Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

বিলেতের পথে পথেঃ টাওয়ার ব্রিজ

লন্ডনে যে কয়টি জায়গায় আমি বার বার ফিরে গিয়েছি তার মধ্যে টাওয়ার ব্রিজ অন্যতম। যা লন্ডনের টেমস নদীর উপরে অবস্তিত। ছোট বেলা থেকে যে কয়টি যায়গায় ভ্রমনের প্রতি আমার আসম্বভ রকমের টান ছিল তার মধ্যে সমুদ্র দেখার পরেই ছিল এই টাওয়ার ব্রিজ! আল্লাহ্‌ আমার সকল ইচ্ছাই পুরন করেছেন। Brighton-এ আমি যেখানে থাকথাম তা সমুদ্রের একদম পাড়েই ছিল। জানালা দিয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখা যেত, আর যে shop-এ কাজ করতাম তা একদম সমুদ্র সৈকতে ছিল। তার গল্প না হয় আরেক দিন বলা যাবে। আজ আপনাদেরকে টাওয়ার ব্রিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।



আমি লন্ডনে আসার পরপরই ১৪ই এপ্রিল ২০১০ এ প্রথমে টাওয়ার ব্রিজে যাই। প্রথম যেদিন টাওয়ার ব্রিজে যাই সেদিন হোয়াইট চ্যাপল থেকে হেটে হেটে চলে আসি। মনে আছে আইডিয়া ষ্টোরের কম্পিউটার ল্যাব থেকে ম্যাপ সংগ্রহ করে হাঠা শুরু করি। হেঠে আসতে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। পরে অবশ্য এখানে যতবার এসেছি পাতাল রেলেই আসা হয়েছে।

আপনারা যারা টাওয়ার ব্রিজে আসতে চান তাদের জন্যে বলছি, লন্ডনের যে কোন জায়গা থেকে এখানে আসার সবচেয়ে সুবিদা হল পাতাল রেলে আসা। মনে রাখবেন আপনাকে নামতে হবে টাওয়ার হিল পাতাল স্টেশনে। এ স্টেশনে district line আর circle line থামে। টাওয়ার হিল স্টেশনে নেমেই সামনে যে বড় দালানটি দেখবেন তা হল টাওয়ার অব লন্ডন। এটিতে প্রবেশ করতে হলে ফিঃ দিতে হয়। মজার ব্যাপার হল ভারত থেকে আনা কুহিনুর হীরাটি এখনেই রাখা হয়েছে। টাওয়ার আব লন্ডন নিয়ে অন্য পর্বে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। স্টেশন থেকে বের হয়ে হাতের বামে আথবা ডানে গিয়ে সোজা সামনে হাঁটলেই টাওয়ার ব্রিজ!

আমার মনে আছে আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমাদের ইংরেজি বিষয়ের স্যার ব্রিজটির কথা বলেছিলেন। স্যার বলেছিলেন এ ব্রিজটা নাকি জাহাজ আসলে দুদিক থেকে খুলে যায়। আশ্চর্য মনে হয়ে ছিল। সেই থেকে ব্রিজটা দেখার জন্যে এত ঠান।

  এ ব্রিজটি লন্ডনের আইকন গুলোর মধ্যে একটি। এটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল ১৮৮৬ সালে এবং এটি জনসাধারনের জন্যে খুলে দেওয়া হয় ১৮৯৪ সালের ৩০সে জুন। এর নামকরন করা হয়েছে নিকঠে অবস্তিত টাওয়ার অব লন্ডনের নাম অনুসারে।

তবে এ ব্রিজটি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় মুলতঃ আরও আগে ১৮৭৬ সালে। পরে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে নকশা আহবান করলে ৫০ টিরও বেশি নকশা জমা পড়ে। যা থেকে বর্তমান ব্রিজটির নকসা নির্বাচন করা হয়। আপনারা যারা টাওয়ার ব্রিজ আক্সিবিসনে যাবেন তাদের জন্যে আজও নকসা গুলো যত্ন করে প্রদর্শন করা হয়েছে।

এটি নির্মাণে মোট ৪৩২ জন শ্রমিক কাজ করেন। যা তৈরিতে মোট £১১৮৪০০০ খরচ হয় এবং যার বর্তমান দর ১০০ মিলিওন পাউন্ডকে ছাড়িয়ে যাবে।

ব্রিজটি ২৪৪ মিটার লম্বা এবং এর প্রতিটি টাওয়ারের উচ্চতা ২১৩ মিটার। পুর্বে ব্রিজটি জাহাজকে পাস দেয়ার জন্যে বন্ধ করা হলে পতচারিদের জন্যে ব্রিজের উপরের রাস্তা গুলো খুলে দেয়া হত এবং পতচারিরা টাওয়ারের লিফট ব্যাবহার করে উপরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারতেন যা বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যারা টাওয়ার ব্রিজের আক্সিবিশনে আসেন কেবল তাদেরকে উপরে উঠার আনুমতি দেয়া হয়। এখানে একটা কথা বলে নেয়া ভাল, টাওয়ার ব্রিজের আক্সিবিশন হচ্ছে যারা টাওয়ার ব্রিজ সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহি তাদের জন্যে। একজন গাইড আপনাকে পুরো ব্রিজটি ঘুরে দেখতে গাইড করবেন এবং এতে আপনি টাওয়ারের ভিতরে প্রবেশের পাশাপাশি ইঞ্জিন রুম থেকে শুরু করে প্রতিটি ছোটখাট বিষয় গাইডের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। আবশ্য এ জন্যে আপনাকে আগেই অন লাইন থেকে টিকেট করে নিতে হবে। ব্রিজের পাশ থেকেও টিকেট করা যায় তবে দাম একটু বেশি পড়বে।    
মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকে ভুল করে একে লন্ডন ব্রিজ হিসাবে চিহ্নিত করেন যা আসলে টিক নয়। মুলতঃ লন্ডন ব্রিজ হচ্ছে নদীর স্রুতের উপরের দিকের ব্রিজ যা পার্লামেন্ট হাউজের পাশে একই নদীতে অবস্তিত। নাম বিড়ম্বনার কারনে ১৯৬৮ সালে Robert McCulloch নামের এক ভদ্রলোক এ ব্রিজকে কিনতে গিয়ে ভুল করে লন্ডন ব্রিজ করে কিনে নেন। পরে অবশ্য তিনি তা অস্বীকার করেন।


এ ব্রিজটির আসল সৌন্দর্য হচ্ছে ব্রিজটি যখন খুলা হয়। যদিও ব্রিজটি বছরে প্রায় ১০০০ বারেরও বেশি খোলা হয়, তার পরেও এর বেশির ভাগ পর্যটক তা মিস করেন। আপনারা যারা এটি মিস করতে চাননা তাদের জন্যে পরামর্শ থাকবে এখানে আসার আগে অবশ্যই এখানে দেয়া নিঙ্কে গিয়ে চেক করে নেবেন ব্রিজ খোলার সময় সূচি। এখানে ক্লিক করুন 


রাতে যেহেতু ব্রিজটিতে লাইটিং করা হয় সেহেতু রাতে এটি আরও অসাধারন লাগে। আপনাদের যাদের হাতে সময় থাকবে তারা রাতেও এর সুন্দরয্য দেখতে ভুল করবেন না।

  ব্রিজটির পাশে মৎস্যকন্যার সাথে ডলফিনের একটি মূর্তি রাখা আছে যা আসলে একটি ফুয়ারা। ব্রিজটি দেখার পর হাতে সময় থাকলে ব্রিজের পাশের টাওয়ার পেয়ার থেকে বোটে ঘুরে আসতে পারেন নদী পথে ওয়েস্ট মিনিস্টার পেয়ার বা অন্য কোন পেয়ার থেকে। আমাদের দেশ নদীমাতৃক হওয়ার পরেও যেখানে আমরা নদী পথ ব্যাবহার করতে পারছিনা ভাল ভাবে সেখানে লন্ডনের মতো উন্নত শহরে নদীপথের ব্যাবহার সত্যি আমাকে অবাক করেছে।




এদের রিভার বোট নামে এক ধরনের চাকা যুক্ত নৌকা আছে যা একই সাথে নদী এবং সড়ক উভয় পথে চলতে পারে। ব্রিজটির পাশে ২য় বিশ্ব যুদ্ধে ব্যাবরিত একটি জাহাজ রাখা হয়েছে যা আসলে একটি জাদুঘর। সময় থাকলে এখানেও একটি টু মেরে যেতে পারেন।



এ ব্রিজ আর সিলেটের কীণ ব্রিজের সাথে একটা মিল হল উভয় ব্রিজেই জালালি কবুতরের উপস্তিতি। এছাড়া সিলেটের ব্রিজের পাশের আসাধারন ফুয়ারা, আলিয়ামজাদের ঘড়ি, আধুনিক সার্কিট হাউজ, নদীর পাশে হাটার জন্যে তৈরি রাস্তা অনেক টা এ ব্রিজের মতো। আপনারা যারা এখানে আসতে পারবেননা তাদেরকে আনুরোধ করব সময় সুযোগ করে একদিন সিলেটের কীণ ব্রিজ থেকে ঘুরে আসার। 

০ Likes ১৬ Comments ০ Share ৯৯৭ Views