Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জাহাঙ্গীর আলম

১০ বছর আগে

বাংলার মসলিন

 

 

বাংলার মসলিনের প্রকারভেদ

ঢাকার তাঁতে প্রস্তুত সুতি কাপড় কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল ৷ একদিকে যেমন নবাব-বাদশাহদের উপযুক্ত সূক্ষ্মতম মসলিন তৈরী হতো অন্যদিকে তেমনি সাধারণ রায়তদের ব্যবহারোপযোগী মোটা কাপড়ও তৈরী হতো ৷ সে হিসেবে বিচার করলে ঢাকার তৈরী সুতি কাপড়কে কয়েকটি সাধারণ ভাগে ভাগ করা যায় মসলিন মাঝারি রকমের কাপড় মোটা কাপড় ও মুগাসিল্ক মিশ্রিত সুতি কাপড় ৷ রঙ এবং বুনন প্রণালির পরিপ্রেক্ষিতেও মসলিন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল যেমনঃ ডোরাকাটা মসৃণ (plain) চারকোনা চিত্র বিশিষ্ট বা ছক কাট (chegued) এবং রঙ করা ৷ সূক্ষতা ব্যবহারিকতা ও বুননের পরিপ্রেক্ষিতেও মসলিনের বিভিন্ন নাম ছিল যেমনঃ আব-ই-রওয়ান শবনম জামদানি ও সরবন্দ ৷ এর মধ্যে আবার নওয়াব-বাদশাহদের জন্য তৈরি মসলিন এক-একটি বিশেষ নামে পরিচিত ছিল ৷ যেমন-মোগল বাদশাহ ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য তৈরি মসলিনকে মলবুস খাস বা খাসবস্ত্র (অর্থাৎ বাদশাহর জন্যই বিশেষভাবে তৈরী) বলা হতো এবং বাংলার সুবেদার ও নওয়াবদের জন্য তৈরী মসলিমকে বলা হতো সরকার-ই-আলা ৷ আঠারো ও উনিশ শতকে মলবুস খাস মলমল খাস নামেও পরিচিত ছিল ৷
মলবুস খাস বা সরকার-ই-আলা কোনো বিশেষ রকমের কাপড়ের নাম নয় বরং যে সব কাপড় মোগল বাদশাহ বা বাংলার নওয়াবদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল তার বুনন রঙ ও সূক্ষতার বিচারে বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন নামের হলেও ওই একক নামেই পরিচিত ছিল ৷ একে এক প্রকার দরবারি পরিভাষা বলা চলে ৷

  সাধারণত একখানি মসলিন ২০ গজ লম্বা ১ গজ চওড়া ছিল ৷ মসলিনের ওজন মূল্য এবং সূক্ষ্মতা বিচারের সময় এই পরিমাণই আদর্শরূপে গন্য ছিল ৷ প্রত্যেক টুকরা মসলিনের সুতার সংখ্যা নির্ধারণ করা যেত এবং এর হিসাবের জন্য সুতা গণনা করবার নিয়ম ছিল ৷ সানার দাঁতের সংখ্যাই টানা সুতার সংখ্যা হিসাবে গণ্য হতো ৷ যদিও প্রকৃতপক্ষে টানা সুতার সংখ্যা সানার দাঁতের সংখ্যার দ্বিগুণ থাকত কারণ সানার প্রত্যেক দাঁতের সঙ্গে দুইটি করে সুতা বাঁধা থাকত ৷ আবার মসলিনের মূল্য নির্ধারণের সময় তার ওজন দৈর্ঘ্য ও সুতার সংখ্যা বিচার করা হতো ৷ যে কাপড় যত বেশী দীর্ঘ এবং যত বেশিসংখ্যক সুতা বিশিষ্ট হয় অথচ ওজনে কম হয় তাই সূক্ষ্মতম এবং উৎকৃষ্টতম বিবেচিত হতো এবং তার মুল্যও সর্বোচ্চ নির্ধারিত হতো ৷ আগাগোড়া একইরকম সূক্ষ্ম বানা সুতার তৈরী মসলিন খুব কমই পাওয়া যেত  একমাত্র মলবুল খাস বা সরকার-ই-আলাই এর ব্যতিক্রম ছিল বলে মনে হয় ৷ করণ প্রয়োজনমাফিক পর্যাপ্ত পরিমাণ লাভের জন্য অপেক্ষাকৃত কম সূক্ষ্ম সুতা মাঝে মাঝে চালিয়ে দিত ৷ এ জন্য ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীরা মসলিনকে অর্ডিনারি ফাইন সুপার ফাইন এবং ফাইন সুপার ফাইন ইত্যাদি কয়েক ভাগে ভাগ করে নিত ৷

  মলমল খাস
মোগল আমলের মলবুস খাসই আঠারো শতকে বা তার পরবর্তী সময়ে মলমল খাস নামে পরিচিতি পেয়েছিল ৷ এখনো ফাইন কোয়ালিটি সুতি কাপড়কে মলমল নামেই পরিচিত হতে দেখা যায় ৷
খাস-এ ১৮০০ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত সুতা ব্যবহৃত হতো এবং সাধারণত মলমল খাস আধা টুকরায় তৈরী হতো অর্থাৎ এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ গজ ও প্রস্থ ১ গজ ৷ ১৮৫১ সালে ইংল্ডেনের বিখ্যাত প্রদর্শনীর মসলিনের ওজন ছিল মাত্র আট তোলা ৷
ঝুনা
ঝুনা শব্দটি হিন্দি শব্দ ঝিনা (অর্থ-সূক্ষ্ম বা সরু) ৷ এ কাপড় সূক্ষ্ম জালের মত ছিল যে পরিধান করলে দেহ নগ্নপ্রায় থাকত ৷ ইহা দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও প্রস্থে ১ গজ এং প্রায় ১০০০ টানা সুতা থাকত ওজন ছিল প্রায় ২০ তোলা ৷ এ কাপড় বিদেশে রপ্তানী হত না মোঘল দরবারে ও ধনী-বিত্তশালীদের হেরেমের মেয়েরা ব্যবহার করার রেওয়াজ ছিল এছাড়াও নর্তকী ও গায়িকারাও ঝুনা কাপড় ব্যবহার করত ৷
রঙ্গ
রঙ্গও ঝুনার মতো জালী মসলিন ৷ এতে প্রায় ১২০০ সুতা থাকত এবং এর দৈর্ঘ্য ২০ গজ ও চওড়া ১ গজ ছিল এবং ওজন প্রায় ২০ তোলা ছিল ৷
আব-ই-রওয়ান
ফার্সি শব্দ আব (পানি) ও রওয়ান ( প্রবাহিত ) থেকে আব-ই-রওয়ান নামের উৎপত্তি ৷ এ কাপড় এত সূক্ষ্ম ও পাতলা বুননী বিশিষ্ট ছিল যে ঢাকার তাঁতিরা আব-ই-রওয়ান বা প্রবাহিত পানি নাম দিয়ে এর সূক্ষ্মতা ও উৎকর্ষের প্রমাণ করত ৷ আব-ই-রওয়ান সাদা জমিনে নকশাবিহীন ( plain ) মসলিন ও এর দ্বারা পরিধেয় জামা ইত্যাদি তৈরী হতো ৷ লম্বায় ২০গজ এবং চওড়ায় ১ গজ ছিল এবং সুতার সংখ্যা ৭০০ থেকে ১৪০০ পর্যন্ত উঠানামা করত ৷ ওজন ছিল প্রায় ২০ তোলা ৷
সরকার-ই-আলি
বাংলার নওয়াবের জন্য মসলিনকে সম্মান সূচকভাবে সরকার-ই-আলি বলা হতো ৷
খাসসা
খাসসা ফার্সি শব্দ ও এর দ্বারা মিহি ও সূক্ষ্ম মসলিনকে বুঝাতো ৷ এর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় আবুল ফজলের 'আইন-ই-আকবর' তে ৷ আঠারো ও উনিশ শতকে সোনারগাঁর জঙ্গলবাড়ীর জঙ্গল খাসসা বিশেষ প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল ৷
শবনম
মিহি বুননী বিশিষ্ট এ মসলিনকে শবনম বা ভোর বেলার শিশির নাম দিয়েছিল ঢাকার তাতীরা ৷
তনজেব
ফার্সি শব্দ তন (দেহ) ও জেব (অলংকার) অর্থাৎ দেহের অলংকার নামে এ সাদা জমিনের মসলিন কাপড় দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও প্রস্থে ১ গজ ছিল ৷
তরান্দাম
তরান্দম শব্দ আরবি তরাহ্ (মত) ও ফার্সি আন্দাম (দেহ) থেকে এসেছে ৷
ময়ন-সুখ
ইহা মিহি বুননীর ন্য প্রসিদ্ধ ছিল ও গলার রুমাল ( neck-kerchief ) রূপে ব্যাবহৃত হত ৷
বদন-খাস
বদন (শরীর) থেকে নামকরণ বুনন খুব গাঢ় বুনটের (close texture) ছিল না দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ গজ পর্যন্ত ও চওড়া ১ ১/২ গজ ছিল ৷
সর-বন্দ
ফার্সি শব্দ সর (মাথা) ও বন্দ ( বাঁধা ) থেকে উৎপন্ন যা মাথার পাগড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হত দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও চওড়ায় ১-১ ১/২ গজ ছিল ৷
সর-বুটি
ফার্সি শব্দ সর (মাথা) ও বুটি বা বুটিদার থেকে এ নামকরণ যা পরিমাণ ও ব্যবহরে অনেকটাই সর-বন্দের মত ছিল ৷
কামিছ
আরবি শব্দ কামিছ ( জামা ) থেকে উৎপত্তি ৷ সেকালের মুসলমানদের কোরতা তৈরীতে কামিছ মসলিন ব্যবহৃত হত যা দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও চওড়ায় ১ গজ ছিল ৷
ডোরিয়া
ডোরাকাটা বা দাড় বিশিষ্ট মসলিনকে ডোরিয়া বলা হত ৷ সাধারণত ভোগা বা সিরঞ্জ জাতীয় তুলা থেকে উৎপন্ন মসলিন ছেলেমেয়েদের জামা বনানো হত ৷
চারকোনা
চারকোনা বিশিষ্ট ছককাটা ডিজাইন করা মসলিনকে চারকোনা বলা হত ৷ চারকোনা ও ডোরিয়া ওজন ও সুতার সংখ্যা প্রায় সমান ছিল পার্থক্য শুধু বুননীতে ৷

জামদানী
যেসব মসলিনে নকশা করা হত তার নামই জামদানী ৷ তবে এখনকার জামদানি নিকৃষ্ট সংস্করণ ৷ বংশপম্পরার মানসম্পূন্ন তাতী সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পূর্ণ কাটুনী ও উৎকৃষ্টমানের কার্পাস উৎপাদন যথাযথ পরিবেশের অভাব রাষ্টের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ধীরে ধীরে এই গৌরবময় তাঁত শিল্পকে অবলুপ্তির দিকে নিয়ে যায় ৷

মুসলিনের পুরনো পাশ্চাত্য বিজ্ঞাপন


সতেরো শতকের প্রথম দিকে পর্তুগিজরা পরে আর্মেনিয়ান ইরানি তুরানি
মোঘল পাঠান ও এই শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে ওলন্দাজ ইংরেজ ফরাসি কোম্পানি ঢাকা শহরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে মসলিনের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন যুগের সূচনা করে ৷

কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল

 

 

০ Likes ১২ Comments ০ Share ১৪৪৪ Views

Comments (12)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    অসাধারন কবিতা

    বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইল-----

    • - রোদেলা

      ভালো লাগলো

    - মাসুম বাদল

    কবিতা জুড়ে ভাললাগা...

    শুভকামনা! 

    • - রোদেলা

      ধন্যবাদ আপনাকে

    - এই মেঘ এই রোদ্দুর

    এসব আমারও মনের কথা আপি

    কিন্তু বদের হাড্ডিগুলা এসব বুঝে না

    বলে কি বউদের প্রশংসা করতে নাই । আর ভালবাসা বেশী প্রকাশ করতে নাই

    মনে চায় দেই নাক ভোচা কইরা

     

    খুব সুন্দর হইছে

    • - রোদেলা

      ভালোবাসাই তো প্রকাশ করতে হয়।এতেই মানুষের খুব কাছাকাছি আসা সম্ভব।দাও ভোঁতা করে ,আমি আছি।

    • Load more relies...
    Load more comments...