Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভ্রমন

  আপনারা অনেকেই আহসান মঞ্জিল এক নামে চিনেন। কিন্তু অনেকেই জানেনা পুরাতন ঢাকায় রুপলাল হাউজ নামে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে। শুনে অবাক হতে হয় যে রুপলাল হাউজে বসবাস কারী অনেক বাসিন্দাই জানেনা যে তাদের বসবাসকৃত ভবনটির নাম রুপলাল হাউজ। পুরাতন ঢাকায় বহুবার গিয়েছি কিন্তু কোন দিন সেখানে যাওয়া হয়নি। সেদিন আলমগীর ভাইকে সাথে নিয়ে শ্যম বাজারে ঢুকে খুজতে শুরু করলাম রুপলাল হাউস। কেউ চিনেনা। শেষে একজনকে অনেক কথার পর জানতে চাইলাম আশে পাশে কোন পুরোনো বাড়ী আছে কিনা। তবেই একজন দেখিয়ে দিল। কিন্তু এটা রুপলাল হাউজ নামে কেউ চিনেনা। অবশেষে অনেক অনুসন্ধান শেষে নিশ্চিত হলাম এই বাড়িটিই রুপলাল হাউস।

একটু পিছনে ফেরা যাক। ইতিহাসটা ফরাস গঞ্জের। ১৭৩০ সালে ফরাসীরা এদেশে আসে ব্যবসার উদ্দেশ্য। বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত একটি বাড়ি শেখ মতিউল্লাহর কাছ থেকে ফরাসীরা কিনে তাতে তাদের কুঠি তৈরী করে। যা র্বতমানে আহসান মঞ্জিল নামে পরিচিত। নায়িব আজিম এবং নেওয়াজিস আলি খানের অনুমতিক্রমে ফরাসীরা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাজার তৈরী করে নাম দেয় “ফ্রেন্সগঞ্জ” যা পরর্বতীকালে র্বতমানে “ফরাশগঞ্জ” নামে পরিচিত। তাদের ব্যবসা লাভজনক না হওয়ার ফলে ১৭৮৪ সালে তারা চলে যান। এরপর আরমেনিয়ান জমিদারগন বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে এলাকাটি লিজ নেন। ১৮৩৫ সালে নবাব আলিমুল্লাহ খান আহসান মঞ্জিলকে পুনরায় কিনে নেন। তারও আগে ১৮২৫ সালে আরমেনিয়ান জমিদার আরাতুন আহসান মঞ্জিল এর সামান্য দুরে বুড়িগঙ্গার কোল ঘেষে (র্বতমান ১৫ নং ফরাশগঞ্জে)একটি প্রাসাদ উপম বাড়ি তৈরী করেন। ১৮৩৫ সালে রুপলাল দাস এবং তার ভাই রঘুনাথ দাস বাড়িটি কিনে নেয়। এরপর থেকে বাড়ির নাম হয় রুপলাল হাউজ।

রুপলাল দাস ছিল একজন জমিদার তথা ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন এবং সেই সময় স্কলার শিপ পেয়েছিলেন ১০ টাকা। যতদুর জানা যায় তিনি একজন সঙ্গীত অনুরাগী ছিলেন। সামাজিক র্কমকান্ডে তার যতনা অংশগ্রহন থাকতো তার চেয়ে বেশী খরচ করতেন সঙ্গীতের পিছনে। সেই সময়ে রুপলাল হাউসে নিয়মিত সংগীতের আসর হতো। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, ওস্তাদ ওয়ালী উল্লাহ খান এবং লক্ষী দেবী সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির্বগ রুপলাল হাউজে সংগীত আসরে নিয়মিত আসতেন। ১৮৮৮ সালে র্লড ডাফরিন ঢাকায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তাদের সন্মানে নাচ গানের আসর কোথায় হবে তা নিয়ে প্রতিযোগীতা হয় আহসান মঞ্জিল এবং রুপলাল হাউজের মধ্যে। এতে অনেক বেশী ভোটে বিজয়ী হয় রুপলাল হাউজ। সেই সময়ে ৪৫০০০ টাকা ব্যয়ে রুপলাল হাউসের আধুনিকি করন করা হয়। শ্রুত আছে যে সেই সময়কার বিদেশীগন ঢাকায় আসলে রুপলাল হাউজে ভাড়া করে থাকতেন। সেই যুগে রুম প্রতি ভাড়া প্রদান করতেন ২০০টাকা।
শ্যাম বাজারের পুরো ইতিহাস এই দাস পরিবারকে ঘিরেই।

১৮৯৭ সালে বড় ধরনের ভুমিকম্প হলে বাড়িটি অনেক খানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর প্রায় পঞ্চাশ বছর বাড়িটির অনেক অংশ প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। রুপলাল হাউজের একপাশে সুন্দর বাগান ছিল যা “রঘুবাবুর বাগান” এবং একপাশে একটি পুল ছিল যা শ্যমবাজার পুল নামে পরিচিত ছিল। কালের র্বিবতনে অযন্তে অবহেলায় এই গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর নদীকে ঘিরে বাজার গড়ে উঠে যার নাম করন করা হয় শ্যমবাজার। বাড়ির ভিতরের অংশে ইউরোপিয়ান অফিসার এবং ব্যবসায়ীরা থাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ১৯৩০ সালের দিকে নদীর অংশটি ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে উঠে ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠলে তারাও জায়গাটি ত্যাগ করেন।
রুপলাল হাউজের র্সবশেষ মালিক রুপলালের পৌত্র যোগেন্দ্র দাস এবং তারকনাথ দাস। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পর দাস পরিবার সপরিবারে ভারতে পারি জমান। শেষ হয় রুপলাল হাউজের এক র্পবের ইতিহাস।

এখানেই শেষ নয়। ১৯৪৮ সালে বাড়িটি সরকারী সম্পত্তি হিসেবে ঘোষনা করে। কিন্তু সিদ্দিক জামাল নামে একজন দাবী করেন যে তিনি দাস পরিবার থেকে ১৯৭১ সালে রঘুনাথের অংশটি কিনে নিয়েছেন। সেই সুবাদে তিনি ২য় তলায় বসবাস শুরু করেন। তারই সুত্র ধরে সিদ্দিক জামালের মৃত্যুর পর তার ছেলে দাউদ জামাল ১৯৭৩ সালে ভারতে চলে যান, এরপর নুরজাহান ও তার স্বামী দাবী করেন যে এই অংশটি তাদের এবং তারা র্বতমানে দখলে আছেন। তারা এখানে গত তিরিশ বছর ধরে বসবাস করছেন। রুপলাল দাসের অংশটিতে প্রিন্স করিম আগাখান প্রিপারেটরী স্কুল চালু হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৭৩ সালে তা কলেজে উন্নিত করলে মাত্র ১৬ দিনের মাথায় তা গুটিয়ে ফেলা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার রক্ষীবাহিনীর জন্য বাড়িটি রিকুইজিশন করা হয়। রক্ষিবাহিনীর বিলুপ্তির পর ১৯৭৬ সালে রুপলাল হাউজকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করে র্পুত মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়।

দেখতে কেমন ছিল রুপলাল হাউস। তখনকার যুগের অত্যন্ত ব্যয়বহুল র্নিমান রুপলাল হাউস। ইংরেজী “ই” আকৃতির বাড়িটি যোগাযোগের সুবির্ধাথে বুড়িগঙ্গার তীরে র্নিমান করা হয়। বাড়ির সামনে থেকে দুটি সিড়িঘাট একবারে নদীর জল নাগাদ নেমে গেছে। রুপলাল হাউজের ডিজাইন করে কলকাতার র্মাটিন কোম্পানি। ইউরোপিয়ান র্নিমান কৌশলে নির্মিত বাড়ির র্দৈঘ্য ৯১৪৪ মিটার। প্রস্থ ১৮৩০ মিটার। দ্বিতীল বাড়িটির দুটি ব্লকে বিভিন্ন সাইজের ৫০ টি কক্ষ আছে। ঠিক মাঝ খানে কাঠের নৃত্য মঞ্চ। স্থাপথ্য নকশায় যথেষ্ট বৈচিত্র্য এবং কারুকাজ বিদ্যমান। সমতল ছাদে তিনটি চিলে কোটা আছে।

এতো গেলো ইতিহাসের কথা। র্বতমানে কেমন আছে রুপলাল হাউস। কাগজে কলম আর বাস্তবতায় আকাশ পাতাল ব্যবধান। অতিতের সেই সব কথা আজ শুধুই স্মৃতি। রুপলাল হাউস তার রুপ হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই আর এখন অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। স্থানে স্থানে ভেঙ্গে পড়েছে, মেরামতের কোন উদ্দোগ নেই। ছাদে র্কানিসে এবং অন্যান্য স্থানে বট গাছ গজিয়েছে। কিন্তু বসবাসকারীরা র্নিবিন্ঘে বসবাস করে যাচ্ছে। চারিদিকে অসংখ্য দোকান পাঠ সহ স্থাপনা গড়ে উঠেছে ফলে মুল ভবনকে খুজে পাওয়া বেশ দুস্কর। নদীতে গিয়ে ছবির সাথে বাড়িটিকে মেলানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সামনের দোকানের জন্য মুল নকশা বিলিন হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবে সেই সিড়ি ঘাট দুটি এখনো আছে।

র্পুত মন্ত্রনালয়ের তথ্য মতে র্বতমানে পোস্ত গোলার ১২৪৩ নং খুটির কিছু বিজিবি সদস্য তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে তাদের কোন ভাড়া দিতে হয়না। এছাড়া ভবনের বেশ কিছু কক্ষ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা মন্ত্রনালয় থেকে লীজ নিয়ে ব্যবসা করছেন এবং তারা নিয়মিত ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করছেন।

আসলে কি হচ্ছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। বসবাস কারী অনেক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জেনেছি এই বাড়ির নাম রুপলাল হাউজ এটা অনেকেই জানেন না। অপর দিকে বাড়ির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মালিকের নামে ( জামাল হাউস, আনোয়ারা হাউস ইত্যাদি) সাইন বোর্ড লাগানো আছে। তারা প্রত্যেকেই দাবীকে এই অংশটি তাদের। এত বিষয়ে তারা আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছেন। নিচতলার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের দখলে। এখানে প্রতিদিন বসে পেয়াজ রসুন, আদা সহ কাচা সবজির আড়ত। যার বড় অংশটাই রুপলাল হাউসের নিচতলায়।

সবশেষে বলতে হয় আহসান মঞ্জিলের মত রুপলাল হাউজও ঢাকার একটি ঐতিহ্য। রুপলাল হাউসের যথাযথ সংরক্ষন প্রয়োজন। প্রয়োজন মেরামতের। অনাকাংখিত স্থাপনা গুলো ভেঙ্গে দিয়ে মুল বাড়িটি পুনরায় মেরামত করলেই ফিরে পাবে রুপলাল হাউজের পুরোনো সেই রুপ।

অনেক কথা হলো। চলুন একটু দেখে আসি রুপ লাল হাউসের ভেতর বাহির।


উনিশ শতকের রুপলাল হাউস    



বর্তমানে রুপলাল হাউজ ( প্যানারমিক ভিউ)


এভাবেই টিনের শেড দিয়ে দখল হচ্ছে আশ পাশ। যে গুলো এখন কাচাবাজার


দ্বিতলা বারান্দা

দ্বিতলা বারান্দা


চিলে কোঠা



ছাদের গঠন আহমান মঞ্জিলের মতই।

০ Likes ২৫ Comments ০ Share ১৫১৬ Views

Comments (25)

  • - তাহমিদুর রহমান

    ইউ আর জিনিয়াস আপু। ফিলিং প্রাউড 

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      থ্যাংকু, তাহমিদুর ভাইয়া। এভাবে বললে গর্বে বুকটা ভরে যায়!! হিহি!! 

    - লুব্ধক রয়

    দিদি আপনি চমৎকার আঁকেন।

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      থ্যাংকু, দাদা। 

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    টাকা দিয়া এই প্রতিভার দাম হয়না যুথী।

    অনেক শুভেচ্ছা ছবি দেখতে দেওয়ার জন্য। দেখার জন্য চার্জ নিবেন নাতো

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      হুম, প্রতিভার আসলেই কোন মূল্য পরিমাপ হয় না।

      জানেন, কোন সাদা পাতা নিয়ে যখন একটুকু রং ছোয়াই কি যে অপরিসীম আনন্দ লাগে, রঙের ছোঁয়া ছুধু কাগজের পাতায় নয় যেন মনেও লাগে। আর সেই নতুন আঁকা ছবিটা বাধাই না করেই যখন কোথাও হেলান দিয়ে রেখে বারে বারে যেতে আসতে ওতার দিকে নজর পরে, তখন নিজের কৃতিত্বে নিজেরই গর্ব হতে থাকে!! 

      আরে নাহ!! কি যে বলেন!! এখনো সেইরকম পেশাদারিত্ব আসে নাই আমার।  হাহা!! সতত শুভেচ্ছা, পাশে আছেন, দেখছেন। আপনাদের মুগ্ধতাই আমার পরম পাওয়া। 

    Load more comments...