Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তৌফিক মাসুদ

১০ বছর আগে

মহাসেনের গোঁত্তা

এক

 

ছোট বেলায় যখন নানী বাড়ি যেতাম তখন গোল্লাছুট খেলা হত খুব বেশী। আর গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে যে দক্ষতাটি সবচেয়ে বেশী কাজে লাগত তাকে আমরা বলতাম গোঁত্তা। যে যত বেশী গোঁত্তা দিয়ে প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পাড়ত তাকেই দলে ভেড়ানোর জন্য সবাই উঠে পরে লাগত। আমি অবশ্য এই কাজটা করতে ভালই পাড়তাম, কিন্তু লোক দেখানো ব্যপারটি ভাল লাগত না।

 

সে গ্রামে গোল্লাছুট খেলার প্রচলন এতই বেশী ছিল যে মেয়েরাও আড়ালে থেকে এক আধটু খেলার চেষ্টা করত। গ্রামে খেলার মাঠে ভাল গোঁত্তা দিতে পাড়ত এমন ছেলেদের হাব ভাবই আলাদা থাকত। তাদেরকে দলে ভেড়াবার জন্য মাঠে মারামারি পর্যন্ত  হয়ে যেত। গোল্লাছুট খেলায় যাদের সবচেয়ে বেশী নামডাক ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিচিত ছিল মহসিন নামের একটা ছেলে। গ্রামের মানুষেরা তার নামটা খুব কমই ঠিকমত বলত। সবাই তাকে মহসিন না বলে বলত ‘মহাসেন’। আর গোল্লাছুট খেলায় গোঁত্তার রাজা হওয়ায় তার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘গোঁত্তা মহাসেন’। যে কেউই এ নামে তাকে ডাকত না কেন, লজ্জায় তার মুখ লাল হতনা বরং গর্বে তার বুক দুই তিন ইঞ্চি ফুলে যেত। এর পেছনে কারণ ছিল, তাকে যে দলেই নেয়া হতনা কেন প্রতিপক্ষ তাকে আটকে রাখবার জন্য দুই তিনজন খেলোয়াড় নিযুক্ত করত। এরপরেও প্রায়ই সে ফাঁক গলে বের হয়ে যেত। সে সময় তার বয়স ছিল এগারো, বয়স ও আকারে অন্যদের চাইতে ছোট হওয়ায় এই কাজটা সহজেই সে পাড়ত।   

 

দুই

 

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্য সব গ্রামের মতই এ গ্রামের ছেলে মেয়েদেরও খেলার ধাঁচ, ধরন, ভিন্নতা ও রুচি পাল্টে গেল। একযুগ পরে এসে আগের সেই গোল্লাছুট খেলবার মাঠ আর খুব একটা পাওয়া যায়না। মাঠ এখন চলে গেছে ক্রিকেট, ফুটবল এর দখলে। তারপরেও শখের বশে ছেলেরা গোল্লাছুট খেলে। আর মাঝে মাঝে গোঁত্তার রাজা মহাসেন কোন এক পক্ষকে সাপোর্ট দিয়ে সে দলকে নানা রকম পরামর্শ দিত, আর সে অনুযায়ী কাজ না করতে পাড়লে সে নিজের ইতিহাস সবাইকে শুনিয়ে দিত। যদি কোন রকমে তার কৌশল কাজে লেগে যেত তাহলে বিপক্ষ দলের ছেলেরা মুখ বন্ধ করে গালি দিত। কারণ গোঁত্তা থেকে অবসরে যাওয়া গ্রামের বড় ভাই তাদের চাইতে প্রায় দশ বছরের বড়।  

 

গোঁত্তা মহাসেন গোল্লাছুট থেকে অবসরে গেলেও নাম লিখিয়েছিল ফুটবলে। তার গোঁত্তা দক্ষতা এখানেও কাজে লাগাতে সে ছিল বদ্ধ পরিকর। কিন্তু ঢেঁকি স্বর্গে ধান ভানলেও গোঁত্তা মহাসেন সব জায়গায় এই রাজত্ব কায়েম করতে পারলনা। কারণ ফুটবল খেলায় প্রতিপক্ষকে শুধু পাশ কাটালেই চলেনা, পায়ের সাথে বলটাকে আঠার মত লাগিয়ে রাখতে হয়।

 

কিছুদিন আগে শুনলাম সেই গোঁত্তা মহাসেন ফুটবল খেলতে যেয়ে বেশী পণ্ডিতি দেখাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের ল্যাঙ খেয়ে ঠ্যাং ভেঙ্গেছে। এই দিকটায় আসাতে একবার মনে করলাম মহাসেন কে দেখে আসি।

 

নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলাম। নদীটাকে অচেনা মনে হচ্ছিল। কারণ ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আসবে এই ভয়ে সব লঞ্চ স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদী নীরব,আকাশ থমথমে। মানুষের ভয় কাটেনি। ওদের বাড়ির পাশের চায়ের দোকানটায় টিভি দেখতে সবাই ভিড় জমিয়েছে। ছেলে- বুড়ো সবার চোখ টিভিতে, সবাই ঝড়ের তাণ্ডবলীলা দেখবার অপেক্ষায়। কারণ সবাই ধরেই নিয়েছে ঝড় নামবে খুব মারাত্মক ভাবে। আমিও উৎসুক জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম। চোখ রাখলাম টিভির পর্দায়। খবরে দেখাচ্ছে, মহাসেন খুব বেশী প্রচণ্ড ভাবে আমাদের দেশে আঘাত হানেনি। ওটা বাংলাদেশকে পাশ কেটে চলে গেছে। অতঃপর খবর  দেখে সবাই নিশ্চিত হল, সবার ভয়ও দূর হল। উপকূলের মানুষেরা বেঁচে গেছে তাই সবাইকে খুব খুশি মনে হল। সকলের উৎসাহে ভাটা পড়ায় সবাই একটু নীরব। সকলের মাঝ থেকে একজন বয়স্ক মানুষ হঠাৎ বলে উঠল, মহাসেন নাকি বাংলাদেশকেই গোঁত্তা দিয়েছে। একথা শুনে সবার মাঝে হাসির রোল পরে গেল। আমিও হাসি মুখে চললাম গোঁত্তা মহাসেনের বাড়ির দিকে। ওর বাড়িতে এসে পৌঁছেছি কিনা সাথে সাথেই ওর দশ বছর বয়সী চাচাতো ভাই দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে প্রবেশ করেই নিজের মাকে ডেকে বলতে লাগল, “ মা গো মা, মহাসেনে আমাগো গোঁত্তা দিছে”। রান্না ঘর থেকে অপ্রস্তুত হয়ে ওর মা বললেন, “ কী কছ! মহাসেনে না ঠ্যাং ভাইঙ্গা ঘরে পইড়া রইছে”।।

 

পেছনে আমি জানালায় দেখলাম, গোঁত্তা মহাসেন সলজ্জে নিজের মুখ লুকাল।

০ Likes ১৭ Comments ০ Share ৩৮২ Views

Comments (17)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা
    • - হামি্দ

      ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ..................

    - রোদেলা

    আমি রাজনিতী বুঝি না , খালি দেশ বুঝি।

    • - হামি্দ

      ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ..................

    - ইসমাইল হোসেন

    কঠিন কঠিন রাজনীতির কথা।

    • - হামি্দ

      ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ..................

    Load more comments...