Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ৫৭তম মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের যে আকাল দেখা দিয়েছিল, তারই প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলা কথাসাহিত্যে আমূল পরিবর্তনের এক ধরা সূচিত হয়। মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই ছিলেন বাংলা সাহিত্যের জীবনবাদী শিল্পী। কেননা তার মতো অন্য কারো লেখায় সম-সাময়িক কালের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের ট্রাজেডি ফুটে উঠতো না। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন বিয়াল্লিশটি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটোগল্প। নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা মানুষের ক্ষয়ক্ষতি, মনুষ্যত্বের অপচয়, ক্লেদ-হতাশা ও দু:খ বেদনায় তার সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্রধারায় চিরভাস্বর। তাঁর রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়।বাঙলা ছাড়াও তার রচনাসমূহ বিদেশী বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের আজেকর দিনে মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুদিবসে কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্ম গ্রহন করেন। জন্মপত্রিকায় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। তার পিতার দেয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক। তার পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদনীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা। জীবনের প্রথমভাগে তিনি ফ্রয়েডীয় মতবাদে প্রভাবিত হয়েছিলেন, এছড়া মার্কসবাদও তাকে বেশ প্রভাবিত করেছিল। অধিকাংশ সাহিত্যেই এই দুই মতবাদের ব্যপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ব্যাক্তিগত ভাবে মানিক ছিলেন মধ্যবিত্ত মানসিকতার উত্তারাধিকারী। 

১৯২৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় এবং ১৯২৮ সালে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে আই.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কলেজ ক্যান্টিনে একদিন আড্ডা দেওয়া অবস্থায় এক বন্ধুর সাথে মানিক বাজী ধরেন তিনি তাঁর লেখা গল্প বিচিত্রায় ছাপাবেন। সে সময় কলকাতায় বিচিত্রা পত্রিকা ছিল অত্যন্ত বিখ্যাত এবং কেবল নামকরা লেখকেরাই তাতে লিখতেন। বন্ধুর সাথে বাজী ধরে মানিক লিখে ফেললেন তাঁর প্রথম গল্প অতসী মামী এবং সেটি বিচিত্রার সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দেন। গল্পের শেষে নাম স্বাক্ষর করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিসাবে। পাঠানোর চারমাস পর বিচিত্রায় ছাপা তার লেখা। প্রকাশের সাথে সাথেই গল্পটি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে। এরপর থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা পাঠাতে থাকেন মানিক। 

পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা। চাকরী সূত্রেই তার পিতা সাওতাল পরগনার দুমকায় গমন করেন। সেখানেই মানিকের জন্ম হয়েছিল । কিন্তু পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ঐ সকল মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা ছিল মানিকের। তাই ঐ অঞ্চলের সাধারন মানুষের জীবন চিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। বিচিত্র সব মানুষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন লেখক। তার এই সকল অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন বিচিত্র সব চরিত্রের আড়ালে। পদ্মার তীরবর্তি জেলেপাড়ার প্টভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি। 

সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তার একাডেমিক পড়াশুনার ব্যপক ক্ষতি হয় শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। সাহিত্য রচনাকেই তিনি তার মূল পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯৩৮ সালে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন 'নবারুণ' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তিতে 'বঙ্গশ্রী' পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ।১৯৪৩ সালে মানিক কয়েকমাস একটি সরকারী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৪৪ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এসময় থেকে তাঁর লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে ভারতের দাঙ্গা-বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের সাহিত্যে বস্তুবাদের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদের জয়গানই তার সাহিত্যের মুল উপজীব্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙ্গা গড়ার প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তার সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। সমাজের পুঁজিপতিদের দ্বারা দরিদ্র সমাজের শোষন বঞ্চনার স্বরুপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যের নানান চড়িত্রের আড়ালে। বৈজ্ঞানিক প্রত্যয়ের মৌলিক প্রবক্তা হয়েও কার্ল মার্কস সৌন্দর্যের নিয়মে সৃষ্টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তার কথা বলেছেন। যে সৃষ্টি সৌন্দর্যের নিয়মে হওয়ার কথা বা হয় তা যান্ত্রিক হলে তাতে আর প্রাণ থাকে না এবং স্বভাবতই তার মৃত্যু ঘটে। যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবন ও সৃষ্টিতে ঋজু বৈজ্ঞানিকতাকে মেনে চলতেন, সেই তিনিও সৌন্দর্য ও সংবেদনশীলতার গুরুত্বকে অস্বীকার করেননি। বরং বলা যায়, কূটাভাস সত্ত্বেও আমৃত্যু তিনি তাকে লালন করেছেন। 

১৯৩৫ সাল থেকে লেখক মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন যা পরবর্তিতে জটিল অবস্থায় গমন করলে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যু ঘটে। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ৫৭তম মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

০ Likes ৬ Comments ০ Share ৮৯৪ Views

Comments (6)

  • - মাসুম বাদল

    সুন্দর ও কষ্টসাধ্য পোস্ট 

    • - লুব্ধক রয়

      ধন্যবাদ।

      পোষ্টটি সংগ্রহ করা। আমি নিজে লিখিনি। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হল সবার সাথে শেয়ার করা যায়। তাই জানালাম নক্ষত্র ব্লগ বন্ধুদের।   

    - নীল কাব্য

    অনেক তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্ট, ছবি দেখে প্রথমে মাছ রাঙ্গা জাতীয় কোন মাছ খেকো পাখি ভেবেছিলাম ;) পরে দেখি এরা পতঙ্গভুক!

    পোষ্টটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম, আরও লিখুন, শুভকামনা রইলো 

    - ঘাস ফুল

    চমৎকার বর্ণনা এবং সাথে নয়নাভিরমা ছবি জুড়ে দিয়ে দারুণ একটা পোষ্ট দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে এই পাখিটি সম্বন্ধে কোন একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম। খুব সম্ভত প্রথম আলোতে। তবে এতো ছবি ছিল না সেখানে। ধন্যবাদ লুব্ধক। 

    • - লুব্ধক রয়

      পোষ্টটি সংগ্রহ করা। আমি নিজে লিখিনি। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হল সবার সাথে শেয়ার করা যায়। তাই জানালাম নক্ষত্র ব্লগ বন্ধুদের। এটি বিডিনিউজে অনলাইনে প্রকাশিত  হয়েছিল। 

      ধন্যবাদ।  

    Load more comments...