আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন আগামী ২৪ জানুয়ারী নক্ষত্র ব্লগের উদ্দোগে নারায়ন গণ্জের মোড়পাড়া জমিদার বাড়ী বার্ষিক বনভোজন আয়োজন করা হয়েছে। বনভোজন মুলত বনে ভোজন বলা হলেও আধুনিকতার ছোয়ায় এখন তার বনে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা এখন মানুষের তৈরী পিকনিক স্পটে যেতেই বেশী আগ্রহী। আমাদের দেশে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে যেসব স্থানে চমতকার বনভোজন হতে পারে। হতে পারে আড্ডা। তাতে জানা হবে অনেক কিছু। রক্ষাপাবে আমাদের স্থাপনা গুলো। আমি মোড়াপাড়া গিয়েছি বহুবার। যতবার গিয়েছি আমার কাছে কখনোই পুরাতন মনে হয়নি। এএক অদ্ভুত জায়গা যেখানে আমার বার বার গেলেও ভালো লাগে। প্রথম বার যখন গিয়েছিলাম তার সনটা ঠিক মনে করতে পারছিনা। প্রথম এর খোজ পাই আমার আরেক ভ্রমন বন্ধু ব্লগার নোমান ভাই।
সীমানা নির্ধারনী এইরকম মঠ আছে চারটি।
নোমান ভাইয়ের কাছে লোকেশন জেনে নিলাম। রাতেই সেলিম ভাইকে জানালাম কাল সকালে মোড়াপাড়া যাচ্ছি। যেই কথা সেই কাজ। সকাল সাড়ে সাতটায় যথারীতি হাজির হলাম শ্যামলী ব্রীজের নীচে। খিল ক্ষেত হয়ে ইছাপুর বাজার। সকালের নাস্তা করলাম এখানে এসে। এখান থেকে পাকা রাস্তায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার গেলে মোড়া পাড়া ফেরী ঘাট। ফেরী ঘাট পার ডানে মোড়া পাড়া বাজার। এখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক এক নির্দশন মোড়া পাড়া জমিদার বাড়ী। বিলুপ্ত প্রায় এক প্রাচীন স্থাপনা যা র্বতমানে মোড়া পাড়া কলেজ নামে পরিচিত। জায়গাটি নারায়নগঞ্জ এর রুপগঞ্জে অবস্থিত।
মোড়াপাড়া কলেজ ভবনটিই ছিল তখনকার জমিদার মহল।
ভিতরে একখানা সুদৃশ্য মন্দির এর চিহ্ন র্বতমান। মন্দিরের র্পুবপাশে একটি ভবন আছে। এর পর অনেক গুলি ঘর। ধারনা করা হয় এই ঘর গুলাতে র্কমচারীরা থাকত।
মাঠে অবস্থিত মন্দির
মহলের সামনে একটা মাঠ তারপর পর শান বাধানো চার ঘাট বিশিষ্ট একটি পুকুর। মহলের পিছনেও অনুরুপ একটি পুকুর আছে। জানা যায় এই জমিদারী র্সবশেষ জমিদার ছিলেন দুই ভাই যাদের একজন এলাকায় বাবু চন্দ্র সাহা নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পর তারা সব কিছু ফেলে ভারতে চলে যান। এই জমিদারীর বংশ পরিচয় এখনো অজ্ঞাত। তবে পুকুরের পশ্চিমে, বড় মাঠে প্রতিষ্টিত দুটি মন্দিরে র্নিমান সাল লেখা আছে ১২৯৬ সালে ২৮ শে পৌষ। এই মাঠের উত্তর অংশ জুড়ে আম বাগান। যে গাছ গুলি দেখলে শতর্বষী বলে মনে হয়। জমিদার মহলের মোট জমির পরিমান ষাট বিঘা। যেখানে একটা সীমানা র্নিধারনী চিহ্ন পাওয়া যায়। উত্তরে র্বতমান রংপুর মেটাল ইন্ডাট্রিজ এর দক্ষিন পশ্চিম সীমানায় একটা মঠ আছে। যার র্নিমান সাল ১৩৪৪ বাংলা। এর পাশে রয়েছে কিছু প্রাচীন বাড়ীর ভগ্নাংশ। ঠিক অনুরুপ আরো একটি মঠ আছে মন্দির সমেত মাঠের দক্ষিনেন অবস্থিত মোড়াপাড়া হাইস্কুলের দক্ষিন পশ্চিম কোনায়। এই মঠের পাশ দিয়ে র্বতমান একটি রাস্তা রাসেল র্পাকের দিকে চলে গেছে। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে এই রাস্তার দক্ষিন পাশে অনেক গুলি প্রাচীন স্থাপনা আছে। যা থেকে বুঝা যায় এই পুরো এলাকাটি জমিদার মহলের অর্ন্তগত। এছাড়াও চর্তুপাশে এখনো স্থানে স্থানে ইটের তৈরী সীমানা প্রাচীরের ভগ্নাংশ আছে যা থেকেও সহজেই সীমান র্নিধারন করা যায়। জায়গাটি সর্ম্পুন অরক্ষিত। যত দুর জানা যায় এখানে সরকারী কোন তদারকী নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ এখানে ১৯৬৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্টা করেন। শুধু এই কলেজই নয় এই সীমানায় কলেজ ব্যতিত মোড়া পাড়া হাই স্কুল, একটা র্নাসারী এবং বেশ কিছু দোকান পাট আছে।
একটা ভবনে ভুমি অফিস হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে কেউ কোন মেরামত করছেন না। এমন কি কিছু ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরী হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন শিক্ষক জানান সরকারী তদারকী না থাকায় জায়গাটি মুলত প্রভাব শালীরা যে যার মত দখল করে নিচ্ছে। কেউ কোন মেরামতের উদ্দ্যেগ নেন না। এমন কি মুল জমিদার মহল যেখানে র্বতমান যে ভবনটিতে কলেজ আছে সেখানেও বিভিন্ন জায়গায় পরগাছা জন্ম হয়েছে। মাঝে মাঝে এখানে বিভিন্ন সিনেমার সুটিং হয় আর আসে পিকনিকের দল।
এই ভবন গুলির স্থাপত্য নকশা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। মন্দির গুলিতে পাথরের উপর খোদাই করা নকশা গুলি বেশ চমৎকার।
এছাড়া এখানকার জানালার কাজ, বারান্দার রেলিং এর নকশা এবং ছাদ তৈরীর পদ্ধতি আহসান মঞ্জিলের অনুরুপ। দুর দুরান্ত থেকে অনেকেই এই স্থানটি দেখতে আসেন এমন কি বিদেশীরাও আসেন। এভাবে অরতি অবস্থায় থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কেবল কলেজ ভবন ছাড়া আর বাকী কোন স্থাপনাই অবশিষ্ট থাকবে না। এক সময় হয়ত এই প্রাচীন স্মৃতি চিহ্নটি হারিয়ে যেতে পারে।
এতো গেলো ভবনের কথা। চলুন দেখে আসি এর বাইরে কি কি আছে?
জমিদার বাড়ীর পিছনে ছায়া শীতল চমতকার দীঘি। তার সাথে শান বাধানো ঘাট।
ছায়া শীতল আম্র কানন।
জমিদার বাড়ীর সামনে স্বচ্ছ টলটলে শান বাধানো ঘটা সমেত পুকুর।
সবাই মিলে চলুন ঘুরে আসি। মায়ার যাদুতে বাধা মোড়াপাড়া জমিদার বাড়ী।
(কৃতজ্ঞতা স্বাকীর। সব গুলো ছবি আমার তোলা নয়। আমার প্রচুর ছবি হারিয়ে গেছে। কিছু ছবি আমার কিছু বিভিন্ন ব্লগারের তোলা। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা)
Comments (17)
আমাদের কাছে জমাকৃত উপন্যাস ছিল মোট সাতটি
মহামিলন - গৌরব জি পাথাং,
অদৃশ্য ভালোবাসা- কামরুল হাসান মাসুক,
অতঃপর ভোর- মাহাফুজুর রহমান কনক,
শাহজাহান শামীম-কুষ্ঠ নিবাস,
হৃদয়ের ব্যবচ্ছেদ- জিয়াউল হক (ব্লগার জিয়াউল হক, যিনি ইংল্যাণ্ডে থাকেন তিনি নন।),
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ পারভেজ রানা।
সকল লেখককেই অভিনন্দন প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছেন বলে। আপনার শুভ প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকুক......
শুরুতেই সাতটি উপন্যাস পেয়েছেন। এটা বেশ ভাল খবর। আশা করছি আপনাদের প্রচেস্টার সার্থকতা আসবে।