Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ তোয়াহা'র ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


মোহাম্মদ তোয়াহা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলনের সময় তাকে অন্যমত ছাত্র নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৪৭-এর ডিসেম্বরে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নামে প্রথম যাঁরা একটি সংগঠন গঠন করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ এবং আবদুল মতিন। মোহাম্মদ তোয়াহা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ভিপি ও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির নেতা। এছাড়ও সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদে তিনি যুব লীগের সংবাদদাতা ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে অধিকাংশ পোষ্টার, নিবন্ধ, লিফলেট তৈরী করেছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের নেতা হিসেবে তোয়াহা সরকারের সাথে সকল ধরনের বৈঠকে অংশ নিতেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তারিখে যখন তোয়াহার নেতৃত্বে একটি দল সচিবালয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিতে যায় তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করা। পরে তিনি তাদের দ্বারা নির্যাতন হন এবং অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে তাকে হাসপাতালে একটা সপ্তাহ থাকতে ছিল হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকায় এসেছিলেন, তোয়াহা তাকে তাদের ভাষা চাহিদা সম্পর্কে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ সারা পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। আগের রাত থেকেই যাঁরা পিকেটিংয়ে রাস্তায় থাকেন তাঁদের অগ্রভাগে ছিলেন আবদুল মতিন, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ। এ ছাড়া সরকার যখন আরবি স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে বাংলা লেখার জন্য প্রচারনা চালাচছিল তখন তনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আজ ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা'র ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ তোয়াহা। ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ তোয়াহা'র মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সমাজতন্ত্রবাদী সংগ্রামী রাজনীতিক মোহাম্মদ তোয়াহা ১৯২২ সালের ২ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের কুশাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জোতদার পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি আন্দোলন করেছেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের ভিপি ছিলেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনে কারা নির্যাতন ভোগ করেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন যত দুর্বার হতে লাগল পাকিস্তানের সরকারও তা রোধ করতে তত জোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারির হরতাল কর্মসূচি ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করে পাকিস্তান সরকার। এ পদক্ষেপ ছাত্রদের মধ্যে আরো সাহস সঞ্চার করে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতির পর ২১ তারিখ সকালেই ১৪৪ ধারা ভাঙতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করে ছাত্র-যুবারা।ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ভোর থেকেই দু-একজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে শুরু করে। স্লোগানে প্রকম্পিত হয় ক্যাম্পাস-রাজপথ। বেলা ১১টায় আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনের মাঠ) সভা শুরু হয়। এম আর আখতার মুকুলের প্রস্তাবক্রমে ও কামরুদ্দীন শহুদের সমর্থনে সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীউল হক। ঐ সময় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, মোহাম্মদ তোয়াহা, কাজী গোলাম মাহবুব, খালেক নেওয়াজ, আবদুল মতিন। ১৯৫২ সালের শেষের দিকে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি দুই বছর পরে মুক্তি পান এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী থেকে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন। ৫৭-তে কাগমারী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তিনি ভাসানীর পক্ষে অবস্থান নেন। পরে ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)'র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ৫৮-তে সামরিক শাসন জারির পর হুলিয়া নিয়ে প্রায় ৭ বছর ফেরারি জীবনযাপন করেন। মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বিরোধ ঘটায় ৭০ সলে ন্যাপের রাজনীতি ত্যাগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাম্যবাদী দল। ৭৯-তে নোয়াখালী-১৩ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮০'র দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী ভূমিকা ছিল তার। ১৫ দলীয় জোট গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

১৯৮৭ সালে ২৯ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা। ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা রাষ্ট্র ভাষা প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজির হাট বাজারে তার স্মৃতিতে একটি সৌধ আছে। তার মৃত্যুর পর তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট এলাকায় তোয়াহার বাড়ির সামনে শেষ সমাধির পাশে ১৯৯২ সালে তাঁর স্ত্রী বেগম আরজাহান তোয়াহা স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজ ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা'র ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ তোয়াহা'র মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৩৩ Views