Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

বিলেতের পথে পথেঃ লিডস্‌ ক্যাসল

মূল দুর্গের বর্তমান কাঠামো

সকাল থেকেই টুপ টুপ বৃষ্টি পড়ছে। শীতকালে এখানকার এই এক সমস্যা হঠাৎ করেই বৃষ্টি পড়তে থাকবে। আর সূর্য মামার দেখা থাকবেনা অনেক দিন। আকাশ থাকবে কাল মেঘে ডাকা। আমি যেহেতু সিলেটের তাই বৃষ্টির সাথে আমার পরিচয় সেই জন্ম থেকে। বৃষ্টি আমার সবসময় পছন্দের। তার পরেও বাহিরে বেড়াতে গেলে বৃষ্টি পছন্দ নয়। কারন ছবি তুলা যায়না। অনেক দিন ধরে কোথাও বেড়াতে যাইনা তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হয়ে গেলাম।

দুর্গের প্রবেশ পথ 

বারস্টিড স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি ফোন করলাম। দেখে মনে হল ছোট একটা শহর। বাংলাদেশের বাজার টাইপের। ট্যাক্সি অভ্যর্থনার মহিলা মধুর কণ্ঠে জানালেন আমাদেরকে ট্যাক্সির জন্যে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে তবে বাস্তবে ট্যাক্সি চলে এলো দশ মিনিট পরেই। বাংলাদেশের সাথে এখানকার মানুষের এই এক পার্থক্য! বাংলাদেশে বলবে দশ মিনিট আর নেবে ত্রিশ মিনিট। অবশ্য এদের অনেক রেস্ট্রিকশন আছে। নির্ধারিত সময় থেকে পাঁচ মিনিট পরে ট্যাক্সি এলে সম্পূর্ণ ভ্রমণ ফ্রি! মানে আপনাকে আর ফেয়ার পে করতে হচ্ছেনা! যেখানে আমাদের দেশে ট্যাক্সি ড্রাইভাররা পারলে অনেক বেশি ফেয়ার চার্জ করে বসে! হায়রে দেশ! অবশ্য ড্রাইভারদের দুষ দিয়ে লাভ নেই। যে হারে সব কিছুর দাম বাড়ছে! এখানকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে মিনিমাম অয়েজেসও বাড়ানো হয় আবার বিশেষ বিশেষ যেমন লন্ডনের যে সকল জায়গায় বসবাস ব্যায় বহুল সেসব জায়গার শ্রমিকদের জন্যে আলাদা পে স্কেল রাখা হয়েছে! যেখানে আমাদের দেশের একজন রিকশ ড্রাইভারের ভাড়া আগে যেমন ছিল এখনও তেমন। কেউ কেউ পারলে দুই টাকা কম দিতে পারলে নিজেকে বীর পুরুষ ভাবে!  

দুর্গের সামনে আমি 

দুর্গের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা একটি বর্শা 

রানী ক্যাথরিন অব আরাগানের গোসল খানা 

দুর্গের একটি ব্যালকনি, হেনরি অষ্টম প্রায়ই এখানে বসে থাকতেন।

দুর্গের ভিতরে একটি চ্যাপল

কনফারেন্স রুম হিসাবে ব্যাবরিত হত এটি, সর্বশেষ ২০০৪ সালে নরদান আয়ারল্যান্ডের সাথে পিস টক অনুষ্ঠিত হয়েছিল এখানে।

রানী ক্যাথরিন অব আরাগানের শোবার ঘর  

আরও একটি বেড রুম 

দুর্গের এই রুম গুলোতে আগে পাখি থাকলেও বর্তমানে মেন্টেইন কস্টের কারনে পাখি সরিয়ে ফেলা হলেও বিশেষ ব্যাবস্থায় পাখির কিচিরমিচিরের ব্যাবস্থা রাখা হয়ছে। 

রাজ পরিবারের লাইব্রেরী 

আজকের গন্তব্য লন্ডনের পাশেই অবস্থিত ক্যান্ট কাউন্টির মেইডস্টোন থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্তিত একটি গ্রাম লিডস্‌! এই ভিলিজটা অনেক কারনেই বিখ্যাত। বিলেতের ইতিহাসের অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে এর অবস্থান। এখানে প্রায় পাঁচশ একর জায়গার উপর হাজার বছরের পুরাতন একটি দুর্গ রয়েছে যার নাম লিডস্‌ ক্যাসল বা লিডস্‌ দুর্গ। ১১১৯ সালে Robert de Crevecoeur নামের একজন এটি নির্মাণ করেন এবং ১২৬০ সাল পর্যন্ত এটি তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে জানা যায়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে দুর্গটি শতাব্দীর পর শতাব্দী পুনর্নির্মাণ করায় শুরুর ধিকে এটি দেখতে কেমন ছিল এব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেনি। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় ১২৭৮ সালে রাজা এডওয়ার্ড প্রথম এর সময় কাল থেকেই এটি বিলেতের রাজ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। জানা যায় এখানে মেডিবাল রাজ পরিবারের মোট ছয়জন রানী Eleanor of Castile; Margaret of France; Isabella of France, Joan of Navarre; Anne of Bohemia and Catherine de Valois বসবাস করেছিলেন। তবে এটিকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয় হেনরি অষ্টম এর প্রথম স্ত্রী ক্যাথরিন অব আরাগানের জন্যে। ১৬ শত শতাব্দিতে তিনি এটি তার বসবাসের জন্যে ব্যাবহার করতেন। দুর্গটি সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছিলেন এডওয়ার্ড প্রথম এবং হেনরি আস্টম। ধারনা করা হয় দুর্গটির চার পাশের লেক এডওয়ার্ড প্রথম খনন করেছিলেন। তবে এটি সর্বশেষ ব্যাপক ভাবে সংস্কার করা হয় ১৮২৩ সালের দিকে যা বর্তমান পর্যন্ত বিদ্যমান। দুর্গটির সর্বশেষ প্রাইভেট মালিক ছিলেন Lady Baillie. তিনি দুর্গটি ১৯২৬ সালে কিনেন, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে এটি হাসপাতাল হিসাবে ব্যাবহার করেন এবং ১৯৭৪ সালে মারা যাবার সময় তিনি এটি লিডস্‌ ক্যাসল ফাউন্ডেশন নামে উইল করে যান। ফলে ১৯৭৬ সাল থেকে এটি জনসাধারণের জন্যে খুলে দেয়া হয়।  

লাইব্রেরীতে আমি 

রাজ পরিবারের ডাইনিং রুম 

প্রবেশ পথে রাখা রেইন ডি শিং 

টিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে মায়ের বয়সি একজন মহিলার সাথে পরিচয় হল। তিনি অভ্যর্থনায় কাজ করছিলেন। কথা শুনে মনে হল ঠাণ্ডা লাগিয়েছেন। আমি মানুষকে চমকে দিতে খুব পছন্দ করি। মানুষকে অবাক করতে পারা আমার কাছে অন্যরকম। তাই উনার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকটা সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললাম, মা আপনি ঠাণ্ডা লাগিয়েছেন কিভাবে? নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজে অফিসে এসেছেন? আমার কথায় মহিলা প্রথমে অবাক হয়ে কিছুক্ষন আমার দিকে থাকিয়ে থাকার পর হেসে জবাব দিলেন হুম! একটু ভিজে গিয়েছিলাম। বুঝলাম আমার কথা বলার ঢং তার পছন্দ হয়েছে। একদিকে ঠাণ্ডা আর অন্যদিকে বৃষ্টি তাই টিকেট অফিসে তেমন ব্যাস্থতা নেই। বেশ কিছুক্ষন তার সাথে কথা বললাম। বৃষ্টির কারনে ছবি তুলতে পারবনা শুনে আমার জন্যে একটা পলিথিনের ব্যাগ দিলেন। আবার নিজে পলিথিন দিয়ে ক্যামেরা বিশেষ ভাবে মুড়িয়ে দিলেন। তখনও আরও বাকি। টিকেট অফিসের পাশ দিয়ে দুর্গের প্রবেশ পথ। দুর্গে ডুকতে যাব তাই সিকিউরিটি আমার ব্যাগ চেক করার কথা বলল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে টিকেট অফিসের কাঁচের জানালা সরিয়ে মহিলা চীৎকার দিলেন, আই নো দিস বয়। লেট হিম গো, হি ইজ মাই সান!! এবার সত্যি সত্যি কেউ আমাকে অবাক করল। এত অবাক হলাম যে থেংকু বলাটাই ভুলে গেলাম। নিজেকে তিরস্কার করলাম কারন মহিলার নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। শুধু হাসি মাখা মুখখানা মনে আছে। মনে থাকবে সারা জীবন।

স্নান শেষে শরীর শুকাচ্ছে দুইটা রাজহাঁস 

দুর্গে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল কয়েকটি ময়ূরের। নিজেদের মত করে ঘাস খাচ্ছে। টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি হেটে হেটে লেকের পাড় ধরে ব্রিজ অতিক্রম করে চলে এলাম দুর্গের প্রবেশ পথে। লেকে রাজ হাঁস, গাঙচিলদের বিচরন বেশ ভাল লাগল। এর মধ্যে একদল সাদা রাজহাঁস আমাকে ভয় দেখানুর জন্যে তেড়ে এলে আমিও তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। বেচারারা কিছু সময় দাঁড়িয়ে প্যাকপ্যাক করে রনে ভঙ্গ দিল। সব প্রাণীদের এই এক সমস্যা তুমি দৌড় দিলে তারা তোমাকে তাড়া করবে!

রনে ভঙ্গ দিয়ে রাজহাঁসদের ফিরে যাওয়া

লেকের পানিতে হাঁসদের বিচরন

লেকের পানিতে হাঁসদের বিচরন

দুর্গের পাশের লেক

সন্ধ্যার আবছা আলোয় দুর্গ 

আদর দিয়ে ডাকলাম তবে বেচারা আমাকে বিশ্বাস করেনি 

দুর্গের প্রবেশ পথে দুর্লভ প্রজাতির দুইটি রেইন ডিয়ার রাখা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হল মূল দুর্গের প্রবেশ পথ দুর্গের পেছন দিয়ে সরু এক রাস্তা দিয়ে। তবে দুর্গে প্রবেশ করার পর মনে হবে বেশ আধুনিক একটি দুর্গ। ক্যাথরিন অব আরাগানের শোবার ঘর, বাথরুম, দুর্গের ডাইনিং রুম, কনফারেন্স রুম, রাজা হেনরি অষ্টমের বসার ব্যালকনি, রাজ পরিবারের লাইব্রেরী সব মিলিয়ে খুবই ভাল লেগেছে দুর্গটি।  

০ Likes ১৮ Comments ০ Share ৭০১ Views

Comments (18)

  • - লুব্ধক রয়

    খুব সুন্দর লিখেছেন

    • - ফায়েজ মাহ্‌দী

       ধন্যাবাদ।

    - সনাতন পাঠক

    সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে

    • - ফায়েজ মাহ্‌দী

      আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা 

    - আহমেদ ইশতিয়াক

    দারুণ লিখেছেন ভাই সাহেব...

    • - ফায়েজ মাহ্‌দী

       দারুণ বলেছেন ভাইজান। আপনি যা লেখেন না ! উওয়াও !!!

    Load more comments...