Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shahidul Islam Pramanik

১০ বছর আগে

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত -০৩

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

উৎসর্গ ঃ ঘাসফুল এবং বাবলা ভাই।
(‘খেয়া নৌকায় ইফতার’ নামক প্রথম আলো ব্লগে আমার গল্প পড়ে প্রিয় ঘাসফুল এবং বাবলা ভাই আমাকে গল্প লেখার জন্য যে উৎসাহ দিয়েছিলেন সেইটা আমি আজও ভুলি নাই এবং জীবনেও ভুলবো না। কারণ তাদের উৎসাহ পেয়েই আমি ঐদিন রাতেই এই গল্পটি রাত বারোটা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত একটানা লিখে শেষ করেছিলাম। কাজেই গল্পটি তাদের নামে উৎসর্গ করলাম।)

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত -2

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত -১


(তৃতীয় পর্ব)

মহিলা প্লিজ প্লিজ করলেও আমি মনটাকে শক্ত করে তাচ্ছিল্যভাবে বললাম, আপনি ঠিকই উঠতে পারেন। আপনি একটা বদমায়েস মহিলা। আপনি ভং ধরেছেন। আপনি মনে করেছেন এইসব ভাব ভঙ্গি দিয়ে সহজেই আমার চরিত্রকে দুর্বল করবেন, সে ছেলে আমি নই। আপনি বালুচরে শুয়ে থাকেন। আপনার মত বদচরিত্রের লোক অনেক পাবেন, তাদের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। আমি চললাম, আপনার সাথে আমি আর নাই।
আমার কথা শুনে মহিলা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, না ভাই, আমি ভং ধরি নাই। আমি সত্যিই কমরে ব্যাথা পেয়েছি। আল্লার দোহাই লাগে। আমাকে এ অবস্থায় রেখে যাবেন না। বলেই হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগল।
তার কান্না সত্যি না অভিনয় বুঝতে পারছিলাম না। আমি কিছুটা নিষ্ঠুর হয়েই বললাম, আপনি যতই অভিনয় করেন আর কাঁদেন, আমি আপনার সাথে নাই। আপনি আপনার মত শুয়ে থাকেন, আমি চলে গেলাম। বলেই আমি আরো কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেলাম।
আমার কথা শুনে মাহিলা কাঁদাতে কাঁদাতে বলল, আমি আপনার দু’টি পায়ে পড়ি ভাই, আমি কোন অভিনয় করছি না। আমাকে বিশ্বাস করেন, সত্যিই আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি।
তার আকুতি মিনতিতে কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললাম, আপনাকে কি করে বিশ্বাস করবো। আপনি যেভাবে চিত হয়ে শুয়ে আছেন, তাতে বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।
-- না ভাই, আমি ইচ্ছা করে শুয়ে আছি না, আসলে আমি উঠতে পারছি না।
আমি ধমক দিয়ে বললাম, আপনি তো উঠার চেষ্টাই করছেন না। আপনার মনে কি কোন বদমায়েসি ভাব আছে নাকি?
এ কথা বলায় মহিলা শোয়া থেকে মাথা উঁচু করে উঠার চেষ্টা করে অর্ধেক উঠে ‘ও আল্লাগো’ বলে আবার চিত হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগল, ‘একি বিপদ দিলে গো আল্লাহ, এর চেয়ে আমার মৃত্যু দাওগো আল্লাহ’ ইত্যাদি নানা কথা বলে বিলাপ করতে লাগল।
এতক্ষণ তাকে ভুল বুঝলেও এবারের কান্নায় মনে হলো সে আসলেই কাঁদছে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে কাছে গিয়ে বললাম, আপনি ঠিক করে বলেন তো, আপনার কি হয়েছে?
মহিলা মুখে কাপড় গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি পা সোজা করতে পারছি না। পা নারালে কোমরের কাছে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি।
আমি আরো কাছে গিয়ে বললাম, কোথায় ব্যাথা পাচ্ছেন। সে আমাকে ডান পায়ের কোমরের দিকে দেখিয়ে বলল, পা নাড়ালেই এখানে ব্যাথা পাই।
আমি আমার ব্যাগটা মাটিতে রেখে, দাঁড়ানো অবস্থায় কোমর সোজা রেখে, বুক মাথা নিচের দিকে কিছুটা ঝুকে, ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বললাম, আমার হাত ধরে উঠেন। মহিলা তার দুই হাত দিয়ে আমার হাত ধরে উঠার চেষ্টা করে একটু উঠেই হাত ছেড়ে দিয়ে থপ্ করে পড়ে ‘ও আল্লাগো’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।
আমি তাকে বললাম, আপনি আমার হাত ধরেও উঠতে পারছেন না, তাহলে আপনাকে কি দুই হাত দিয়ে টেনে উঠাতে হবে?
মহিলা বলল, উঠালেও মনে হয় হাঁটতে পারবো না।
আমি কিছুটা আশ্চার্য হয়ে বললাম, বলেন কি! আপনি হাঁটতে না পারলে এখানে তো আমার পক্ষে সারারাত বসে থাকা সম্ভব নয়! আপনি আমার দুই হাত ধরে উঠার চেষ্টা করেন এবং হাঁটার চেষ্টা করেন।
মহিলা তার দুইহাত দিয়ে আমার দুইহাত ধরে গায়ের শক্তি দিয়ে উঠার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুটা উঠেই আবার হাত ছেড়ে দিল। কাঁদাতে কাঁদেত বলল, ভাই, উঠতে গেলেই কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি।
মনে মনে চিন্তা করলাম, এভাবে মহিলার কথামত বসে থাকলে চলবে না। যেভাবে দাঁড়াতে পারে সেভাবেই উঠাতে হবে। আমি বললাম, আপনাকে পাঁজাকোলা করে উঠালে আপনার আপত্তি আছে। এ প্রস্তাবে মহিলা চুপ করে থাকল। আমি তার জবাব না পেয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে পরে গেলাম। আমি এতক্ষণ দাঁড়ানো ছিলাম। এবার তার মাথার কাছে গিয়ে বসে বললাম, আপনি কি উঠতে পারবেন, না পারবেন না? যদি না পারেন, তাহলে আমার পক্ষে এভাবে আপনার সাথে বসে থাকা সম্ভব নয়। আপনি আপনার চিন্তা করেন, আমি চলে যাই।
আমার এরকম নিষ্ঠুর কথা শুনে মহিলা অসহায়ের মত বলল, ভাই, যে ভাবেই পারেন আমাকে তুলে নিয়ে যান। আপনার দু’টা পায়ে ধরি, এরকম বালুচরে আমাকে ফেলে যাবেন না। আপনাকে আমি ভাইয়ের দোহাই দিয়েছি। ভাই হয়ে বোনকে ফেলে যাবেন না।
মহিলার আকুতি মিনতিতে নিষ্ঠুর হয়েই হওয়া সম্ভব হলো না। মহিলার গায়ের কাপড় এলোমেলো ছিল। আমি তাকে ভদ্রভাবে বললাম, আপনি আপনার গায়ের কাপড় ঠিক করে নেন, আমি আপনাকে টেনে উঠাবো।
মহিলা তার শাড়ির আঁচল ঠিক করে গায়ে মাথায় দিয়ে ভালভাবে বসল। আমি তার পিঠের দিকে গিয়ে দুই বগলে হাত দিয়ে টেনে উঠাতে গেলে মহিলা কিছুটা ইতস্তত করতে লাগল। আমি পুরো শক্তি দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হলাম। কারণ, আমি তাকে উঠানোর চেষ্টা করলেও সে পুরো শরীর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে। আমি কিছুটা রাগ করেই বললাম, আপনি উঠার চেষ্টা করছেন না কেন? এভাবে শরীর ছেড়ে দিলে আমি আপনাকে কিভাবে উঠাবো?
একথা বলায় মহিলা কিছুটা লজ্জা ফেলে স্বাভাবিক হয়ে তার দুই হাত আমার গলার পিছনে দিয়ে উল্টাভাবে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। আমিও পুরো শক্তি দিয়ে তাকে টেনে উঠালাম। কিন্তু সে খাড়া হয়ে নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে না থেকে, উল্টাভাবে গলা জড়িয়ে ধরেই তার পুরো শরীর আমার শরীরের উপর ছেড়ে দিল। তার ভরে আমার পরে যাওয়ার অবস্থা।
আমি ধমক দিয়ে বললাম, আপনি সোজা হয়ে দাঁড়ান তো। আমার গায়ের উপর আপনার শরীরের পুরো ভর দিতেছেন কেন? আমি পড়ে যাবো তো?
মহিলা বলল, আমি পায়ের উপর ভর দিলে প্রচন্ড ব্যাথা পাই।
-- কোন পায়ে ব্যাথা পান
-- ডান পায়ে।
আমি বললাম, আপনি বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ান। মহিলা আমার কথামত বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো এবং আমার গলা ছেড়ে দিল। আমি তাকে একপা দু’পা করে হাঁটতে বললাম। কিন্তু সে পা নাড়াতে পারল না। ডান পা আলগা আলগাভাবে মাটিতে রেখে পুরো বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তার এ অবস্থায় গ্রাম্য কবিরাজদের কথা মনে পড়ল। কমরের কটির জোড়া নড়ে গেলে গ্রাম্য কবিরাজরা পা ধরে নিচের দিকে ঝটকা টান দিয়ে দেয়। তাতে অনেক সময় ব্যাথা ভালো হয়ে যায়। আমিও তার ডান পা ঝটকা টান মেরে দেয়ার কথা বললাম। মহিলা তাতে রাজি হয়ে বলল, পা ধরে ঝটকা টান দিলে কি ব্যাথা কমবে?
আমি বললাম, চেষ্টা করে দেখি না, হয়তো কমেও যেতে পারে।  
আমার কথায় মহিলা বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো। আমি নিচে বসে তার ডান পায়ের গোড়ালী দুইহতে ধরে নিচের দিকে ঝটকা টান মারতেই ‘ওরে বাবারে’ বলে মহিলা  ধুরুম করে বালির উপর পড়ে গেল।
আমি তার ধুরুম করে পড়ে যাওয়া দেখে থতমত খেয়ে বললাম, আপনি কি আবার ব্যাথা পেলেন নাকি?
মহিলা ‘ও বাবাগো, ও মাগো’ বলে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আপনি আমার বাকি জীবনটাও শেষ করে দিলেন। আমার এর চেয়ে মরণ হলে ভালো হতো। একথা বলেই সে আমাকে দোষারোপ করে বিলাপ  করতে লাগল। তার বিলাপ করা কান্না শুনে নিজেকে অপরাধী মনে হলো। মনে মনে চিন্তা করলাম, মাহিলার এযাবৎ যতটুকু উপকার করেছিলাম এখন বুঝি তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফেললাম। এ অবস্থায় তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য বললাম, আপনি যদি বেশি ব্যাথা পেয়ে থাকেন, তাহলে বালুর উপর লম্বা হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে দেখেন, তাতে পায়ের ব্যাথা কিছুটা কমে কিনা?
আমি তাকে লম্বা হয়ে শুয়ে পরতে বলায় মহিলা ইতস্তত করতে লাগল। আমি তার ইতস্তত হাবভাব দেখে চাপা গলায় ধমক দিয়ে বললাম, আপনি কি যাবেন না এখানে সারারাত বসে থাকবেন? মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, যাবো।
-- তাহলে লম্বা হয়ে শুয়ে একটু বিশ্রাম নেন। এভাবে সময় কাটালে স্টীমার পাওয়া যাবে না। একথায় মহিলা ইতস্তত করতে করতে লম্বা হয়ে শুয়ে পরল।
মহিলা লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ার একটু পরেই অনতি দুরে দুইজন লোকের গলা শুনতে পাওয়া গেল। তারা কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। তাদের এদিকে আসা দেখে আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি মহিলার কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তাড়াতাড়ি উঠে বসেন। কতগুলো মানুষ আমাদের দিকে আসছে।
(চলবে)

০ Likes ১১ Comments ০ Share ৪৬৬ Views

Comments (11)

  • - মোকসেদুল ইসলাম

    সুন্দর লিখেছেন

    - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    কবিতা ভাল লাগল

    - মাসুম বাদল

    কোথাও ভেঙ্গে চলেছে কিনার

    কোথাওবা ফসলের ক্ষেত

    আবার কোথাও-

    পরাজিত এক মানুষ দবতার রথ।

    তবু দীঘ্ রাত জেগে কোথাও

    জ্বলে চলেছে কৃষ্ঞচুড়া স্বপ্ন মশাল।

    Load more comments...