Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভার্চুয়াল (প্রতিযোগিতা- ক্যাটগরি-২)

দু’দিন থেকে দীপকে খুঁজে পাচ্ছে না রুনি। এই দু’দিন তার কাছে মনে হচ্ছে অনন্তকাল। ফেসবুকে চোখ তার নিবদ্ধ। খুঁজে ফিরছে সেখানে দীপের উপস্থিতি। কোনো স্টাটাস আপডেট। কোনো ইনবক্স মেসেজ। অথবা নামের পাশে সবুজ চিহ্নটি যা বলে দেবে দীপ আছে অনলাইনে। ফেসবুকে। কিন্তু সবই অসার ঠেকছে। কোনো ট্রেস পাওয়া যাচ্ছে না দীপের। এমনটি হয়নি কখনো।

দু’বছর পেরিয়ে গেছে – দীপ-রুনির পরিচয়। পরিচয় হবার পর কোনোদিন তারা বিচ্ছিন্ন থাকে নি। প্রতিদিন কথা হয়েছে । একজন অন্যজনের স্ট্যাটাসে মন্তব্য প্রতিমন্তব্য করেছে। তবে সবই ফেসবুকে। ফেসবুক মেসেঞ্জারে লাখো কথা হয়েছে তাদের। হয়েছে ভাবের বিনিময়। পরিচয়ের পর সাধারণ ফেসবুক বন্ধু থেকে রুনি আর দীপের সম্পর্কটা একটু বেশি আন্তরিকতায় রূপ নেয়। বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু। তখনই  তারা ঠিক করেছিলো- ফেসবুকে যেহেতু তাদের পরিচয় হয়েছে, তাই ফেসবুক ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে তারা কথা বলবে নাযোগাযোগ করবে না। যেদিন তাদের দেখা হবে, সেদিন থেকে তারা অন্যসব মাধ্যমেও কথা বা ভাব বিনিময় করবে। কখনো একজন অন্যজনের ফোন নম্বর পর্যন্ত বিনিময় করেনিতবে ঠিকানা জানা ছিলো একে অন্যের।  এক অদ্ভুত খেয়ালী ভালোবাসা। এরকম সিদ্ধান্তটা ছিলো রুনির। দীপ মেনে নিয়েছিলো।  এ নিয়ে তাদের কথোপকথন মনে পড়ে রুনিরঃ

“রুনি, তোমার ফোন নাম্বার দাও। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।“

“না , আমি আমার দীপের কণ্ঠ ফোনের মধ্য দিয়ে শুনতে চাই না। আমি তোমার কথা, তোমার প্রথম কথা সরাসরি শুনতে চাই। তোমার নিঃশ্বাসের কাছে থেকে। আমি তোমার কণ্ঠস্বরের গন্ধ শুঁকে দেখবো দীপ। প্লিজ, তুমি আমার কথাটা রাখো।“

“আচ্ছা, রুনিমনি। তোমার কথাই মেনে নিলাম।“ – কথা আর বাড়ায়নি এ নিয়ে দীপ। সত্যি বলতে কি, আইডিয়াটা তারও ভালো লাগছিলো। নিঃশ্বাসের কাছাকাছি দু’জন। কথাগুলো থাক না সে সময়ের জন্য তোলা। আহা।

একটা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস চেপে আবার চোখ রাখে রুনি তার ল্যাপটপের স্ক্রীনে। ফেসবুক। না। নেইনূতন কোনো আপডেট নেই দীপের টাইমলাইনে । বুকটা হাহাকার করে ওঠে। কেনো – জানে না রুনি। প্রতীক্ষার হুল হৃদয়ে ফুটে তার।

“জানো রুনি, আমাদের সমাজে ভার্চুয়াল জগৎ নিয়ে অনেক নেতিবাচক সমালোচনা আছে। আছে বদনাম। কিন্তু কী জানো, আমি চাই- আমাদের রিলেশনশীপের সুন্দর পরিণতি দিয়ে এটা বুঝিয়ে দিতে  যে, ভার্চুয়ালেও ভালো সম্পর্ক হয়। স্বচ্ছ সম্পর্ক রচনা সম্ভব। ভার্চুয়াল হবে সত্যিকার অর্থেই ভার্চুয়াল বা গুণের।“  খুব জোর দিয়ে বলতো এসব দীপ। “ তোমার পড়াটা শেষ হলে আমি ফ্যামিলিতে জানিয়ে সব ব্যবস্থা করবো। মাত্র তো একটি বছর আর।“

দীপের কথাগুলো খুব ভালো লাগতো রুনির। এতো সহজভাবে এতো সুন্দর চিন্তা করে দীপ! কেবল মুগ্ধ হয় রুনি। ভাবতো – আর একটিই তো বছর। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হবে তার। যুক্তরাজ্যে সে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যই আসেনি। রুনির বাবা এখানে একটা ব্যবসা করছে। অনেক আগে বাবা পরিবার নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে এখানে পাড়ি জমিয়েছিলো। প্রথমে চাকরিই করতো। গেলো ক’বছর হলো নিজের ব্যবসায় হাত দিয়েছে। রুনির বিশ্বাস – তাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে বাবা মা। অসাধারণ একটি ছেলে দীপ। বুয়েট থেকে পাশ করে গেলো বছরই একটা ভালো চাকরিতে জয়েন করেছে সে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। পোস্টিং ঢাকাতেই। দীপ একজন আর্কিটেক্ট। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হলো তার মন। সময়, দেশ আর জীবন সম্পর্কে দীপের চিন্তাচেতনা বরাবরই রুনিকে উদ্দীপ্ত করে। দীপের পজিটিভ ইমপালস দেখে রুনি অবাক হয়। এতো সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্নের শেষ নেই।

কিন্তু কী হলো হঠাৎ! কেনো পাওয়া যাচ্ছে না দীপকে। আর ভাবতে পারছে না রুনি। খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়। মা ডেকে গেলো খাবার জন্য। যায় নি। ঘরের লাইট অফ করে মাথা চেপে শুয়ে পড়ে রুনি।

পরদিনও কোনো ট্রেস পাওয়া গেলো না দীপের। আর ভাবতে পারছে না রুনি। কী করবে সে এখন? দীপ কি তাকে ভুলে গেলো? এভয়েড করছে? না তা হতেই পারে না। দীপ তা করতেই পারে না। তাহলে দীপ কি কোনো বিপদে পড়লো? অসুস্থ হয়ে পড়লো কি সে? কান্না পেয়ে আয় রুনির। সে আর ভাবতে পারে না।

শুধু ফেসবুকে পরিচিত হয়ে মানুষের এতো কাছে আসা যায় – এ যেনো ভাবনারও বাইরে। যাকে কখনো চোখে দেখেনি, যার সাথে ফোনেও কথা হয়নি – সেই মানুষটির জন্য তার এমন মায়ায় প্রথম প্রথম আশ্চর্য লাগলেও এখন শুধু মুগ্ধই হয় রুনি। দীপের জন্য তার এই ভালোবাসাও অপর্যাপ্ত ঠেকে। কিছু কিছু ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। না ছুঁয়েও স্বর্গ-সুখের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

একেবারে মুষরে পড়ে রুনি। পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে পাগলপ্রায় অবস্থা তার। মায়ের দৃষ্টি এড়ায় না। প্রথমে বলতে না চাইলেও, মায়ের জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হয় রুনি। সব। প্রথম থেকে শেষ। খুলে। রুনির মা তার মেধাবী একমাত্র মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। রুনির বাবাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে। মেয়ের জেদ সে দেশে এসে দেখবে কী হয়েছে দীপের। কোনোভাবেই তাকে নিবৃত্ত করা সম্ভব হলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো – রুনির মা তাকে নিয়ে দেশে যাবে। 

ঢাকায় যখন রুনিরা ল্যান্ড করে তখন বিকেল। এখান থেকে গাজীপুরের ছায়াবীথি এক ঘন্টার পথ। দীপদের বাড়ি। একটা গাড়ি ভাড়ায় নেয় তারা।

দীপ গত কিছুদিন থেকে  রুনিকে দেখার জিদ করতো। বলতো- “রুনি তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। এটা এমন নয় যে, আমি কোনোভাবে ভুলে যেতে পারি। তোমাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেটা শুধু ছুঁয়ে দেখেই শেষ হতে পারে। কিংবা কী জানি, তোমাকে ছুঁয়ে হয়তো ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার ইচ্ছেটাই জ্বলে ওঠবে হৃদয়ে।“

“কী রে মা! এতো কী ভাবছিস? দেখিস, দীপের কিছু হয়নি।“ মেয়ের মাথায় হাত রাখে রুনির মা।

মেয়ে শুধু বিষন্ন চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকায়। কিছু বলে না। যেনো অনেক কিছু বলে যায়। রুনির মা মেয়েকে কাছে টেনে নেয়। একটু ফুঁপিয়ে ওঠে রুনি।

ছায়াবীথিতে দীপদের বাড়ির নাম “নিঝুম”। বাড়ির সামনে এসে থামে রুনিদের গাড়ি। বাড়ির পরিবেশ বলে দেয় – কষ্টের চাঁদরে ঘেরা এ অঙ্গন। একটা ভেজা কান্নার ছোঁয়া এসে যেনো লাগে তাদের গায়ে। রুনি স্পষ্ট টের পায়- কিছু ঠিক নেই এখানে। কিছুই ঠিক নেই। বুকটা হাহাকার করে ওঠে তার।

বাড়ির পাশেই নূতন কবরটা। হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে রুনি। পাশে রুনির মা, দীপের ছোটবোন, মা বাবা। এমন কষ্টের দৃশ্য  কেউ কি দেখেছে কভু!পশ্চিমাকাশে সূর্যটা অস্তমিত প্রায়।

সেদিন অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলো দীপ।  বিকেলে ফিরছিলো দীপ অফিসেরই মাইক্রোবাসে। হোতাপাড়ার কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে তাদের গাড়ির সংঘর্ষ। মুখোমুখি। তিনজনের মৃত্যু হয় স্পটেই। মারাত্মক আহত দীপকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হয়। দুদিন লড়েছিলো জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে। চলে যায় না ফেরার দেশে। 

“তুমি আমার নিঃশ্বাসের কাছে থেকে কণ্ঠের গন্ধ নিতে চেয়েছিলে দীপ। ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলে। ছুঁয়েছুঁয়ে থাকতে চেয়েছিলে দীপ। আমি আজ তোমার খুব কাছে দীপ। ছুঁয়ে দেখো আমায়। একটিবার। একটিবার দীপ।“ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে রুনি। রুনিকে কাছে টেনে নেয় দীপের মা। বোবা কান্না দীপের মায়ের চোখে। অলপক নিঃশব্দ হাহাকার নিয়ে দীপের মায়ের বুকে মুখ গোঁজে রুনি

০ Likes ১৫ Comments ০ Share ৩৮৩ Views

Comments (15)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    অনেক অভিনন্দন রইল-------------