(ফ্রেডরিক এঙ্গেলস)
সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রধান তাত্ত্বিক , প্রবক্তা কার্ল মাকর্সের সাথে যে নামটি জড়িয়ে আছে , তিনি হলেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস । মার্কসের সাথে নামটি এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, অনেক সাধারণ মানুষই মার্কস-এঙ্গেলসকে এক ব্যক্তি বলে ভুল করেন। তিনি সারাজীবন চেয়েছিলেন আর্থ সামাজিক কাঠামোর সুষ্ঠু বিন্যাস, যেখানে ধনী গরীবকে শোষণ করতে পারবে না। সারা বিশ্বে গড়ে উঠবে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে থাকবে না কোনো শ্রেনীবিভেদ। তিনি কার্ল মার্কসের সাথে যুক্ত হয়ে লিখতে শুরু করেন আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক প্রবন্ধ। প্রবন্ধ লিখে তারা দু’জন বসে থাকেননি, সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কস এবং এঙ্গেলস যৌথভাবে প্রনয়ণ করেন ঐতিহাসিক কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টো। এটাই বর্তমান কম্যুনিজমের মুল নীতি নির্ধারনী গ্রন্থ। কার্ল মার্কসের অসংখ্য অসমাপ্ত গ্রন্থ এঙ্গেলস সর্ম্পুন করেন। মার্কসবাদ পরিপূর্ণতা লাভ করে এঙ্গেলসের হাত ধরে। আজ কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর ১৯৩তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা।
এঙ্গেলস ১৮২০ সালের ২৮শে নভেম্বর তৎকালীন প্রাশিয়া (বর্তমানে জার্মানি)-র বার্মেন শহরে এঙ্গেলস-এর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন এক শিক্ষিত ধনী জার্মান পুঁজিবাদী পরিবারের সন্তান। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত; হাইস্কুলে পড়ার সময়ে তিনি স্কুল ত্যাগ করেন। ১৮৪২ সালে তাকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে তার পরিবারের থ্রেড উৎপাদন ব্যবসার কাজে পাঠানো হয়। সেসময়কালে তিনি লিখেছিলেন, তার মন ফরাসি বিপ্লবের বিপ্লবী গানে পূর্ণ এবং তিনি প্যারিসের গিলোটিন বিখ্যাত লাল আতঙ্ক এর পুনরাবির্ভাবের জন্য অপেক্ষারত।
এঙ্গেলস দেখেন- ইংল্যান্ডে অধিকতর উন্নত ক্যাপিটালিস্ট উন্নয়ন, শক্তিশালী কারখানার মানে হলো উৎপাদন এবং আরো অমানবিক বস্তি এবং আরো শোষণ। তিনি ইংল্যান্ডে প্রথম ব্যাপক শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করেন। এসব কারনেই এঙ্গেলস পুঁজিবাদ ঘৃণা করতেন। আর এঙ্গেলস এটিও দেখলেন, কিভাবে তা সমগ্র পৃথিবীর চলার পথ বদলে দিয়েছিল। শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের মুক্তির দর্শন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কার্ল মার্কসের সঙ্গে তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন।
(কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস)
মার্কস ও এঙ্গেলস একসাথে কাজ শুরু করেন, একটি নতুন সংশ্লেষণের উদ্দেশ্যে- যার মূল ভিত্তি রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস এবং দর্শন। তাদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কমিউনিষ্ট আন্দোলনকে নতুন রূপ দান করে। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, মার্কসের আদর্শিক ভাই ছিলেন… এঙ্গেলস একহারা, ক্ষিপ্র, ঘন চুল এবং জাদরেল গোঁফ বিশিষ্ট একজন পন্ডিত হলেও তিনি অনেক স্মার্ট ছিলেন, অনেকটা তরুণ সৈনিকের মতো।
(কমিউনিস্ট ইশতেহার)
১৮৪৭ সােলর সেপ্টেম্বরে নবগঠিত কমিউনিষ্ট লীগ কমিউনিষ্ট কনফেশন অব ফেইথ নামে একটি খসড়া দলিল তৈরী করে। এটি ছিল প্রাচীন দলিল যা ছিল বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন এবং একটি ধর্মীয় প্রশ্নোত্তরের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। মার্কস ও এঙ্গেলস এটি প্রত্যাখ্যান করেন। এঙ্গেলস নিজেই একটি নতুন খসড়া তৈরীর কাজ শুরু করেন। অক্টোবরে, এঙ্গেলস মার্কসকে কিছু প্রস্তাবনা সহকারে খসড়াটি দেন। তিনি লিখেন, আমি বিশ্বাস করি- একটা ভাল কাজ করতে প্রশ্নোত্তর ফর্মকে দূরে রাখতে হবে এবং শিরোনাম দিতে হবে: কমিউনিস্ট ম্যানিফ্যাস্টো। এখানে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থাকবে। তবে বর্তমানের অবস্থাটিই সর্বোত্তম।” এঙ্গেলস প্রস্তাব করেন যে, পার্টি প্রতিষ্ঠানের কথাই ম্যানিফেস্টো, কিন্তু তিনি একইসাথে সতর্ক করেন যে, যতটা সম্ভব এটি জনবান্ধব ও বাস্তব হতে হবে।
মেহনতী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এঙ্গেলস-র অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৯৫ সালের ৫ আগস্ট এঙ্গেলস মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়
Comments (4)
তোমার কপালের লাল টিপটা বরাবরই লালবাতি হয়ে আমাকে থামিয়ে দিত। আজ আর কোন বাঁধা ছিলনা। নাহ্, কোন কলঙ্ক নয়- আমার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা তোমার কপালে এঁকে দিলাম। দেখে নিও তুমি সৌভাগ্যবতী হবে”।
খুব ভাল লেগেছে লেখাটি। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ সনাতন পাঠক।
না লেখা চিঠি-২ তেও আপনি আপনার সমস্ত ভালোবাসাটুকু ঢেলে দিয়েছেন কালপুরুষ দা। একটা টিপ কে কেন্দ্র করেই এই চিঠিটা সাজানো হয়েছে। দারুণ লাগলো আবেগি কথামালা। তবে বিরহটা বুকের ভিতর কেমন জানি একটা উদাসীনতা সৃষ্টি করলো।
ধন্যবাদ ঘাস ফুল।