Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

বিলেতের পথে পথেঃ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে একদিন

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সামনে আমি

বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তা করছিলাম ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যাওয়ার জন্যে কিন্ত সময় আর সুযোগ কই। অতঃপর সেই ১২ই জুলাই ২০১১সাল। কজে day off. কাজেই সিদ্বান্ত নিলাম আজই যাচ্ছি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার ব্যাগ গোছালাম। প্রতিদিন যখন ব্যাগ গুছাই মায়ের কথা মনে পড়ে। দেশে থাকতে কোথাও যাওয়ার সময় মা-ই এগুলো করে দিতেন। একবার চিটাগং যাব। গিয়ে দেখি মা ব্যাগে সব কিছু ডুকিয়ে দিয়েছেন। লোশনথেকে শুরু করে যা যা লাগে সব। কোথাও যাওয়ার সময় ব্যাংক কার্ড, রুমের চাবি, টিকেট, ম্যাপ, ক্যামেরা, আমার স্মার্ট ফোন আর আই-প্যাড ব্যাগে আছে কিনা আলাদা করে দেখে নেই। কোথাও যাওয়ার সময় এগুলো আমার লাগবেই।স্মার্ট ফোনটা সাথে নেই কারন কোথাও কোনকিছু খুঁজে না পেলে এটাই আমাকে সবার আগে সাহায্য করে আর আই-প্যাড থাকলে ভ্রমণ গাইড হিসাবে এর কোন জুড়ি নেই।ঘড়ির কাঁটা তখন ৮:৩০। আর দেরি করা যাবেনা। সোজা ছুটলাম Hove railway station-এর দিকে। এখান থেকে southern railway-এর Gatwick express-এর ট্রেনে সোজা গন্তব্য Victoria railway station. ট্রেনটা তার এক মিনিট হাতে রেখেই টেমাস নদী পার হয়ে ১৪ নম্বর প্লাট ফরমে দাঁড়াল। আমি ইচ্ছে করলে লন্ডন ব্রিজ স্টেশনেও যেতে পারতাম তবে এখানে আসার সবচে বেশি সুবিধা এখান থেকে পাতাল ট্রেনে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দূরত্ব আনেক কম। তবে এখানে ভিড় একটু বেশি হয়। কারন এখানে ন্যাশনাল, ইন্টার ন্যাশনাল বাস স্টেশন, পাতাল স্টেশন, Gatwick এয়ার পোর্টের যাত্রী, সবাই এই স্টেশন ব্যাবহার করে।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ইজিপ্সিয়ান গ্যালারির একাংশ

পিরামড থেকে নিয়ে আসা মমি রাখার কফিন

কফিন থেকে বের করে রাখা একটি মমি (পুরুষ)

বিশেষ ভাবে রাখা একজন মহিলার মমি

ট্রেন থেকে নেমেই ধাক্কা খেলাম একজনের সাথে। বেশ জোরে বলা যায়। মেয়েটির হাতে থাকা ব্যাগ ছিঁড়ে স্টেশনের ফ্লোরে পড়ে গেল। ব্যাগটা কোন রকম হাতে নিয়েই আবার দৌড় দিল মেয়েটি। ফাঁক দিয়ে শুধু সরি শব্দটা কানে বাজল। এই ফাঁক দিয়ে একটা গল্প বলে ফেলি। তখন আমি লন্ডনে প্রথম। বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ করে দেখলাম স্যুট টাই পরা সবাই হাতে কফি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। ভাবলাম কাহিনী কি? পরে আবিষ্কার করলাম সবাই বাস ধরার জন্যে দৌড়াচ্ছে! এখানকার মানুষ সময় বাঁচানোর জন্যে কত কিছু করে না দেখলে কল্পনাও করতে পারবেন না। এখানকার আরেকটা ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগে সেটা হল বাসে বা ট্রেনে বসেই মেয়েরা রূপ চর্চা করে। এখানেও সময়টাই আসল। আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাই বলি। তখন আমি এক সাথে দুটো জব করতাম। দুই জবে দুই ধরনের ইউনি ফর্ম। তো দেখা যেত ট্রেনের বাথরুমে ডুকে চেঞ্জ করে নিতাম। থাক সেই গল্প। সেটা আরেক পর্বে হবে। মূল গল্পে আসি।

নম্রুদ যুগের নিদর্শন রাখা হয়েছে এই গ্যালারীতে  

এখান থেকে পাতাল ট্রেনে করে টটেনহ্যাম কোর্টে গিয়ে নামলাম। যেহেতুDay travel card করা ছিল তাই ইচ্ছা করলে এখান থেকে বাসে করে যেতে পারতাম কিন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম হেটে যাব। হেটে মোটে ৫মিনিট সময় লাগলো।মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্যে কোন ফিঃ দিতে হয়না। মিউজিয়ামের সামনের আঙিনায় অবাক বিস্ময়ে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। উচু উচু খিলানের বিশাল এক দালান। হাজার দেশের হাজার টুরিস্ট। মুটামুটি কিচির মিচির অবস্থা। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লন্ডনে ব্রিটিশ মানুষদের সংখ্যা খুব কম বলা যায়। যারা আছে তারা বেশির ভাগই আমাদের মত ভিনদেশি। বিশেষ করে বাসে উঠলে ভাল লক্ষ্য করা যায় ব্যাপারটা। একেক মানুষ একেক ভাষায় কথা বলে। মনে হয় পাখির কিচির মিচির শুনছি। এজন্যেই লন্ডনকে পৃথিবীর অন্যতম বড় কস্মপলিটন সিটি বলা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু একা তাই আমার ছবি তুলার জন্যে এক ইতালিয়ান টুরিস্ট কে আনুরোধ কারতে হল।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম সম্পর্কে এখানে হালকা তথ্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। ব্রিটিশ যাদুঘরটি Sir Hans Sloane(১৬৬০-১৭৫৩) ১৭৫৩ সালেপ্রতিষ্ঠিত করেন, আর এটি জনসাধারনের জন্যে খুলে দেয়া হয় ১৭৫৯ সালে। তাঁর সংগ্রহের মধ্যে প্রায় ৭১ হাজার অবজেক্ট ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার প্রকাশিত বই, ৭ হাজার নোট (হাতে লেখা বই), ৩৭৭ টি ভিবিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন ধরনের চিত্র শিল্পও ছিল। অবশ্য পরে ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে King Gorge III এর সময়ে এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হয়। মজার ব্যাপার হল আজকের ব্রিটিশ লাইব্রেরী আর ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম এই ব্রিটিশ মিউজিয়ামেরই অংশ ছিল যা এখন স্বতন্ত্র দালানে পরিচালিত হচ্ছে।

মিউজিয়ামে সরক্ষিত কিছু দুর্লভ এবং হাতে লেখা নোট

মিউজিয়ামে সরক্ষিত কিছু দুর্লভ এবং হাতে লেখা নোট

আমি এখানকার অনেক গুলো মিউজিয়ামে গিয়েছি তবে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মানব সভ্যতার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য যেভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে তা আমাকে সত্যি খুব অবাক করেছে। পৃথিবীর সব গুলো কন্টিনেন্ট থেকেই এখানে কিছু না কিছু অবজেক্ট রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পৃথিবী বিখ্যাত লন্ডনের অন্যতম আইকন এই মিউজিয়ামে প্রায় ৮ মিলিয়ন অবজেক্ট স্থান পেয়েছে। 

মিসরীয় সভ্যতার প্রতি আমার গোপন একটা টান আছে, তাই প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিলাম মিসরীয় কালেকশন গুলো আগে দেখার। চার নম্বর রুমে রাখা হয়েছে মিসরীয় সভ্যতার কালেকশন গুলো। পাতরের তৈরি মূর্তি আর পিরামিড থেকে নিয়ে আসা মমি গুলো ফেরাউন আর নম্রুদের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল বারবার। ফেরাউন যুগের অনেক লাশ আর লাশ রাখার বক্স গুলো তাজ্জব বানিয়ে দিলো মুহূর্তেই। আগের মানুষ এভাবেই লাশ সৎকার করত! বিশেষ বক্সে রাখা আর বিশেষ কাপড় দিয়ে পেঁচানো লাশ গুলো এখনো অবিকল একি রকম রয়ে গেছে। আজব এক ব্যাপার! কাচের ভিতরে একটা লাশ রাখা হয়েছে উন্মক্ত করে। শরীরটা একদম লোহার মত আর মাথার চুল গুলো এখনও একি রকম থেকে গেছে! ফেরাউন!! এ গ্যালারিতে প্রায় ১৪০ টির মত মমি আর কফিন রাখা হয়েছে যা এ মিউজিয়ামের প্রধান আকর্ষণ। অনেকেই হয়ত জানেন না যে মিসরীয়রা শুধু মানুষের মমি ই তৈরি করত না বরং মৃত প্রানিদেরও মমি করে রাখত! আএসব মমিদের মধ্যে আছে পাখি, বিড়াল, ঘোড়া ইত্যাদি। এছাড়া মৃত দেহের সাথে পাওয়া পাত্র, যুদ্ধের সরঞ্জামও রাখা হয়েছে এই গ্যালারিতে।

ফেরাউনদের মমি

কফিন থেকে খুলে রাখা হাজার হাজর বছরের পুরাতন একটি লাশ 

এই লাশটি দেখলে মমি ফিকেইশনের ব্যাপারটা সম্পর্কে মুটামুটি ধারনা পাওয়া যায়

একেবারেই খুলে রাখা একজন ফেরাউন

এই লাশটি মমি করা ছিলনা। তবে একদম কাছ থেকে দেখে বেশ অবাক হয়েছি। মাথার চুলটা পর্যন্ত অবিকল রয়ে গেছে। এটি যেভাবে আবিষ্কার করা হয়েছিল হুবহু সে ভাবেই রেখে দেয়া হয়েছে

পিরামিড থেকে নিয়ে আসা একজন ফেরাউনের কঙ্কাল

বিভিন্ন প্রাণীদের মমি

ফেরাউন্দের ব্যাবরিত জুতা

এই গ্যালারিতে পরিচয় হল স্প্যানিশ একজনের সাথে। তিনি মন দিয়ে বসে একটা মমির স্কেচ করছিলেন। এখানকার বেশির ভাগ মিউজিয়ামে আমি এ ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে ন্যাশনাল গ্যালারি এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বেশির ভাগ পর্যটক আসেন স্কেচ করার জন্যে।এবার গেলাম ১৭নম্বর রুমে। আমার দ্বিতীয় আকর্ষণ গ্রীস আর রোমের কালেকশন গুলো দেখা। এ রুমে গ্রীক ব্রোঞ্জ যুগ (প্রায় ৩২০০ খ্রঃ পূর্ব)থেকে শুরুকরে আধুনিক গ্রিসের হাজার হাজার অবজেক্ট প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে রোমানদের সময়েরঅনেক পাতরের মূর্তি রাখারপাশাপাশি Nereid monument-ও রাখা হয়েছে যা ইতিহাস পিপাসীদের পিপাসা মিটায়। এছাড়া The Parthenon Gallery (Elgin Marbles)-ও অসাধারণ লেগেছে। বলতে পারেন বেশ টাস্কি খেয়েছি এই ভেবে যে তত কালীন সময়ে মানুষ এত নিখুঁত ভাবে এসব তৈরি করল কিভাবে? এখানে রোমান যুদ্ধাদের ব্যাবরিত ভিবিন্ন ধরনের যুদ্ধের সরঞ্জাম অনেকেরই নজর কড়বে।

Nereid monument এর সামনে আমি 

ব্যাবরিত সমরাস্র

The Parthenon Gallery (Elgin Marbles)

৯ ও ১০নম্বর রুমে মধ্য প্রাচ্যের কালেকশন গুলো রাখা হয়েছে। এখানে মেশোপ্টোমীও যুগের প্রায় ৩৩০০০ কালেকশন আছে। এর মধ্যে Assyrian, Babylonian and Sumerian কালেকশন গুলো এবং নমরুদ যুগের winged human headed statue উল্লেখ যোগ্য। এছাড়া ১০নম্বর রুমে রাখা নম্রুদ যুগের পাতরের bas-reliefs অনেকের নজর কাড়বে।যেহেতু drawing আর print-এ আমার তেমন আগ্রহ নাই তাই এ রুম গুলতে শুধু চুখ ভুলালাম বললেই চলে। এ ডিপার্টমেন্টে প্রায় ৫০০০০ ড্রয়িং আর দুই মিলিয়ন প্রিন্ট রাখা হয়েছে। বিশেষ করে Leonardo da Vinci - Profile of a warrior in helmet (c. 1472), Michelangelo - Studies of a reclining male nude: Adam in the fresco 'The Creation of Man' on the vault of the Sistine Chapel(c. 1511), Raphael - Study of a Sibyl(recto) (c. 1512-12), Titian - Drowning of the Pharaoh's Host in the Red Sea (1515-17), Rembrandt - The Lamentation at the Foot of the Cross (1634-35), Rubens - Sir Théodore de Mayerne, a portrait drawing (c. 1630) চিত্র শিল্প গুলো উল্লেখ যুগ্য। এছাড়া এখানেই ১৮৭৪ সাল থেকে প্রদর্শিত হয়ে আসছে পৃথিবী বিখ্যাত Rosetta Stone. সেই সাথে এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা মহাদেশের কালেকশন গুলোও ভাললেগেছে।

 

মিউজিয়ামে সরক্ষিত হাতে লেখা মহা গ্রন্থ আল কোরআন

ইসলামী গ্যালার রাখা মসজিদে নববী'র মডেল

ইসলামী গ্যালারীতে রাখা মসজিদে হারা্মের মডেল 

ইসলামিক বিভাগের বিভিন্ন ধরনের কোরআন শরীফের কালেকশন গুলো ভাল লেগেছে। সেই সাথে আলাদা করে ঘড়ির কালেকশনের কথা বলা আবশ্যক! সেই বালির তৈরি ঘড়ি থেকে শুরু করে অনেক আধুনিক ঘড়ি রাখা হয়েছে এই গ্যালারিতে। মিউজিয়ামের ভেতরে বেশ বড় একটি শপ আছে। আমি এখন থেকে একটা খুব সুন্দর চাবির রিং কিনলাম।

 

বুদ্ধ ধর্মের গ্যালারির একাংশ

মিউজিয়ামে রাখা দুর্লভ কৃষ্ণ মূর্তি

কোরিয়ান গ্যালারির একাংশ

জাপানি গ্যালারীতে রাখা মাষ্টার সামুরাই ব্যাবরিত বর্ম এবং অন্যান্য জিনিস পত্র

জাপানি গ্যালারির একটি অবজেক্ট

আফ্রিকান আদিবাসীদের তৈরি হস্ত শিল্প

মার্বেল পাথরের একটি ভাস্কর্য

স্বর্ণ মুদ্রা

আফ্রিকান গ্যালারির একটি অংশ

এগুলো চিনতে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে না!

এগুলো চিনতে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে না!

পাথরের মূর্তি! 

আরও কয়েকটি অবজেক্ট 

ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি বিকেল ৩:৪০।আশ্চর্য হলাম সময় গেল কোন দিকে? এবার মনে হল কিছুই তো খাইনি সারা দিন! যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরতে হবে Brighton-এ।ক্লান্ত ছিলাম ঠিকই কিন্তু মন একবারের জন্যও চাইছিলনা ফিরে আসি। ধিরে ধিরে ফিরে এলাম, মনে নেই কত বার পেচনে ফিরে তাকিয়েছি। জানিনা আবার কবে দেখা হবে! ট্রেন চলল Brighton-এর দিকে পেছনে ফেলে সৃতির পাহাড়।

 

 

২ Likes ১২ Comments ০ Share ৩৬৪৫ Views

Comments (12)

  • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    Lye fv‡jv jvMj

    - আল ইমরান

    রাজাকারের মৃত্যু দন্ড ফাঁসির মাধ্যমে দেয়া আমি সমর্থন করি না। ওদের ক্ষুধার্ত কুমির বা হাঙ্গর এর মুখে ফেলে মৃত্যু কার্যকর করা হোক।

    - মিশু মিলন

    Load more comments...