Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিবেক ও কয়েকটি খুঁচরা টাকার গল্প

প্রতিদিনই লোকটার সাথে আমার দেখা হয়। দেখি একই জায়গায় কুঁজো হয়ে বাঁ হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে ডান হাতে ভিক্ষার ছোট থালাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন রাস্তার মোড়ে বট গাছের নিচে। লোকটার বয়স আনুমানিক সত্তরের কাছাকাছি। মলিন চেহারা। একটা ময়লাযুক্ত সাদা পাঞ্জাবী গায়ে আর পরনে একটা ডোরাকাটা চেকের লুঙ্গি। তাঁকে দেখেই বলা যায় কত মাস থেকে যেন তাঁর এসব ধোয়া হয় না। বয়সের ভারে হয়তো তিনিই পড়েই যেতেন কিন্তু বাঁ হাতে ধরা লাঠিটা আছে বলেই রক্ষা।
সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে যাওয়ার পথে আমি লোকটির মুখোমুখি হই। কখনও মানিব্যাগ বের করে খুচরা টাকা থাকলে দু’চার টাকা দিয়ে দিই। খুচরা না থাকলে আবার সযতে সেটি পকেটে ঢুকিয়ে রাখি। মানিব্যাগটি পকেটে ঢুকানোর সময় লক্ষ্য করতাম সে কি অসহায় ভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত আমার দিকে। কিন্তু আমিই বা কতটুকু করতে পারি। ছোট খাট একটা চাকরী করি। মাইনে যা পাই দোকানের দেনা পরিশোধ করার পরেও দেখা যায় দোকানদাররা আরও কিছু টাকা পাওনা রয়েছে আমার কাছে। তারপরেও তো ছোট মেয়েটার পড়াশুনার খরচ, সংসারের টুকটাক খরচ তো রয়েছেই। তাই হয়তো সাধ্যমত দান-খয়রাত করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরেও চেষ্টা করি সাহায্য দেয়ার জন্য। দুঃখী মানুষ দেখলেই কেন জানি মনটা কেঁদে ওঠে। বুকের কোথায় যেন একটা ছোট আঘাত লাগে। আর সেই আঘাতে হয়তো শুধুই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।
লোকটির সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলতে গিয়েও আর বলা হয়নি। কেন বলা হয়নি সেটা বলতে পারছি না। আজ বাসা থেকে বের হবার সময় মনস্থির করে নিলাম যে, ঐ বৃদ্ধ লোকটি সাথে কথা বলব। তার বাড়ি কোথায়, ছেলে-মেয়ে আছে কিনা ইত্যাদি জিজ্ঞেস করব। ফুটপাত ধরে হাটতে থাকি আর চিন্তা করছি এসব। তিনরাস্তার মোড়ে এসে দেখি বৃদ্ধ লোকটি শুয়ে আছে। একটু খটকা লাগল যেন মনে। যাকে সব সময় দাঁড়ানো দেখি সে আজ শুয়ে কেন? কাছাকাছি এসে দেখি তাঁর বাঁ হাতে ধরে রাখা লাঠিটা পড়ে রয়েছে পাশে। মুখের উপর সকালের রোদ এসে পড়াতে একটু যেন অন্যরকম লাগছে। আমি কাছে গিয়ে জাগানোর চেষ্টা করি।
-চাচা, এই যে চাচা শুনছেন? কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। আবারও কয়েকবার ডাকি। পাশ থেকে যাবার সময় রাস্তা থেকে কেউ একজন বলল, গতরাতে লোকটার প্রচন্ড জ্বর এসেছিল। অথচ ঔষুধ কেনার মত টাকাও নাকি তার কাছে ছিল না। সারা দিন ভিক্ষা করে যা জমিয়েছিল সন্ধ্যার দিকে এক ‍যুবক এসে নাকি সেই টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। দেখেন বুড়ো মরে গেল নাকি?
মরে যাওয়ার কথাটা শুনেই আমি চমকে উঠলাম। আবারও কয়েকবার ডাকি। নাড়ী পরিক্ষা করি। দেখি যে সত্যিই তিনি মারা গেছেন।
লোকটির মুখের সামনে তার সেই ভিক্ষার ছোট থালাটি পড়ে রয়েছে, কয়েকটা খুচরা টাকাও আছে তাতে। কোন দয়ালু হৃদয় হয়তো দান করেছে। থালার দিকে তাকাতেই কেন যেন আমার মাথাটা ঘুরে গেল। মনে হল টাকাগুলো আমাকে দেখে হাসছে। উপহাস করছে তারা মানুষের বিবেককে।
-‘এইযে ভাই লোকটি তো মারা গেছে, তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করবেন না?’ একজন পথচারীর কথায় হুশ হল আমার। দ্রুত পকেট থেকে মোবাইলটি বের করে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম কে ফোন করি। তারা এসে লাশটি নিয়ে গেল।
হয়তো বুড়ো চাচার লাশটি এতক্ষণে কবর দেয় হয়েছে। কিন্তু লোকটি বিনা ওষুধে এভাবে মারা গেল এর জবাব দেবে কে। একজন মানুষের বেঁচে থাকতে হলে কত টাকা চাই তার। কত টাকা হলে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হবে। অফিসের টেবিলে মাথাগুজেঁ ভাবতে থাকি আমি।
১ Likes ১৩ Comments ০ Share ৭১৩ Views

Comments (13)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    পাশা দা

    এই পোষ্টা খুবি ভাল লাগল--

    অভিনন্দন-----

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

    • Load more relies...
    - মাসুম বাদল

    চমৎকার...

    - মোকসেদুল ইসলাম

    ভাল লাগল আপনার এই অরাজনৈতিক ইস্টাটাস। 

    সাধারণ জনগন পুড়ে মরুক তাতে কিছুই যায় আসে না ক্ষমতালোভীদের। 

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

      সুন্দর বলেছেন

    Load more comments...