সপ্তদশক শতাব্দীর ইংরেজ কবি (John Milton), প্রসিদ্ধ কালজয়ী মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট এর লেখক জন মিল্টন। যিনি একাধারে লিখেছেন- গদ্য ও কবিতা; কবিতার মধ্যে আছে- শোকগাথা, মহাকাব্য, ছন্দনাটক, সনেট, পল্লীগাথা ও আরো নানারকম পদ্য। তার গদ্য ও পদ্যে ব্যক্তিগত প্রত্যয়ের প্রতিফলন লক্ষণীয়। ইংরেজি, লাতিন এবং ইতালীয় ভাষায় লিখতেন তিনি। তার বিতর্কমূলক সাহিত্যকর্ম অ্যারোপেগিটিকা (মূলত অনিবন্ধিত মুদ্রণগুলোকে ইংল্যান্ডের সংবিধান কর্তৃক বৈধতাদানের পক্ষে মিল্টনের বক্তৃতা) বাক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। ইংরেজি সাহিত্যের এই কবি ১৬৭৪ সালের আজকের দিনে ইংল্যান্ডের বানহিলে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩৪০তম মৃত্যুবাষিীকী। বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্য জার্নালের কল্যাণে মিল্টনের অবদান একুশ শতাব্দীতেও অটুট রয়েছে। বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম ইংরেজ কবি জন মিল্টনের ৩৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
জন মিল্টন ১৬০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর লন্ডনের চিপসাইডের ব্রেড স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জন মিল্টন সিনিয়র। মায়ের নাম সারাহ্ জেফরি। মিল্টনের পূর্বপুরুষরা ছিলেন রোমান ক্যাথলিক। কিন্ত মিল্টনের পিতা প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমত গ্রহণ করে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যান। ছাত্রজীবনে মিল্টন ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী। লন্ডনের সেন্ট পলস স্কুলে তার পড়াশোনা। ১৬২৫ সালে মিল্টন ক্যামব্রিজের ক্রাইস্টস কলেজে ভর্তি হন এবং ১৬২৯ সালে এখান থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলের ছাত্র থাকাকালে মিলটন নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি লাতিন, গ্রিক, হিব্রু ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। সে সঙ্গে কাব্যচর্চাও শুরু করেন। ১৬২৬ সালে কলেজে পড়ার সময় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের জন্য মিল্টন কয়েক শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ছিলেন। ১৬৩৮ সালে মিলটন ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। ব্রিটেনের ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক বিভক্তির সমান্তরাল বলা চলে মিল্টনের জীবনের ধাপগুলোকে।
মিল্টন তৎকালীন ইউরোপের শিল্প-সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু ইতালিতে কয়েক মাস কাটিয়ে ১৬৩৯ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ১৬৪২ সালে পার্লামেন্ট ও রাজার মতবিরোধের কারণে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মিল্টন পার্লামেন্টের সমর্থনে গদ্য রচনা শুরু করেন। এ সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে লেখা তার অ্যারোপাজিটিকা (১৬৪৪) বইটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি মানুষের বাক স্বাধীনতা, মুদ্রণ স্বাধীনতা ও সংগ্রামের এক জীবন্ত দলিল। গৃহযুদ্ধের পর রাজা প্রথম চার্লসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে মিল্টন দ্য টেনুর অব কিংস অ্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেটস (১৬৪৯) শিরোনামের বিখ্যাত রাজনৈতিক পুস্তিকাটি লেখেন। এতে রাজার করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জনগণই দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’।
এর পর কমনওয়েলথ কাউন্সিল অব স্টেটের পক্ষ থেকে বিদেশী ভাষাবিষয়ক সচিব নিযুক্ত হন জন মিল্টন। ১৬৫১ সালে কমনওয়েলথ নিউজপেপার কর্তৃক প্রকাশিত মারকুরিয়াস পোল্লিকাস পত্রিকার প্রধান সম্পাদক পদে যোগ দেন। কিন্তু তখন থেকে কঠোর পরিশ্রম করার কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। ১৬৫২ সালে জন মিল্টন পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর মিলটন কিন্তু তার অন্ধত্বকে মেনে নেননি। সব প্রতিকূলতা তুচ্ছ করে তিনি সাহিত্যসাধনা চালিয়ে যেতে থাকেন। অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন ইংরেজ কবি জন মিল্টন। এছাড়াও গ্রীক কবি হোমার, ফার্সী কবি রুদাকী এবং লেখিকা হেলেন কিলার, আরবী সাহিত্যের খ্যাতনামা কবি বাশার বিন বোরদ, সিরিয়ার আবুল আলা আল-মা'আররী এবং মিশরের বিশিষ্ট লেখক তাহা হোসাইনের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। তারা কাব্য-সাহিত্যে এমন অবদান রেখেছেন যে, যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন তাদের নাম বিশ্ব ইতিহাসে লিপিবন্ধ থাকবে। তারা যেন অন্ধ হয়েও অন্ধ নন।
জন মিল্টন ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী কবি। ইংরেজি সাহিত্যে শেক্সপিয়ারের পরেই যার স্থান। তার সবচেয়ে বিখ্যাত ও কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি হল “Paradise Lost” মহাকাব্যটি, যেটি সেই মিল্টনের সময় থেকে আজ অবধি ইংরেজ সাহিত্য-সমালোচনার কেন্দ্রেই রয়ে গেছে। ১৬৫৮ থেকে ১৬৬৪ সালের মধ্যে মিলটন তার মহাকাব্য প্যারাডাইজ লস্ট রচনা করেন। বাইবেল-এর কাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত এই মহাকাব্যটি ১৬৬৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় তিনি অন্ধ এবং দরিদ্র ছিলেন। মহাকাব্যটি তার নিজের জীবনের হতাশা এবং ব্যর্থতা তুলে ধরে, একই সঙ্গে মানুষের সুপ্ত ক্ষমতাকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে। ১৬৭৪ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মিল্টন ১৬৭১ সালে প্যারাডাইস লস্টের পরবর্তী অংশ প্যারাডাইস রেগেইনড রচনা করেন। একই সময় স্যামসন অ্যাগনিস্টস নামক একটি ট্র্যাজেডি রচনা করেন।
ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত এই কবি ১৬৭৪ সালের ৮ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বানহিলে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩৪০তম মৃত্যুবাষিীকী।বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম ইংরেজ কবি জন মিল্টনের ৩৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম ইংরেজ কবি জন মিল্টনের ৩৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্� ;
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
এডিট করুন | ড্রাফট করুন | মুছে ফেলুন
বার পঠিত ০ ০ ০
মন্তব্য দেখা না গেলে - CTRL+F5 বাট্ন চাপুন। অথবা ক্যাশ পরিষ্কার করুন। ক্যাশ পরিষ্কার করার জন্য এই লিঙ্ক গুলো দেখুন ফায়ারফক্স, ক্রোম, অপেরা, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার।
০টি মন্তব্য
আপনার মন্তব্য লিখুন কীবোর্ডঃ বাংলা english নাম
Comments (0)
দারুণ
যাক দারুণ লাগার জন্য
অশেষ ধন্যবাদ
ভাল থাকুন-----------
তবু পাবো তো বিধি? বাঁকি চুমুর পরিকীর্ণ স্বাদ।
খুব ভাল লাগল। তবে বাঁকি মানেটা জানতে ইচ্ছা হচ্ছে।
তবু পাবো তো বিধি? বাঁকি চুমুর পরিকীর্ণ স্বাদ
এর অর্থ হলো আল্লাহ কাছে প্রশ্ন আমরা ত মরণশীল তাই আর বাঁকি বুঝলেন না 10 12 দিনের শিশুবাচ্চা কে চুমু দিলে সে কি চুমু দিতে পারি তাই বাঁকি রাখছি
অশেষ ধন্যবাদ
ভাল থাকুন-----------
চমৎকার কবিতার কথামালা। শুভেচ্ছা জানবেন, ভালো থাকবেন।
চৌধুরী দা
সালাম কেমন আছেন
কবিতা পড়ার জন্য
অশেষ ধন্যবাদ
ভাল থাকুন-----------