Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

দীপঙ্কর বেরা

৯ বছর আগে

বিজয় হাসি ( প্রতিযোগিতা )

 

 

স্কুলে যাওয়ার পথে কদিন ধরে দেখছি এক বয়স্ক মানুষ সূর্যের দিকে তাকিয়ে কেমন হা- হুতাশ করে নিজের মনে একা একাই কি সব যেন বলেই চলেছেন । রোজ দেখতে দেখতে কেমন যেন মনে হল । কেউ এভাবে এই সবুজ মাঠ আর লাল টকটকে সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন কি সব বলেই চলেছেন । মনে তো হয় সুস্থ সবল মানুষ । আর চোখে মুখে কিসের জন্য যেন আক্ষেপের সুর ।
বাধ্য হয়ে কৌতূহল নিবারণ করার জন্য একদিন এগিয়ে গেলাম আপনি সামনে দু হাত বাড়িয়ে কি করেন ?
কথা শুনতে পেল কি না বুঝতে পারলাম না ; সাড়া না পেয়ে আবার বললাম সবুজ ধানের মাঠে আপনার কি কিছু হারিয়ে গেছে ?
আমার দিকে তাকালেন । অনেক কষ্টের এক চিলতে হাসি হাসলেন । মাথায় হাত দেওয়ার মত ভঙ্গি করে বললেন তুমি তো স্কুলে যাচ্ছো ? যাও । আরো বড় হও । আমার তো সে অনেক কথা । তোমার সময় হবে ?
গলাটা এত মধুর মন ভরে গেল । লোভ ছাড়তে পারলাম না । বললাম রোজ একটু একটু করে শুনবো । যেমন আমরা রোজ একটু একটু পড়তে পড়তে কত কি শিখে যাই । আমি তোমার সব কথা শুনব । রোজ ।
উনি বললেন তোমাকে আমি চিনি না । আমার এভাবে এখানে দাঁড়ানো দেখে কেউ দাঁড়ায় নি । বয়স্ক মানুষ তাই সবাই এড়িয়ে যায় । তোমার বুদ্ধিদীপ্ত কথা আমার ভাল লেগেছে ।
অনেকেই স্কুলে যেতে যেতে আমাকে ডাকল চলে আয় গোপলা , দেরি হয়ে যাবে । কি করছিস পাগলের সাথে ?
পাগল কথাটা আস্তে বললেও বেশ শোনা গেল । তবুও উনি বললেন এই সবুজ মাঠ আর লাল টকটকে সূর্য এই আমাদের দেশ । আমি এই দেশের একজন । গর্বের একজন । কিন্তু সেই গর্ব কিভাবে যেন বিচ্ছিন্ন কুক্ষিগত হয়ে গেল । তারই সুরাহায় আমার ওই বিস্তীর্ণ সামনে হয়ে যাওয়া । এবার যাও যদি সুযোগ পাই কাল আবার ।
উনি আবার সামনে তাকিয়ে কি যেন আনবেন সেই চেষ্টায় লেগে পড়লেন । আমি স্কুলে চলে গেলাম ।
স্কুলে পড়াশুনায় মন বসল না । স্যারের কাছে বকা খেতে হল । ঘরে এসে মাকে জিজ্ঞেস করতেই একটু ভেবে মা বলল উনার বয়স কত ?
-তা ষাট সত্তরের বেশিই হবে ।
মা কিছুক্ষণ নিজেকে নিয়ে কি যেন সূত্র মেলাতে চেষ্টা করলেন । তারপর আমাকে বুকে টেনে নিয়ে খুব ধীরে ধীরে বলল মনে হয় উনি স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামী । যে শান্তি-সুখ দেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতে লড়াই করেছিলেন তার বিন্দুমাত্র এখন আর অবশিষ্ট নেই । কারা যেন সেই দেশ ছিনিয়ে নিয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে । সুজলা সুফলা দেশ ধ্বংসের মুখে । নিজে একটুও সম্মান না পেয়ে নিজের অন্তরে কাঁদতে কাঁদতে রোজ সবুজ মাঠ আর সূর্যে সামনে দাঁড়িয়ে আগামী খোঁজেন উনি ।
কথা বলতে বলতে মায়ের আঁচল দিয়ে চোখ মোছা হাঁ করে আমি দেখলাম । দেশ সম্পর্কে এখনো আমার মায়ের মত অনেকের মমত্ব বোধ আছেই আছে । সবাই মিলে আমাদেরকেই তাকে সাকার করে তুলতে হবে ।
বুকের মধ্যে এক অদম্য সাহস অনুভব করলাম । সুন্দর দেশ গড়বই । সবার আগে জানতে হবে দেশ সম্পর্কে ।
তাই পরদিন সেই সংগ্রামী আর একই রাস্তার দেশকে নতুনভাবে দেখতে এগিয়ে চললাম সবুজ মাঠ আর সূর্যের সামনে ।
সোজা হয়ে দাঁড়ানো সামনে দুহাত বাড়ানো বয়স্ক মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে আমি স্যালুট করে দাঁড়ালাম । আর তাই দেখে অনেকটা বিস্ময় আর আগামীর আগমন আশ্চর্যে উনি কিছু বলতে চাইলেন ।
আমি কিছু বলতে না দিয়ে হাতটা ধরলাম । বললাম আপনি ভাল আছেন তো ? চলুন আপনাকে আমাদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে সবাইকে আমাদের দেশের সঙ্গে নতুন করে আবার পরিচয় করাব ।
নতুন কিছু পাওয়ার আশায় উনি অনাবিল অপূরনীয় বিজয় হাসি হাসতে লাগলেন । আর আমরা চললাম স্কুলের পথে ।

-০-০-০-

 

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪৬ Views

Comments (0)

  • - টোকাই

    ভালো লাগলো । আরেকটু ঘষামাজা করা গেলে লেখাটি অনবদ্য হতো ।

    • - টি.আই.সরকার (তৌহিদ)

      ভবিষ্যতে আরো ঘষামাজা করে লেখার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ্‌ !

    • Load more relies...