বজ্র আটুনি ফস্কো গিরো। আইন যত কঠিন তা ভাঙ্গা ততই সহজ। ঘটা করে আইন করা হয় যেন তা ভাঙ্গার আনন্দ লাভের জন্য। আইন ভাঙ্গার এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ মহা সমারোহে পালিত হবে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ। এবারের বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘২০ বছর ধরে আপনার অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছি’। মূলত ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনের ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এই প্রতিপাদ্য।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচিত ও অবহেলিত প্রসঙ্গটির নাম মানবাধিকার। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা এবং মানবতাবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে ঘোষিত হয় সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা। তবে এই দিবস পালনে যতটা থাকে আনুষ্ঠানিকতা তার সামান্যতম অংশও বাস্তবায়িত হলে বিশ্ব থেকে নির্বাসিত হত বিচার বহির্ভূত হত্যা, শিশু ও নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানীসহ হাজারো অপরাধ।
জাতিসংঘের সকল সদস্যভূক্ত রাষ্ট্র সভা, আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকে। সার্বজনীন মানব অধিকার ঘোষণা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ অর্জন। এছাড়াও, 'সার্বজনীন মানব অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাকে' বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ তারিখকে নির্ধারণ করা হয়। দিবসটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকায় শার্পেভিল গণহত্যাকে স্মরণ করে দিবসটি উদযাপিত হয় ২১ মার্চ।
১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর পালিত হয়ে আসছে। তবে ১৯৫০ সালের ৪ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১৭তম পূর্ণ অধিবেশনে ৪২৩(৫) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সদস্যভূক্ত দেশসহ আগ্রহী সংস্থাগুলোকে দিনটি তাদের মতো করে উদযাপনের আহ্বান জানানো হয়। মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্যচিত্র কিংবা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রধানতঃ এ দিনের সাধারণ ঘটনা।
ঐতিহ্যগতভাবে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর 'জাতিসংঘের মানব অধিকার ক্ষেত্র পুরস্কার' প্রদান করা হয়। এছাড়া নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান কার্যক্রমও এদিনেই হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ দূর করার লক্ষ্যে মানবাধিকার ঘোষণাটি ছিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রতি বছরের মতো এবারো জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন দেশের সকল বিভাগীয় শহর, মহানগর, জেলা, থানা এবং পৌরসভার থানাগুলোতে নানান কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য দায়িত্ব সর্বোপরি মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই হচ্ছে মানবাধিকার ঘোষণার মূল মন্ত্র। আমাদের দেশের সংবিধানেও মানবাধিকার সংরক্ষণের কথা থাকলেও মানুষ প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের। সংবিধানের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, "প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ"। অন্যদিকে সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে, "সরকার যেই গঠন করুকনা কেন, জনগণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার দায়িত্ব ওই সরকারের উপর বর্তাবে। জাতীয় জীবনে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে কৃষক শ্রমিককে শোষণ থেকে মুক্ত রাখার অধিকার এই মহান সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কি্ন্তু দুঃখের বিষয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেরে মতো আমাদের মহান সংবিধানেও মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও ব্যবকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়ত।
নারী-যুবা, শিশু-প্রতিবন্ধী-দরিদ্র-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীস ও আদিবাসীসহ প্রতিটি মানুষের অধিকারের বিষয়টি জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও নীতি নির্ধারনীতে সব ধরনের বৈষম্য, নির্যাতন দূর করে একটি শোষণহীন বিশ্ব গঠনের 'অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই নিশ্চিত হবে মানবাধিকার। পৃথিবীর সকল দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হবে এই হোক আমাদের আজকের প্রত্যাশা।
Comments (6)
দোকানে লোহার শিকে ঝোলে হলুদ রঙের কলার ছড়ি
হাতের ঠেলা লেগে দোল খায়
ক্ষুধার্ত চোখ দেখে তার স্বপ্নগুলো বাতাসে নাচে।
চমৎকার বাস্তবতার ছায়া । শুভেচ্ছা রইলো ...
কবিতা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা। পৃথিবীর সব রঙ মুছে গিয়ে
সাদা কালোয় আঁকা জীবনে রছবি।
যেদিকে তাকায় মরীচিকার মতো শুন্যে ভেসে ওঠে
খাবারের প্লেট;
নির্মম সত্যিটাকে আপনি কবিতার ভাষায় গেঁথেছেন !!! অসাধারণ !!! অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে -------
আপনাকে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। প্রথম আলো ব্লগে আপনার লেখা নিয়মিত পড়তাম কিন্তু এখানে এখনো ঠিকমত অভ্যস্ত হতে পারিনি।
কবিতা ভাল লেগেছে।
কিন্তু সুকান্ত ভট্টচার্যের সময়ের ক্ষুধার চিত্র এখনকার ক্ষুধার চিত্রের চেয়ে ভয়াবহ ছিল।
তখন পুর্ণিমার চাঁদ রুটি হয়ে গিয়েছিল----- "পুর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"
আর এখন শুন্যে খাবারের প্লেট ভেসে ওঠে ----- "যেদিকে তাকায় মরীচিকার মতো শুন্যে ভেসে ওঠে
খাবারের প্লেট"
মন্তব্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকবেন।