Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিরহ যাতনা (প্রতিযোগিতা- ১ম পর্ব,ক্যাটাগরি ২)

বিরহ যাতনা

মোঃ মালেক জোমাদ্দার

সকাল  সাড়ে সাতটা । ক্রিং ক্রিং ফোন বেজে উঠলো আমার মোবাইল ফোনে। হ্যালো বলতেই লাইটি কেটে গেল । কল ব্যাক করতেই  সুরেলা মেয়েলী কণ্ঠে বলেছে –“দুঃখিত আপনার একাউন্টে যতেষ্ট পরিমাণ ব্যালেন্স নেই  দয়া করে  রিসার্চ  করুন”অধিক রাত জেগে জেগে ইনবক্সে কথা হয়েছিল মুনিরের সাথে । কিন্তু এত সকালে ফোন কেন ? আজ ইচ্ছে ছিল ক্লাসে যাবনা,যাব ওর সাথে দেখা করতে আর ... কিন্তু ফ্লেক্সিলোড করতে সকালেই বাইরে যেতে হবে। বাবাকে বললে রেগে যাবে কারণ তিন দিন পূর্বে তিনশত টাকা লোড করে দিয়েছেন। আজকে আমার আর ওর একটা বিশেষ ঘটনা ঘটবে । সারা রাত পরিকল্পনা করেছি। মনে অনেক ভয় কাজ করছে । কিভাবে একাজ করবো তার পরও করতেই হবে তা না হলে যে ওর সাথে আমার আর চিরকালের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে।  ক্লাসের কথা বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বো মনে মনে ভাবছি আর  লিমার জন্ম দিনের কথা বলে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিবো আমার জমানো কিছু টাকাও সাথে নিয়েছি । বন্ধু বা বান্ধবির জন্মদিনের কথা বললে বাবা সাধারণত টাকা দিতে কার্পণ্য করেনা। বাবা নাস্তার টেবিলে চা পান করছে আর পেপার পড়ছে। তারও বেশ তাড়া আছে বুঝা যাচ্ছে। দেশে অঘোষিত হরতাল চলছে । কোন যান বাহন চলছে না । একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ আছে তাই কেউ কেউ বলাবলি করছে এটা সরকারে হরতাল । যাই হোক বাবার অফিসে সময় মত পৌঁছতে হবে । আমি রেডি হচ্ছি দেখে বাবা জিজ্ঞেস করলো – এতো সকালে তুই কোথায় যাবি ? আর তোর ক্লাস তো দশটায় আর আজ তোর বের হতে হবেনা বিকেলে ওরা আসছে।

-ওরা কারা বাবা ?- তোর মার কাছ থেকে জেনে নে ? মিনু ওকে কিছু বলনি(বাবা মাকে বলছে আর তাড়াহুড়ো করছে)  –না, বলে মা রান্না ঘরে চলে গেলেন। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।  

-বাবা আমি একটু আগে আগে যাব আমার একবান্ধবীর জন্মদিন তাই ওর জন্য একটা গিফট কিনবো, বাবা তোমার কাছে কিছু টাকা হবে ?

-না, আর তোর কোন বান্ধবীর জন্মদিন ? রাতেতো কিছু বলিসনি । আজ তোর বের হতে হবেনা। দেশের অবস্থা ভাল না । আর কারো জন্মদিন থাকলে তাকে সব সময় গিফট দিতে হবে ? বাবা এই বলে অফিসে চলে গেলেন। আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ; মা আমার পাশে এসে আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো । আমি আর মা বুঝে উঠতে পারছিলাম না বাবা কেন এমন করলো। আমি রুমে গিয়ে অনেক ক্ষণ কাঁদলাম। মনে মনে আজ বেশ ভয় হচ্ছে  কারণ আজ আমি আর ও পালিয়ে ...। বাবার কথামত বের হলাম না। কিন্তু মন ছটফট করছে। মুনির একাএকা আমার শাড়ী কিনতে পারবে তো ?  মায়ের মোবাইল থেকে ওকে ফোন করবো ভাবছি আবার চিন্তা করছি মায়ের ফোনে ওর নাম্বার থেকে যাবে, মা বুঝে ফেলবে। অনেক কায়দা করে গলির দোকানে গিয়ে মোবাইল রিসার্চ করে এলাম । রুমে প্রবেশ করে ফোন করলাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ । ভয় একটু বেড়েই গেল । তা হলে ওকি আজ আসবে না ? বিয়ে হবে না ? একের পর এক ফোন করে চলছি কিন্তু সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না দয়া করে একটু পর আবার করুন বলেই যাচ্ছে অপ্রান্ত থেকে । কোনদিন সন্ধ্যার খবর দেখিনা আজ কোন কাজ ভালো গালছে না তাই একটি চ্যানেলে থেমে গেলাম খবর দেখছি একটি গাড়িতে পেট্রোল বোমায় তিনজন নিহত  একজন গুরুতর আহত অফিস থেকে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা। হঠাৎ আমার মনটা যেন কেন কেঁদে উঠলো ওদের কথা মনে করে আবার ফোন দিলাম মুনিরকে কিন্তু বন্ধ । একটু পরেই আমার মোবাইলে ফোন -হ্যালো বলেতেই অপর প্রান্ত থেকে – আপনি কি অদিতি ?

 –জ্বী, আপনি কে ? – আপনি আমাকে চিনবেন না। -তো আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে ?

– মুনির সাহেবে মোবাইলের লাস্ট কল থেকে। -মুনিরের কি হয়েছে ? ও কোথায় ? 

– না তেমন কিছু হয়নি, তিনি এখন বার্ন ইউনিটে আছে, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। আপনি কি এখন আসতে পারবেন ?

-না। হ্যাঁ , না করে আমি ফোনটা কেটে দিলাম । কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে গিয়ে মুনিরের কথা বলেতেই মা হতবাক ! মেয়ে বলে কি ! কোনদিন বুঝতেই দেয়নি কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে । মা আমাকে কাছে নিয়ে মুনির সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিলো । আমি সব বলেদিলাম । আমি তখন ক্লাস নবম শেণিতে পড়ছি। আমারে উপর তলার ভাড়াটিয়ার দুই মেয়ে মিনা আর রিনা। ওদের এক আত্মীয় । একবার পরিচয় হয়েছিল আর আমার নামটা সে জেনেছিল। আমার ফেসবুক আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল আর আমি ও ফ্রেন্ডলিষ্টে ঠাঁই দিয়েচিলাম । ধীরে ধীরে সে ঠাঁই নেয় আমার মনের গহীনে।  এক সাগর প্রেমে আমরা দিনে রাতে সাঁতার কাটছিলাম ওর মা বাবা কেউ ঢাকায় বসবাস করে না। ও শুধু একা মেসে থাকে। আমাদের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। আমি বাবাকে বলার সাহস পাইনি।আজ মাকে বললাম, বাবা জেনে যাবে এই ভয়ে খুব করে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু মা বাবাকে রাতেই বলে দিল। বাবা মুনিরের কথা শুনে আমাকে শান্তনা দিল পরের দিন সকালে অফিসে যাবার আগে আমাকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে গিয়েছিল ঠিকই, আমি মুনিরকে চিনতে পারছিলাম না, দেখলাম সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি কঙ্কাল। মনের ভিতের যে কী  ব্যাথা অনুভূত হল যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা। বাবা আমাকে একটি রিক্সায় বাসায় পাঠিয়ে দিল। মন মানে না আমি রিক্সায় কতদূর গিয়ে আবার ফিরে এলাম হাসপাতালে। একা একা ওর শরীরে হাত রাখলাম। নয়ন গড়িয়ে জল ওড়না ভিঁজে গেল। নার্স জিজ্ঞেস করছিল আমি ওর কি হই । আমি নির্বাক ! শুধু বলছিলাম –“হে খোদা ওর পাশে আজ কেউ নেই আমি থেকেও বলতে পারছিলা আমি ওর কে” । তুমি ওদের বিচার করো । ডিউটি ডাক্তার আমাকে ওর পাশে দেখে বললেন- যাক আপনি আসছেন ভালো হয়েছে। ওনার ৭০% শরীর বার্ন হয়েছে । আজকে রাত গেলে বুঝা যাবে বাঁচানো যাবে কিনা । সাধারণত এসব রোগী বাঁচানো মুশকিল। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। ডাক্তার আমাকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে – আমি খুবই দুঃখিত । এভাবে সরাসরি কথা ডাকারদের বলা ঠিক না তার পর ও বলতে হয়। আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আপনি সদ্য বিবাহিত। আপনার শ্বশুর শাশুড়ি কেউ আসেনি ? আমি মনে মনে ভাবছি ডাক্তারের গালে একটা শক্ত করে চড় কষি। চুপ থেকে আমি ওর বেডের পাশে এসে বসেছি। কেউ এক ভি আই পি এসেছে। টিভি  ক্যামেরা সাথে। ভিডিও করছে। আমি দ্রুতই দূরে সরে গেলাম । নার্স বলছে – স্যার এ রোগী আজ রাতের বেশি বাঁচবে না ; মন্ত্রী বেড়িয়ে গেলেন। রুম ও ফাঁকা হয়ে গেলে আমি আবার পাশে গিয়ে বসলাম । নার্স – আপনি কোথায় ছিলেন ?  মন্ত্রী এসছিল। আমি রাগে ক্ষোভে বললাম – আপনরা কি মানুষ ? মানুষ মরে যাচ্ছে আর আপনারা টিভি ক্যামার জন্য পাগল । নিজেকে নিজে শ্বান্ত করে চুপ হয়ে বসে থাকলাম বাবা আমার  মাকে ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিল । তাই ফোন করলেন –তুই কোথায় ? তোর বাবা কখন তোকে রিক্সায় তুলে দিয়েছে সে অফিসে পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়েছে তাও এক ঘনটা আগে। -মা আমি আসছি। চিন্তা করো না। আমি আসছি বলে ফোনটা কেটে দিলাম। মুনির একটি কথা ও বলেছে নাকিছুই খেতে পারছেনা। বাঁচার আশা ছেড়ে দিলাম কিন্তু ওকে কে নিয়ে যাবে ? ওকি বেওয়ারিশ লাস হয়ে যাবে ? তা হলে আমি ওর কিসের বন্ধু ।  কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই  ওর মা বাবা এসে হাজির । আমি আস্তে উঠে দাঁড়ালাম। এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ মা আবার ফোন করছে আমায় তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। মুনিরের মাকে বলে বিদায় নিবো এমন সময় মুনির চোখ মেলে আমার নাম ধরে ডাকল । আমি বিস্ময় ! একী করে সম্ভব !! আমি মহাখুশি, জীবনে এর চেয়ে বেশি খুশি কোন দিন হইনি। ওর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো পাশে একটি প্যাকেট আছে । হ্যাঁ সত্যিই একটি প্যাকেট ওটার ভিতর একটি লাল শাড়ী। এও কী সম্ভব!  যে লোক পুড়ে ছাঁই তার হাতে কিভাবে শাড়ীটি পুড়েনি, আমি শাড়িটি হাতে নিতেই ওমা বলে ওর মায়ের কোলে ঢলে পড়লো। ওর মা ওকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। সাথে সাথে নার্স এসে ওকে শুইয়ে দিলেন । হাতে পালস বোঝার উপায় নেই । নাকে হাত দিয়ে বুঝে নিল সে আর এপাড়ে নেই। চলে গেছে  না ফেরার দেশে। বিবাহের আগে বিধবা হবার অভিজ্ঞতা আমাকে আজও কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি সেই অভাগী এক বছর  আগে ও চলে গেল । আজ এই দিনটা আমি বার্ন ইউনিটে আসছিলাম । যাবার পথে হাইকোর্ট মাজারের পাশের ভিক্ষুকদের কিছু দানখ্যরাত করে ওর আত্মার শান্তির কামনা করলাম আমিএখন বিবাহিতা, স্বামীকে বলতে পারছিনা । আজ তোমাদের বলছি –কি দোষ ছিল আমার মুনিরের ? আমরা মানব সমাজে বাস করে দানব হয়ে যাই। প্রতিদিন বেঁচে থাকি অনিশ্চয়তার মাঝে। ঠিক মত পৌঁছতে পারবতো বাড়ি । সুমতি দাও ওদের, মানুষ নামের পশুদের সুবুদ্ধি দাও বিধাতা।  মানুষ রূপে জন্ম আমার, মানুষ সৃষ্টির সেরারে... সেই মানুষই মানুষ পুঁড়ে দেয়না বিবেক নাড়ারে…,  এই ভবেতে আজকে রাজা কালকে হবে ফকিররে,কোন ক্ষণেতে ছাড়তে হবে যেতে হবে  ওপাড়ে, মানুষ রূপে জন্ম আমার মানুষ সৃষ্টির সেরারে......  আজ আমার  বুকে বিরহের গান।        

মোঃ মালকে জোমাদ্দার

   (প্রতিযোগিতা- ১ম পর্ব,ক্যাটাগরি )

(এই গল্পটি আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি)

 

১ Likes ১ Comments ০ Share ৪৬২ Views