকোয়েস্ট করে দেখেন না আমাদের আরেকটু সহযোগীতা করে কিনা।
আমি বললাম, চাচা আপনারা করেন কি?
প্রথম লোকটি বলল, চাচা আমরা ঘাটের কুলি।
-- তাইলে চাচা আমাদের একটু ঘাটে পৌছে দিয়ে আসবেন?
বাবা আমার সকালে কাম আছে। হাল বাওয়া লাগবো। এইজন্য স্টীমরের কাম ফালায়া চইলা আইছি। বলেই সাথের লোকটাকে বলল, জালু তুই যাস না ক্যা?
জালু বলল, তোমার চায়া আমার আরো জরুলি কাম আছে। তুমিই যাও। বলেই বলল, এই বেটা ভাইরে পঞ্চাশটা ট্যাহা দিয়ো, ভাই তোমাগো ব্যাগ ট্যাগ ঘাটে দিয়া আসপো।
লোকটি বলল, এই জালু, আমি ঘাটে গেলে ফিরা আসমু কার সাথে রে?
-- ক্যা, এগোরে খ্যাপ নিয়া যাও। স্টীমার আইলে, স্টীমারের খ্যাপ মাইরা একবারে সকালে চইলা আসপা। তাতে তোমারি লাভ হইবো। তিন হালের ট্যাকা কামাই হইবো।
একথা শুনে লোকটি আর কথা বলল না, ঠিক আছে তুই যহন কইলি তাইলে যাই। পায়া ধন হারাইতে নাই। বলেই ব্যাগ দু’টি মাথায় তুলে নিল। ব্যাগ মাথায় নিয়ে দুই পা অগ্রসর হয়েই আবার জালুকে ডাক দিয়ে বলল, জালুরে, আমার ঘাটে যাওয়া ঠিক হইবো না রে। সকাল বেলা খুব জরুলি কাম আছেরে। ট্যাকার চায়া ওই কামটাই আগে। বলেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, বাবাজি আপনি একটু কষ্ট কইরা ব্যাগ দুইডা মাথায় নিয়া আস্তে আস্তে হাইটা যান। স্টীমার আসতে এখনও এক ঘন্টা দেড়ি আছে। আস্তে ধীরে গেলেও স্টীমার পাইবেন। একথা বলে লোকটি আমার কাছে এসে ব্যাগের ফিতা দিয়ে দুইটা ব্যাগ একত্রে করে বেঁধে আমার মাথায় তুলে দিল। অগত্যা মহিলাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাতে ব্যাগ জাপটে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। লোক দু’টা চলে গেল।
মহিলা এক হাত দিয়ে আমার ঘাড় ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি বললাম, আপনি কি একা একা হাটতে পারবেন?
মহিলা বলল, না।
আমি বললাম, না পারলে আমার ঘারে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটার চেষ্টা করেন। মহিলা আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে লাগল। কুলির মত দুইটা ব্যাগ মাথায় নিয়ে আমি আগে আগে হাঁটতে লাগলাম।
মহিলার খোঁড়ানো দেখে, তার প্রতি আমার যে রাগ এবং ক্ষোভ ছিল তা কিছুটা কমে গেল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার হাঁটতে কি কষ্ট হচ্ছে।
মহিলা জবাব দিল, হ্যা, এমনি হাটার অভ্যাস নাই তার উপর বালুর উপর আরও হাঁটতে পারছি না। এখন তো আছাড় খেয়ে কোমরে ব্যাথা পাচ্ছি।
আমি বললাম, তহলে কি করবেন, যাবেন না বসে থাকবেন?
মহিলা বলল, না না, যাওয়া লাগবে। বসা যাবে না।
-- আপনার তো কষ্ট হচ্ছে।
-- কষ্ট হোক জিরিয়ে জিরিয়ে যাবো। দেখেন না রাস্তায় কেউ নাই। যে কোন অঘটন ঘটলে কেউ এগিয়ে আসবে না। আমার জীবনে এরকম পরিস্থিতিতে কখনও পরি নাই। আগে জানলে আমি বাসা থেকে বের হতাম না। অনাকাংখিতভাবে আপনাকে কষ্ট দিচিছ।
-- আপনার বাসা কই?
-- রংপুর মুন্সী পাড়া।
-- আপনি যাবেন কই?
-- ঢাকা।
-- ঢাকায় থাকেন?
-- হ্যাঁ ঢাকা মোহম্মদ পুর থাকি।
-- আর কে থাকে?
-- কেউ না আমি একা
-- আপনি একা থাকেন কেন?
-- পাশের ফ্লাটে আমার ফুফু থাকে।
-- আপনি ঢাকায় কি করেন?
-- বীমা কোম্পানীতে নতুন চাকরী পেয়েছি।
-- আপনার স্বামী কী করে?
মহিলা একটু লজ্জিত হয়ে বলল, না ভাই আমার এখনও বিয়ে হয় নাই।    

 (চলবে)

০ Likes ৮ Comments ০ Share ৫৭৯ Views

Comments (8)

  • - তাহমিদুর রহমান

    কেউ জেগে নাই? 

    - তাহমিদুর রহমান

    তাইলে ঘুমাইইইইতে গেল্লাম 

    - ধ্রুব তারা

    কি হয়েছে ভাই? 

    • - তাহমিদুর রহমান

      কিছু না মিয়া ভাই আবার অনেক কিছু

    • Load more relies...
    Load more comments...