রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু গান বৈষ্ণব পদাবলী দ্বারা প্রভাবিত। যেমন-‘ওহে জীবন বল্লভ’, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে’, ‘আমি জেনেশুনে তবু ভুলে আছি’, ইত্যাদি গানগুলো বৈষব পদাবলীর প্রভাব রয়েছে। গানগুলোর মধ্যে ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, গানটি খুবই জনপ্রিয়।
বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাশ-এর সময়ে। তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। বৈষ্ণব পদাবলির শিল্পীরা ছিলেন নরহরি সরকার, বাসু ঘোষ ও লোচন দাসসহ আরো কয়েকজন। ‘লীলাকীর্তন’ সংগঠনের প্রধান নরোত্তম ঠাকুরও ছিলেন শিল্পী। শ্রীচৈতন্য পরে একে ধর্মীর সঙ্গীতে রুপান্তরিত করেন। বৈষ্ণব পদাবলি ব্রজবলি ভাষায় রচিত।
বৈঞ্চব মতকে কেন্দ্র করে রচিত বৈষ্ণব সাহিত্য। পঞ্চাদশ শতকে শ্রী চৈতন্য দেবের ভাব বিপ্লবকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব সাহিত্যের উন্মেষ। বৈঞ্চব ধর্মের প্রর্বতক শ্রী চৈতন্য দেব কোন বই-পুস্তক লিখে যাননি অথচ তাঁকে ঘিরেই জন্ম হয় বৈষ্ণব সাহিত্যের। এই সাহিত্যের বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা।
বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাশ বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের আদি কবি বলে বিবেচনা করা হয়। চর্তুদশ শতকের বিদ্যাপতি, চন্ডীদাশ ও ষোড়শ শতকের জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাসকে এই সাহিত্যের চতুষ্টয় বলা হয়। বিদ্যাপতি ব্রজবুলী ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছেন ও অধিকাংশ পদাবলী এই ভাষায় রচিত হয়েছে। বৈষ্ণব পদাবালী সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস, যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, আলাওল, দীন চন্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি।
চৈতন্য দেব মহাপ্রভু ১৪৮৬ সালে ১৮ ফেব্র“ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫৩৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ তাঁকে শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণাবতার মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ছিলেন ভাগবত পুরাণ ও ভগবদ্গীতায় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে সৃষ্ট বৈষ্ণব ভক্তিযোগ মতবাদের একজন বিশিষ্ট প্রবক্তা। তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করেন এবং ‘হরে কৃষ্ণ/হরে নাম’ মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন।
চৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বাশ্রমের নাম গৌরাঙ্গ বা নিমাই। তাঁর গায়ের রং স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাঁকে গৌরাঙ্গ বা গৌর নামে অভিহিত করা হত। অন্যদিকে নিম বৃক্ষের নিচে জন্মেছিলেন বলে তাঁর নামকরণ হয়েছিল নিমাই। ষোড়শ শতাব্দীতে একাধিক কবি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর ‘চৈতন্য চরিতামৃত’, বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের ‘চৈতন্য ভাগবত’ এবং লোচন দাস ঠাকুরের ‘চৈতন্যমঙ্গল’।
কবিগুরুর গান
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে
তোমারে দেখিতে দেয় না ॥
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
হারাই হারাই সদা ভয় হয়
হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥
কী করিলে বলো পাইবো তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
এতো প্রেম আমি কোথা পাবো না
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
আর কারো পানে চাহিব না আর
করিব হে আমি প্রাণ পণ
তুমি যদি বলো এখনি করিব
বিষয়-বাসনা বিসর্জন।।
গানটি শুনুন সুবিনয় রায়ের কণ্ঠে
Comments (13)
এঙ্গেলস এর জন্মদিনে শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা
ধন্যবাদ।
কমরেড কে সালাম