Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shah Alam Badsha

৯ বছর আগে

মনের পর্দা আসল পর্দা!

(পূর্বপ্রকাশিতের পর )

সত্যি, আমার মনের পর্দায় ঢাকা দুঃখগুলির কথা, তবে কি প্রকাশ করা ঠিক হইবেনা! মনের পর্দাই কি তবে আসল আর চোখের পর্দার বাহিরের সবই কৃত্রিম-নকল? বুঝিলাম, মনের বাহিরের সকল পর্দা এমনকি শরীরের পর্দাও অহেতুক জঞ্জাল! তাইতো, কোনো মহান নারীর পৃষ্ঠপোষকতায় নহে, কেবল পুরুষশাসিত সমাজের ধান্ধাবাজ উদার মহান পুরুষদের আন্তরিকতায় এখন নিছক ব্রেসিয়ার, পেন্টি বা অন্তর্বাস, হাফপ্যান্ট, হাতাকাটা ব্লাউজ বা জালিকামার্কা শাড়ী পরিয়া আমাদের মাতা-ভগিণীরা সর্পিলগতিতে হাঁটিয়া চলিলে অথবা প্রকাশ্য জলে উদোম-সাঁতার কাটিলে, কুস্তি লড়িলে বা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হইলে কিংবা তারকাজগতের হিটনায়িকার সুনাম পাইতে এমনকি প্রভাদের মত ভদ্রপতিতা সাজিলেও কাহারো পক্ষে শাসন করিবার বা কিছু বলিবার সাধ্য কাহারো নাই। আর দুর্বল ঈমানদার বা মনের পর্দায় মহাদুর্বল উজবুকগণ টিভি-সিনেমায়, নাটকে-অনুষ্ঠানে বা পথে-ঘাটে এইসব প্রজাপতিদের রূপপ্রদর্শনী দর্শনমাত্র লোলুপ হইয়া বেসামাল কান্ড ঘটাইলেই তো ঘটিবে নারীনির্যাতন! আর অনাকাঙ্ক্ষিত অঘটন না ঘটাইতে পারিলেও তাহাদের ঠোঁটচাটিয়া অন্তর ফাটাইয়া মহাআফসোসে চলিয়া যাওয়া ব্যতীত কোনো গত্যন্তরও তো নাই!



সেদিন দেখিলাম, জনৈক মনের পর্দাওয়ালী পত্রিকার পাতায় লিখিয়াছেন যে, ‘’তিনি লকলকে বাড়ন্ত বিরাট এক দেহ লইয়া অনায়াসে তার কলেজজীবন পার করিয়া দিয়াছেন, তবুও পর্দাতো দূরের কথা কখনো ওড়না নামক জঞ্জাল্টাও পরেন নাই।‘‘ আমার একবন্ধু এই লেখা পড়িয়াতো তেলে-বেগুনে জ্বলিয়া উঠিয়া বেফাঁস বলিয়াই ফেলিলেন,হারামজাদী-বাকী কাপড়টুকুও না পরিলেই তো পারে। তুই না হইলি মানুষ আর না হইলি বনের ল্যাংটা পশু, রইলি নিছক মনের পশুরে!!আমার করিবার কিছুই ছিলোনা বরং তাহার সমর্থনে আমাকেও বলিতে হইলো–বেচারীর মনের পর্দা এখনো পাকাপোক্ত হয় নাই কিনা, তাই পোশাক ছাড়িতে সময় লাগিতেছে। ধৈর্য ধরো বন্ধু।

ছেলেদের মতো মেয়েদেরও শুধু অন্তর্বাস পরা, হাফপ্যান্ট বা নগ্নপোশাকে বা শরীরে চলাফেরা জায়েজ কী নাজায়েজ বলিতে পারিনা, কিন্তু পর্দা করা বা শালীন পোশাকপরা সকল ধর্মেই ফরজ তাহা শুনিয়াছি। সেইজন্যইতো দেখিতে পাই, পুরুষরা নির্লজ্জের মতো বেপর্দা হইয়া উন্মূক্ত স্থানে প্রস্রাব করিলেও কোন ধর্মের মেয়েরাই এমনকি পেন্টি বা হাফপ্যান্টপরিহিতা কোনো নারীও তা কখনও করিতে পারেনা কিংবা পারে নাই। তাই আলেম-ওলামারাই বলেন যে, লজ্জা ঈমানের অংগ এবং প্রকৃতপক্ষে লজ্জাই হচ্ছে আসল পর্দা? সেজন্যই পর্দা না মানিলে দুলাভাই শালিকার জন্য পাগল হইয়া যায় এমনকি শালিকা আপন বোনের সংসারও ভাঙ্গিয়া ফেলে, একজনের বউ আরেকজনের সাথে চুটাইয়া প্রেম বা পরকিয়া করে কিংবা সন্তান ছাড়িয়া পরপুরুষের সাথে পালাইয়া যায়। কাহারো কন্যা অপরের পুত্রের সাথে আকাম-কুকাম বা লিভটুগেদার করে, প্রেমের নামে ধর্ষিতা হয় অথবা প্রাণপ্রিয় পিতামাতার মুখে চুনকালি মাখাইয়া ভাগিয়া বা অপহৃত হইয়া যায়। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার দরুণ মেয়েরা প্রেমিকের লাম্পট্য কিংবা পর্ণোগ্রাফীর শিকার হইয়া আত্মহত্যার পথ বাছিয়া লয়, পনবন্দী হইয়া পতিতাবৃত্তিতে নামে কিংবা পাচার হইয়া যায়। কখনো-সখনো তাহাদের প্রেমলীলার শিকার হইয়া তাহাদের নিরীহ পিতামাতার মৃত্যও অবধারিত হইয়া যায়?

উদ্দাম-অশ্লীল নৃত্যগান, অবাধ মেলামেশা, সহশিক্ষা, নগ্ন বা পর্ণোগ্রাফী পত্র-পত্রিকা, অশ্লীল নাটক-সিনেমা, আকাশ সংস্কৃতি, পর্ণোসাইট ইত্যাদিই নারীদূর্গতি বা নারীনির্যাতনের সকল রাস্তা খুলিয়া দেয়– এসব মাধ্যমেই তো নায়িকা বা নারীর পেছনে নায়কের কুকুরের মতন লাগিয়া থাকা কিংবা ইভটিজিং করিতে করিতে নারীকে নিজ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করিয়া লওয়ার ট্রেনিং দিয়া থাকে? এহেন শক্ত কথাবার্তা আমার মতোন নাদান নহে, অভিজ্ঞ মুরুব্বীরাই বলিয়া থাকেন। তাহাদের কথা বা অভিজ্ঞতা সঠিক-সত্যি কিনা জানিনা, তবে তাহাদের কথা অহরহ সত্য প্রমাণিত হইতে দেখিয়া উহাতে বিশ্বাস না করিয়াও পারিনা। এইজন্যই তো এই হতভাগার সহিত কতজনেরই না তর্কবিতর্ক হইয়া যায়! এমনকি আমার বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠির শ্রাদ্ধ যে কতজনে কতবার করিয়া ছাড়িয়াছে, তাহা লিখিলেও সাতখন্ড রামায়ন হইয়া যাইবে বলিয়া আশংকা করিতেছি।

ইভটিজিং

ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ কিংবা বিবাহিত-অবিবাহিতনির্বিশেষে পুরুষ কর্তৃক তানিয়া বা ইয়াসমিনের মতো হাজারো শিশুধর্ষণ, নারীধর্ষণ ইত্যাদি অহরহ কেনোই বা ঘটিয়াই চলিয়াছে? এতো আইন-আদালত, বিচার-ব্যবস্থা থাকিবার পরও কেনো নারীনির্যাতন বন্ধ হইতেছে না বরং বাড়িয়াই চলিয়াছে, তাহার হিসাব মিলাইতে গিয়া আমি বহুত হয়রান হইয়া গিয়াছি। পর্দাপন্থীরা তাই দাপটের সাথেই দাবী করিয়া থাকেন যে, পর্দাপ্রথাকে যতই অবরোধব্যবস্থা, সেকেলে, মধ্যযুগীয় বা পশ্চাৎপদ কিংবা জেন্ডার বৈষম্যমূলক বলা হউক না কেনো, নারীরা যতদিন পর্দার মধ্যে শালীনতার মধ্যে কিংবা আলাদা কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করিয়াছিলো, ততদিন পর্যন্ত অন্তত আমাদের দেশের নারীদের এই দূরাবস্থা কখনোই ছিলোনা। নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়াও তাহার কোনো লেখায় কখনোই এই উপমহাদেশে এমনসব অভিনব ও নোংরা আকাম-কুকাম বা নারীনির্যাতন সংঘটনের পক্ষে কথা বলেন নাই। তিনি শুধু পর্দার নামে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার নামে মুসলিম নারীজাতিকে ইসলামনির্দেশিত বাধ্যতামূলক জ্ঞানার্জন বা শিক্ষাদীক্ষা থেকে বঞ্চিত করিয়া রাখিবার বিরুদ্ধেই নারীজাগরণের ডাক দিয়া সফল হইয়াছিলেন? তিনিতো নারীস্বাধীনতার নামে নিজেও বেপর্দা বা বেপরোয়া পোশাকে কোনোদিন চলাফেরা করেন নাই কিংবা অন্যদের চলিবার উৎসাহও দেন নাই। এমনকি তিনি কোনোরূপ সহশিক্ষা নহে বরং নারীদের ইসলামনির্দেশিত পৃথক শিক্ষাক্ষেত্র বা কর্মক্ষত্র চালুর দাবীই করিয়াছিলেন এবং বাস্তবে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাহা দেখাইয়াও গিয়াছিলেন। 

এখন তো বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ইরানেই ৬০% নারী চাকরীজীবীই চাকরি করিয়া জীবিকানির্বাহ করিতেছে—নারীরা আন্তর্জাতিক খেলাতেও অংশগ্রহণ করিতে পিছপা হইতেছে না? কই সেইখানেতো নারীনির্যাতনের এমন ধস দেখা যাইতেছে না? ইরানের পর্দাসম্মত অনেক সিনেমাও তো আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাইতেছে। আর হলিউড , বলিউডসহ আমাদের মহান পথপ্রদর্শক উদার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে নানান ছদ্মাবরণে এবং শিল্পের নামে মানুষের পশুত্বশক্তিকে এমনভাবে উস্কাইয়া দেওয়া হইতেছে যে, মানুষ আর মানুষ থাকিতে পারিতেছে না বরং বন্যপশুর রূপধারণ করিয়া চলিয়াছে। যৌনজীবে পরিণত হইয়া যাইতেছে মাত্র। নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসনকে অবজ্ঞার ফলে আজ নারী-পুরুষের মাঝে শালীনতাবোধ বা লজ্জার আবরণ ছিন্ন-ভিন্ন হইয়া পড়িয়াছে এবং পাশ্চাত্যের পশ্বাচারনীতি চালু হইয়া যাইতেছে বলিয়া বেসামাল পুরুষ নারী-শিশুদের ওপর হিংস্র জানোয়ারের মতো দ্বিগুণ-ত্রিগুনমাত্রায় ঝাঁপাইয়া পড়িতেছে। এইসব দাবী কিন্তু আমার নহে বরং পর্দাপন্থীদের!

এই হতভাগা পত্রিকায় পড়িয়াছে যে, আমেরিকার স্কুলগুলিতে শিশুমাতার সংখ্যা দিনদিন আশংকাজনক হারে বাড়িয়াই চলিয়াছে। তাই শিশুছাত্রীদের গর্ভরোধে ছাত্রদের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে কনডম রাখিবার নির্দেশজারী করা হইয়াছে। এমনকি সেই পাশ্চাত্য বা আমেরিকাপন্থীদের ফ্রীসেক্সের দেশেও এক সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুত চলিয়া গেলে হাজার হাজার নারী-শিশুও বা কেনো ধর্ষিতা হইয়া থাকে, তাহার জবাবও আমি প্রগতিবাদীদের ঝুলিতে খুঁজিয়া পাই নাই।

সেদিন আরেক পত্রিকায়.দেখিলাম, জনৈকা লেখিকা লিখিয়াছেন যে, ‘’পর্দা প্রগতির অন্তরায়, সেকেলে প্রথা। যাহাদের মন শত কুসংস্কার কুচিন্তায় পরিপূর্ণ এবং যাহারা অর্ধ-শিক্ষিত নারী তাহারাই অর্থহীন পর্দাপ্রথার ধারক-বাহক। প্রকৃতপক্ষে, মনের পর্দাই আসল পর্দা ইত্যাদি।‘’ লেখিকার এতোসব কথার জবাব তখন আমার জানা ছিলোনা। তাহার মনের পর্দা’র অন্বেষণেও তখন অনেক পন্ডশ্রম করিয়াছি কিন্তু সোনার হরিণ কোথায়ও খুঁজিয়া পাই নাই। মনের পর্দাটাই বা কী, কোথায় থাকে, দেখিতে কিরূপ সকল বাংলা ডিকশনারি ঘাটিয়াও আজ পর্যন্ত তাহার উত্তর মিলাইতে পারি নাই। কলেজজীবনে এক সহপাঠিনীর কাছেও ওই একই কথা বহুবার শুনিয়াছিলাম। একদিন তাহাকে বলিলাম, শালীনতা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পর্দা দিয়া ঘর, দরজা, জানালা, ভাত-তরকারী, মূল্যবান বস্তু ইত্যাদি ঢাকিয়া রাখিতে হয়, কিন্তু তোমাদের ঐ মনের পর্দার কাজটা কী? কোনদিন তাহার কাছেও উহার সদুত্তর পাই নাই। অথচ তাহাকে আরেক সহপাঠির সহিত দেহ ও মনের সেই মহামূল্যবান পর্দা তছনছ করিয়া দিব্যি লিভটুগেদার করিতেই শুধু দেখিয়াছি। শুনিয়াছি ডাক্তারগণ বলেন যে, পর্দাসমৃদ্ধ বা আচ্ছাদিত খাবার-দাবার ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত, নিরাপদ ও তাজা থাকে। অন্যথায় শত্রুর আক্রমনে তা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়ে। তেমনি জ্ঞানীজনরাও বলেন যে, শালীনতায় বা পর্দায় বা আলাদা কর্মক্ষেত্রে থাকিলে নারীরাও নিরাপদ থাকে এবং অতীতেও ছিলো বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। যেমন বনের বাঘ, সিংহ, হায়েনার সহিত একই কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করিয়া হরিণরা কখনোই নিরাপদ থাকেনা।

হায়, আসল কথাই বলা হইলোনা। থাউক আমার মনের পর্দায় ঢাকা বেদনাগুলি গুমড়িয়া কাঁদিয়া মরিলেও আর বাহির করিবো না। যথাস্থান হইতে নামাইয়া আনিয়া উহাদের বেপর্দাও করিতে চাহি না। শুধু প্রগতির ঢোল বাজাইয়া বলিতে চাহি—‘’মনের পর্দা আসল পর্দা, বাহিরের পর্দা ঘুচাওরে‘’

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৪৯২ Views

Comments (4)

  • - প্রহরী

    আজ এই কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও গেরিলা যুদ্ধ বিশারদ এর্নেস্তো চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।

    • - Azimul Haque

      খুবই ভাল একটি পোস্ট । অনেক কিছু জানার আছে এই পোস্টে । ধন্যবাদ লেখককে । 

    - আসাদ ইসলাম নয়ন

    চমৎকার ।

    • - Azimul Haque

      একটিা লেখা কতজন পড়ছে, সে সংখ্যাটা দেখার ব্যাবস্থা অন্য ব্লগে আছে । এখানে রাখলে কেমন হয়, সেবিষয়ে ব্লগ সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো । এই পোষ্টটা খুবই ভাল, কিন্তু মন্তব্য কই ? নাকি মানুষ পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে! তাহলে আর ব্লগ করে লাভ কী !

      আবারও এই পোষ্টের লেখককে ধন্যবাদ ।