Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভারতের প্রথম ও আজ পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষীকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভারতের প্রথম ও আজ পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী। ডাক নাম ইন্দিরা। ইন্দিরা গান্ধী নামেই যিনি সমধিক পরিচিত। তার পরিবারে তিন প্রজন্ম ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার পিতা জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং তার ছেলে রাজীব গান্ধীও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টবর পর্যন্ত) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ইন্দিরা গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর কোন নারী এখনো আসেননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি শুধু এক কোটি বাংলাদেশীকে আশ্রয় ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। আর বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রক্তচক্ষুর বিপরীতে এক অনন্য অবস্থানও নেন তিনি। ভারতের তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। আজ তাঁর ২৯তম মৃত্যুবার্ষীকীতে তােক স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। 

ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের এলাহাবাদে প্রভাবশালী নেহরু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে এক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেন। নেহেরু পরিবার সবসময়ই জড়িত ছিল রাজনীতিতে ৷ তার দাদা মতিলাল নেহরু একজন প্রথম সারির কংগ্রেসী নেতা ছিলেন। যার কারণে ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধী তার শক্তির পরিচয়ের বহিপ্রকাশের সাহস প্রথম জীবনেই সঞ্চয় করেছিলেন ৷ তার বয়স যখন মাত্র চার তখনই তাঁর বাবা এবং তাঁর দাদা কারাবন্দি হন ৷ কারণ তারা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী ৷ ১৯৩৬ সালে ইন্দিরার মা কমলা নেহেরু পরলোক গমন করেন ৷ ইন্দিরা হয়ে পড়েন ভীষণভাবে একা ৷ ইন্দিরা গুটিয়ে যান নিজের মধ্যে ৷ একা থাকতেন, বেশির ভাগ সময়ই একা কাটাতেন। 

১৯৪১ সালে অক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে ইন্দিরা গান্ধী পিতার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ই ইন্দিরার পরিচয় পার্সি ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে৷ ১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন ৷১৯৪২ সালে তিনি বিয়ে করেন সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীকে৷ বিয়ের কিছুদিন পরই তাঁরা কারাবন্দী হন৷ এলাহাবাদের নৈনি কারাগারে তাঁরা ৮ মাস বন্দী থাকেন ৷ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে ৷সে বছরই ইন্দিরার বাবা জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তখন থেকেই ইন্দিরা প্রায় ছায়ার মত বাবার পাশে পাশে থাকতেন ৷১৯৫০ সাল থেকে অপেশাগত ভাবে জওহরলাল নেহরুর অফিস সহকারীর কাজ করে আসছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন ৷১৯৬৪ সালের জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর ভারতের রাষ্ট্রপতি তাকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন ইন্দিরা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মন্ত্রীসভায় তথ্য ও প্রচার মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বচিত হন ৷

১৯৭১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ৷  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবাদী অথচ নিরস্ত্র বাঙালিকে সাহস জোগান তিনি। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, যুবকদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। এর ফলেই অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয় বাংলাদেশীদের। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে একের পর এক গেরিলা যুদ্ধে পরাস্ত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধেও পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেখানেও এক হয়ে পকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে সেবাযত্ন করায় ইন্দিরা গান্ধীর এ কাজকে যীশু খৃষ্টের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা। 'তারা সবাই ঈশ্বরের সন্তান' শীর্ষক একটি বইয়ে তেরেসা এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। 

একটানা ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইন্দিরা গান্ধী ৷ ১৯৭৫ সালে তিনি দেশে শান্তি এবং শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ জরুরী আইন জারী করেন ৷ এ জন্য সমালোচিত হন ইন্দিরা গান্ধী এরপর ১৯৮০ সালে চতুর্থবারের মত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধান মন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী ৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তুখোর রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে ৷ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ততশৌখিন মানুষ ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধী জন্ম দেন দুটি পুত্র সন্তানের ৷ সঞ্জয় এবং রাজীব ৷তার ছেলে রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পুত্র সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান  এবং পুত্র রাজিব গান্ধী এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান। দুই পুত্র বধু মানেকা গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধী বেঁচে আছেন।

(ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতিস্থল; ১, সফদরজঙ্গ রোড, নতুন দিল্লি। এখানেই নিহত হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী)

১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয়। অপারেশন ব্লু স্টার না্মে এই অপারেশন চলাকালীন স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত শিখদের সর্বোচ্চ তীর্থ হরমন্দির সাহিবে সেনা অভিযানের প্রতিশোধকল্পে শ্রীমতী গান্ধীর নিজের দুই শিখ দেহরক্ষী সৎবন্ত সিংহ ও বিয়ন্ত সিংহ তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় ৷ এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। ২৮ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গন স্মরণ করছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে। 

আজ এই মহিয়সী না্রীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষীকীতে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

০ Likes ০ Comments ০ Share ১৭০৫ Views