Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shahidul Islam Pramanik

১০ বছর আগে

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত (গল্প- ৫ম পর্ব)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত-০৪ (গল্প)

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় এক রাত -০৩

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায় -2

মহিলা যাত্রীর বিরম্বনায়
(পঞ্চম পর্ব)

আমি কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কি হাঁটতে এখনও কষ্ট হচ্ছে?
-- কষ্ট তো হচ্ছে, এখন কি করবো?
-- আপনার যখন বেশি কষ্ট হবে তখন বলবেন আমি দাঁড়িয়ে যাবো।
একথা বলায় মহিলা কিছুদুর গিয়েই আমার ঘার ঝাঁকি দিয়ে বলল, ভাই একটু দাঁড়ান আমি আর হাঁটতে পারছি না।
-- এ ভাবে দাঁড়ালে তো স্টীমার পাওয়া যাবে না।
-- একটু দাঁড়ান ভাই হাপিয়ে গিয়েছি একটু জিরিয়ে নিই।
একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। চার পাঁচবার জিরানোর পর একসময় ঘাটে এসে পৌছলাম। তখনও স্টীমার ওপার থেকে আসে নাই। বেশির ভাগ যাত্রী খাওয়ার হোটেলে বসে আছে। এখনও অনেকে খাচ্ছে। আমরা দুইজন আপাতত ছোট একটা হোটেলে বসলাম। মহিলা একদম কাহিল হয়েছে। বিজলীবাতির আলোতে চেয়ে দেখি তার কানের পাশে ধুলা লেগে আছে। আমি ব্যাগ থেকে গামছা বের করে তাকে হোটেলের পাশে অন্ধকারে ডেকে এনে বললাম, গামছা দিয়ে হাত মুখ ভালো করে মোছেন। কানে, মুখে, মাথায় বালু লেগে আছে।
মহিলা তাড়াতাড়ি গামছা দিয়ে পুরো শরীর মুছে নিল। হোটেলের কলে পানি চেপে দিলে হাতমুখ ধুয়ে নিল। আমিও হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। আমি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাত খাবেন?
মহিলা মাথা নাড়ালো, খবো।
-- কি দিয়ে খাবেন?
-- চিংড়ি মাছ নেন।
মহিলার জন্য চিংড়ি মাছ এবং আমার জন্য পিয়ালী মাছ নিয়ে নিলাম। খাওয়ার সময় মহিলা আমাকে তার বাটি থেকে অর্ধেক চিংড়ি মাছ তুলে দিলো।  আমিও আমার পিয়ালী মাছের অর্ধেক তাকে দিয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ করতে না করতেই স্টীমার ঘাটে এসে ভিরল। স্টীমারের যাত্রী নামার পর আমাদের উঠার সুযোগ হলো। স্টীমারে উঠার সময়ও মহিলা আমাকে ধরে ধরে উঠে। স্টীমারে উঠার প্রায় চল্লিশ মিনিট পর স্টীমার ছেড়ে দেয়।
ওপারে গিয়ে একজন কুলি ঠিক করি। স্টীমার চাপার সাথে সাথে কুলি লাফদিয়ে আমাদের ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে লাগল। আমি কুলিকে ফলো করে হাঁটতে লাগলাম। কিন্তু সমস্যা হলো মহিলাকে নিয়ে। সে হাঁটতে পারছিল না। আমি তার ডান হাত বগলে চেপে ধরে কুলির পিছে পিছে হাঁটতে লাগলাম। মহিলা অনেক কষ্টে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমার সাথে সাথে এলো। কুলি গাড়ির মাঝামাঝি একটি বগিতে আমাদের তুলে সীট দখল করে দিল। সীটে বসতে পেরে কুলিকে পাঁচ টাকা বখশীশ দিয়ে দিলাম।
এখানেও চল্লিশ মিনিট পর গাড়ি ছেড়ে দিল।
আমরা বগীর জানালার সাইডে মাঝখানের দেয়াল ঘেসে বসেছি। দেয়ালের সাইডে মহিলাকে রেখে তার পাশেই আমি বসেছি। গাড়ির দুলুনীতে মহিলা ঘুমে ঢুলতেছিল। ঘুমে কখন সে দেয়ালের সাথে কখন সে আমার কাধের সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল। এভাবে কয়েকবার ধাক্কা খাওয়ার পর একসময় আমার কাধের উপর আস্তে করে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে গাড়ির ঝাকিতে মাথা ছিটকে সরে গিয়ে তার ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছিল। এ অব¯থা দেখে আমার সামনের সীটে যে দুইজন মহিলা বসা ছিল তার মধ্যে মধ্য বয়স্ক মহিলাটি ্আমাকে ডাক দিয়ে বলল, এই যে ভাই, নতুন বিয়া করছেন বুঝি?
এ কথা শুনে আমি তার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। মহিলা আমার তাকানো দেখে বলে উঠল, আরে ভাই নতুন বিয়া করা বউ নিয়া ঢাকায় যাইতেছেন তো এতো শরমের কি আছে? বউয়ের মাথাটা হাত দিয়া কান্দের উপর চাইপা ধরেন। নইলে গাড়ির ঝাকিতে ছিটকা পইরা মাথায় ব্যাথা পাইবো। তখন তো আপনারই হাসপাতালে দৌড়াইতে হইবো।
মহিলার এ কথার পরও যখন আমি তার মাথা হাত দিয়ে ধরছি না, তখন সে উঠে এসে আমার হাতের মধ্যে মাহিলার মাথা দিয়ে আমাকে চেপে ধরে দিয়ে বলল, বিয়া করছেন, স্বামী হইছেন, বউয়ের আদর করবার জানেন না। আপনি কেমন মানুষ?
মহিলা আমাকে স্বামীর আসনে বসানোর কারণে আমার কেমন যেন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল। লজ্জা লজ্জা ভাবেই তার মাথাটা আমার কাঁধে চেপে ধরি। মাথা চেপে ধরায় মহিলা আরাম পেয়ে আমার ঘারের উপর কানের কাছে নাক ডেকে ঘুমাতে লাগল। এ আরেক বিরম্বনা। কানের কাছে অপরিচিত মহিলার নাক ডাকায় যেমন বিরুক্তি লাগছিল, তেমন অস্বস্থি বোধ করছিলাম। আমার অস্বস্থিবোধ দেখে মহিলা আমাকে লক্ষ্য করে বলল, কি গো ভাই, আপনি দেহি কোন কথা কন না? চুপচাপ বইসা রইছেন। মহিলার কথা শুনে আমি তখন বললাম, কি কথা কমু ভাবিজান, আপনি  আমার ঘারের উপর মাথাডা সুন্দর কইরা চাপায়া দিলেন, হে আমার কানের কাছে নাক থুইয়া কিরকম ঘরর ঘরর কইরা নাক ডাকতেছে। আমার কানের তো বারোডা বাজতেছে।
ভদ্র মহিলা হাসতে হাসতে বলল, আরে মিয়া, বউয়ে কানের কাছে নাক ডাকলে কানের বারোডা বাজে, এইডা আপনার কেমন কান? কানের কাছে বউয়ে নাক ডাকলে খুশি হওয়ার কথা।
-- তাইলে আপনি একটু হের নাকটা কানের কাছে নিয়া বইসা থাকেন। দেহেন কেমন লাগে।
-- আপনার বউয়ের নাক ডাকানি আমার কানের কাছে নিমু ক্যান? আমার কানের কাছে নাক ডাকার লোক আমি সাথে কইরাই আনছি।
-- আপনার কানের কাছে নাক ডাকার লোক কই?
তিন সীট পরে দেখিয়ে দিল, ওই যে, ওইডা আমার কানের কাছে নাক ডাকে।
মহিলার রসিকতা খুব ভালো লাগছিল। আমি তাকে লক্ষ্য করে বললাম, ভাবি, আপনি কি ভায়ের সাথেও ইয়ার্কি করে কথা বলেন?
মহিলা জবাব দিল, খালি আপনার ভাইয়ের সাথে ইয়ার্কি কইরা কথা কমু ক্যান, হগলের সাথেই ইয়ার্কি ঠাট্টা করি। আপনে করেন না?
-- করি কম কম।
-- আরে মিয়া বউয়ের সাথে সবসময় ইয়ার্কি ঠাট্টা বেশি বেশি করবেন। তাতে সংসার সুখের হইবো। সব সময় স্বামী স্ত্রী মিল থাকার চেষ্টা করবেন। তাইলে আপনাগো সংসার সুখের হইবো। একবার নিজেদের সুখ তৈরী কইরা নিলে সারা জীবন আর কষ্ট পাইবেন না। নিজেরা যদি মিল থাকেন তাইলে সুখ কেউ কাইরা নিবার পারবো না।
মহিলার উপদেশমূলক কথা গুলো খুব ভালো লাগল। মাহিলার সাথে আরো অনেক কথা হলো। কথা বলতে বলতেই ময়মনসিংহ স্টেশনে গাড়ি থামলো। তারা সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেল। যাওয়ার সময় মহিলা বলে গেল, আসি ভাই, দোয়া কইরেন। বাকি জীবন যাতে হাসি ঠাট্টায় কাটাইতে পারি।
-- ঠিক আছে ভাবি আমাদের জন্যও দোয়া করবেন।
-- অবশ্যই দোয়া করমু। তবে হুনেন, স্বামী স্ত্রীর মাঝে এতো শরম রাইখেন না। বেশি শরম স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দুরে ঠেইলা দেয়। নিজেরা সবসময় খোলামেলা থাকবেন তাইলে দেখবেন সংসারের সব সুখ আপনাদের কাছে।
একথা বলেই, মহিলা নেমে গেলো।
ওরা নামার একটু পরেই মহিলার ঘুম ভেঙে যায়। আমি তখনও তার মাথা আমার কাঁধের উপর চেপে ধরে আছি। মহিলা বুঝতে পেরে কাঁধে মাথা রেখেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, আপনি ঘুমান নাই।
(চলবে)

০ Likes ৯ Comments ০ Share ১১৬৫ Views

Comments (9)

  • - ইসমাইল হোসেন

    আপনার এই কবিতাটা ভাল লেগেছে্

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      সহস্র ধন্যবাদ

      ভাল থাকুন

    - ওয়াহিদ মামুন

    অন্তরের তপ্ত, আর্দ্র নিশ্বাস ফুটে উঠেছে কবিতায়। 

    খুব ভাল লাগল।

     

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      দাদা

      কবিতায় পেয়ে ভাল লাগল

      সহস্র ধন্যবাদ

      ভাল থাকুন

    - চারু মান্নান

    dharun kobi,,,,,,

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      চারু দা

      সহস্র ধন্যবাদ

      ভাল থাকুন

    Load more comments...