(সেক্টর কমান্ডার লে.কর্ণেল এ.টি.এম হায়দারঃ সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)
মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি বীরসেনানী লে. কর্নেল আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। যিনি লে. কর্নেল এ.টি.এম. হায়দার নামেই সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যিনি প্রথমে দুই নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক ও পরে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন গেরিলা কমান্ডার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অভূতপূর্ব অবদান রাখার জন্য তিনি 'বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত হন। আজ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ৭২তম জন্মদিন। ১৯৪২ সালের এই দিনে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
এ,টি, এম হায়দার ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি, কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কান্দাইল গ্রামে। বাবা আলহাজ মোহাম্মদ ইসরাইল বৃটিশ ও পাকিস্তান পুলিশ বিভাগের ইন্সপেক্টর হিসাবে চাকুরি করতেন। মা আলহাজ হাকিমুন নেসা একজন গৃহিনী। ইসরাইল সাহেবের পরিবার ছিল উচ্চ শিক্ষিত এবং গ্রামের মধ্যে প্রভাবশালী। শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চায় এই পরিবার ছিল অনেক উদার। ইসরাইল ও হাকিমুন নেসার সংসারে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হায়দার ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম মুকতু। তার বোন ডা. সিতারা বেগম, বীর প্রতীক। ব্যক্তিগত জীবনে এ.টি.এম.হায়দার ছিলেন অবিবাহিত।
এ.টি.এম হায়দার স্কুল জীবন শুরু করেন পাবনার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে কিশোরগঞ্জ রামানন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এস.এস.সি) পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। ছাত্রজীবন থেকেই হায়দার একজন ভালো খেলোয়ার, সাতাঁরু ও স্কাউট ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে একজন স্কাউট হিসাবে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর জাম্বুরীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে হায়দার কিশোরগঞ্জ সরকারী গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (আই.এ) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর হায়দার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে চলে যান। সেখানের লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বি.এস.সি. ডিগ্রী লাভ করেন। পরে লাহোরস্থ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিদ্যায় ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রথম পর্ব পড়াকালীন সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন এবং পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কমিশনের জন্য মনোনীত হন।
কর্মজীবনে এ.টি.এম. হায়দার ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। হায়দার পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী কাকুলে ট্রেনিং করেন এবং কমিশন প্রাপ্তির পর গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসাবে নিয়োজিত থাকেন। পরে তিনি চেরাটে S.S.G. (Special service group) ট্রেনিং-এ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য, চেরাটের এই ট্রেনিংটি ছিল মূলত গেরিলা ট্রেনিং। এখানে ৩৬০ জন অফিসারের মধ্যে বাঙালী ছিলেন মাত্র দুইজন। ট্রেনিং শেষ করার পর মুলতান ক্যাণ্টনমেন্টে তাঁর প্রথম পোস্টিং হয় এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একজন ক্যাপ্টেন হিসাবে ১৯৬৯ সালের শেষে অথবা ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে এ.টি.এম. হায়দারকে কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে পুনরায় বদলি করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৫/২০ দিন পর তাঁকে আবার কুমিল্লায় নিয়োগ দেয়া হয়।
এ.টি.এম. হায়দার মার্চ মাসের ২৬/২৭ তারিখে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পলায়ন করেন এবং বি-বাড়িয়ায় আবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য অফিসারদের সাথে মিলিত হন। পরে মেলাঘরে এ.টি.এম. হায়দার দুই নম্বর সেক্টরের সঙ্গে কাজে যোগদান করেন। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশাররফ। হায়দার সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সাত অক্টোবর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে 'কে-ফোর্স' গঠিত হলে এ.টি.এম. হায়দার দুই নং সেক্টরের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৬ ডিসেম্বর প্রথম ঢাকা বেতার ও টিভি থেকে 'আমি মেজর হায়দার বলছি, মুক্তিবাহিনীর প্রতি নির্দেশ...' শিরোনামে একটি কথিকা পাঠ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর তিনি দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭২ সালে হায়দার কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৩ ইস্ট বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তাঁর পদবী ছিল মেজর। এরপর তিনি ১৯৭৪ সালে লে. কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অষ্টম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ঢাকা সেনাবাহিনীর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সময় লে. কর্নেল হায়দার কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ না করলেও চরম অবস্থার শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত হায়দার কিশোরগঞ্জে ছুটি কাটান। তারপর ২১ অক্টেবর চট্টগ্রামের রুমা সেনানিবাসে কাজে যোগদান করেন। অক্টোবরের ২৭/২৮ তারিখের দিকে তিনি তাঁর বাবার একটি টেলিগ্রাম পান। টেলিগ্রামে পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত ঝামেলা সমাধানের জন্য তাঁকে ঢাকায় আসতে বলা হয়। হায়দার ৩রা নভেম্বর ঢাকায় আসেন। তখন ঢাকা সেনাবাহিনীতে এক চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সেনাবাহিনীতে চলছে রক্তারক্তি অবস্থা।
১৯৭৫ সালেল ৬ই নভেম্বর দিবাগত ভোররাতে শেরেবাংলা নগরে খালেদ মোশাররফ ও লে. কর্নেল হায়দারকে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর মৃতদেহ কয়েকদিন সেখানে পড়েছিল। হায়দারের মৃতদেহ সংগ্রহের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফর উল্লাহ জিয়াউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর তাঁর মৃতদেহ শেরেবাংলা নগর থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।
(কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়, এ.টি.এম. হায়দারের সমাধি)
আজ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ৭২তম জন্মদিন। বীর উত্তম লে. কর্নেল এ.টি.এম. হায়দারের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা
Comments (2)
"বুকের ঠিক বাম দিকটাতে আমার হৃৎপিণ্ড
তুমি যেখানটিতে মাথা রেখেছ
এবার কান পেতে শুন
কিছুই শুনতে পাচ্ছ না?
আহা, দুষ্টুমি রেখে ভালো করে শুনো
ওখানেই আমি তোমার জন্য
ভালোবাসার মহাসমুদ্র বানিয়ে রেখেছি
ধমনী শিরা উপশিরা, প্রতিনিয়ত
সেই ভালোবাসা আমার সমস্ত গায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। " - - -
এক কথায়ই শুধু বলবো, অসাধারন।
(পাগলাডা ল্যাখছে কী রে, ফার্ষ্টক্লাশ)------
(কপি+পেষ্ট) পরে আসছি।
আমি জানি এটা কপি পেস্ট মন্তব্য। কারণ গতকাল যখন পোষ্ট সাজাই তখন প্রথম আলো থেকে পোষ্টটা কপি পেস্ট করি। সেই মুহূর্তে ওখানকার মন্তব্যগুলোতে আবার একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম। তখন আপনার এই মন্তব্যটাও চোখে পড়েছিল। হা হা হা
ধন্যবাদ নাহার আপা।
মনে হচ্ছিল গল্প পড়ছিলাম।
অহনার জন্য ভালোবাসা
অনেকটা গল্পের ধাঁচেই লেখা সকাল দা। আপনার জন্যও রইলো অনেক ভালোবাসা।
বুকের মধ্যে আছে আমার ভালোবাসার আকাশ,
অনন্তের পাখি তুমি উড়ছো বারো মাস।।
...অহনার জন্য ঘাসফুল-এর ভালোবাসা যেন এমনই... সুপ্রিয়, আপনার লেখাটির কানায় কানায় ভালোবাসার আবেগ!! অসাধারণ রচনা!!
আপনি গতকাল একটা চিঠি পোষ্ট দিয়েছিলেন, সেটা দেখেই পুরনো একটা চিঠি পোষ্ট দিয়ে দিলাম। বলতে পারেন আপনারটা দেখেই উৎসাহিত হয়েছি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ যূথী।