বসে আছি সিএনজির সামনে। রাস্তা ভাঙ্গা তাই বারবার নামতে হচ্ছে। কোথাও ভাঙ্গা রাস্তায় কাদায় আটকে যাচ্ছে। তাই ধাক্কাও দিতে হচ্ছে। এভাবেই পুরো পথ পারি দিতে হলো।
হ্যা এমনটাই অভিজ্ঞতা হল হবিগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট থেকে কালেঙ্গা যাওয়ার পথে। আট জনের টিম নিয়ে ছুটছি কালেঙ্গা ফরেস্টের দিকে। যাওয়ার পথে প্রথমের স্বাগতম জানালো ভাঙ্গা কাঠের ব্রীজ। পাশে অর্ধ সমাপ্ত একটি ব্রীজ। রাস্তা তেমন একটা না থাকলেও ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। এই চিত্র শুধু এখানকার নয়। সারা দেশে অসংখ্য ব্রীজ আছে যে গুলো অর্ধেক হওয়ার পর আটকে থাকে।
বালির উপর দিয়ে পার হয়ে কাঠের ব্রীজের উঠার আগে সিএনজিটাকে ঠেলতে হলো। ব্রীজের উপর উঠার পর ব্রীজটা কেমন হেলে দুলে উঠলো। মনে হচ্ছিল এখনি সিএনজিটা খালে পরে যাবে। কিন্তু ড্রাইভার বেশ দক্ষ হাতে পার করে নিলো।
ব্রীজ পার হয়ে সবুজ ধান ক্ষেতের গ্রামের ভিতর ঢুকে গেলাম। বড় কোন রাস্তা নেই। রাস্তা যা আছে বেশ ভাঙ্গা। জমি থেকে তেমন উচু নয়। অনেক জায়গায় অনেকটা জমির কাছাকাছি। দুর থেকে সবুজের বুক চিড়ে একটা সাদা সরল রেখা মনে হচ্ছিল। স্বভাব বশত ড্রাইভারকে গ্রামের নাম জিজ্ঞাসা করলাম। বলল গ্রামের নাম "বউর দোষ"। মানে কি? বউর দোষ হয় নাকি। বার বার জিজ্ঞাসা করলাম সে বললো গ্রামের নাম "বউর দোষ"।
শুরুতে এভাবেই কাঠের ব্রীজ স্বাগতম জানালো আমাদের।
দুরে যেন ছবির মত গ্রাম।
সবুজের বুক সাদা আলোর রেখা
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট নদী বা খাল। এর কোন নাম নেই। তবে কেউ কেউ নাকি এই খালে কুমির দেখেছে।
ছায়া সুনীবিড় শান্তির নীড়।
এলাকা বিদ্যুত নেই। তবুও সোলারে চলছে মোবাইলের টাওয়ার। বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই।
রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ। সৌন্দর্য অসাধারন।
এলাকার শিক্ষিত লোকের সংখ্যা তেমন নেই। তবুও শিশুদের জন্য ইস্কুল আছে।
দ্রুত চলছে রাস্তা ঘাট মেরামতের কাজ। কিন্তু এখন গেলে সিএনজি ঠেলে পার করতে হবে।
মানুষ জন তেমন একটা চোখ পড়লো না। এখানে বেশীর ভাগ মানুস মুসলমান। হাতে গোনা কয়েক পরিবার হিন্দু। সামাজিক সহাবস্থান বেশ সন্তোষ জনক। চারিদিকে অভাবের তেমন কোন চিহ্ন নেই। প্রায় বাড়িতেই ইটের তৈরী দালান চোখে পড়ে। বিদ্যুত নেই। কিন্তু বেশীর ভাগ বাড়িতে সোলার এর মাধ্যমে তারা বিদ্যুতের চাহিদা পুরন করছে।
যতদুর জানা যায় এলাকার মানুষের বড় অংশ পাহাড় থেকে কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা চালায়। সকাল হলে চলে যায় কালেঙ্গা বনে। সারাদিন সংগ্রহীত কাঠ বাজারে বিক্রি করে। তবে একটা মজার জিনিস দেখলাম। জমি সেচের জন্য পানি মেশিনে তুলতে হয়না। ২০/৩০ ফুট পাইপ মাটিতে গেথে দিলে সারাক্ষন পানি উঠতে থাকে।
অবশেষে জানলাম গ্রামের নাম আসলে “বড়জুষ”। আঞ্চলিকতার টানে তারা বড়জুষ এর পরিবর্তে বউর দোষ বলে। তবে যাই বলেন দেখার মত একটা গ্রাম। যদি কেউ কখনো কালেঙ্গা যান। একবার নেমে দেখে যাবেন। অন্তত কেউ যদি শুধু গ্রামটা দেখার জন্য এতটা পথ পাড়ি দেয় তবুও তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না।
Comments (16)
আজিজ ভাই আপনার ডাইরির কাহিনী পড়লাম। ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা আজিজ ভাই।
ভালো লেগেছে পোষ্ট। আশা করি এটা সিরিজ আকারে লিখবেন
বাহ বেশ লাগল কবি,,,,
মাঘের জারে স্বপ্নের উম ঘুমের তন্দ্রায় ডুবে!