Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

বিলেতের পথে পথেঃ রানীর অফিসিয়াল রাজবাড়ী বাকিংহাম প্যালেস

ইংল্যান্ডে আসার পূর্বে তিনটা জায়গা দেখার শখ ছিল খুব বেশি। বলতে পারেন কল্পনায় বিচরন করত সবসময়। তার একটি এই বাকিংহাম প্যালেস বা বর্তমান রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয় এর অফিসিয়াল রাজবাড়ী। যদিও রানী বছরের সামান্য কিছু সময় এখানে অবস্থান করেন তবুও পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে বিলেতের অন্য যেকোন রাজবাড়ী থেকে এই প্যালেসটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তার পেছনে কারণও আছে অনেক। বিশেষ করে রানী ভিক্টোরিয়ার সবচেয়ে পছন্দের বাড়ি হওয়ায় ইতিহাসের পাতায় স্থান আর পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছে এই প্যালেসটি। সেই সাথে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে প্যালেসটি হিটলার বাহিনীর বোমা হামলার শিকার হয়েছিল। যদিও রাজবাড়ীর একটি চ্যাপেল সহ বেশ বেশ কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে গেলেও তেমন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি তখন। এছাড়া বিলেতের সকল জাতীয় অনুষ্ঠান আর রাজপরিবারের সকল বড় অনুষ্ঠান গুলো আয়োজন করা হয় এই প্যালেস ঘিরে। এমন অনেক গুলো কারনেই বিলেতের ইতিহাসের বেশ কিছু অংশ জুড়ে আছে এই প্যালেসটির অবস্থান।

আকাশের অবস্থা তেমন ভাল নয়। অবশ্য সবসময় যে ভাল থাকে এমনও নয়। তবে আজকের ভাল নয়ের বিশ্লেষণটা অন্যরকম। যেকোন সময়ে শুরু হতে পারে বৃষ্টি। সামারের শেষের দিকে এখানকার কোথাও বেড়াতে যাওয়ার এই এক সমস্যা। কথা নেই বার্তা নেই শুরু হবে বৃষ্টি। আবার মুশুল ধারে বৃষ্টি নয়! প্রচণ্ড বাতাস আর হালকা পানির ড্রপ। হয়ত সে কারনেই এখানে আমি বাংলাদেশের মত বাহারি পকেট ছাতা খুব একটা দেখেছি বলে মনে হয়না। যা দেখেছি তা বিশাল একটা ছাতা। বাংলাদেশের বর্তমান জেনারেশন যে ছাতা গুলোকে সেকেলে মনে করে! তবুও মাঝে মাঝে কেউ কেউ পকেট ছাতা যে ব্যাবহার করেন না তা নয়। তবে খুব সাবধানে। একটু বেশি বাতাস হলেই ঘুটিয়ে নিতে হয়। আমার কাছে আজ অবশ্য ছাতা নেই বৃষ্টি আসলে বিজতেই হবে।

ট্রেনে বসে বসে পত্রিকা পড়ছি। টাকা দিয়ে কিনে নয় কিন্তু। এখানকার ট্রেন স্টেশন গুলোতে যে ফ্রি পত্রিকা দেয় সেরকমই একটা “ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড”। খারাপ না। তবে সংবাদের চেয়ে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা একটু বেশি। জানালায় চোখ পড়তেই দেখলাম ট্রেন টেমসের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের অবস্থা বদলিয়েছে। সূর্য মামা উকি দিচ্ছেন। ভাবনা কেটে গেল।

অবশেষে ট্রেন যখন ভিক্টোরিয়া ট্রেন স্টেশনে পৌঁছল তখন ঘড়ির কাটায় সাড়ে বারোটা। প্রয়োজনীয় চেকিং শেষ করে স্টেশন থেকে বের হয়ে আসলাম। এটি লন্ডনের অন্যতম ব্যাস্ত স্টেশন গুলোর মধ্যে একটি। সেই সাথে এখান থেকে যেহেতু গেটউইক এয়ারপোর্টের ট্রেন ছাড়ে তাই আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যাও খুব একটা কম নয় এখানে। ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে ম্যাপ ফলো করে চলে এলাম বাইংহাম প্যালেসে। স্টেশন থেকে প্যালেসটি খুব দূরে নয়। আসার পথে কুইন মিউজ আর কুইন গ্যালারি চোখে পড়ল। সেই সাথে পর্যটকদের উপছে পড়া ভিড়।  তবে আমি সোজা হাঁটলাম কুইন ভিক্টোরিয়া ম্যামরিয়ালের দিকে। মেমোরিয়ালটা ছবিতে দেখতে যেরকম বাস্তবে তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি সুন্দর মনে হয়েছে আমার কাছে।

কুইন গ্যালারি

কুইন গ্যালারির বাহিরের একটি অংশ

কুইন ভিক্টোরিয়া ম্যামরিয়াল

কুইন ভিক্টোরিয়া ম্যামরিয়ালের সামনে আমি  

কুইন ভিক্টোরিয়া ম্যামরিয়ালের সম্পূর্ণ ভাস্কর্য   

ম্যামরিয়ালের পাশের একটি ভাস্কর্য

ম্যামরিয়ালের পাশের আরও একটি ভাস্কর্য

ম্যামরিয়ালের উপরের গোল্ডেন স্ট্যাচু   

আগে থেকেই মেমরিয়াল সম্পর্কে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে এসেছিলাম তাই এবার বাস্তবের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছিলাম। এখানে বেশ কয়েকজন বিদেশির সাথে পরিচয় হল। এদের কয়েকজন ইউরোপ আর কয়েকজন এসেছেন চীন থেকে। এশিয়ার সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ পাগল মানুষ গুলো হয়ত চীনে বাস করে। তার কারন এখন পর্যন্ত আমি যেসকল জায়গায় এখানে ভ্রমণ করেছি প্রায় সব জায়গা গুলোতে চীনা পর্যটকদের দেখা পেয়েছি।

রানী ভিক্টোরিয়ার এই ভাস্কর্যটি কুইন গার্ডেনের প্রায় মাজখানে আর প্যালেসের ঠিক সামনে স্থাপন করা হয়েছে। এটি ডিজাইন করেছিলেন স্যার Thomas Brock. এটি ১৯১১ সালে George V  এবং Wilhelm II of Germany (রানী ভিক্টোরিয়ার গ্র্যান্ড সান) কে উৎসর্গ করে নির্মাণ করা হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে দুর্লভ মার্বেল পাথর আর তম্র ব্যাবহার করা হয়েছিল। তবে অনেক পর্যটক উপরের মেটালিক ভাস্কর্যটিকে স্বর্ণ মনে করলেও এটি তামার তৈরি। এছাড়া ভাস্কর্যটির পাশে বেশ সুন্দর একটি ফুয়ারা আর বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য নিয়েই মূল মেমোরিয়ালটি নির্মিত।  এদের মধ্যে রানী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি ছাড়াও Angel of Justice,  Angel of Truth, Charity অন্যতম।

বাকিংহাম প্যালেসের সামনে আমি   

বাকিংহাম প্যালেসের ভুল ভবন    

এখান থেকে মূল রাজবাড়ীটা দেখা যায় ভাল করে। এখানে গার্ডদের নিয়ে মজা করতে দেখলাম অনেক পর্যটকদের। এই গার্ড গুলো একদম নড়াচড়া করে না। মানে পাথরের মূর্তির মত করে দাঁড়িয়ে থাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তাই এদেরকে বিরক্ত করতে বেশ কয়েকজন পর্যটক মজা পাচ্ছিলেন। কেউ কেউ কৌতুক করে হাসানুর চেষ্টা করছিলেন আবার কেউ বলছিলেন এই তাকিয়েছে তাকিয়েছে, আমার দিকে তাকিয়েছে!!

বাকিংহাম প্যালেসের গার্ড

বাকিংহাম প্যালেসের ষ্টেট ডাইনিং রুম

বাকিংহাম প্যালেসের মূল হল রুম  

গোল্ডেন ষ্টেট কোচ   

বাকিং হাম প্যালেসের ষ্টেট রুম    

জাতীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মূলত জনসাধারন এই জায়গাটিতেই অবস্থান নেয়। এখান থেকে রাজবাড়ীর বেলকনি দেখা যায়। যেখানে রাজপরিবারের সবাই দাঁড়িয়ে আগত জনসাধারনের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। রাজপরিবারের সর্বশেষ বিয়েতে এখানেই বর কনে (উইলিয়াম এবং কেটি) পাবলিক কিস করেছিলেন।

বাকিংহাম প্যালেসের বেলকনিতে রাজপরিবারের সবাই 

ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, ১৭০৫ সালে নির্মিত এই ভবনটি শুরুর দিকে বাকিংহাম হাউজ নামে পরিচিত ছিল এবং প্রায় ১৫০ বছর ব্যাক্তি মালিকানাধীন থাকা এই ভবনটি বিলেতের রাজ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে আসে রাজা জর্জ তৃতীয় এর সময়ে। তবে রাজা জর্জ তৃতীয় এর স্ত্রী Queen Charlotte এর বসবাসের জন্যে ব্যাবরিত হওয়ার পর থেকে ভবনটি কুইন হাউজ নামে পরিচিত হতে থাকে। পরে রানী ভিক্টোরিয়া যখন ক্ষমতায় আসেন তখন থেকেই তিনি এটি অফিসিয়াল রাজ বাড়ি হিসাবে ব্যাবহার করা শুরু করেন। মূলত এই সময় থেকেই ভবনটি বাকিং হাম প্যালেস নামে পরিচিত হতে থাকে সবার কাছে। রাজবাড়িটিতে মোট কক্ষের সংখ্যা ৭৭৫ টি। যার মধ্যে ১৯ টি ষ্টেট রুম, ৫২ টি রয়েল এবং অতিতি রুম, ১৮৮ টি স্টাফ বেড রুম, ৯২ টি অফিস এবং ৭৮ টি বাথরুম রয়েছে।

 

০ Likes ২৬ Comments ০ Share ১৬২২ Views

Comments (26)

  • - তাহমিদুর রহমান

    - সালাহ্‌ আদ-দীন

     সুন্দর ছবি। আশা করব আরও পোষ্ট পাচ্ছি এরকম। সেই সাথে এই পোস্টের জন্যে ধন্যবাদ।

     

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      ছবি বদলে দেয়া হয়েছে। তাড়াহুড়া করে কয়েকটা ছবি পোস্ট করেই সরে পরেছিলাম। ছবি বদলে দেয়া হয়েছে। আশা করি, আপনাদের কাছে এইসব ভালো লাগবে। ধন্যবাদ। 

    - রুদ্র আমিন

    শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      দেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

    Load more comments...